যুদ্ধ ও সামরিক উত্তেজনার জেরে জমজমাট রূপ নিয়েছে বৈশ্বিক অস্ত্রের ব্যবসা। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ, তাইওয়ান নিয়ে চীন-মার্কিন টানাপোড়েন ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা বিশ্বব্যাপী অস্ত্র নির্মাতাদের জন্য সাফল্য নিয়ে এসেছে। প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াচ্ছে বিভিন্ন দেশ। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে, ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা ব্যয় শুধু ২০২২ সালে ১৩ শতাংশ বেড়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী মোট প্রতিরক্ষা ব্যয় সর্বোচ্চ ২ লাখ ২৪ হাজার ডলারে পৌঁছেছে। রয়টার্স। ২০২২ সালে ব্রিটেন দ্বিগুণ পরিমাণে অস্ত্র রপ্তানি করেছে। এর মোট পরিমাণ ছিল ৮৫০ কোটি ইউরো। রপ্তানি বাড়ার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে কাতার ও সৌদি আরব। ব্রিটিশ কর্মকর্তারা আশা করছেন, অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক সাবমেরিন প্রযুক্তি প্রদানের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এইউকেইউএস চুক্তিসংক্রান্ত আরও চুক্তির সুযোগ তৈরি করবে। ইউরোপের দৌরাত্ম্যের সঙ্গে পিছিয়ে নেই দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিল্প প্রতিষ্ঠান। তারা চীনের বিকল্প শক্তি হিসেবে দাঁড়ানোর জন্য মরিয়া। ২০২২ সালে কেবল পোল্যান্ডের সঙ্গে ১ হাজার ৩৭০ কোটি ডলারের চুক্তি হয়।
ইউরোপীয় সরকার এরই মধ্যে প্রতিরক্ষা কেনাকাটা আরও নির্বিঘœ করার ব্যবস্থা নিয়েছে। নভেম্বরে স্পেন ও জার্মানি ইউরোপের জন্য যুদ্ধবিমান তৈরিতে চুক্তি করেছে। ইউরোপের প্রতিরক্ষাবিষয়ক শিল্পের মধ্যে সমন্বয় এলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। অস্ত্র কোম্পানিগুলো এতদিন একভাবে চললেও ভবিষ্যতে তারা উচ্চ মুনাফা করবে বলে মনে করছে।সম্প্রতি লন্ডনে ইউরোপের বৃহত্তম অস্ত্র প্রদর্শনী হয়ে গেল পশ্চিমা শীর্ষস্থানীয় সংস্থাগুলোর। সেখানে উপস্থিত ছিল অস্ত্রনির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এর আগে সর্বশেষ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দ্বি-বার্ষিক ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি ইকুইপমেন্ট ইন্টারন্যাশনালে (ডিএসইআই) এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল। সেখানে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক দিনগুলোয় অস্ত্র ব্যবসার প্রসার ও সফলতা প্রসঙ্গ।
কনসালট্যান্সি ম্যাককিনসের প্রতিবেদন অনুসারে, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর প্রথম বছরে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা রপ্তানি ২১ শতাংশ কমেছে। ফলে উন্নয়নশীল বিশ্বে রাশিয়ার জায়গা দখলের সুযোগ পেয়েছে পশ্চিমারা। সম্প্রসারণ হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোর অস্ত্র প্রসারের চিন্তা। সামগ্রিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ২০২৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী সামরিক ব্যয় গড়ে ৪ শতাংশ বাড়বে, যার নেতৃত্বে থাকবে জাপান। জাপান সম্প্রতি তার সামরিক বাজেট বছরে ১৪ শতাংশ বাড়িয়েছে।
ইংল্যান্ডের শেফিল্ডের সাঁজোয়া ইস্পাত প্রক্রিয়াকরণ ও তৈরির কারখানা এমটিলেন প্রধান মাইকেল এলমোর বলেন, ‘আমরা এখন অত্যন্ত ব্যস্ত।’ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের কয়েকদিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ইউক্রেনীয় সেনাদের জন্য বডি আর্মার প্লেটিং সরবরাহ করছিল। তারপর থেকে এর চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে ব্রিটেন ও অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রে ব্যবহৃত সাঁজোয়া যানের উপাদানগুলোর জন্যও বিশেষ চাহিদা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, উপযুক্ত দক্ষ শ্রম খুঁজে পাওয়াটাই এখন বড় সমস্যা।
