দেশের একজন নামকরা চিকিৎসকের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর মুঠোফোনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ঘাটাঘাটি করেই সময় পার করতেন। হঠাৎ একদিন সৌদি আরবের মসজিদে নববীর ইমাম পরিচয় দিয়ে এক দরবেশ বাবা সব সমস্যার সমাধন করেন এমন একটি বিজ্ঞাপন নজরে আসে। বিজ্ঞাপন দেখে সংসারের নানা সমস্যা সমধানে যোগাযোগ করেন কথিত ওই দরবেশ বাবার সঙ্গে। এরপর বিভিন্ন সময়ে ( গত ১ বছরে) দরবেশ বাবাকে সাত কোটি টাকা দেন আনোয়ারা বেগম। পুলিশ বলছে, শুধু আনোয়ার বেগমই নয়, দরবেশ বাবা পরিচয় একটি চক্রের সদস্যরা গত ১৮ বছর ধরে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়েছেন । প্রতারণার টাকায় ভোলা ও ঢাকাতে একাধিক গাড়িবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন এই দরবেশ বাবা। কিনেছেন একটি রাজনৈতিক দলের পদও। সম্প্রতি সহযোগিসহ এ প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।
সিআইডি বলছে, এই দরবেশ বাবা চক্রের মূল হোতা ভোলার বোরহানউদ্দিনের মোঃ হাসেম। তিনি ওই উপজেলার একটি ইউনিয়নের বিএনপির দপ্তর সম্পাদক। রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে গত ১৮ বছর ধরে নিজেকে মসজিদে নববীর ইমাম পরিচয় দিয়ে গড়ে তুলেছেন প্রতারণার বিশাল নেটওয়ার্ক। সারাদেশে বিভিন্ন ধনাঢ্য পরিবারের নারীদের এবং প্রবাসীদের টার্গেট করেই প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন।
সিআইডি জানিয়েছে, ভুক্তভোগী আনোয়ারা বেগম পর্যায়ক্রমে ৭ কোটি টাকা দেওয়ার পর বুঝতে পারেন তিনি প্রতারক চক্রের খপ্পড়ে পড়েছেন। এরপর প্রতিকার চেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার সূত্র ধরে তদন্তে নামে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের সাইবার ইন্টিলিজেন্ট টিমের প্রধান পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদের নেতৃত্বাধীন টিম অভিযান চালিয়ে চক্রের মূল হোতা মোঃ হাসেম ও তার সহযোগি মো: তানজীল আহমেদ ওরফে তানজীল হাসানকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর এ চক্রের প্রতারণার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পায় সিআইডি।
পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ জানান, প্রতারক হাসেম পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। সে নয়টি ভাষা ও কন্ঠে কথা বলতে পারদর্শী। প্রতারণার টাকায় গ্রামে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ি করেছেন। কিনেছেন বিপুল জমিজমা। ঢাকায় কোটি টাকা ব্যায়ে অত্যাধুনিক ফ্লাট কিনেছেন। তার সহযোগি তানজীল ৪০ লাখ টাকা খরচ করে একটি গাড়ি কিনেছেন। এছাড়া কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে ই কমার্স ব্যবসা করছেন। হাসেম নিজেও স্ত্রী ও স্বজনদের নামে বেনামে বিপুল সম্পদ ও ব্যবসা গড়েছেন।
