ঢাকার কেরানীগঞ্জে নির্মিত হচ্ছে ২০০ একরের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসটির প্রাথমিক কয়েকটি কাজের মধ্যে লেক খননের কাজ চলছে। গত ৭ আগস্ট লেক খনন শেষ হয়েছে দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তরের জন্য চিঠি দেয় খননকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউআইএডিএল (জেভি)। কিন্তু সরজমিনে দেখা যায়, হস্তান্তরের আগেই লেকের পাড় ভেঙে পানিতে চলে গেছে। এতে খনন কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে পাড় ভাঙতে শুরু করায় এই লেক দ্রুত হস্তান্তরের জন্য জোর লবিং তদবির চালাচ্ছে ঠিকাদার।
সরজমিনে দেখা যায়, চারদিকের পাড় ভেঙে লেকের পানিতে ধসে যাচ্ছে। লেকের পাড় সুরক্ষার জন্য সাদা এক ধরনের কাপড়ের পর্দা দিলেও আটকানো যাচ্ছে না মাটি। আচ্ছাদনের নীচ থেকেই মাটি ধসে পানিতে চলে যাচ্ছে। পাড় রক্ষার জন্য এর আগে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। গাছের পরিবর্তে ইস্টিমেটে কাপড়ের পর্দায় (জিও শিট) পাড় সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম হলো বিশ্ববিদ্যালয় কোন কাজ বুঝে নেয়ার আগে ইস্টিমেট অনুসারে সবকিছু ঠিক আছে কিনা তা দেখে নেয়া। লেকের পাড় ভেঙে যাওয়ায় তা দ্রুতই হস্তান্তরের জন্য তাগাদা দিচ্ছে খননকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কারণ লেক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তর হয়ে গেলে পরবর্তীতে তা ভেঙে গেলে খননকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়ভার থাকবে না। তাই পাড় মেরামত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা করে টেন্ডার আহ্বান করতে হবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে হস্তান্তরের আগেই এতো কম সময়ে কেন পাড় ভেঙে গেল, মাটি ধরে রাখার জন্য কোন টেকসই ব্যবস্থা কেন নেয়া হলো না প্রশ্ন লেক তদারকি কমিটির সদস্যদের। অন্যদিকে পাড় ভেঙে গেলে তা মেরামতের চেয়ে লেক বুঝে নেয়ার জন্য জোর লবিং তদবির চলছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
লেক হস্তান্তরের আগেই এতো কম সময় ভেঙে যাবার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে খননকারী প্রতিষ্ঠানের (ইউআইএডিএল) ঠিকাদার মো. রুমি জানান, হস্তান্তরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি জমা দিয়েছি। প্রায় তিন মাস আগে লেকের কাজ শেষ হয়ে গেছে। লেকের পাড়ের কিছু কিছু জায়গা ভেঙে গেছে। কিছু জায়গা আমরা মেরামত করেছি। স্রোত, বৃষ্টি বিভিন্ন কারণে যেমন পুকুর নদীর পাড়ের মাটি সরে যায়, এক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে। এই বিষয়গুলো ডিপার্টমেন্ট দেখবে।
এদিকে লেক তদারকি কমিটির সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, এতো কম সময়ে পাড় কিভাবে ভোঙে যায়। পরিপূর্ণ কাজ বুঝে না পেলে আমরা ক্লিয়ারেন্স দেব না। লেকের বিল দেয়ার আগে আমরা পরিদর্শন করব। কোন ত্রুটি থাকলে তা পরিপূর্ণ করতে হবে।
এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মোহাম্মদ আলী আহমেদ বলেন, লেকের পাড় ভেঙে গেছে আমি দেখেছি। সেগুলো মেরামতের জন্য বলেছি। ইস্টিমেট অনুসারে সব কাজ ঠিকঠাক না পেলে আমরা হস্তান্তর নিব না বলে দিয়েছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য (উপাচার্য অসুস্থ থাকায়) ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমদ বলেন, লেকের বিষয়াবলি প্রকল্প পরিচালক দেখে। এ সময় তিনি প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
এরআগে এডিএল কোম্পানিটি একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ তার পরিবারের অনেকের মালিকানাধীন বলে একাধিক জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এই কোম্পানিকে লেক খননের টেন্ডার দেবার পরে চুক্তিটি ‘বেআইনি’ ও টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটিকে (টেক) ‘প্রশাসনিকভাবে অদক্ষ’ আখ্যায়িত করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এ মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমদ। এমন মূল্যায়নের জন্য আর্থিক জরিমানাও করা হয়।
জবি’র নতুন ক্যাম্পাসে লেকের পাড় ভেঙে পানিতে -সংবাদ
আরও খবররবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৩ আশ্বিন ১৪৩০, ০১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫
