এলপি গ্যাস : সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও নেই

মহল্লার বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে বিইআরসি নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস কিনতে পারেননি হাসনাত শাহীন। বাধ্য হয়ে বেশি দাম দিয়েই কিনতে হয়েছে তাকে। আক্ষেপ আছে, তবে অভিযোগ করতে রাজী না তিনি। বললেন, ‘অভিযোগ করার কী আছে? এটাতো ওপেন-সিক্রেট। সরকার সবই জানে। সব জায়গায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।’

সেপ্টেম্বার মাসের জন্য ১২ কেজি এলপি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম) গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ২৮৪ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। আগস্টে একই ওজনের সিলিন্ডারের দাম ছিল ১ হাজার ১৪০ টাকা। দাম বেড়েছে ১৪৪ টাকা। সেপ্টেম্বরের জন্য ঘোষিত নতুন দর চলতি মাসের ৩ তারিখ সন্ধ্যা ছয়টা থেকে কার্যকর হয়।

তবে বাজারে বিইআরসি নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না, আগেও পাওয়া যায়নি, এমন অভিযোগ প্রায় সব ভোক্তার।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করার ক্ষেত্রে গ্যাসের সিলিন্ডার কেনার সময় ক্রেতাকে রসিদ সংগ্রহের পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা হাসনাত শাহীন সংবাদকে জানান, তিনি এক হাজার ৪৫০ টাকা দিয়ে ১২ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডার নিয়েছেন। দোকানদারের কাছে রশীদ চেয়েছিলেন। তবে দোকানদার তা দেয়নি। বলেছে, ‘রশীদ দেয়া যাবে না। নিলে নেন, না নিলে কিছু করার নেই।’

মগবাজার, রামপুরা, বাড্ডা, নতুন বাজার, মিরপুর, শ্যামলী, আজিমপুর, লালবাগ, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, খিলগাঁও, বাসাবোসহ রাজধানীর আরও কিছু এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিইআরসির দামে কোথাও এলপি গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। রাজধানীর বাইরের চিত্রও একই। মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, নোয়াখালী, কুমিল্লা, নরসিংদীসহ আরও কয়েকটি জেলার খবর নিয়ে বেশি দামে এলপি গ্যাস বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রান্নায় বহুল ব্যবহৃত ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার এলাকা ভেদে ১৪৫০-১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল দেড় হাজার টাকায় ১২ কেজি সিলিন্ডার কিনেছেন মগবাজারের বাসিন্দা হোসনে আরা। সংবাদকে বললেন, আমার চার পাশে সব বিল্ডিংয়ে পাইপলাইনের গ্যাস আছে। আমাদের বিল্ডিংয়ে নেই। বাড়ি ওয়ালা বলে নতুন বাড়িতে সরকার লাইনের গ্যাস দেয়নি। অথচ এই বাড়িটি ২০১৬ সালে করা।

এই ভোক্তার প্রশ্ন- ‘রাজধানীতে একই এলাকায় থেকে কেউ পাইপলাইনের গ্যাস পাবে, আবার কেউ বেশি দামে গ্যাস কিনে ব্যবহার করবে; এটা কেমন বিচার?’ সরকারের এই বিষয়টা ভাবা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এক দশক আগে সরকার আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার পর রান্নায় এলপি গ্যাসের (এলপিজি) ব্যবহার বাড়তে থাকে। বাসাবাড়ি, রেস্তোরা, হোটেলগুলো গ্যাস সংযোগ না পেয়ে এলপিজি ব্যবহার শুরু করে।

সরকারি খাত থেকে মাত্র ২ শতাংশ এলপিজি সরবরাহ আসায় তখন থেকেই বাজার ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে ভোক্তা স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে চলছিল এলপিজির বেসরকারি খাত। ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে বিইআরসি। এরপর থেকে প্রতি মাসে একবার দাম সমন্বয় করা হচ্ছে।

