লিবিয়ার বন্যা পরিস্থিতি

রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে এক হল গোটা দেশ

২০১১ সালের বিপ্লবের পর সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তায় পড়েছে উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়া। এক যুগ আগে মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর পূর্ব ও পশ্চিম দুই অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে লিবিয়া। গত ১০ সেপ্টেম্বর প্রাণঘাতী বন্যার পর সেই বিভাজন অনেকটায় কমে এসেছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর পূর্ব লিবিয়ায় আঘাত হানে প্রাণঘাতী বন্যা। এতে এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৩০০ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে কর্তৃপক্ষ। নিখোঁজ আছেন হাজার হাজার মানুষ।

রাজধানী ত্রিপোলি লিবিয়ার উত্তর-পশ্চিম অংশে অবস্থিত। শহরের বাসিন্দা মোহান্নাদ বেনৌর বলেন, ভয়ঙ্কর এই ট্র্যাজেডির কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ সাহায্যের জন্য স্বতঃস্ফূর্ত প্রচার শুরু করে। এতে কোনও রাষ্ট্রের সমর্থন ছিল না। তিনি বলেন, সোমবার থেকে প্রায় ৭০ হাজার দিনার (১৪ হাজার ৪০৯ ডলার) অনুদান পাঠানো হয়েছে। শুক্রবারেই ২০ হাজার দিনার (৪ হাজার ১৩১ ডলার) অনুদান জমা পড়েছে। খাদ্য, স্বাস্থ্যবিধি পণ্য, তোয়ালে, ওষুধের পাশাপাশি শিশু এবং নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু দিচ্ছে মানুষ।

বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ উপকূলীয় শহর ডেরনা। ভূমধ্যসাগর ঘেঁষা শহরটি পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে। দুটি বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে শহরটির বেশিরভাগ অংশ। ধংস্তূপের নিচে এখনও চাপা আছে অনেক মানুষ। এই অবস্থায় বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি আশঙ্কা করছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। পূর্ব লিবিয়া পরিচালনাকারী প্রশাসনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওথমান আবদেলজালিল জানান, শহরে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ১৬৬। চূড়ান্ত সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা বলছে, পূর্ব লিবিয়ার বন্যায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৩৮ হাজার মানুষ। তাদের ৩০ হাজারই উপকূলীয় শহর ডেরনার বাসিন্দা।

৭ দিন পরও সমুদ্রতীরে ভেসে আসছে মরদেহ: ভয়াবহ বন্যায় লিবিয়ায় মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে । মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিখোঁজ রয়েছে দশ হাজারেরও বেশি মানুষ। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে। বন্যায় এক সপ্তাহ কেটে গেলেও এখনো অনেক মৃতদেহ সমুদ্রের পানিতে ভেসে আসছে। খবর বিবিসির। গত ১০ সেপ্টেম্বর ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাব সৃষ্ট বৃষ্টি ও বন্যার তা-বে উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক প্রাণহানি, বিভিন্ন স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতিসহ মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। বিবিসির প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, সমুদ্রতীরে পানিতে ধ্বংসপ্রাপ্ত গাড়ি, টায়ার, ভাঙা কাঠ, গৃহস্থালির সরঞ্জাম, ফ্রিজ ভাসতে দেখা যাচ্ছে। উদ্ধার অভিযান এখনো অব্যাহত আছে । একটি তুর্কি উদ্ধারকারী দল গত ৫ দিন ধরে এখানে আছে । তারা ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে আসা ধ্বংসাবশেষের মধ্যে আটকে পড়া মৃতদেহের সন্ধান চালাচ্ছে। উদ্ধারকারীরা জানান, গতকাল সকালে তারা এই এলাকা থেকে তিনটি মরদেহ উদ্ধার করেছেন। সেখানকার একজন কবরস্থানের কর্মী জানান, দারনা শহরের উপকণ্ঠে একটি গণকবরে প্রায় ৩ হাজার মরদেহ দাফন করা হয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, লিবিয়ায় ভয়াবহ বন্যার কারণে এ পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি লোককে এভাবে সমাহিত করা হয়েছে।

সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৪ আশ্বিন ১৪৩০, ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

