অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে পোশাক রপ্তানি বাড়ছে

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক থেকে। আর রপ্তানি বাজার হিসেবে বিবেচনা করলে প্রথমেই উঠে আসে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নাম। কিন্তু বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলোয় রপ্তানি প্রবৃদ্ধির গতি ধীর হয়েছে। বিপরীতে অপ্রচলিত বাজারগুলোয় প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে এসব বাজারের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার ছিল সবচেয়ে বেশি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জুলাই ও আগস্টে নিউজিল্যান্ডে পোশাক রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি বেড়েছে ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। রপ্তানি প্রবৃদ্ধির দিক থেকে তৃতীয় স্থানে আছে ব্রাজিল। দেশটিতে পোশাক রপ্তানি ৪৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া রাশিয়া ৪৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং তুরস্কে ৩৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়েছে।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘আমাদের রপ্তানির সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে অপ্রচলিত বাজারগুলোতে আমরা ভালো করছি। অতীতেও এ বাজারগুলোতে আমাদের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা ছিল, এখনও আছে, আগামীতেও থাকবে বলে আশা করি। এর কারণ হচ্ছে, নতুন পণ্যে এবং নতুন বাজারের দিকে বিজিএমইএ দৃষ্টি দিচ্ছে। ইউরোপে আমাদের সবসময় রপ্তানি ছিল, এখনও আছে। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রেও আমাদের রপ্তানি বাড়ছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ধীরে ধীরে আমাদের রপ্তানি বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে।’

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে বিশ্বে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। বৈশ্বিক রপ্তানিতে হিস্যা ছিল ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত বছর হিস্যা বেড়ে ৭ দশমিক ৯০ শতাংশে উন্নীত হয়। পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে। চীন এখনও সবচেয়ে বড় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। বিশ্ববাজারে ২০২২ সালে পোশাক রপ্তানিতে চীনের হিস্যা ছিল ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ।

ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ ২০২৩-এ বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ভিয়েতনাম তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ ছিল। ২০২২ সালে বাংলাদেশ ৪৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে। ডব্লিউটিওর তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে চীন ১৮২ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে এবং ভিয়েতনাম রপ্তানি করে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-আগস্ট সময়ে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক এসেছে প্রায় ৮ বিলিয়ন (৭৯৯ কোটি ৮৬ লাখ) ডলার যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

জুলাই-আগস্ট দুই মাসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ দশমিক ৩১ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৪ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় অর্ধেকই এসেছে নিট পোশাক থেকে। তৈরি পোশাকের ৫৭ দশমিক ২৮ শতাংশ এসেছে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে।

ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ৩ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার; গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৭ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৭ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার। সার্বিক রপ্তানিতে এই দুই মাসে ৯ দশমিক ১২ শতাংশ যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা আসলে পোশাক খাতের ওপর ভর করেই অর্জিত হয়েছে।

সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৪ আশ্বিন ১৪৩০, ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে পোশাক রপ্তানি বাড়ছে

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক থেকে। আর রপ্তানি বাজার হিসেবে বিবেচনা করলে প্রথমেই উঠে আসে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নাম। কিন্তু বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলোয় রপ্তানি প্রবৃদ্ধির গতি ধীর হয়েছে। বিপরীতে অপ্রচলিত বাজারগুলোয় প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে এসব বাজারের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার ছিল সবচেয়ে বেশি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জুলাই ও আগস্টে নিউজিল্যান্ডে পোশাক রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি বেড়েছে ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। রপ্তানি প্রবৃদ্ধির দিক থেকে তৃতীয় স্থানে আছে ব্রাজিল। দেশটিতে পোশাক রপ্তানি ৪৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া রাশিয়া ৪৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং তুরস্কে ৩৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়েছে।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘আমাদের রপ্তানির সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে অপ্রচলিত বাজারগুলোতে আমরা ভালো করছি। অতীতেও এ বাজারগুলোতে আমাদের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা ছিল, এখনও আছে, আগামীতেও থাকবে বলে আশা করি। এর কারণ হচ্ছে, নতুন পণ্যে এবং নতুন বাজারের দিকে বিজিএমইএ দৃষ্টি দিচ্ছে। ইউরোপে আমাদের সবসময় রপ্তানি ছিল, এখনও আছে। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রেও আমাদের রপ্তানি বাড়ছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ধীরে ধীরে আমাদের রপ্তানি বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে।’

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে বিশ্বে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। বৈশ্বিক রপ্তানিতে হিস্যা ছিল ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত বছর হিস্যা বেড়ে ৭ দশমিক ৯০ শতাংশে উন্নীত হয়। পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে। চীন এখনও সবচেয়ে বড় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। বিশ্ববাজারে ২০২২ সালে পোশাক রপ্তানিতে চীনের হিস্যা ছিল ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ।

ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ ২০২৩-এ বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ভিয়েতনাম তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ ছিল। ২০২২ সালে বাংলাদেশ ৪৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে। ডব্লিউটিওর তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে চীন ১৮২ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে এবং ভিয়েতনাম রপ্তানি করে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-আগস্ট সময়ে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক এসেছে প্রায় ৮ বিলিয়ন (৭৯৯ কোটি ৮৬ লাখ) ডলার যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

জুলাই-আগস্ট দুই মাসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ দশমিক ৩১ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৪ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় অর্ধেকই এসেছে নিট পোশাক থেকে। তৈরি পোশাকের ৫৭ দশমিক ২৮ শতাংশ এসেছে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে।

ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ৩ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার; গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৭ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৭ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার। সার্বিক রপ্তানিতে এই দুই মাসে ৯ দশমিক ১২ শতাংশ যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা আসলে পোশাক খাতের ওপর ভর করেই অর্জিত হয়েছে।