মাহমুদ তানজীদ, জবি
জবি’র নতুন ক্যাম্পাসে লেকের পাড় ভেঙে পানিতে -সংবাদ
ঢাকার কেরানীগঞ্জে নির্মিত হচ্ছে ২০০ একরের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসটির প্রাথমিক কয়েকটি কাজের মধ্যে লেক খননের কাজ চলছে। গত ৭ আগস্ট লেক খনন শেষ হয়েছে দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তরের জন্য চিঠি দেয় খননকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউআইএডিএল (জেভি)। কিন্তু সরজমিনে দেখা যায়, হস্তান্তরের আগেই লেকের পাড় ভেঙে পানিতে চলে গেছে। এতে খনন কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে পাড় ভাঙতে শুরু করায় এই লেক দ্রুত হস্তান্তরের জন্য জোর লবিং তদবির চালাচ্ছে ঠিকাদার।
সরজমিনে দেখা যায়, চারদিকের পাড় ভেঙে লেকের পানিতে ধসে যাচ্ছে। লেকের পাড় সুরক্ষার জন্য সাদা এক ধরনের কাপড়ের পর্দা দিলেও আটকানো যাচ্ছে না মাটি। আচ্ছাদনের নীচ থেকেই মাটি ধসে পানিতে চলে যাচ্ছে। পাড় রক্ষার জন্য এর আগে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। গাছের পরিবর্তে ইস্টিমেটে কাপড়ের পর্দায় (জিও শিট) পাড় সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম হলো বিশ্ববিদ্যালয় কোন কাজ বুঝে নেয়ার আগে ইস্টিমেট অনুসারে সবকিছু ঠিক আছে কিনা তা দেখে নেয়া। লেকের পাড় ভেঙে যাওয়ায় তা দ্রুতই হস্তান্তরের জন্য তাগাদা দিচ্ছে খননকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কারণ লেক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তর হয়ে গেলে পরবর্তীতে তা ভেঙে গেলে খননকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়ভার থাকবে না। তাই পাড় মেরামত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা করে টেন্ডার আহ্বান করতে হবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে হস্তান্তরের আগেই এতো কম সময়ে কেন পাড় ভেঙে গেল, মাটি ধরে রাখার জন্য কোন টেকসই ব্যবস্থা কেন নেয়া হলো না প্রশ্ন লেক তদারকি কমিটির সদস্যদের। অন্যদিকে পাড় ভেঙে গেলে তা মেরামতের চেয়ে লেক বুঝে নেয়ার জন্য জোর লবিং তদবির চলছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
লেক হস্তান্তরের আগেই এতো কম সময় ভেঙে যাবার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে খননকারী প্রতিষ্ঠানের (ইউআইএডিএল) ঠিকাদার মো. রুমি জানান, হস্তান্তরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি জমা দিয়েছি। প্রায় তিন মাস আগে লেকের কাজ শেষ হয়ে গেছে। লেকের পাড়ের কিছু কিছু জায়গা ভেঙে গেছে। কিছু জায়গা আমরা মেরামত করেছি। স্রোত, বৃষ্টি বিভিন্ন কারণে যেমন পুকুর নদীর পাড়ের মাটি সরে যায়, এক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে। এই বিষয়গুলো ডিপার্টমেন্ট দেখবে।
এদিকে লেক তদারকি কমিটির সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, এতো কম সময়ে পাড় কিভাবে ভোঙে যায়। পরিপূর্ণ কাজ বুঝে না পেলে আমরা ক্লিয়ারেন্স দেব না। লেকের বিল দেয়ার আগে আমরা পরিদর্শন করব। কোন ত্রুটি থাকলে তা পরিপূর্ণ করতে হবে।
এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মোহাম্মদ আলী আহমেদ বলেন, লেকের পাড় ভেঙে গেছে আমি দেখেছি। সেগুলো মেরামতের জন্য বলেছি। ইস্টিমেট অনুসারে সব কাজ ঠিকঠাক না পেলে আমরা হস্তান্তর নিব না বলে দিয়েছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য (উপাচার্য অসুস্থ থাকায়) ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমদ বলেন, লেকের বিষয়াবলি প্রকল্প পরিচালক দেখে। এ সময় তিনি প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
এরআগে এডিএল কোম্পানিটি একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ তার পরিবারের অনেকের মালিকানাধীন বলে একাধিক জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এই কোম্পানিকে লেক খননের টেন্ডার দেবার পরে চুক্তিটি ‘বেআইনি’ ও টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটিকে (টেক) ‘প্রশাসনিকভাবে অদক্ষ’ আখ্যায়িত করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এ মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমদ। এমন মূল্যায়নের জন্য আর্থিক জরিমানাও করা হয়।