সিআইডি বলছে, ৫৯ বছর বয়সী মিসেস আনোয়ারা বেগম (৫৯) একজন অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তার তিন ছেলে-মেয়ে রয়েছে। তারা প্রত্যেকেই দেশের বাইরে থাকে। আনোয়ারা বেগমের স্বামী দেশের একজন নামকরা চিকিৎসক। চাকুরী থেকে অবসরের পর মিসেস আনোয়ারা দিনের অধিকাংশ সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ঘাটাঘাটি করে সময় কাটাতেন। তার পারিবারিক কিছু সমস্যা ছিলো। স্বামীকে সন্দেহ করতেন অন্য নারীর সঙ্গে সম্পক্য আছে। এসব সমস্যার কারণে তিনি হতাশাগ্রস্থ ছিলেন। সাংসারিক ঝামেলা থেকে রেহই পেতে নানাভাবে চেষ্টা করছিলেন আনোয়ারা বেগম। এমন অবস্থায় হঠাৎ একদিন ফেইসবুক স্ক্রল করার সময় তার সামনে একটি বিজ্ঞাপন আসে।
ফোন দেওয়ার সাথে সাথে বিজ্ঞাপন দেওয়া দরবেশ বাবা বেশধারী ব্যক্তি তার সাথে খুব সুন্দর করে কথা বলে তার পারিবারিক সমস্যা শুনতে চায়। তিনি তখন তার পারিবারিক কিছু সমস্যার কথা উক্ত দরবেশ বাবার সাথে আলোচনা করেন।
দরবেশ বাবার এরুপ সুন্দর ব্যবহার ও কথা বলে দরবেশ বাবা তার বিকাশ নম্বরে একটা বড় অ্যামাউন্টের টাকা বিকাশ করতে বলে। মিসেস আনোয়ারা বেগম দরবেশ বাবার সুন্দর ব্যবহার ও কথায় তার ভক্ত হয়ে যায়। তখন উক্ত নম্বরে দরবেশ বাবার কথা মতো বিকাশে টাকা পাঠান। এই ভাবে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে দরবেশ বাবা মিসেস আনোয়ারা বেগমকে ফোন করে বিভিন্ন অজুহাতে ও ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় সাত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে এক সময় মিসেস আনোয়ারা বেগম যখন বুঝতে পারেন তিনি প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন, তখন প্রতিকার পাওয়ার জন্য মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন । মামলার পর তিনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিতেও অভিযোগ করেন।
সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৪ আশ্বিন ১৪৩০, ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫
সাইফ বাবলু
দেশের একজন নামকরা চিকিৎসকের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর মুঠোফোনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ঘাটাঘাটি করেই সময় পার করতেন। হঠাৎ একদিন সৌদি আরবের মসজিদে নববীর ইমাম পরিচয় দিয়ে এক দরবেশ বাবা সব সমস্যার সমাধন করেন এমন একটি বিজ্ঞাপন নজরে আসে। বিজ্ঞাপন দেখে সংসারের নানা সমস্যা সমধানে যোগাযোগ করেন কথিত ওই দরবেশ বাবার সঙ্গে। এরপর বিভিন্ন সময়ে ( গত ১ বছরে) দরবেশ বাবাকে সাত কোটি টাকা দেন আনোয়ারা বেগম। পুলিশ বলছে, শুধু আনোয়ার বেগমই নয়, দরবেশ বাবা পরিচয় একটি চক্রের সদস্যরা গত ১৮ বছর ধরে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়েছেন । প্রতারণার টাকায় ভোলা ও ঢাকাতে একাধিক গাড়িবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন এই দরবেশ বাবা। কিনেছেন একটি রাজনৈতিক দলের পদও। সম্প্রতি সহযোগিসহ এ প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।
সিআইডি বলছে, এই দরবেশ বাবা চক্রের মূল হোতা ভোলার বোরহানউদ্দিনের মোঃ হাসেম। তিনি ওই উপজেলার একটি ইউনিয়নের বিএনপির দপ্তর সম্পাদক। রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে গত ১৮ বছর ধরে নিজেকে মসজিদে নববীর ইমাম পরিচয় দিয়ে গড়ে তুলেছেন প্রতারণার বিশাল নেটওয়ার্ক। সারাদেশে বিভিন্ন ধনাঢ্য পরিবারের নারীদের এবং প্রবাসীদের টার্গেট করেই প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন।
