‘বড়’ বহরে রংপুর থেকে দিনাজপুর ‘তারুণ্যের রোডমার্চ’

সরকার পতনে এই রোডমার্চ শেষ হবে : মির্জা ফখরুল

সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল রংপুর থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত ‘তারুণ্যের রোডমার্চ’ করেছে বিএনপির তিনটি অঙ্গসংগঠন। জাতীয়বাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদলের উদ্যোগে সকাল ১২টার দিকে রংপুর বিএনপির কার্যালয়ে সামনে থেকে ‘তারণ্যের রোডমার্চ’ শুরু হয়ে পৌনে ৪টার দিকে দিনাজপুরে পৌঁছে। এটি পাগলাপীর, তারাগঞ্জ, সৈয়দপুর বাসস্ট্যান্ড, ওয়াপদার রোড, চিরিরবন্দর ৬টি পথসভার মধ্য দিয়ে প্রায় ৮০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে দিনাজপুরে গিয়ে শেষ হয়।

দিনাজপুর শহরের বটতলী ট্রাক টার্মিনালে রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ভোটাধিকার হলো মৌলিক অধিকার, এটার জন্য মুক্তিযুদ্ধে করেছি। এটা সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। এবার জাগরণ উঠছে, এই জাগরণের মধ্যে দিয়ে তরুণদের নিয়ে এ দেশের মানুষকে মুক্ত ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবো ইনশাআল্লাহ্।’

বাংলাদেশের মানুষ আর বোকা ভাবা যাবে না জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এবার বাংলাদেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তারা পরিষ্কার করে বলেছে, জোরে উচ্চ চিৎকার করে বলছে, এদের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘সমগ্র পৃথিবী বলছে বাংলাদেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। তাই গণতন্ত্র রক্ষায় সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে।’

গত ১২ জুলাই এক দফা আন্দোলনের ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত বিএনপিসহ সমমনা জোট ও দলগুলো ঢাকা ও ঢাকার বাইরে পদযাত্রা, মহাসমাবেশ, ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান, গণমিছিল ও কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি পালন করে। এই আন্দোলনের ‘চূড়ান্ত’ কর্মসূচি ঘোষণার আগে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে দুইদিনের রোডমার্চ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপির তিনটি সংগঠন। আজ দ্বিতীয়দিন রাজশাহী বিভাগে ‘তারুণ্যের রোডমার্চ’ অনুষ্ঠিত হবে।

প্রথমদিন রোডমার্চ শুরুর আগে সকাল আটটা থেকে রংপুরের আশপাশের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলা ও উপজেলা থেকে নেতা-কর্মীরা কার, মাইক্রোবাস, বাস, মিনিবাস, মোটরসাইকেলে করে রংপুরে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। নেতাকর্মীদের স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে নগর। দুপুরের মধ্যে বিএনপির কার্যালয়ের সামনের প্রধান সড়কসহ আশপাশের এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন।

রংপুর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে রোডমার্চ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন ওরফে টুকু। সঞ্চালনা করেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানি, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদল ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ, রংপুর মহানগর বিএনপি আহবায়ক শামসুজ্জামান শামু, সদস্য সচিব মাহমুদুন্নবী ডন, জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারন সম্পাদক আনিসুর রহমান লাকু প্রমুখ।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রংপুর থেকে আজ এই রোডমার্চ শুরু হলো। এই রোডমার্চ শেষ হবে সেদিন, যেদিন আমরা এই সরকারের পতন ঘটাতে পারব। এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না।’ তিনি বলেন, ‘রংপুর থেকে হাজারো তরুণ বাংলাদেশের মানুষকে ডাক দিচ্ছে, এই ভয়াবহ একনায়কতন্ত্র, স্বৈরাচার, লুটেরা দলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার। আজকে এই রংপুর থেকেই রোডমার্চের ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে এই সরকারের পতনের।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকার বিগত ১৫ বছরে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ফেলেছে। তাই আমরা বারবার আমাদের দাবিগুলো শান্তিপূর্ণভাবে তুলে ধরবার চেষ্টা করছি। আমরা পরিষ্কারভাবে বলছি, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।’