এস্তোনিয়ান অস্ত্রনির্মাণ ফার্ম মিলরেম জানায়, প্রতিষ্ঠানটির কিছু সরঞ্জাম এরই মধ্যে ইউক্রেনে রুট ক্লিয়ারেন্স, নজরদারি ও হতাহতদের সরিয়ে নেয়ার মতো কাজের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কুলদার ভার্সি বলেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা রাতের অপারেশনের গুরুত্ব ও ইলেকট্রনিক জ্যামিংয়ের প্রতিরোধকে তুলে ধরেছে।’
মিলরেম জানায়, তারা ইউরোপে পর্যাপ্ত অর্থায়ন সুরক্ষিত করার চেষ্টা করছে। এছাড়া তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতে মধ্যপ্রাচ্যের বিনিয়োগকারীদের পরবর্তী সময়ে উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে অর্থায়ন করার জন্য প্ররোচিত করেছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা এখন মস্কো এবং বেইজিংয়ের সমালোচনামূলক প্রযুক্তির ক্ষতি কমানোর জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
এছাড়া অন্যান্য উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে মৌলিক অস্ত্র যেমন আর্টিলারি শেল, ড্রোন ও রকেটের মতো আরও ব্যয়বহুল সরঞ্জাম তৈরির জন্য পর্যাপ্ত শিল্প সক্ষমতার অভাব।
ইউক্রেনের লড়াইয়ে পশ্চিমা স্টকের বিপুল পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম কমিয়ে আনছে। সম্মেলনের বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউএস জ্যাভলিন অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল অর্ডার করতে এখনও তিন বছরের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। ব্রিটেনের বিএই সিস্টেম এ সপ্তাহে ডিএসইআইতে একটি নতুন আর্টিলারি শেল উন্মোচন করেছে। এর তুলনামূলক সস্তা ও দ্রুত উৎপাদনের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে।
সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৪ আশ্বিন ১৪৩০, ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫
সংবাদ ডেস্ক
যুদ্ধ ও সামরিক উত্তেজনার জেরে জমজমাট রূপ নিয়েছে বৈশ্বিক অস্ত্রের ব্যবসা। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ, তাইওয়ান নিয়ে চীন-মার্কিন টানাপোড়েন ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা বিশ্বব্যাপী অস্ত্র নির্মাতাদের জন্য সাফল্য নিয়ে এসেছে। প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াচ্ছে বিভিন্ন দেশ। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে, ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা ব্যয় শুধু ২০২২ সালে ১৩ শতাংশ বেড়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী মোট প্রতিরক্ষা ব্যয় সর্বোচ্চ ২ লাখ ২৪ হাজার ডলারে পৌঁছেছে। রয়টার্স। ২০২২ সালে ব্রিটেন দ্বিগুণ পরিমাণে অস্ত্র রপ্তানি করেছে। এর মোট পরিমাণ ছিল ৮৫০ কোটি ইউরো। রপ্তানি বাড়ার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে কাতার ও সৌদি আরব। ব্রিটিশ কর্মকর্তারা আশা করছেন, অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক সাবমেরিন প্রযুক্তি প্রদানের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এইউকেইউএস চুক্তিসংক্রান্ত আরও চুক্তির সুযোগ তৈরি করবে। ইউরোপের দৌরাত্ম্যের সঙ্গে পিছিয়ে নেই দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিল্প প্রতিষ্ঠান। তারা চীনের বিকল্প শক্তি হিসেবে দাঁড়ানোর জন্য মরিয়া। ২০২২ সালে কেবল পোল্যান্ডের সঙ্গে ১ হাজার ৩৭০ কোটি ডলারের চুক্তি হয়।