সিআইডি জানিয়েছে, ভুক্তভোগী আনোয়ারা বেগম পর্যায়ক্রমে ৭ কোটি টাকা দেওয়ার পর বুঝতে পারেন তিনি প্রতারক চক্রের খপ্পড়ে পড়েছেন। এরপর প্রতিকার চেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার সূত্র ধরে তদন্তে নামে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের সাইবার ইন্টিলিজেন্ট টিমের প্রধান পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদের নেতৃত্বাধীন টিম অভিযান চালিয়ে চক্রের মূল হোতা মোঃ হাসেম ও তার সহযোগি মো: তানজীল আহমেদ ওরফে তানজীল হাসানকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর এ চক্রের প্রতারণার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পায় সিআইডি।
পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ জানান, প্রতারক হাসেম পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। সে নয়টি ভাষা ও কন্ঠে কথা বলতে পারদর্শী। প্রতারণার টাকায় গ্রামে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ি করেছেন। কিনেছেন বিপুল জমিজমা। ঢাকায় কোটি টাকা ব্যায়ে অত্যাধুনিক ফ্লাট কিনেছেন। তার সহযোগি তানজীল ৪০ লাখ টাকা খরচ করে একটি গাড়ি কিনেছেন। এছাড়া কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে ই কমার্স ব্যবসা করছেন। হাসেম নিজেও স্ত্রী ও স্বজনদের নামে বেনামে বিপুল সম্পদ ও ব্যবসা গড়েছেন।
সিআইডি বলছে, ৫৯ বছর বয়সী মিসেস আনোয়ারা বেগম (৫৯) একজন অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তার তিন ছেলে-মেয়ে রয়েছে। তারা প্রত্যেকেই দেশের বাইরে থাকে। আনোয়ারা বেগমের স্বামী দেশের একজন নামকরা চিকিৎসক। চাকুরী থেকে অবসরের পর মিসেস আনোয়ারা দিনের অধিকাংশ সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ঘাটাঘাটি করে সময় কাটাতেন। তার পারিবারিক কিছু সমস্যা ছিলো। স্বামীকে সন্দেহ করতেন অন্য নারীর সঙ্গে সম্পক্য আছে। এসব সমস্যার কারণে তিনি হতাশাগ্রস্থ ছিলেন। সাংসারিক ঝামেলা থেকে রেহই পেতে নানাভাবে চেষ্টা করছিলেন আনোয়ারা বেগম। এমন অবস্থায় হঠাৎ একদিন ফেইসবুক স্ক্রল করার সময় তার সামনে একটি বিজ্ঞাপন আসে।
ফোন দেওয়ার সাথে সাথে বিজ্ঞাপন দেওয়া দরবেশ বাবা বেশধারী ব্যক্তি তার সাথে খুব সুন্দর করে কথা বলে তার পারিবারিক সমস্যা শুনতে চায়। তিনি তখন তার পারিবারিক কিছু সমস্যার কথা উক্ত দরবেশ বাবার সাথে আলোচনা করেন।
দরবেশ বাবার এরুপ সুন্দর ব্যবহার ও কথা বলে দরবেশ বাবা তার বিকাশ নম্বরে একটা বড় অ্যামাউন্টের টাকা বিকাশ করতে বলে। মিসেস আনোয়ারা বেগম দরবেশ বাবার সুন্দর ব্যবহার ও কথায় তার ভক্ত হয়ে যায়। তখন উক্ত নম্বরে দরবেশ বাবার কথা মতো বিকাশে টাকা পাঠান। এই ভাবে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে দরবেশ বাবা মিসেস আনোয়ারা বেগমকে ফোন করে বিভিন্ন অজুহাতে ও ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় সাত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে এক সময় মিসেস আনোয়ারা বেগম যখন বুঝতে পারেন তিনি প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন, তখন প্রতিকার পাওয়ার জন্য মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন । মামলার পর তিনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিতেও অভিযোগ করেন।