দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গু রোগীকে ঢাকায় না পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সারাদেশের সিভিল সার্জনদের সঙ্গে আলোচনা শেষে সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল এ নির্দেশনার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ে যে গাইডলাইন দেয়া হয়েছে, তা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গু আক্রান্ত কোন রোগীকে যেন ঢাকায় পাঠানো না হয়। রাজধানীর তুলনায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গু সংক্রমণ বেড়েছে। ঢাকার বাইরে সব জায়গায় ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আইভি ফ্লুয়েড সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন উল্লেখ করে ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ‘কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এ সময় সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছেন। আমরা সিভিল সার্জনদের নির্দেশনা দিয়েছি, কোথাও স্যালাইনের দাম বেশি রাখা হলে তাদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিছু ক্লিনিক এবং হাসপাতাল রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। রোগীদের হাসপাতালে রাখছে এবং আইসিইউতে নিচ্ছে। ওই সব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে এবং যেসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন নেই বা মেয়াদোত্তীর্ণ সেসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।’ রোগীদের জিম্মি করে কোন অসাধু চক্রকে লাভবান হতে দেয়া হবে না দাবি করে ডা. আহমেদুল বলেন, ‘যারা এ ধরনের কাজ করছে তারা দেশপ্রেমিক না। আমাদের স্যালাইনের সংকট হয়নি। দেশে পেঁয়াজের মজুত থাকলেও সংকট দেখা দেয়। কেউ আর্টিফিশিয়াল কোন সংকট যেন তৈরি করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা বিদেশ থেকে তিন লাখ স্যালাইন আমদানি করছি।’
এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮২২ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ১২২ জন। গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ১২২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৪৯ জন ও ঢাকার বাইরের দুই হাজার ২৭৩ জন। একই সময়ে মারা যাওয়া ১৮ জনের মধ্যে ১২ জন ঢাকার ও ৬ জন ঢাকার বাইরের বাসিন্দা। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬৮৪ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৩ হাজার ২৩৩ জন ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ৯৪ হাজার ৪৫১ জন ভর্তি হয়েছেন।
এ বছর এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮২২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৫৬৪ জন এবং ঢাকার বাইরের ২৫৮ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১০ হাজার ৪৩৭ জন ডেঙ্গুরোগী। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৪ হাজার ৬৬ জন এবং ঢাকার বাইরে রয়েছেন ৬ হাজার ৩৭১ জন। বছরের একই সময়ে আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪২৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৬৮ হাজার ৬০৩ জন এবং ঢাকার বাইরের ৮৭ হাজার ৮২২ জন। ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। ২০২০ সালে করোনা মহামারীকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এছাড়া অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে আবারও অভিযানে নামছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আজ থেকে সারাদেশে একযোগে এ অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ বিষয়ে জেলা পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে অধিদপ্তর। গতকাল দুপুরে এক জরুরি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর। তিনি বলেন, আমরা গত বছর যেসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নেই, মেয়াদোত্তীর্ণ এবং অনিয়ম করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছি। ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে ফের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের তথ্য পাচ্ছি। যারা এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আমরা আবারো ব্যবস্থা নেব। আজ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফের অভিযানে নামবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হয়েছে। একযোগে সারাদেশে এ অভিযান পরিচালিত হবে।
