মাদারীপুরে ম্যাটসে শিক্ষার্থী ভর্তির ৬ মাসেও পাঠদান শুরু হয়নি

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুর ইউনিয়নে সাড়ে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) নির্মাণ করা হলেও প্রতিষ্ঠানে এখনো তালা ঝুলছে । উদ্বোধনের ৫ বছর পর অর্ধশত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। কিন্তু ৬ মাসেও শুরু হয়নি শিক্ষা কার্যক্রম। এতে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অর্ধশত শিক্ষার্থীদের। জনবল না থাকাই এটি চালু করা যাচেছ না বলছেন জেলা প্রশাসক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার রুবায়েত মণ্ডল, ময়মনসিংহের জিহাদ হাসান আর রংপুরের সুশান্ত দেবনাথ। স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাস্থ্য সহকারি মানুষের সেবার পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তুলবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন গুড়ে বালি। ৪ বছর মেয়াদি কোর্সের ভর্তির ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো শুরুই হয়নি পাঠদান। তাদের মতো অর্ধশত শিক্ষার্থীর অবস্থা একই রকম। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০১৮ সালে মাদারীপুর রাজৈরের কবিরাজপুর শোলপুরে তিন একর জমির উপর সাড়ে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্ড ট্রেনিং স্কুল নির্মাণ করা হলেও নিয়োগ দেয়া হয়নি কোন জনবল। ফলে পাঠদান শুরু না হওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে কবিরাজপুরের ম্যাটসের ভবনগুলোর চারপাশে ঝোঁপ ঝাড়ে ভরে গেছে। মূল্যবান ভবনগুলো দেখভালেও কেউ নেই। একাডেমিক ভবন ও আবাসিক ভবনগুলোর একই দশা। প্রশাসনের লোকবল না থাকায় বহিরাগতরা ভেতরে প্রবেশ করে নেশাদ্রব্য সেবন করে। জনবলের অভাবে সরকারের মহতি উদ্যোগ কোন কাজে আসছে না। শিক্ষার্থী রুবায়েত মন্ডল বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম এখানে। ৬ মাস হয়ে গেলো এখনো আমাদের ক্লাস শুরু হয়নি। বাড়ি থেকে টাকা এনে কোন মতে হোস্টেলে আমরা কয়েকজন সময় কাটাই।’ আরেক শিক্ষার্থী জিহাদ হাসান বলেন, ‘৪ বছরের মধ্যে ৬ মাস কেটে গেলো। প্রতিটি ভবনেই তালা ঝুলছে, আমাদের স্বপ্ন এখন হারাতে বসেছে। আমরা চাই দ্রুত এটি চালু করে আমাদের পড়ালেখার সুযোগ করে দেয়া হোক।’ সুশান্ত দেবনাথ বলেন, ‘মা-বাবার আশা ছিল দ্রত এখান থেকে পাস করে আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তুলবো। সেটি এখন শেষ হয়ে যাচ্ছে। কি করবো বুঝতে পারছি না। আমরা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী মন্ত্রনালয়েও গিয়েছিলাম, তারা শুধু আশ^াস দিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা শূন্য।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ম্যাটসের ভেতরে দূরের জেলা থেকে কয়েকজন ছাত্র এখানে থাকে। তবে বেশির ভাগ ভবনই খালি পড়ে থাকায় এখানে স্থানীয় বখাটে যুবকরা আড্ডা দেয়।

নেশাও করে।’ সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর মাদারীপুর কমিটির সদস্য সুবল বিশ^াস বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণের পাশাপাশি একইসাথে জনবল নিয়োগ না দেয়াটা পরিকল্পনা অভাব। একদিকে প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, অন্যদিকে জনবল নিয়োগ দুটি বিষয় একসাথে করলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। কর্তৃপক্ষের উচিৎ শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে দ্রুত জনবল নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালু করা।’

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুলটিতে প্রতিবছর পড়ালেখার সুযোগ পাবে আড়াইশ’ শিক্ষার্থী। রয়েছে আবাসিক ও অনাবাসিক দুই ধরণের সুবিধা। তাই শীঘ্রই প্রতিষ্ঠানটি চালুর লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে চিঠি দেয়া হবে।’

সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৪ আশ্বিন ১৪৩০, ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