গৃহস্থালি রান্নার পাশাপাশি রেস্তোরাঁ, পরিবহন, ছোট-বড় শিল্পকারখানায় এলপিজির ব্যবহার শুরু হওয়ায় চাহিদা বেড়েছে।

এখন প্রায় ৯৯ শতাংশ এলপিজি সরবরাহ হয় বেসরকারি খাতের মাধ্যমে। অভিযোগ রয়েছে, কোন এলাকায় বিইআরসি ঘোষিত দামে বাজারে এলপিজি পাওয়া যায় না। বেশি দামে এলপিজি কিনতে হয় ভোক্তাদের।

বিষয়টি দেখভালের জন্য বিইআরসির একটি মনিটরিং কমিটিও রয়েছে। যারা বিইআরসি নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করে তাদের শোকজ করে থাকে বিইআরসি।

এ বিষয়ে বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বিইআরসি দাম ঘোষণা করে এবং সেই দাম বাজারে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, সেটা তদারকি করে। তিনি বলেন, বিইআরসির নিজস্ব মনিটরিং টিম রয়েছে। তারা মনিটর করে থাকে। এছাড়া জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমেও প্রতিটি জেলায় বিইআরসি ঘোষিত দাম বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এই সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি।

বিইআরসির নতুন দর বলছে, বেসরকারি এলপিজির মূল্য সংযোজন করসহ (মূসক/ভ্যাটসহ) দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি প্রায় ১০৭ টাকা ১ পয়সা, যা গত মাসে ছিল ৯৪ টাকা ৯৬ পয়সা। এই হিসাবে বিভিন্ন আকারের এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারিত হবে।

বাজারে সাড়ে ৫ কেজি থেকে শুরু করে ৪৫ কেজি পর্যন্ত বিভিন্ন আকারের সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয়।

নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে এলপি গ্যাস বিক্রি করার অভিযোগে সম্প্রতি বেসরকারি ৪টি শীর্ষস্থানীয় এলপিজি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ইউনাইটেড, বসুন্ধরা, ওমেরা এবং প্রিমিয়ার এলপিজি।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সময় সময় অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবে এলপি গ্যাসের দাম নিয়ন্ত্রণে এই সংস্থার অভিযানের প্রভাব বাজারে নেই বলে মনে করেন ভোক্তারা। ভোক্তাদের দাবি, সরকার চাইলে নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস পাবেন তারা।

এলপি গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম বৃদ্ধি, ডলারের দাম বৃদ্ধি, আমদানি খরচ বৃদ্ধি এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি -এ বিষয়গুলো আমলে না নিয়ে বিইআরসি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে, যা প্রকৃত দামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিইআরসি নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রি করলে তাদের লোকসান হয়।

দাম বেশি নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বেশ কয়েজন ডিলার বলেন, অপারেটর কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফা কমিয়ে দিচ্ছে। এমনও হয়েছে, কোম্পানি এক মাসে তিন দফা মুনাফা কমিয়েছে। সেজন্য তাদের লাভ থাকছে না।

জ্বালানি বিশ্লেষজ্ঞ ও খাত সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, বাসায় রান্নার কাজে রাষ্ট্রীয় প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখা এবং একমাত্র রাষ্ট্রীয় এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেডের সরবরাহ ক্ষমতা দীর্ঘদিন ধরে ১ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা প্রকৃতপক্ষে এ খাতের বেসরকারি ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়ার সামিল।

তারা বলছেন, সরকার বলে রান্নায় এলপি গ্যাস ‘জনপ্রিয়’ হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এ খাতের গ্রাহকরা বাধ্য হয়ে এই গ্যাস ব্যবহার করছে। কারণ যারা পাইপলাইনে আসা সরকারি গ্যাস দিয়ে রান্না করেন, তারা রাষ্ট্রের সুবিধাভোগী। যারা পাইপ লাইনের আওতায় থেকেও বাধ্য হয়ে বেশিদামে এলপিজি ব্যবহার করেন তারা ভুক্তভোগী।

রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৩ আশ্বিন ১৪৩০, ০১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