রংপুরের মানুষের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে আপনারা ভোট দিতে পেরেছেন? পারেননি। ১৫৩ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে জনগণ ভোট দিতে পারে না, সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যেতে পারে না। শুধু বিএনপি নয়, বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল ঘোষণা দিয়েছে এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। বাম জোট কিংবা কমিউনিস্ট পার্টি তারা আমাদের সঙ্গে নাই। তারাও ঘোষণা দিয়েছে যে এই সরকারের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না।’

উদ্বোধনের পর বাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে রংপুর থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশে রোডমার্চ শুরু হয়। মহাসড়ক ধরে যাওয়া এই গাড়িবহরে সৈয়দপুরে নীলফামারীর, দশ মাইলে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার গাড়িবহর যুক্ত হয়। রোডমার্চটি নীলফামারীর সৈয়দপুরে পৌঁছায় বেলা পৌনে দুইটার দিকে। সৈয়দপুর বাস টার্মিনালে আয়োজিত পথসভায় বিএনপি মহাসচিব বক্তব্য দেন। সেখানেও সকাল থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা এসে বাস টার্মিনালে জড়ো হোন।

পথসভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মানুষের ভোটের অধিকার ও দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির প্রতিবাদে তারুণ্যের মিছিলে রাজপথে নেমেছি। আর সরকারকে এক তরফার নির্বাচন করতে দেবে না জনগণ। সরকারকে হটাতে এক দফার আন্দোলন জোরদার করতে হবে। বিএনপি আর সাজানো নির্বাচনে যাবে না।’ তিনি নির্দলীয় সরকারের নির্বাচনসহ স্বাধীন নির্বাচন কমিশন দাবি করে বলেন, ‘সরকার বিএনপির নেতা-কর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। সরকারের বিদায় চায় দেশের জনগণ।’

পথসভায় বিএনপি রংপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, সাবেক সংসদ সদস্য বিলকিছ ইসলাম, সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা শাখার সভাপতি আবদুল গফুর সরকার, সাধারণ সম্পাদক শাহিন আকতারসহ কেন্দ্রীয় বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা বক্তব্য দেন। বিএনপির রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা রোডমার্চে যোগ দেন। রোডমার্চ যতই সামনের দিকে এগিয়ে যায় ততই বহরে নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেল, পিকআপ ও গাড়ি নিয়ে যুক্ত হতে থাকেন। পথে পথে নারী ও শিশুসহ উৎসুক জনতা রাস্তায় দাঁড়িয়ে রোডমার্চকে স্বাগত জানায়। তখন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাদেরকে দুই হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে অভ্যর্থনা জানান।

রোডমার্চ আসা নেতাকর্মীদের দেখা যায়, তারা মাথায় সংগঠনের দলীয় ব্যাজ পরেছেন। তারা পিকআপে সাউন্ড বক্সের দলীয় গান বাজাচ্ছেন। অনেকে পতাকা নিয়ে এসেছেন। দিনাজপুরের কাছে গেলে গাড়ির বহর প্রায় ‘২০ কিলোমিটার দীর্ঘ’ হয় বলে দলীয় নেতাকর্মীদের ধারণা। পর রোডমার্চটি দিনাজপুর শহরের বটতলী ট্রাক টার্মিনালে সমাপনী সমাবেশের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়। এখানে বিএনপি’র পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, রংপুর বিভাগীয় বিএনপি’র আহবায়ক আব্দুল খালেক, রংপুর বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও দিনাজপুর পৌর সভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, জেলা বিএনপি’র সভাপতি এ্যাড. মোফাজ্জল হোসেন দুলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

#############

রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৩ আশ্বিন ১৪৩০, ০১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

