চার প্রতিষ্ঠানকে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি

অবশেষে ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। দামের লাগাম টানতে পাশের দেশ ভারত থেকে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চার প্রতিষ্ঠানকে এই চার কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র। সূত্র জানায়, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন চার কোটি ডিমের প্রয়োজন। উল্লেখ্য, গতকাল কলকাতায় এক হালি মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে ২৬ রুপিতে (৩৪.২৯ টাকা)। প্রতি পিসে যার দাম আসে সাড়ে আট টাকা। গত ১৪ সেপ্টেম্বর নিত্যপ্রয়োজনীয় আমিষের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ডিমের খুচরা দাম ১২ টাকা ও তেলের লিটার ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করে সরকার।

সে দিন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী জানিয়েছিলেন, স্থানীয়বাজারে ডিমের দাম না কমলে সরকার ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নেবে। তবে সরকারের বেঁধে দেয়া দামের প্রভাব পড়েনি রাজধানীর কাঁচাবাজারে। রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র কয়েকটি দোকানে একটি ডিম ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশিরভাগই ১৩ টাকা ৫০ টাকায দরে বিক্রি করছে।

এর আগে বাজারে সরকার ডিমের দাম কয়েকবার নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু সরকারের নির্ধারণ করা দামে কাউকে বিক্রি করতে দেখা যায়নি। গত একবছর ধরেই ডিমের দাম বেড়েই চলছে। গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু এবার কেউ নির্ধারণ করা দামে বিক্রি করছে না। ফলে ডিম আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

ভারতের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া ও আজারবাইজান থেকেও আমদানির চেষ্টা চলছে। চারটি প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হয় গত রোববার। তারা হলো মীম এন্টারপ্রাইজ, প্রাইম এনার্জি ইমপোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লায়ার্স, টাইগার ট্রেডিং ও অর্ণব ট্রেডিং লিমিটেড।

দেশের বাজারের ডিম সংকট ও বাড়তি দামের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর নভেম্বরে ৬টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ৫১ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি চেয়ে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছিল। তখন অনুমতি দেয়া হয়নি।

বাজারে এখন ফার্মের মুরগির এক হালি বাদামি বিক্রি হচ্ছে, ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে। ডিমের দাম বছর দুই ধরেই বাড়তি। তবে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এক বছর ধরে। এমনকি হালিপ্রতি দর ৬০ টাকায়ও উঠেছিল। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবির) হিসাবে, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বাজারে এক হালি ডিমের দাম ২৮ থেকে ৩০ টাকা ছিল।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ‘দেশের বাজারে প্রতিটি ডিম তারা ১০ টাকার কমে বিক্রি করতে পারবে। আর ভারত থেকে ডিম আসতে সময় লাগতে পারে এক সপ্তাহের মতো।’

তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘ডিম আমদানি করে খুব একটা দাম কমানো যাবে না। দেশে ডিমের উৎপাদন যে খরচ তাতে ডিমের দাম কমবে না। আমদানি করে খুব একটা সুবিধাও হবে।’

মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমদানি করা ডিম লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার এক সপ্তাহের মধ্যে এসে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যেই এটি শুরু হবে।’

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘চারটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি এক কোটি করে ডিম আমদানি করবে। আমাদের লক্ষ্য দেশের বাজারে ডিমের দাম কমিয়ে আনা। সেজন্য আমদানির অনুমতি দেয়া শুরু হয়েছে। ডিমের দাম না কমা পর্যন্ত আমরা এটা চালিয়ে যাবো।’

দেশে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার পর কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ডিম আমদানি করতে অনুমতি চেয়েছিল। তাদের মধ্য থেকে চারটি প্রতিষ্ঠানকে গত রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম আমদানির এই অনুমতি দেয়।

তারই ধারাবাহিকতায় ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হায়দার আলী।

তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত রোববার দেশের চার প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে মোট চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। আমদানি করা ডিম খুচরাপর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দাম প্রতি পিস ১২ টাকায় বিক্রি হবে। আমদানি করা ডিম লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার এক সপ্তাহের মধ্যে এসে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে প্রতিদিন চার কোটি ডিমের প্রয়োজন হয়। এজন্য দেশের বাজারে ডিমের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে প্রাথমিক পর্যায়ে সরকার আমদানির পর বাজার স্থিতিশীল আছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করবে এবং বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

গত বৃহস্পতিবার খুচরাপর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, ‘ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা হওয়ায় আমরা এই দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। প্রতি পিস ডিম এখন থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করতে হবে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।’ ওই দিন ডিম আমদানির সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৫ আশ্বিন ১৪৩০, ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