লিবিয়ার বন্যা পরিস্থিতি

রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে এক হল গোটা দেশ

image

২০১১ সালের বিপ্লবের পর সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তায় পড়েছে উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়া। এক যুগ আগে মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর পূর্ব ও পশ্চিম দুই অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে লিবিয়া। গত ১০ সেপ্টেম্বর প্রাণঘাতী বন্যার পর সেই বিভাজন অনেকটায় কমে এসেছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর পূর্ব লিবিয়ায় আঘাত হানে প্রাণঘাতী বন্যা। এতে এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৩০০ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে কর্তৃপক্ষ। নিখোঁজ আছেন হাজার হাজার মানুষ।

রাজধানী ত্রিপোলি লিবিয়ার উত্তর-পশ্চিম অংশে অবস্থিত। শহরের বাসিন্দা মোহান্নাদ বেনৌর বলেন, ভয়ঙ্কর এই ট্র্যাজেডির কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ সাহায্যের জন্য স্বতঃস্ফূর্ত প্রচার শুরু করে। এতে কোনও রাষ্ট্রের সমর্থন ছিল না। তিনি বলেন, সোমবার থেকে প্রায় ৭০ হাজার দিনার (১৪ হাজার ৪০৯ ডলার) অনুদান পাঠানো হয়েছে। শুক্রবারেই ২০ হাজার দিনার (৪ হাজার ১৩১ ডলার) অনুদান জমা পড়েছে। খাদ্য, স্বাস্থ্যবিধি পণ্য, তোয়ালে, ওষুধের পাশাপাশি শিশু এবং নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু দিচ্ছে মানুষ।

বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ উপকূলীয় শহর ডেরনা। ভূমধ্যসাগর ঘেঁষা শহরটি পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে। দুটি বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে শহরটির বেশিরভাগ অংশ। ধংস্তূপের নিচে এখনও চাপা আছে অনেক মানুষ। এই অবস্থায় বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি আশঙ্কা করছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। পূর্ব লিবিয়া পরিচালনাকারী প্রশাসনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওথমান আবদেলজালিল জানান, শহরে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ১৬৬। চূড়ান্ত সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা বলছে, পূর্ব লিবিয়ার বন্যায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৩৮ হাজার মানুষ। তাদের ৩০ হাজারই উপকূলীয় শহর ডেরনার বাসিন্দা।

৭ দিন পরও সমুদ্রতীরে ভেসে আসছে মরদেহ: ভয়াবহ বন্যায় লিবিয়ায় মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে । মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিখোঁজ রয়েছে দশ হাজারেরও বেশি মানুষ। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে। বন্যায় এক সপ্তাহ কেটে গেলেও এখনো অনেক মৃতদেহ সমুদ্রের পানিতে ভেসে আসছে। খবর বিবিসির। গত ১০ সেপ্টেম্বর ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাব সৃষ্ট বৃষ্টি ও বন্যার তা-বে উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক প্রাণহানি, বিভিন্ন স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতিসহ মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। বিবিসির প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, সমুদ্রতীরে পানিতে ধ্বংসপ্রাপ্ত গাড়ি, টায়ার, ভাঙা কাঠ, গৃহস্থালির সরঞ্জাম, ফ্রিজ ভাসতে দেখা যাচ্ছে। উদ্ধার অভিযান এখনো অব্যাহত আছে । একটি তুর্কি উদ্ধারকারী দল গত ৫ দিন ধরে এখানে আছে । তারা ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে আসা ধ্বংসাবশেষের মধ্যে আটকে পড়া মৃতদেহের সন্ধান চালাচ্ছে। উদ্ধারকারীরা জানান, গতকাল সকালে তারা এই এলাকা থেকে তিনটি মরদেহ উদ্ধার করেছেন। সেখানকার একজন কবরস্থানের কর্মী জানান, দারনা শহরের উপকণ্ঠে একটি গণকবরে প্রায় ৩ হাজার মরদেহ দাফন করা হয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, লিবিয়ায় ভয়াবহ বন্যার কারণে এ পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি লোককে এভাবে সমাহিত করা হয়েছে।