সুদের হার না বাড়ানোর অনুরোধ ব্যবসায়ীদের

ব্যাংকঋণে সুদের হার না বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠকে এ অনুরোধ জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, সুদহার অস্বাভাবিক হারে বাড়বে না। এখনকার পদ্ধতি অনুসারে সামান্য পরিমাণ ধাপে ধাপে বাড়তে পারে।

বৈঠক শেষে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘করোনাকালীন ও সংকটময় সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যেসব পলিসি নেয়া হয়েছে এজন্য গভর্নরকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। আগামীতে যেন সুদের হার না বাড়ে, আমরা গভর্নরকে সেই অনুরোধ জানিয়েছি। গভর্নর জানিয়েছেন, সুদহার তেমন বাড়ার কোন সুযোগ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঋণ পরিশোধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত দুটি শিল্প খাতকে সুবিধা দেয়া হয়েছে ঋণ পরিশোধে। আরও কিছু খাতকে এ সুবিধা দেয়া যায় কি না সেই বিষয়ে জানিয়েছি। যাতে ব্যবসায়ীরা ভালোমতো ব্যবসা করতে পারেন।’

ডলারের বিষয়ে গভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বলে জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, ‘নির্ধারিত দামে যেন ব্যবসায়ীরা ডলার কিনতে পারেন এজন্য আমরা অনুরোধ জানিয়েছে। গভর্নর জানিয়েছেন এটা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। এটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’

এলসি খোলা নিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের নিয়ে আমরা কথা বলেছি, তারা যেন এলসি খুলতে পারেন। গভর্নর এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন এবং ব্যাংকগুলোকে সেভাবেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘সুদহার না বাড়ানো নিয়ে এফবিসিসিআই বলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে অস্বাভাবিক হারে সুদহার বাড়বে না। এখনকার পদ্ধতি অনুসারে ধাপে ধাপে সামান্য বাড়তে পারে। গড় এভারেজ সেভাবেই করা হয়েছে।’

ডলারের দাম নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন ট্রেড ব্যালান্স সমান, দাম বেশি হওয়ার কথা না। ডলার রেট নির্ধারণ করে বাফেদা-এবিবি। আমরা তাদের দেয়া রেট নিয়ে কাজ করি।’

এছাড়াও ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে কেবল পুরুষ নয়, নারীকেও জামানতকারী দেখিয়ে ঋণ নিতে পারবেন নারী উদ্যোক্তারা। দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এমন পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। এক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছেন নারী উদ্যোক্তারাও। কিন্তু ব্যবসা পরিচালনা এবং সম্প্রসারণের জন্য নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তি এখনও ততটা সহজ হয়নি। নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোরও উৎসাহ কম দেখা যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এছাড়া ঋণ পাওয়ার জন্য একজন নারী উদ্যোক্তাকে তার বাবা, ভাই কিংবা স্বামীকে জামানতকারী হিসেবে দেখাতে হয়।

কোন নারীকে জামানতকারী হিসেবে দেখালে ব্যাংকগুলো সেটি গ্রহণ করতে চায় না। নারী উদ্যোক্তারা কোন নারী জামানতকারী দেখিয়ে ঋণ নিতে পারবে।’

এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘অর্থনৈতিক কর্মকা-ে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে আমরা ইতিমধ্যে নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছি। ব্যবসা, বাণিজ্য এবং শিল্পখাতে নারীরা যেন আরও এগিয়ে আসতে পারে সে লক্ষ্যে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ প্রাপ্তি ধাপে ধাপে আরও সহজ করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতিমধ্যে যার সুফল ভোগ করছেন অসংখ্য নারী উদ্যোক্তা।’

মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৫ আশ্বিন ১৪৩০, ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

সুদের হার না বাড়ানোর অনুরোধ ব্যবসায়ীদের

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

ব্যাংকঋণে সুদের হার না বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠকে এ অনুরোধ জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, সুদহার অস্বাভাবিক হারে বাড়বে না। এখনকার পদ্ধতি অনুসারে সামান্য পরিমাণ ধাপে ধাপে বাড়তে পারে।

বৈঠক শেষে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘করোনাকালীন ও সংকটময় সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যেসব পলিসি নেয়া হয়েছে এজন্য গভর্নরকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। আগামীতে যেন সুদের হার না বাড়ে, আমরা গভর্নরকে সেই অনুরোধ জানিয়েছি। গভর্নর জানিয়েছেন, সুদহার তেমন বাড়ার কোন সুযোগ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঋণ পরিশোধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত দুটি শিল্প খাতকে সুবিধা দেয়া হয়েছে ঋণ পরিশোধে। আরও কিছু খাতকে এ সুবিধা দেয়া যায় কি না সেই বিষয়ে জানিয়েছি। যাতে ব্যবসায়ীরা ভালোমতো ব্যবসা করতে পারেন।’

ডলারের বিষয়ে গভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বলে জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, ‘নির্ধারিত দামে যেন ব্যবসায়ীরা ডলার কিনতে পারেন এজন্য আমরা অনুরোধ জানিয়েছে। গভর্নর জানিয়েছেন এটা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। এটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’

এলসি খোলা নিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের নিয়ে আমরা কথা বলেছি, তারা যেন এলসি খুলতে পারেন। গভর্নর এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন এবং ব্যাংকগুলোকে সেভাবেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘সুদহার না বাড়ানো নিয়ে এফবিসিসিআই বলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে অস্বাভাবিক হারে সুদহার বাড়বে না। এখনকার পদ্ধতি অনুসারে ধাপে ধাপে সামান্য বাড়তে পারে। গড় এভারেজ সেভাবেই করা হয়েছে।’

ডলারের দাম নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন ট্রেড ব্যালান্স সমান, দাম বেশি হওয়ার কথা না। ডলার রেট নির্ধারণ করে বাফেদা-এবিবি। আমরা তাদের দেয়া রেট নিয়ে কাজ করি।’

এছাড়াও ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে কেবল পুরুষ নয়, নারীকেও জামানতকারী দেখিয়ে ঋণ নিতে পারবেন নারী উদ্যোক্তারা। দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এমন পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। এক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছেন নারী উদ্যোক্তারাও। কিন্তু ব্যবসা পরিচালনা এবং সম্প্রসারণের জন্য নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তি এখনও ততটা সহজ হয়নি। নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোরও উৎসাহ কম দেখা যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এছাড়া ঋণ পাওয়ার জন্য একজন নারী উদ্যোক্তাকে তার বাবা, ভাই কিংবা স্বামীকে জামানতকারী হিসেবে দেখাতে হয়।

কোন নারীকে জামানতকারী হিসেবে দেখালে ব্যাংকগুলো সেটি গ্রহণ করতে চায় না। নারী উদ্যোক্তারা কোন নারী জামানতকারী দেখিয়ে ঋণ নিতে পারবে।’

এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘অর্থনৈতিক কর্মকা-ে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে আমরা ইতিমধ্যে নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছি। ব্যবসা, বাণিজ্য এবং শিল্পখাতে নারীরা যেন আরও এগিয়ে আসতে পারে সে লক্ষ্যে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ প্রাপ্তি ধাপে ধাপে আরও সহজ করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতিমধ্যে যার সুফল ভোগ করছেন অসংখ্য নারী উদ্যোক্তা।’