চার প্রতিষ্ঠানকে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

অবশেষে ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। দামের লাগাম টানতে পাশের দেশ ভারত থেকে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চার প্রতিষ্ঠানকে এই চার কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র। সূত্র জানায়, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন চার কোটি ডিমের প্রয়োজন। উল্লেখ্য, গতকাল কলকাতায় এক হালি মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে ২৬ রুপিতে (৩৪.২৯ টাকা)। প্রতি পিসে যার দাম আসে সাড়ে আট টাকা। গত ১৪ সেপ্টেম্বর নিত্যপ্রয়োজনীয় আমিষের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ডিমের খুচরা দাম ১২ টাকা ও তেলের লিটার ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করে সরকার।

সে দিন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী জানিয়েছিলেন, স্থানীয়বাজারে ডিমের দাম না কমলে সরকার ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নেবে। তবে সরকারের বেঁধে দেয়া দামের প্রভাব পড়েনি রাজধানীর কাঁচাবাজারে। রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র কয়েকটি দোকানে একটি ডিম ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশিরভাগই ১৩ টাকা ৫০ টাকায দরে বিক্রি করছে।

এর আগে বাজারে সরকার ডিমের দাম কয়েকবার নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু সরকারের নির্ধারণ করা দামে কাউকে বিক্রি করতে দেখা যায়নি। গত একবছর ধরেই ডিমের দাম বেড়েই চলছে। গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু এবার কেউ নির্ধারণ করা দামে বিক্রি করছে না। ফলে ডিম আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

ভারতের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া ও আজারবাইজান থেকেও আমদানির চেষ্টা চলছে। চারটি প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হয় গত রোববার। তারা হলো মীম এন্টারপ্রাইজ, প্রাইম এনার্জি ইমপোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লায়ার্স, টাইগার ট্রেডিং ও অর্ণব ট্রেডিং লিমিটেড।

দেশের বাজারের ডিম সংকট ও বাড়তি দামের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর নভেম্বরে ৬টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ৫১ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি চেয়ে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছিল। তখন অনুমতি দেয়া হয়নি।

বাজারে এখন ফার্মের মুরগির এক হালি বাদামি বিক্রি হচ্ছে, ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে। ডিমের দাম বছর দুই ধরেই বাড়তি। তবে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এক বছর ধরে। এমনকি হালিপ্রতি দর ৬০ টাকায়ও উঠেছিল। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবির) হিসাবে, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বাজারে এক হালি ডিমের দাম ২৮ থেকে ৩০ টাকা ছিল।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ‘দেশের বাজারে প্রতিটি ডিম তারা ১০ টাকার কমে বিক্রি করতে পারবে। আর ভারত থেকে ডিম আসতে সময় লাগতে পারে এক সপ্তাহের মতো।’

তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘ডিম আমদানি করে খুব একটা দাম কমানো যাবে না। দেশে ডিমের উৎপাদন যে খরচ তাতে ডিমের দাম কমবে না। আমদানি করে খুব একটা সুবিধাও হবে।’

মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমদানি করা ডিম লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার এক সপ্তাহের মধ্যে এসে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যেই এটি শুরু হবে।’

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘চারটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি এক কোটি করে ডিম আমদানি করবে। আমাদের লক্ষ্য দেশের বাজারে ডিমের দাম কমিয়ে আনা। সেজন্য আমদানির অনুমতি দেয়া শুরু হয়েছে। ডিমের দাম না কমা পর্যন্ত আমরা এটা চালিয়ে যাবো।’

দেশে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার পর কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ডিম আমদানি করতে অনুমতি চেয়েছিল। তাদের মধ্য থেকে চারটি প্রতিষ্ঠানকে গত রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম আমদানির এই অনুমতি দেয়।

তারই ধারাবাহিকতায় ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হায়দার আলী।

তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত রোববার দেশের চার প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে মোট চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। আমদানি করা ডিম খুচরাপর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দাম প্রতি পিস ১২ টাকায় বিক্রি হবে। আমদানি করা ডিম লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার এক সপ্তাহের মধ্যে এসে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে প্রতিদিন চার কোটি ডিমের প্রয়োজন হয়। এজন্য দেশের বাজারে ডিমের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে প্রাথমিক পর্যায়ে সরকার আমদানির পর বাজার স্থিতিশীল আছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করবে এবং বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

গত বৃহস্পতিবার খুচরাপর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, ‘ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা হওয়ায় আমরা এই দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। প্রতি পিস ডিম এখন থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করতে হবে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।’ ওই দিন ডিম আমদানির সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।