আহমেদুল কবীর বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত সব রোগীর জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রয়োজন হয় না। তারপরও কিছু ক্লিনিক যাদের আইসিইউ সুবিধা নেই, তবুও রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে তারা আইসিইউতে রাখে। এসব বিষয়ে অধিদপ্তর নজর রাখছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, কিছু ক্লিনিক এবং হাসপাতাল মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে রোগীকে হাসপাতালে রাখছে এবং আইসিইউতে নিচ্ছে। এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে এবং যেসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন নেই কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ সেসব হাসপাতালের বিরুদ্ধেই আমাদের অভিযান পরিচালিত হবে। আমরা আমাদের রোগীদের জিম্মি করে কোন অসাদু চক্রকে লাভবান হতে দেব না। যারা এ ধরনের কাজ করছে তারা দেশপ্রেমিক না।
স্যালাইনের সংকট কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের স্থানীয় যেসব কোম্পানি আছে তার বাইরেও আমরা স্যালাইন আমদানি করে কৃত্রিম সংকট উত্তরণ করতে পারি। সেই ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এরই মধ্যে, এটা হয়েছে খুবই নীরবে। অনেক অবৈধ ক্লিনিক ঢাকা শহরে বন্ধ করা হয়েছে। বন্ধ করার পরও দেখা গেছে যে তারা নানা ধরনের অজুহাত তৈরি করে। যার কারণে আমরা ডেঙ্গুর এই ক্রান্তিকালে যদি দেখি, কাউকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে আইসিইউতে রাখা হচ্ছে অথবা সরকার নির্ধারিত ফির বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে, মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে, লাইসেন্সবিহীন থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযান চলমান থাকবে।’
স্যালাইনের সরবরাহ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আহমেদুল কবির বলেন, ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে দেখেছেন, ১০০ টাকার স্যালাইন ৪০০ টাকা রাখছে, স্টকে থাকলেও বলছে নাই। জাতীয় দুর্যোগে যারা এসব কাজ করে তারা তো দেশপ্রেমিক না। অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, বাসায় আমরা স্যালাইন দিয়ে রোগীর চিকিৎসায় উৎসাহ দেই না। এতে রোগীর অবস্থা খারাপ হবে। তাদের হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেয়া বাঞ্ছনীয় হবে। যার আইভি ফ্লুইড লাগবে তার বাসায় চিকিৎসা করা সমীচীন হবে না। তিনি জানান, ‘আমরা আজ সব সিভিল সার্জনকে নির্দেশনা দিয়েছি, প্রত্যেকটি হাসপাতালে র্যাপিড রেসপন্স টিম তৈরি করার জন্য। এই টিম যারা অপেক্ষাকৃত খারাপ অবস্থার রোগী তাদের প্রতিনিয়ত মনিটরিং করবে। রোগীর অবস্থা যাতে আরও খারাপ না হয় এবং এরকম কোনও রোগীকে ঢাকার দিকে যেন পাঠানো না হয়।’
মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ -সংবাদ
আরও খবরসোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৪ আশ্বিন ১৪৩০, ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ -সংবাদ
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গু রোগীকে ঢাকায় না পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সারাদেশের সিভিল সার্জনদের সঙ্গে আলোচনা শেষে সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল এ নির্দেশনার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ে যে গাইডলাইন দেয়া হয়েছে, তা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গু আক্রান্ত কোন রোগীকে যেন ঢাকায় পাঠানো না হয়। রাজধানীর তুলনায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গু সংক্রমণ বেড়েছে। ঢাকার বাইরে সব জায়গায় ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আইভি ফ্লুয়েড সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন উল্লেখ করে ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ‘কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এ সময় সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছেন। আমরা সিভিল সার্জনদের নির্দেশনা দিয়েছি, কোথাও স্যালাইনের দাম বেশি রাখা হলে তাদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিছু ক্লিনিক এবং হাসপাতাল রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। রোগীদের হাসপাতালে রাখছে এবং আইসিইউতে নিচ্ছে। ওই সব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে এবং যেসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন নেই বা মেয়াদোত্তীর্ণ সেসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।’ রোগীদের জিম্মি করে কোন অসাধু চক্রকে লাভবান হতে দেয়া হবে না দাবি করে ডা. আহমেদুল বলেন, ‘যারা এ ধরনের কাজ করছে তারা দেশপ্রেমিক না। আমাদের স্যালাইনের সংকট হয়নি। দেশে পেঁয়াজের মজুত থাকলেও সংকট দেখা দেয়। কেউ আর্টিফিশিয়াল কোন সংকট যেন তৈরি করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা বিদেশ থেকে তিন লাখ স্যালাইন আমদানি করছি।’
এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮২২ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ১২২ জন। গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ১২২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৪৯ জন ও ঢাকার বাইরের দুই হাজার ২৭৩ জন। একই সময়ে মারা যাওয়া ১৮ জনের মধ্যে ১২ জন ঢাকার ও ৬ জন ঢাকার বাইরের বাসিন্দা। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬৮৪ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৩ হাজার ২৩৩ জন ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ৯৪ হাজার ৪৫১ জন ভর্তি হয়েছেন।
এ বছর এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮২২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৫৬৪ জন এবং ঢাকার বাইরের ২৫৮ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১০ হাজার ৪৩৭ জন ডেঙ্গুরোগী। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৪ হাজার ৬৬ জন এবং ঢাকার বাইরে রয়েছেন ৬ হাজার ৩৭১ জন। বছরের একই সময়ে আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪২৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৬৮ হাজার ৬০৩ জন এবং ঢাকার বাইরের ৮৭ হাজার ৮২২ জন। ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। ২০২০ সালে করোনা মহামারীকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এছাড়া অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে আবারও অভিযানে নামছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আজ থেকে সারাদেশে একযোগে এ অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ বিষয়ে জেলা পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে অধিদপ্তর। গতকাল দুপুরে এক জরুরি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর। তিনি বলেন, আমরা গত বছর যেসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নেই, মেয়াদোত্তীর্ণ এবং অনিয়ম করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছি। ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে ফের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের তথ্য পাচ্ছি। যারা এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আমরা আবারো ব্যবস্থা নেব। আজ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফের অভিযানে নামবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হয়েছে। একযোগে সারাদেশে এ অভিযান পরিচালিত হবে।
আহমেদুল কবীর বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত সব রোগীর জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রয়োজন হয় না। তারপরও কিছু ক্লিনিক যাদের আইসিইউ সুবিধা নেই, তবুও রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে তারা আইসিইউতে রাখে। এসব বিষয়ে অধিদপ্তর নজর রাখছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, কিছু ক্লিনিক এবং হাসপাতাল মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে রোগীকে হাসপাতালে রাখছে এবং আইসিইউতে নিচ্ছে। এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে এবং যেসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন নেই কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ সেসব হাসপাতালের বিরুদ্ধেই আমাদের অভিযান পরিচালিত হবে। আমরা আমাদের রোগীদের জিম্মি করে কোন অসাদু চক্রকে লাভবান হতে দেব না। যারা এ ধরনের কাজ করছে তারা দেশপ্রেমিক না।
স্যালাইনের সংকট কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের স্থানীয় যেসব কোম্পানি আছে তার বাইরেও আমরা স্যালাইন আমদানি করে কৃত্রিম সংকট উত্তরণ করতে পারি। সেই ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এরই মধ্যে, এটা হয়েছে খুবই নীরবে। অনেক অবৈধ ক্লিনিক ঢাকা শহরে বন্ধ করা হয়েছে। বন্ধ করার পরও দেখা গেছে যে তারা নানা ধরনের অজুহাত তৈরি করে। যার কারণে আমরা ডেঙ্গুর এই ক্রান্তিকালে যদি দেখি, কাউকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে আইসিইউতে রাখা হচ্ছে অথবা সরকার নির্ধারিত ফির বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে, মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে, লাইসেন্সবিহীন থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযান চলমান থাকবে।’
স্যালাইনের সরবরাহ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আহমেদুল কবির বলেন, ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে দেখেছেন, ১০০ টাকার স্যালাইন ৪০০ টাকা রাখছে, স্টকে থাকলেও বলছে নাই। জাতীয় দুর্যোগে যারা এসব কাজ করে তারা তো দেশপ্রেমিক না। অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, বাসায় আমরা স্যালাইন দিয়ে রোগীর চিকিৎসায় উৎসাহ দেই না। এতে রোগীর অবস্থা খারাপ হবে। তাদের হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেয়া বাঞ্ছনীয় হবে। যার আইভি ফ্লুইড লাগবে তার বাসায় চিকিৎসা করা সমীচীন হবে না। তিনি জানান, ‘আমরা আজ সব সিভিল সার্জনকে নির্দেশনা দিয়েছি, প্রত্যেকটি হাসপাতালে র্যাপিড রেসপন্স টিম তৈরি করার জন্য। এই টিম যারা অপেক্ষাকৃত খারাপ অবস্থার রোগী তাদের প্রতিনিয়ত মনিটরিং করবে। রোগীর অবস্থা যাতে আরও খারাপ না হয় এবং এরকম কোনও রোগীকে ঢাকার দিকে যেন পাঠানো না হয়।’