এলপি গ্যাস : সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও নেই

ফয়েজ আহমেদ তুষার

image

মহল্লার বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে বিইআরসি নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস কিনতে পারেননি হাসনাত শাহীন। বাধ্য হয়ে বেশি দাম দিয়েই কিনতে হয়েছে তাকে। আক্ষেপ আছে, তবে অভিযোগ করতে রাজী না তিনি। বললেন, ‘অভিযোগ করার কী আছে? এটাতো ওপেন-সিক্রেট। সরকার সবই জানে। সব জায়গায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।’

সেপ্টেম্বার মাসের জন্য ১২ কেজি এলপি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম) গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ২৮৪ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। আগস্টে একই ওজনের সিলিন্ডারের দাম ছিল ১ হাজার ১৪০ টাকা। দাম বেড়েছে ১৪৪ টাকা। সেপ্টেম্বরের জন্য ঘোষিত নতুন দর চলতি মাসের ৩ তারিখ সন্ধ্যা ছয়টা থেকে কার্যকর হয়।

তবে বাজারে বিইআরসি নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না, আগেও পাওয়া যায়নি, এমন অভিযোগ প্রায় সব ভোক্তার।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করার ক্ষেত্রে গ্যাসের সিলিন্ডার কেনার সময় ক্রেতাকে রসিদ সংগ্রহের পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা হাসনাত শাহীন সংবাদকে জানান, তিনি এক হাজার ৪৫০ টাকা দিয়ে ১২ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডার নিয়েছেন। দোকানদারের কাছে রশীদ চেয়েছিলেন। তবে দোকানদার তা দেয়নি। বলেছে, ‘রশীদ দেয়া যাবে না। নিলে নেন, না নিলে কিছু করার নেই।’

মগবাজার, রামপুরা, বাড্ডা, নতুন বাজার, মিরপুর, শ্যামলী, আজিমপুর, লালবাগ, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, খিলগাঁও, বাসাবোসহ রাজধানীর আরও কিছু এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিইআরসির দামে কোথাও এলপি গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। রাজধানীর বাইরের চিত্রও একই। মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, নোয়াখালী, কুমিল্লা, নরসিংদীসহ আরও কয়েকটি জেলার খবর নিয়ে বেশি দামে এলপি গ্যাস বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রান্নায় বহুল ব্যবহৃত ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার এলাকা ভেদে ১৪৫০-১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল দেড় হাজার টাকায় ১২ কেজি সিলিন্ডার কিনেছেন মগবাজারের বাসিন্দা হোসনে আরা। সংবাদকে বললেন, আমার চার পাশে সব বিল্ডিংয়ে পাইপলাইনের গ্যাস আছে। আমাদের বিল্ডিংয়ে নেই। বাড়ি ওয়ালা বলে নতুন বাড়িতে সরকার লাইনের গ্যাস দেয়নি। অথচ এই বাড়িটি ২০১৬ সালে করা।

এই ভোক্তার প্রশ্ন- ‘রাজধানীতে একই এলাকায় থেকে কেউ পাইপলাইনের গ্যাস পাবে, আবার কেউ বেশি দামে গ্যাস কিনে ব্যবহার করবে; এটা কেমন বিচার?’ সরকারের এই বিষয়টা ভাবা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এক দশক আগে সরকার আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার পর রান্নায় এলপি গ্যাসের (এলপিজি) ব্যবহার বাড়তে থাকে। বাসাবাড়ি, রেস্তোরা, হোটেলগুলো গ্যাস সংযোগ না পেয়ে এলপিজি ব্যবহার শুরু করে।

সরকারি খাত থেকে মাত্র ২ শতাংশ এলপিজি সরবরাহ আসায় তখন থেকেই বাজার ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে ভোক্তা স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে চলছিল এলপিজির বেসরকারি খাত। ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে বিইআরসি। এরপর থেকে প্রতি মাসে একবার দাম সমন্বয় করা হচ্ছে।