‘বড়’ বহরে রংপুর থেকে দিনাজপুর ‘তারুণ্যের রোডমার্চ’

সরকার পতনে এই রোডমার্চ শেষ হবে : মির্জা ফখরুল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক ও জেলা বার্তা পরিবেশক (রংপুর ও দিনাজপুর)

image

সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল রংপুর থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত ‘তারুণ্যের রোডমার্চ’ করেছে বিএনপির তিনটি অঙ্গসংগঠন। জাতীয়বাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদলের উদ্যোগে সকাল ১২টার দিকে রংপুর বিএনপির কার্যালয়ে সামনে থেকে ‘তারণ্যের রোডমার্চ’ শুরু হয়ে পৌনে ৪টার দিকে দিনাজপুরে পৌঁছে। এটি পাগলাপীর, তারাগঞ্জ, সৈয়দপুর বাসস্ট্যান্ড, ওয়াপদার রোড, চিরিরবন্দর ৬টি পথসভার মধ্য দিয়ে প্রায় ৮০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে দিনাজপুরে গিয়ে শেষ হয়।

দিনাজপুর শহরের বটতলী ট্রাক টার্মিনালে রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ভোটাধিকার হলো মৌলিক অধিকার, এটার জন্য মুক্তিযুদ্ধে করেছি। এটা সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। এবার জাগরণ উঠছে, এই জাগরণের মধ্যে দিয়ে তরুণদের নিয়ে এ দেশের মানুষকে মুক্ত ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবো ইনশাআল্লাহ্।’

বাংলাদেশের মানুষ আর বোকা ভাবা যাবে না জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এবার বাংলাদেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তারা পরিষ্কার করে বলেছে, জোরে উচ্চ চিৎকার করে বলছে, এদের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘সমগ্র পৃথিবী বলছে বাংলাদেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। তাই গণতন্ত্র রক্ষায় সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে।’

গত ১২ জুলাই এক দফা আন্দোলনের ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত বিএনপিসহ সমমনা জোট ও দলগুলো ঢাকা ও ঢাকার বাইরে পদযাত্রা, মহাসমাবেশ, ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান, গণমিছিল ও কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি পালন করে। এই আন্দোলনের ‘চূড়ান্ত’ কর্মসূচি ঘোষণার আগে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে দুইদিনের রোডমার্চ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপির তিনটি সংগঠন। আজ দ্বিতীয়দিন রাজশাহী বিভাগে ‘তারুণ্যের রোডমার্চ’ অনুষ্ঠিত হবে।

প্রথমদিন রোডমার্চ শুরুর আগে সকাল আটটা থেকে রংপুরের আশপাশের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলা ও উপজেলা থেকে নেতা-কর্মীরা কার, মাইক্রোবাস, বাস, মিনিবাস, মোটরসাইকেলে করে রংপুরে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। নেতাকর্মীদের স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে নগর। দুপুরের মধ্যে বিএনপির কার্যালয়ের সামনের প্রধান সড়কসহ আশপাশের এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন।

রংপুর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে রোডমার্চ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন ওরফে টুকু। সঞ্চালনা করেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানি, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদল ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ, রংপুর মহানগর বিএনপি আহবায়ক শামসুজ্জামান শামু, সদস্য সচিব মাহমুদুন্নবী ডন, জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারন সম্পাদক আনিসুর রহমান লাকু প্রমুখ।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রংপুর থেকে আজ এই রোডমার্চ শুরু হলো। এই রোডমার্চ শেষ হবে সেদিন, যেদিন আমরা এই সরকারের পতন ঘটাতে পারব। এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না।’ তিনি বলেন, ‘রংপুর থেকে হাজারো তরুণ বাংলাদেশের মানুষকে ডাক দিচ্ছে, এই ভয়াবহ একনায়কতন্ত্র, স্বৈরাচার, লুটেরা দলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার। আজকে এই রংপুর থেকেই রোডমার্চের ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে এই সরকারের পতনের।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকার বিগত ১৫ বছরে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ফেলেছে। তাই আমরা বারবার আমাদের দাবিগুলো শান্তিপূর্ণভাবে তুলে ধরবার চেষ্টা করছি। আমরা পরিষ্কারভাবে বলছি, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।’

