জমি কেনার কথা বলে ঘড়ির ব্যবসায় বিনিয়োগে লাভ হবে এমন প্রলোভন দেখিয়ে সাইফুল নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। এ ঘটনায় চক্রটির বিরুদ্ধে মামলা করলে সেটির তদন্ত পায় পিবিআই। এরপর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চক্রটির আসল রহস্য। ইতোমধ্যে চক্রটির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। গত শনিবার রাতে উত্তরায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
মূলত তারা কেউ জমি কেনার বিজ্ঞাপন দিলেই তার কাছে ছুটে যায়। এরপর জমি কিনবে বলে প্রলোভন দেখায়। যখন বুঝতে পারে জমি বিক্রেতার কাছে টাকা রয়েছে তখন তাকে তারা দামি ঘড়ির ব্যবসায় বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়। এভাবে তারা দামি ঘড়ি বিক্রির ব্যবসায় বিনিয়োগে শেয়ারের নামে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা।
তদন্তে পিবিআই জানতে পারে, বহুমাত্রিক ব্যবসার লোভ দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে ও প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। চক্রের মূলহোতা আবদুল বারী ওরফে আফসার উদ্দিন খাঁন ওরফে বজলুর রহমান মাসুদ (৬৬)। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। গতকাল দুপুরে আগারগাঁওয়ে পিবিআই ঢাকা মেট্রো-উত্তর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, চলতি বছরের জুলাই মাসে আবদুল মান্নান নামের এক ব্যক্তির ছোট ভায়রা সাইফুল ইসলাম ২৬ শতক জমি বিক্রয়ের জন্য অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেন। বিজ্ঞাপন দেয়ার পর ইঞ্জিনিয়ার শরীফ নামে একজন জানান, তার মালিক আফসার উদ্দিন খাঁন (৬৬) জমি ক্রয় করবেন। সাইফুলকে জমির কাগজপত্র নিয়ে উত্তরা বিমানবন্দর থানার ১ নং সেক্টরের ৬ নং রোডের ৩ নং বাড়ির ৪র্থ তলায় যেতে বলেন। সাইফুল ইসলাম ও আবদুল মান্নান গত ১৭ জুলাই জমির মূল্য নির্ধারণ করেন।
১৯ জুলাই চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে গ্রেপ্তারকৃত মোয়াজ্জেম হোসেন (৬৫) হঠাৎ করে আফসার উদ্দিন খাঁনকে বলেন, তার মালিক ভারতীয় নাগরিক। তিনি কিছু দামি ব্রান্ডের ঘড়ি ক্রয় করবেন। ঘড়ি দিতে পারলে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার নগদ ব্যবসা হবে। তখন মূলহোতা আফসার ও মোয়াজ্জেম ভারতীয় নাগরিক মালিককে আসতে বলেন। প্রায় আধা ঘণ্টা পর এক লোক আসেন। তাকে ভারতীয় নাগরিক ও ঘড়ি কেনার জন্য আসছেন মর্মে পরিচয় করে দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ভারতীয় নাগরিক পরিচয় দিয়ে ঘড়ির ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে মূলহোতা আফসারকে ঘড়ি ক্রয় বাবদ অগ্রিম প্রায় ৩৫ লাখ টাকা প্রদান করেন এবং অবশিষ্ট টাকা পরদিন ১৮ জুলাই পরিশোধ করে ঘড়ি বুঝে নিয়ে যাবেন বলে চলে যান। পরে আফসার উদ্দিন খাঁন বাদী আবদুল মান্নানকেও এই ঘড়ির ব্যবসায় পার্টনার হওয়ার প্রস্তাব দেন। পার্টনার হতে ২০ লাখ টাকা দিতে হবে। তাহলে আমদানিকারক ঘড়ি সরবরাহ করবে এবং সবাই সমানভাবে ব্যবসায় লাভবান হবেন। সরল বিশ্বাসে আবদুল মান্নান ও তার ছোট ভায়রা সাইফুল ইসলাম পরদিন দুপুরে একই স্থানে নগদ ২০ লাখ টাকা আফসারের হাতে তুলে দেন। পরদিন জমি রেজিস্ট্রেশেন হওয়ার কথা। এরপর থেকে তাদের সবার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। কিছুতেই পাচ্ছিলেন না তাদের। তবে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে মোয়াজ্জেমকে হাতেনাতে আটকে রেখে বিমানবন্দর থানায় খবর দেন ভ্ক্তুভোগীরা। পুলিশ এসে মোয়াজ্জেমকে আটক করেন। এরপর মান্নান মামলা করলে সেটির তদন্ত শুরু করে পিবিআই। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চক্রটির হোতা আবদুল বারী। কিন্তু কখনো তিনি আফসার উদ্দিন খাঁন আবার বজলুর রহমান বলে আইডি কার্ড বানিয়ে পরিচয় দেন। তার বিরুদ্ধে মোট ৬টি প্রতারণার মামলা রয়েছে। তিনি গত মাসেই আদালত থেকে জামিনে বেড়িয়েছেন। কিন্তু বের হয়েই একই প্রতারণা শুরু করেন।
সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৪ আশ্বিন ১৪৩০, ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
জমি কেনার কথা বলে ঘড়ির ব্যবসায় বিনিয়োগে লাভ হবে এমন প্রলোভন দেখিয়ে সাইফুল নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। এ ঘটনায় চক্রটির বিরুদ্ধে মামলা করলে সেটির তদন্ত পায় পিবিআই। এরপর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চক্রটির আসল রহস্য। ইতোমধ্যে চক্রটির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। গত শনিবার রাতে উত্তরায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
মূলত তারা কেউ জমি কেনার বিজ্ঞাপন দিলেই তার কাছে ছুটে যায়। এরপর জমি কিনবে বলে প্রলোভন দেখায়। যখন বুঝতে পারে জমি বিক্রেতার কাছে টাকা রয়েছে তখন তাকে তারা দামি ঘড়ির ব্যবসায় বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়। এভাবে তারা দামি ঘড়ি বিক্রির ব্যবসায় বিনিয়োগে শেয়ারের নামে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা।
তদন্তে পিবিআই জানতে পারে, বহুমাত্রিক ব্যবসার লোভ দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে ও প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। চক্রের মূলহোতা আবদুল বারী ওরফে আফসার উদ্দিন খাঁন ওরফে বজলুর রহমান মাসুদ (৬৬)। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। গতকাল দুপুরে আগারগাঁওয়ে পিবিআই ঢাকা মেট্রো-উত্তর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, চলতি বছরের জুলাই মাসে আবদুল মান্নান নামের এক ব্যক্তির ছোট ভায়রা সাইফুল ইসলাম ২৬ শতক জমি বিক্রয়ের জন্য অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেন। বিজ্ঞাপন দেয়ার পর ইঞ্জিনিয়ার শরীফ নামে একজন জানান, তার মালিক আফসার উদ্দিন খাঁন (৬৬) জমি ক্রয় করবেন। সাইফুলকে জমির কাগজপত্র নিয়ে উত্তরা বিমানবন্দর থানার ১ নং সেক্টরের ৬ নং রোডের ৩ নং বাড়ির ৪র্থ তলায় যেতে বলেন। সাইফুল ইসলাম ও আবদুল মান্নান গত ১৭ জুলাই জমির মূল্য নির্ধারণ করেন।
১৯ জুলাই চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে গ্রেপ্তারকৃত মোয়াজ্জেম হোসেন (৬৫) হঠাৎ করে আফসার উদ্দিন খাঁনকে বলেন, তার মালিক ভারতীয় নাগরিক। তিনি কিছু দামি ব্রান্ডের ঘড়ি ক্রয় করবেন। ঘড়ি দিতে পারলে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার নগদ ব্যবসা হবে। তখন মূলহোতা আফসার ও মোয়াজ্জেম ভারতীয় নাগরিক মালিককে আসতে বলেন। প্রায় আধা ঘণ্টা পর এক লোক আসেন। তাকে ভারতীয় নাগরিক ও ঘড়ি কেনার জন্য আসছেন মর্মে পরিচয় করে দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ভারতীয় নাগরিক পরিচয় দিয়ে ঘড়ির ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে মূলহোতা আফসারকে ঘড়ি ক্রয় বাবদ অগ্রিম প্রায় ৩৫ লাখ টাকা প্রদান করেন এবং অবশিষ্ট টাকা পরদিন ১৮ জুলাই পরিশোধ করে ঘড়ি বুঝে নিয়ে যাবেন বলে চলে যান। পরে আফসার উদ্দিন খাঁন বাদী আবদুল মান্নানকেও এই ঘড়ির ব্যবসায় পার্টনার হওয়ার প্রস্তাব দেন। পার্টনার হতে ২০ লাখ টাকা দিতে হবে। তাহলে আমদানিকারক ঘড়ি সরবরাহ করবে এবং সবাই সমানভাবে ব্যবসায় লাভবান হবেন। সরল বিশ্বাসে আবদুল মান্নান ও তার ছোট ভায়রা সাইফুল ইসলাম পরদিন দুপুরে একই স্থানে নগদ ২০ লাখ টাকা আফসারের হাতে তুলে দেন। পরদিন জমি রেজিস্ট্রেশেন হওয়ার কথা। এরপর থেকে তাদের সবার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। কিছুতেই পাচ্ছিলেন না তাদের। তবে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে মোয়াজ্জেমকে হাতেনাতে আটকে রেখে বিমানবন্দর থানায় খবর দেন ভ্ক্তুভোগীরা। পুলিশ এসে মোয়াজ্জেমকে আটক করেন। এরপর মান্নান মামলা করলে সেটির তদন্ত শুরু করে পিবিআই। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চক্রটির হোতা আবদুল বারী। কিন্তু কখনো তিনি আফসার উদ্দিন খাঁন আবার বজলুর রহমান বলে আইডি কার্ড বানিয়ে পরিচয় দেন। তার বিরুদ্ধে মোট ৬টি প্রতারণার মামলা রয়েছে। তিনি গত মাসেই আদালত থেকে জামিনে বেড়িয়েছেন। কিন্তু বের হয়েই একই প্রতারণা শুরু করেন।