গৃহস্থালি রান্নার পাশাপাশি রেস্তোরাঁ, পরিবহন, ছোট-বড় শিল্পকারখানায় এলপিজির ব্যবহার শুরু হওয়ায় চাহিদা বেড়েছে।

এখন প্রায় ৯৯ শতাংশ এলপিজি সরবরাহ হয় বেসরকারি খাতের মাধ্যমে। অভিযোগ রয়েছে, কোন এলাকায় বিইআরসি ঘোষিত দামে বাজারে এলপিজি পাওয়া যায় না। বেশি দামে এলপিজি কিনতে হয় ভোক্তাদের।

বিষয়টি দেখভালের জন্য বিইআরসির একটি মনিটরিং কমিটিও রয়েছে। যারা বিইআরসি নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করে তাদের শোকজ করে থাকে বিইআরসি।

এ বিষয়ে বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বিইআরসি দাম ঘোষণা করে এবং সেই দাম বাজারে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, সেটা তদারকি করে। তিনি বলেন, বিইআরসির নিজস্ব মনিটরিং টিম রয়েছে। তারা মনিটর করে থাকে। এছাড়া জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমেও প্রতিটি জেলায় বিইআরসি ঘোষিত দাম বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এই সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি।

বিইআরসির নতুন দর বলছে, বেসরকারি এলপিজির মূল্য সংযোজন করসহ (মূসক/ভ্যাটসহ) দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি প্রায় ১০৭ টাকা ১ পয়সা, যা গত মাসে ছিল ৯৪ টাকা ৯৬ পয়সা। এই হিসাবে বিভিন্ন আকারের এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারিত হবে।

বাজারে সাড়ে ৫ কেজি থেকে শুরু করে ৪৫ কেজি পর্যন্ত বিভিন্ন আকারের সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয়।

নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে এলপি গ্যাস বিক্রি করার অভিযোগে সম্প্রতি বেসরকারি ৪টি শীর্ষস্থানীয় এলপিজি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ইউনাইটেড, বসুন্ধরা, ওমেরা এবং প্রিমিয়ার এলপিজি।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সময় সময় অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবে এলপি গ্যাসের দাম নিয়ন্ত্রণে এই সংস্থার অভিযানের প্রভাব বাজারে নেই বলে মনে করেন ভোক্তারা। ভোক্তাদের দাবি, সরকার চাইলে নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস পাবেন তারা।

এলপি গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম বৃদ্ধি, ডলারের দাম বৃদ্ধি, আমদানি খরচ বৃদ্ধি এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি -এ বিষয়গুলো আমলে না নিয়ে বিইআরসি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে, যা প্রকৃত দামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিইআরসি নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রি করলে তাদের লোকসান হয়।

দাম বেশি নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বেশ কয়েজন ডিলার বলেন, অপারেটর কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফা কমিয়ে দিচ্ছে। এমনও হয়েছে, কোম্পানি এক মাসে তিন দফা মুনাফা কমিয়েছে। সেজন্য তাদের লাভ থাকছে না।

জ্বালানি বিশ্লেষজ্ঞ ও খাত সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, বাসায় রান্নার কাজে রাষ্ট্রীয় প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখা এবং একমাত্র রাষ্ট্রীয় এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেডের সরবরাহ ক্ষমতা দীর্ঘদিন ধরে ১ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা প্রকৃতপক্ষে এ খাতের বেসরকারি ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়ার সামিল।

তারা বলছেন, সরকার বলে রান্নায় এলপি গ্যাস ‘জনপ্রিয়’ হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এ খাতের গ্রাহকরা বাধ্য হয়ে এই গ্যাস ব্যবহার করছে। কারণ যারা পাইপলাইনে আসা সরকারি গ্যাস দিয়ে রান্না করেন, তারা রাষ্ট্রের সুবিধাভোগী। যারা পাইপ লাইনের আওতায় থেকেও বাধ্য হয়ে বেশিদামে এলপিজি ব্যবহার করেন তারা ভুক্তভোগী।