রংপুরের মানুষের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে আপনারা ভোট দিতে পেরেছেন? পারেননি। ১৫৩ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে জনগণ ভোট দিতে পারে না, সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যেতে পারে না। শুধু বিএনপি নয়, বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল ঘোষণা দিয়েছে এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। বাম জোট কিংবা কমিউনিস্ট পার্টি তারা আমাদের সঙ্গে নাই। তারাও ঘোষণা দিয়েছে যে এই সরকারের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না।’

উদ্বোধনের পর বাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে রংপুর থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশে রোডমার্চ শুরু হয়। মহাসড়ক ধরে যাওয়া এই গাড়িবহরে সৈয়দপুরে নীলফামারীর, দশ মাইলে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার গাড়িবহর যুক্ত হয়। রোডমার্চটি নীলফামারীর সৈয়দপুরে পৌঁছায় বেলা পৌনে দুইটার দিকে। সৈয়দপুর বাস টার্মিনালে আয়োজিত পথসভায় বিএনপি মহাসচিব বক্তব্য দেন। সেখানেও সকাল থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা এসে বাস টার্মিনালে জড়ো হোন।

পথসভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মানুষের ভোটের অধিকার ও দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির প্রতিবাদে তারুণ্যের মিছিলে রাজপথে নেমেছি। আর সরকারকে এক তরফার নির্বাচন করতে দেবে না জনগণ। সরকারকে হটাতে এক দফার আন্দোলন জোরদার করতে হবে। বিএনপি আর সাজানো নির্বাচনে যাবে না।’ তিনি নির্দলীয় সরকারের নির্বাচনসহ স্বাধীন নির্বাচন কমিশন দাবি করে বলেন, ‘সরকার বিএনপির নেতা-কর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। সরকারের বিদায় চায় দেশের জনগণ।’

পথসভায় বিএনপি রংপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, সাবেক সংসদ সদস্য বিলকিছ ইসলাম, সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা শাখার সভাপতি আবদুল গফুর সরকার, সাধারণ সম্পাদক শাহিন আকতারসহ কেন্দ্রীয় বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা বক্তব্য দেন। বিএনপির রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা রোডমার্চে যোগ দেন। রোডমার্চ যতই সামনের দিকে এগিয়ে যায় ততই বহরে নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেল, পিকআপ ও গাড়ি নিয়ে যুক্ত হতে থাকেন। পথে পথে নারী ও শিশুসহ উৎসুক জনতা রাস্তায় দাঁড়িয়ে রোডমার্চকে স্বাগত জানায়। তখন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাদেরকে দুই হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে অভ্যর্থনা জানান।

রোডমার্চ আসা নেতাকর্মীদের দেখা যায়, তারা মাথায় সংগঠনের দলীয় ব্যাজ পরেছেন। তারা পিকআপে সাউন্ড বক্সের দলীয় গান বাজাচ্ছেন। অনেকে পতাকা নিয়ে এসেছেন। দিনাজপুরের কাছে গেলে গাড়ির বহর প্রায় ‘২০ কিলোমিটার দীর্ঘ’ হয় বলে দলীয় নেতাকর্মীদের ধারণা। পর রোডমার্চটি দিনাজপুর শহরের বটতলী ট্রাক টার্মিনালে সমাপনী সমাবেশের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়। এখানে বিএনপি’র পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, রংপুর বিভাগীয় বিএনপি’র আহবায়ক আব্দুল খালেক, রংপুর বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও দিনাজপুর পৌর সভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, জেলা বিএনপি’র সভাপতি এ্যাড. মোফাজ্জল হোসেন দুলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

#############