মাদারীপুরে ম্যাটসে শিক্ষার্থী ভর্তির ৬ মাসেও পাঠদান শুরু হয়নি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, মাদারীপুর

image

মাদারীপুর : উপজেলার কবিরাজপুর ইউনিয়নে সাড়ে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল -সংবাদ

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুর ইউনিয়নে সাড়ে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) নির্মাণ করা হলেও প্রতিষ্ঠানে এখনো তালা ঝুলছে । উদ্বোধনের ৫ বছর পর অর্ধশত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। কিন্তু ৬ মাসেও শুরু হয়নি শিক্ষা কার্যক্রম। এতে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অর্ধশত শিক্ষার্থীদের। জনবল না থাকাই এটি চালু করা যাচেছ না বলছেন জেলা প্রশাসক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার রুবায়েত মণ্ডল, ময়মনসিংহের জিহাদ হাসান আর রংপুরের সুশান্ত দেবনাথ। স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাস্থ্য সহকারি মানুষের সেবার পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তুলবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন গুড়ে বালি। ৪ বছর মেয়াদি কোর্সের ভর্তির ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো শুরুই হয়নি পাঠদান। তাদের মতো অর্ধশত শিক্ষার্থীর অবস্থা একই রকম। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০১৮ সালে মাদারীপুর রাজৈরের কবিরাজপুর শোলপুরে তিন একর জমির উপর সাড়ে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্ড ট্রেনিং স্কুল নির্মাণ করা হলেও নিয়োগ দেয়া হয়নি কোন জনবল। ফলে পাঠদান শুরু না হওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে কবিরাজপুরের ম্যাটসের ভবনগুলোর চারপাশে ঝোঁপ ঝাড়ে ভরে গেছে। মূল্যবান ভবনগুলো দেখভালেও কেউ নেই। একাডেমিক ভবন ও আবাসিক ভবনগুলোর একই দশা। প্রশাসনের লোকবল না থাকায় বহিরাগতরা ভেতরে প্রবেশ করে নেশাদ্রব্য সেবন করে। জনবলের অভাবে সরকারের মহতি উদ্যোগ কোন কাজে আসছে না। শিক্ষার্থী রুবায়েত মন্ডল বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম এখানে। ৬ মাস হয়ে গেলো এখনো আমাদের ক্লাস শুরু হয়নি। বাড়ি থেকে টাকা এনে কোন মতে হোস্টেলে আমরা কয়েকজন সময় কাটাই।’ আরেক শিক্ষার্থী জিহাদ হাসান বলেন, ‘৪ বছরের মধ্যে ৬ মাস কেটে গেলো। প্রতিটি ভবনেই তালা ঝুলছে, আমাদের স্বপ্ন এখন হারাতে বসেছে। আমরা চাই দ্রুত এটি চালু করে আমাদের পড়ালেখার সুযোগ করে দেয়া হোক।’ সুশান্ত দেবনাথ বলেন, ‘মা-বাবার আশা ছিল দ্রত এখান থেকে পাস করে আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তুলবো। সেটি এখন শেষ হয়ে যাচ্ছে। কি করবো বুঝতে পারছি না। আমরা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী মন্ত্রনালয়েও গিয়েছিলাম, তারা শুধু আশ^াস দিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা শূন্য।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ম্যাটসের ভেতরে দূরের জেলা থেকে কয়েকজন ছাত্র এখানে থাকে। তবে বেশির ভাগ ভবনই খালি পড়ে থাকায় এখানে স্থানীয় বখাটে যুবকরা আড্ডা দেয়।

নেশাও করে।’ সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর মাদারীপুর কমিটির সদস্য সুবল বিশ^াস বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণের পাশাপাশি একইসাথে জনবল নিয়োগ না দেয়াটা পরিকল্পনা অভাব। একদিকে প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, অন্যদিকে জনবল নিয়োগ দুটি বিষয় একসাথে করলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। কর্তৃপক্ষের উচিৎ শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে দ্রুত জনবল নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালু করা।’

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুলটিতে প্রতিবছর পড়ালেখার সুযোগ পাবে আড়াইশ’ শিক্ষার্থী। রয়েছে আবাসিক ও অনাবাসিক দুই ধরণের সুবিধা। তাই শীঘ্রই প্রতিষ্ঠানটি চালুর লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে চিঠি দেয়া হবে।’