ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি না করায় সাঁথিয়া পৌর মেয়রের কক্ষে মাদ্রাসা সুপারকে নির্যাতন

৯৯৯ এর কলে উদ্ধার

পাবনার সাঁথিয়া পৌরসভার মেয়রের অফিস কক্ষে মো. আবদুর বারী নামের এক মাদ্রাসা সুপারকে মারপিট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে তাকে উদ্ধার করছে পুলিশ। গতকাল সকাল ১০টার দিকে সাঁথিয়া পৌরসভার মেয়র মাহবুবুল আলম বাচ্চুর কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। আবদুল বারী পাবনা সদরের বাঙ্গাবাড়িয়ার আবদুল গফুর জোয়ার্দারের ছেলে ও সাঁথিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সুপার।

সাঁথিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মোক্তার হোসেন জানান, ‘আমি আর সুপার একসঙ্গে গতকাল সকাল ৯টার দিকে মাদ্রাসায় এসে অফিস কক্ষে বসে কাজ শুরু করি। আধাঘণ্টা পর সাঁথিয়া পৌর মেয়র মাহাবুবুল আলম বাচ্চুর আস্থাভাজন দুইজন লোক বিশু ও সাদ্দাম এসে আমাদের পৌরসভায় যেতে বলে। প্রথমে আমরা একটু পর আসছি বলে তাদের বিদায় দেয়ার চেষ্টা করলে তারা আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে শুরু করেন। পরে আমরা বাধ্য হয়েই তাদের সঙ্গে রওনা দেই। পৌরসভায় মেয়রের কক্ষে ঢুকতেই অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন মেয়র বাচ্চু। তার কিছুক্ষণ পর তিনি বের হয়ে গেলেই সুপারকে অন্য কক্ষে নিয়ে বিশু সাদ্দামসহ আরও ৪-৫ জন কিলঘুসি থাপ্পড় মারতে শুরু করে। পরে আমি সেখান থেকে বের হয়ে কৌশলে কয়েকজনকে মুঠোফোনের মাধ্যমে বিষয়টি অবহিত করি। এর কিছুক্ষণ পরই থানা থেকে পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে। তবে উপস্থিত পুলিশকে তারা পৌর ট্যাক্সের জন্য ডাকা হয়েছে বলে মিথ্যা বলে পালিয়ে যায়।’

তিনি আরও জানান, পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর ছেলে বেড়া পৌর মেয়র আসিফ শামস রঞ্জন সাঁথিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল রানা খোকনকে আমাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি করার জন্য নির্দেশ দিলে তাকে সভাপতি করা হয়। এমপি স্যারের ছেলের কথা মতো সভাপতি করায় পৌর মেয়র ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের মারপিট করেছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন। এই বিষয়টি ছাড়া পৌর মেয়র বা তার লোকজনের সঙ্গে আমাদের কোন ঝামেলা নেই। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করছি।

সাঁথিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সুপারিন্টেনডেন্ট (সুপার) মো. আবদুল বারী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সাঁথিয়ার পৌর মেয়রের অফিস কক্ষে আটকে রেখে মারপিট করেছেন। আমি প্রচ- নিরপত্তাহীনতায় ভুগছি। ভয়ে বাড়িতে চলে এসেছি। সাঁথিয়া থানায় যেতেও নিরাপদ বোধ করিনি। তবে পুলিশ সুপারকে ফোনে বিস্তারিত জানিয়েছি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি এবং আইনগতভাবে মোকাবিলা করবো বলেও জানান তিনি।

আর অন্য কাজে থাকায় বিস্তারিত বলতেও পারছি না।

অভিযুক্ত সাঁথিয়া পৌর মেয়র মাহবুবুল আলম বাচ্চু বলেন, এ অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সকাল ১০টায় আমি ইউএনও অফিসে ছিলাম। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে গুজব ছড়াচ্ছে।

এ বিষয়ে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, সাঁথিয়া থানার ওসি (তদন্ত) আবদুল লতিফ মাদ্রাসা সুপার ও অফিস সহকারীকে আটকিয়ে মারপিট করা হচ্ছে জানিয়ে উদ্ধারের জন্য ৯৯৯ এর কল পেয়েছিল। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। আমরা জানি ডেপুটি স্পিকারের নির্দেশ ছিল পৌর মেয়রকে সভাপতি করার জন্য। পরে ডেপুটি স্পিকারের ছেলের নির্দেশে আরেকজনকে সভাপতি করেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এরই জের ধরে রাগের বশে হয়তো মেয়রের লোকজন এমন কাজ করেছেন। এখনো আমরা লিখিত অভিযোগ পাইনি, পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর বক্তব্য জানতে তার ফোনে কল দিয়ে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৪ আশ্বিন ১৪৩০, ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি না করায় সাঁথিয়া পৌর মেয়রের কক্ষে মাদ্রাসা সুপারকে নির্যাতন

৯৯৯ এর কলে উদ্ধার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, পাবনা

পাবনার সাঁথিয়া পৌরসভার মেয়রের অফিস কক্ষে মো. আবদুর বারী নামের এক মাদ্রাসা সুপারকে মারপিট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে তাকে উদ্ধার করছে পুলিশ। গতকাল সকাল ১০টার দিকে সাঁথিয়া পৌরসভার মেয়র মাহবুবুল আলম বাচ্চুর কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। আবদুল বারী পাবনা সদরের বাঙ্গাবাড়িয়ার আবদুল গফুর জোয়ার্দারের ছেলে ও সাঁথিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সুপার।

সাঁথিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মোক্তার হোসেন জানান, ‘আমি আর সুপার একসঙ্গে গতকাল সকাল ৯টার দিকে মাদ্রাসায় এসে অফিস কক্ষে বসে কাজ শুরু করি। আধাঘণ্টা পর সাঁথিয়া পৌর মেয়র মাহাবুবুল আলম বাচ্চুর আস্থাভাজন দুইজন লোক বিশু ও সাদ্দাম এসে আমাদের পৌরসভায় যেতে বলে। প্রথমে আমরা একটু পর আসছি বলে তাদের বিদায় দেয়ার চেষ্টা করলে তারা আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে শুরু করেন। পরে আমরা বাধ্য হয়েই তাদের সঙ্গে রওনা দেই। পৌরসভায় মেয়রের কক্ষে ঢুকতেই অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন মেয়র বাচ্চু। তার কিছুক্ষণ পর তিনি বের হয়ে গেলেই সুপারকে অন্য কক্ষে নিয়ে বিশু সাদ্দামসহ আরও ৪-৫ জন কিলঘুসি থাপ্পড় মারতে শুরু করে। পরে আমি সেখান থেকে বের হয়ে কৌশলে কয়েকজনকে মুঠোফোনের মাধ্যমে বিষয়টি অবহিত করি। এর কিছুক্ষণ পরই থানা থেকে পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে। তবে উপস্থিত পুলিশকে তারা পৌর ট্যাক্সের জন্য ডাকা হয়েছে বলে মিথ্যা বলে পালিয়ে যায়।’

তিনি আরও জানান, পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর ছেলে বেড়া পৌর মেয়র আসিফ শামস রঞ্জন সাঁথিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল রানা খোকনকে আমাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি করার জন্য নির্দেশ দিলে তাকে সভাপতি করা হয়। এমপি স্যারের ছেলের কথা মতো সভাপতি করায় পৌর মেয়র ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের মারপিট করেছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন। এই বিষয়টি ছাড়া পৌর মেয়র বা তার লোকজনের সঙ্গে আমাদের কোন ঝামেলা নেই। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করছি।

সাঁথিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সুপারিন্টেনডেন্ট (সুপার) মো. আবদুল বারী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সাঁথিয়ার পৌর মেয়রের অফিস কক্ষে আটকে রেখে মারপিট করেছেন। আমি প্রচ- নিরপত্তাহীনতায় ভুগছি। ভয়ে বাড়িতে চলে এসেছি। সাঁথিয়া থানায় যেতেও নিরাপদ বোধ করিনি। তবে পুলিশ সুপারকে ফোনে বিস্তারিত জানিয়েছি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি এবং আইনগতভাবে মোকাবিলা করবো বলেও জানান তিনি।

আর অন্য কাজে থাকায় বিস্তারিত বলতেও পারছি না।

অভিযুক্ত সাঁথিয়া পৌর মেয়র মাহবুবুল আলম বাচ্চু বলেন, এ অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সকাল ১০টায় আমি ইউএনও অফিসে ছিলাম। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে গুজব ছড়াচ্ছে।

এ বিষয়ে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, সাঁথিয়া থানার ওসি (তদন্ত) আবদুল লতিফ মাদ্রাসা সুপার ও অফিস সহকারীকে আটকিয়ে মারপিট করা হচ্ছে জানিয়ে উদ্ধারের জন্য ৯৯৯ এর কল পেয়েছিল। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। আমরা জানি ডেপুটি স্পিকারের নির্দেশ ছিল পৌর মেয়রকে সভাপতি করার জন্য। পরে ডেপুটি স্পিকারের ছেলের নির্দেশে আরেকজনকে সভাপতি করেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এরই জের ধরে রাগের বশে হয়তো মেয়রের লোকজন এমন কাজ করেছেন। এখনো আমরা লিখিত অভিযোগ পাইনি, পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর বক্তব্য জানতে তার ফোনে কল দিয়ে তা বন্ধ পাওয়া যায়।