ইউরোপীয় সরকার এরই মধ্যে প্রতিরক্ষা কেনাকাটা আরও নির্বিঘœ করার ব্যবস্থা নিয়েছে। নভেম্বরে স্পেন ও জার্মানি ইউরোপের জন্য যুদ্ধবিমান তৈরিতে চুক্তি করেছে। ইউরোপের প্রতিরক্ষাবিষয়ক শিল্পের মধ্যে সমন্বয় এলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। অস্ত্র কোম্পানিগুলো এতদিন একভাবে চললেও ভবিষ্যতে তারা উচ্চ মুনাফা করবে বলে মনে করছে।সম্প্রতি লন্ডনে ইউরোপের বৃহত্তম অস্ত্র প্রদর্শনী হয়ে গেল পশ্চিমা শীর্ষস্থানীয় সংস্থাগুলোর। সেখানে উপস্থিত ছিল অস্ত্রনির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এর আগে সর্বশেষ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দ্বি-বার্ষিক ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি ইকুইপমেন্ট ইন্টারন্যাশনালে (ডিএসইআই) এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল। সেখানে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক দিনগুলোয় অস্ত্র ব্যবসার প্রসার ও সফলতা প্রসঙ্গ।
কনসালট্যান্সি ম্যাককিনসের প্রতিবেদন অনুসারে, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর প্রথম বছরে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা রপ্তানি ২১ শতাংশ কমেছে। ফলে উন্নয়নশীল বিশ্বে রাশিয়ার জায়গা দখলের সুযোগ পেয়েছে পশ্চিমারা। সম্প্রসারণ হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোর অস্ত্র প্রসারের চিন্তা। সামগ্রিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ২০২৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী সামরিক ব্যয় গড়ে ৪ শতাংশ বাড়বে, যার নেতৃত্বে থাকবে জাপান। জাপান সম্প্রতি তার সামরিক বাজেট বছরে ১৪ শতাংশ বাড়িয়েছে।
ইংল্যান্ডের শেফিল্ডের সাঁজোয়া ইস্পাত প্রক্রিয়াকরণ ও তৈরির কারখানা এমটিলেন প্রধান মাইকেল এলমোর বলেন, ‘আমরা এখন অত্যন্ত ব্যস্ত।’ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের কয়েকদিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ইউক্রেনীয় সেনাদের জন্য বডি আর্মার প্লেটিং সরবরাহ করছিল। তারপর থেকে এর চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে ব্রিটেন ও অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রে ব্যবহৃত সাঁজোয়া যানের উপাদানগুলোর জন্যও বিশেষ চাহিদা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, উপযুক্ত দক্ষ শ্রম খুঁজে পাওয়াটাই এখন বড় সমস্যা।
এস্তোনিয়ান অস্ত্রনির্মাণ ফার্ম মিলরেম জানায়, প্রতিষ্ঠানটির কিছু সরঞ্জাম এরই মধ্যে ইউক্রেনে রুট ক্লিয়ারেন্স, নজরদারি ও হতাহতদের সরিয়ে নেয়ার মতো কাজের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কুলদার ভার্সি বলেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা রাতের অপারেশনের গুরুত্ব ও ইলেকট্রনিক জ্যামিংয়ের প্রতিরোধকে তুলে ধরেছে।’
মিলরেম জানায়, তারা ইউরোপে পর্যাপ্ত অর্থায়ন সুরক্ষিত করার চেষ্টা করছে। এছাড়া তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতে মধ্যপ্রাচ্যের বিনিয়োগকারীদের পরবর্তী সময়ে উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে অর্থায়ন করার জন্য প্ররোচিত করেছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা এখন মস্কো এবং বেইজিংয়ের সমালোচনামূলক প্রযুক্তির ক্ষতি কমানোর জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
এছাড়া অন্যান্য উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে মৌলিক অস্ত্র যেমন আর্টিলারি শেল, ড্রোন ও রকেটের মতো আরও ব্যয়বহুল সরঞ্জাম তৈরির জন্য পর্যাপ্ত শিল্প সক্ষমতার অভাব।
ইউক্রেনের লড়াইয়ে পশ্চিমা স্টকের বিপুল পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম কমিয়ে আনছে। সম্মেলনের বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউএস জ্যাভলিন অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল অর্ডার করতে এখনও তিন বছরের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। ব্রিটেনের বিএই সিস্টেম এ সপ্তাহে ডিএসইআইতে একটি নতুন আর্টিলারি শেল উন্মোচন করেছে। এর তুলনামূলক সস্তা ও দ্রুত উৎপাদনের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে।