রাজশাহীতে নিত্যপণ্যের দাম চড়া, অভিযানেও থামছে না সিন্ডিকেট

রাজশাহীতে বাজারে অগ্নিমূল্য। বাজারে ঢুকতেই ঘুরপাক খাওয়া প্রশ্নটা কানে আসছে, কবে কমবে? যে যা কিনছেন, দোকানিকে ঘুরেফিরে একটাই কথা, এত দাম! দোকানিরাও জবাব দিতে দিতে নাজেহাল! তবু ক্রেতারা সন্তুষ্ট নন। এদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকার। একের পর এক হুশিয়ারি উচ্চারণের পর এবার ৩ টি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে আলুর দাম খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩৬ টাকা কেজি নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যেটি গতশুক্রবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা ও অসহযোগিতায় সরকারি এই নির্দেশনা রাজশাহীতে উপেক্ষিত। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানেও ভাঙছে না সিন্ডিকেশন।

সংশ্লিষ্ট তথ্য বলছে, রাজশাহীর হিমাগারগুলোতে এখনো চাহিদার চেয়ে বেশি আলু মজুত আছে। কিন্তু তারপরও এর প্রভাব বাজারে নেই। আরও দাম বৃদ্ধির আশায় হিমাগার থেকে আলু ছাড়ছে না এই সিন্ডিকেট। ফলে আলু উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা সরকারি নির্দেশনার পরও গত শুক্রবার রাজশাহীর বাজারে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে। যা নিয়ে ক্ষোভ ভোক্তাদের। ভোক্তারা বলছেন, এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যে সিন্ডিকেশন দৌরাত্ম্য। সাধারণ মানুষের কথা কেউ ভাবছেন না। সরকার দাম বেঁধে দিলেও বাজারে গিয়ে বোকা বনে যেতে হয়েছে গ্রাহকদের। অথচ কোনো পণ্যের দাম যদি বাড়ার ঘোষণা আসতো, তাহলে একদিন আগেই কার্যকর হয়ে যেতো। যেমন ডিমের দাম গত সপ্তাহেও ১১ টাকা করে রাজশাহীতে বিক্রি হয়েছে। সরকারি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা দাম ১২ টাকা নিতে শুরু করেছেন। কিন্তু আলুর দাম আর কমলো না। এর স্থায়ী সমাধানের কথা বলছেন ভোক্তারা।

এদিকে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমাগার ছাড়াও পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান শুরু করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সম্প্রতি রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া বাজারের দুটি আড়ত ও দুটি হিমাগারে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পৃথক টিম। এ সময় হিমাগারের আলু ছাড়ের মূল্য চালানি রসিদ না থাকায় বায়া বাজারের আড়তদার মো. মুকুল হোসেনকে ৫ হাজার টাকা এবং হযরত আলীকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে হিমাগার মালিকদের দ্রুত সময়ে বাজারে আলু ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া গত শুক্রবারও তদারকিমূলক অভিযান চালানো হয়েছে নগরীর বাজারে। এসময় আলু ও পেঁয়াজের মূল্যতালিকা না থাকায় মেসার্স টুটুল এন্টারপ্রাইজকে ৫০০ টাকা এবং অমিন টেডার্সকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে এই অভিযানের কার্যকারিতা নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতারা যেমন প্রশ্ন তুলছেন। তারচেয়েও বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রশাসনকে অসহযোগিতার মনোভব তৈরি হয়েছে ব্যবসায়ীদের মাঝে।

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম জানান, হিমাগারগুলোতে বিপুল পরিমাণ মজুত থাকতে স্থানীয় বাজারে আলুর কেজি ৫০ টাকা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কিন্তু সেটাই হচ্ছে। প্রথমে তারা খুচরা আলু বিক্রেতাদের কাছে ক্রয় রসিদ দেখতে চাইলে তারা দেখাতে পারে নি। পরে আড়তে গিয়ে আলু ছাড়ের রসিদ দেখতে চাইলে তারাও দেখাতে পারে নি। আড়তদাররা ভোক্তা অধিকার দলকে জানান, হিমাগার থেকে তাদের আলু ছাড়ের রসিদ দেয়া হয় না।

নওহাটার হিমালয় কোল্ড স্টোরেজের সংরক্ষণ ক্ষমতা ১ লাখ ১০ হাজার বস্তা। ইতোমধ্যে তারা ৬০ হাজার বস্তা আলু ছেড়েছে। বাকি ৫০ হাজার বস্তা এখনো মজুত রয়েছে। অন্যদিকে রহমান কোল্ড স্টোরেজের সংরক্ষণ ক্ষমতা ৩ লাখ বস্তা। তারা ১ লাখ ৭৯ হাজার বস্তা আলু ছেড়েছে। এই কোল্ড স্টোরেজে এখনো ১ লাখ ৩১ হাজার বস্তা আলু মজুত আছে। হিমাগার মালিকরা জানিয়েছেন, আলু হিমাগারে থাকলেও এর মালিক বিভিন্ন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। যারা লাভের আশায় আলু কিনে মজুত করে রেখেছে, ভোক্তা অধিদপ্তর তাদের তালিকা চেয়েছে। সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।

রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৩ আশ্বিন ১৪৩০, ০১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

রাজশাহীতে নিত্যপণ্যের দাম চড়া, অভিযানেও থামছে না সিন্ডিকেট

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী

image

রাজশাহী : সিন্ডিকেটের দৌরাত্মে বাজারের ঊর্ধ্বগতি থামছেই না -সংবাদ

রাজশাহীতে বাজারে অগ্নিমূল্য। বাজারে ঢুকতেই ঘুরপাক খাওয়া প্রশ্নটা কানে আসছে, কবে কমবে? যে যা কিনছেন, দোকানিকে ঘুরেফিরে একটাই কথা, এত দাম! দোকানিরাও জবাব দিতে দিতে নাজেহাল! তবু ক্রেতারা সন্তুষ্ট নন। এদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকার। একের পর এক হুশিয়ারি উচ্চারণের পর এবার ৩ টি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে আলুর দাম খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩৬ টাকা কেজি নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যেটি গতশুক্রবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা ও অসহযোগিতায় সরকারি এই নির্দেশনা রাজশাহীতে উপেক্ষিত। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানেও ভাঙছে না সিন্ডিকেশন।

সংশ্লিষ্ট তথ্য বলছে, রাজশাহীর হিমাগারগুলোতে এখনো চাহিদার চেয়ে বেশি আলু মজুত আছে। কিন্তু তারপরও এর প্রভাব বাজারে নেই। আরও দাম বৃদ্ধির আশায় হিমাগার থেকে আলু ছাড়ছে না এই সিন্ডিকেট। ফলে আলু উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা সরকারি নির্দেশনার পরও গত শুক্রবার রাজশাহীর বাজারে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে। যা নিয়ে ক্ষোভ ভোক্তাদের। ভোক্তারা বলছেন, এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যে সিন্ডিকেশন দৌরাত্ম্য। সাধারণ মানুষের কথা কেউ ভাবছেন না। সরকার দাম বেঁধে দিলেও বাজারে গিয়ে বোকা বনে যেতে হয়েছে গ্রাহকদের। অথচ কোনো পণ্যের দাম যদি বাড়ার ঘোষণা আসতো, তাহলে একদিন আগেই কার্যকর হয়ে যেতো। যেমন ডিমের দাম গত সপ্তাহেও ১১ টাকা করে রাজশাহীতে বিক্রি হয়েছে। সরকারি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা দাম ১২ টাকা নিতে শুরু করেছেন। কিন্তু আলুর দাম আর কমলো না। এর স্থায়ী সমাধানের কথা বলছেন ভোক্তারা।

এদিকে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমাগার ছাড়াও পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান শুরু করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সম্প্রতি রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া বাজারের দুটি আড়ত ও দুটি হিমাগারে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পৃথক টিম। এ সময় হিমাগারের আলু ছাড়ের মূল্য চালানি রসিদ না থাকায় বায়া বাজারের আড়তদার মো. মুকুল হোসেনকে ৫ হাজার টাকা এবং হযরত আলীকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে হিমাগার মালিকদের দ্রুত সময়ে বাজারে আলু ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া গত শুক্রবারও তদারকিমূলক অভিযান চালানো হয়েছে নগরীর বাজারে। এসময় আলু ও পেঁয়াজের মূল্যতালিকা না থাকায় মেসার্স টুটুল এন্টারপ্রাইজকে ৫০০ টাকা এবং অমিন টেডার্সকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে এই অভিযানের কার্যকারিতা নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতারা যেমন প্রশ্ন তুলছেন। তারচেয়েও বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রশাসনকে অসহযোগিতার মনোভব তৈরি হয়েছে ব্যবসায়ীদের মাঝে।

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম জানান, হিমাগারগুলোতে বিপুল পরিমাণ মজুত থাকতে স্থানীয় বাজারে আলুর কেজি ৫০ টাকা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কিন্তু সেটাই হচ্ছে। প্রথমে তারা খুচরা আলু বিক্রেতাদের কাছে ক্রয় রসিদ দেখতে চাইলে তারা দেখাতে পারে নি। পরে আড়তে গিয়ে আলু ছাড়ের রসিদ দেখতে চাইলে তারাও দেখাতে পারে নি। আড়তদাররা ভোক্তা অধিকার দলকে জানান, হিমাগার থেকে তাদের আলু ছাড়ের রসিদ দেয়া হয় না।

নওহাটার হিমালয় কোল্ড স্টোরেজের সংরক্ষণ ক্ষমতা ১ লাখ ১০ হাজার বস্তা। ইতোমধ্যে তারা ৬০ হাজার বস্তা আলু ছেড়েছে। বাকি ৫০ হাজার বস্তা এখনো মজুত রয়েছে। অন্যদিকে রহমান কোল্ড স্টোরেজের সংরক্ষণ ক্ষমতা ৩ লাখ বস্তা। তারা ১ লাখ ৭৯ হাজার বস্তা আলু ছেড়েছে। এই কোল্ড স্টোরেজে এখনো ১ লাখ ৩১ হাজার বস্তা আলু মজুত আছে। হিমাগার মালিকরা জানিয়েছেন, আলু হিমাগারে থাকলেও এর মালিক বিভিন্ন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। যারা লাভের আশায় আলু কিনে মজুত করে রেখেছে, ভোক্তা অধিদপ্তর তাদের তালিকা চেয়েছে। সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।