ব্রিফিংয়ে একাধিক প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন সিইসি

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে থাকবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সিইসি কিছু প্রশ্নের উত্তর এড়িয়েও যান। একটি প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এর উত্তর তিনি এখন দিচ্ছেন না।’ আরেকটি প্রশ্নে বলেন, ‘এই মুহূর্তে চট করে’ তিনি উত্তর দিতে পারবেন না। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করবেন না।

জামালপুরের জেলা প্রশাসককে (ডিসি) প্রত্যাহার করার চিঠি দেয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘তফসিলের আগে চিঠি দিতে কোথাও বাধা নেই। পাঁচ বছর পুরো সময়টাই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব, কর্তব্য, এখতিয়ার রয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর স্পেসিফিক কিছু দায়িত্ব বাধ্যতামূলকভাবে আমাদের করতেই হবে।’

তফসিলের আগেও এমনটি করা যায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যদি এমন কোন কিছু হয় যেটা নির্বাচনের আস্থা, সরকার বা নির্বাচন কমিশনের আস্থাভাজনতা বা যারা নির্বাচন করবেন তাদের পক্ষপাতহীন আচরণ নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে, তাহলে নির্বাচন কমিশন অবশ্যই সরকারের নজরে সেটা আনতে পারে। এটা নির্বাচনের স্বার্থে, মানুষের আস্থার স্বার্থে, সরকারের স্বার্থে এবং নির্বাচন কমিশনের স্বার্থে।’

বিরোধী দলগুলো বলছে, ভোটের পরিবেশ এখন নেই। তফসিলের আগে ইসির যেহেতু কাজ করার সুযোগ আছে, তাহলে তারা ভোটের পরিবেশ নিয়ে কি কাজ শুরু করেছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘খুব জটিল প্রশ্ন।’ তিনি এখন এই মুহূর্তে উত্তর দিতে পারবেন না। ভোটের পরিবেশ তারা নিশ্চয়ই পর্যবেক্ষণ করতে থাকবেন। এটাকে বলে প্রক্ষেপণ। নির্বাচন তিন মাস, চার মাস, ছয় মাস পরে হবে। কিন্তু তাদের পর্যবেক্ষণ ও প্রক্ষেপণ অবশ্যই সজাগ রাখতে হবে।

উদাহরণ হিসেবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘মনে করুন, কাল জেলা প্রশাসকেরা একটা অ্যাসোসিয়েশন করলেন। তারা সবাই ঢাকা এসে বললেন, এবার একটা বিশেষ দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসবেন। নির্বাচন আরও ছয় মাস পর। ইসি কি নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকব? সেখানে তাদের তো একটি নির্দেশনা দিতে হবে যে তারা এভাবে আচরণ করতে পারেন না। কারণ, জেলা প্রশাসক গুরুত্বপূর্ণ পদ। অনেক ক্ষেত্রে তাদের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করতে হয়। পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি তাদেরই দেখতে হয়। তাই কোনভাবেই ইসি চাইবে না, কোন জেলা প্রশাসকের আচরণে পক্ষপাত প্রতিফলিত হোক। এটা ইসি কখনোই চাইবে না।’

আসছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে যেকোন দিন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে। তফসিল ঘোষণা করা হবে নভেম্বরে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসির রোডম্যাপে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছেÑ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা, প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করা। এই চ্যালেঞ্জে মোকাবিলায় অগ্রগতির বিষয়ে প্রশ্নে সিইসি বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করবেন না।

এখন কেউ ভোট চাইতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, এর উত্তর তিনি ‘এখন দিচ্ছেন না।’

প্রধানমন্ত্রী সরকারি সফরে গিয়ে ভোট চাইলে সেখানে কমিশনের কি কথা বলার এখতিয়ার আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, এ প্রশ্নের উত্তর ‘এই মুহূর্তে চট করে’ তিনি ‘দিতে পারবেন না।’ এখন সবাই নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে। বিএনপি কথা বলছে, আওয়ামী লীগ কথা বলছে, জাতীয় পার্টি কথা বলছে। সবাই কথা বলছে, নিজেদের দৃষ্টিকোণ থেকে।’ সিইসি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি বলেন, ‘আপনারা আমাকে ছাড়া আর কাউকে ভোট দেবেন না’, তাহলে নিশ্চয়ই কমিশন হস্তক্ষেপ করতে পারবে। তবে এখন সবাই যেহেতু ভোট চাইছে, তাই এই বিষয় কমিশন সেভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেনি বলে মন্তব্য করেন হাবিবুল আউয়াল।

সম্প্রতি সুধীজনদের সঙ্গে ইসির সংলাপের অর্জন সম্পর্কে সিইসি বলেন, ‘তারা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করেন। দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা তাদের একটা দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশনের ওপর যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি সরকারের ওপর দায়িত্ব রয়েছে, রাজনীতিবিদদের ওপর দায়িত্ব রয়েছে, আরও অনেকের ওপর দায়িত্ব রয়েছে। তার মনে হয়, এই সংলাপের মাধ্যমে কিছুটা হলেও প্রত্যেকের ওপর একটা দায়িত্ববোধ বা একটা চাপ সৃষ্টি হতে পারে।’

মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৫ আশ্বিন ১৪৩০, ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

ব্রিফিংয়ে একাধিক প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন সিইসি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে থাকবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সিইসি কিছু প্রশ্নের উত্তর এড়িয়েও যান। একটি প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এর উত্তর তিনি এখন দিচ্ছেন না।’ আরেকটি প্রশ্নে বলেন, ‘এই মুহূর্তে চট করে’ তিনি উত্তর দিতে পারবেন না। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করবেন না।

জামালপুরের জেলা প্রশাসককে (ডিসি) প্রত্যাহার করার চিঠি দেয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘তফসিলের আগে চিঠি দিতে কোথাও বাধা নেই। পাঁচ বছর পুরো সময়টাই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব, কর্তব্য, এখতিয়ার রয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর স্পেসিফিক কিছু দায়িত্ব বাধ্যতামূলকভাবে আমাদের করতেই হবে।’

তফসিলের আগেও এমনটি করা যায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যদি এমন কোন কিছু হয় যেটা নির্বাচনের আস্থা, সরকার বা নির্বাচন কমিশনের আস্থাভাজনতা বা যারা নির্বাচন করবেন তাদের পক্ষপাতহীন আচরণ নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে, তাহলে নির্বাচন কমিশন অবশ্যই সরকারের নজরে সেটা আনতে পারে। এটা নির্বাচনের স্বার্থে, মানুষের আস্থার স্বার্থে, সরকারের স্বার্থে এবং নির্বাচন কমিশনের স্বার্থে।’

বিরোধী দলগুলো বলছে, ভোটের পরিবেশ এখন নেই। তফসিলের আগে ইসির যেহেতু কাজ করার সুযোগ আছে, তাহলে তারা ভোটের পরিবেশ নিয়ে কি কাজ শুরু করেছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘খুব জটিল প্রশ্ন।’ তিনি এখন এই মুহূর্তে উত্তর দিতে পারবেন না। ভোটের পরিবেশ তারা নিশ্চয়ই পর্যবেক্ষণ করতে থাকবেন। এটাকে বলে প্রক্ষেপণ। নির্বাচন তিন মাস, চার মাস, ছয় মাস পরে হবে। কিন্তু তাদের পর্যবেক্ষণ ও প্রক্ষেপণ অবশ্যই সজাগ রাখতে হবে।

উদাহরণ হিসেবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘মনে করুন, কাল জেলা প্রশাসকেরা একটা অ্যাসোসিয়েশন করলেন। তারা সবাই ঢাকা এসে বললেন, এবার একটা বিশেষ দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসবেন। নির্বাচন আরও ছয় মাস পর। ইসি কি নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকব? সেখানে তাদের তো একটি নির্দেশনা দিতে হবে যে তারা এভাবে আচরণ করতে পারেন না। কারণ, জেলা প্রশাসক গুরুত্বপূর্ণ পদ। অনেক ক্ষেত্রে তাদের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করতে হয়। পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি তাদেরই দেখতে হয়। তাই কোনভাবেই ইসি চাইবে না, কোন জেলা প্রশাসকের আচরণে পক্ষপাত প্রতিফলিত হোক। এটা ইসি কখনোই চাইবে না।’

আসছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে যেকোন দিন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে। তফসিল ঘোষণা করা হবে নভেম্বরে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসির রোডম্যাপে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছেÑ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা, প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করা। এই চ্যালেঞ্জে মোকাবিলায় অগ্রগতির বিষয়ে প্রশ্নে সিইসি বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করবেন না।

এখন কেউ ভোট চাইতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, এর উত্তর তিনি ‘এখন দিচ্ছেন না।’

প্রধানমন্ত্রী সরকারি সফরে গিয়ে ভোট চাইলে সেখানে কমিশনের কি কথা বলার এখতিয়ার আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, এ প্রশ্নের উত্তর ‘এই মুহূর্তে চট করে’ তিনি ‘দিতে পারবেন না।’ এখন সবাই নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে। বিএনপি কথা বলছে, আওয়ামী লীগ কথা বলছে, জাতীয় পার্টি কথা বলছে। সবাই কথা বলছে, নিজেদের দৃষ্টিকোণ থেকে।’ সিইসি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি বলেন, ‘আপনারা আমাকে ছাড়া আর কাউকে ভোট দেবেন না’, তাহলে নিশ্চয়ই কমিশন হস্তক্ষেপ করতে পারবে। তবে এখন সবাই যেহেতু ভোট চাইছে, তাই এই বিষয় কমিশন সেভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেনি বলে মন্তব্য করেন হাবিবুল আউয়াল।

সম্প্রতি সুধীজনদের সঙ্গে ইসির সংলাপের অর্জন সম্পর্কে সিইসি বলেন, ‘তারা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করেন। দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা তাদের একটা দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশনের ওপর যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি সরকারের ওপর দায়িত্ব রয়েছে, রাজনীতিবিদদের ওপর দায়িত্ব রয়েছে, আরও অনেকের ওপর দায়িত্ব রয়েছে। তার মনে হয়, এই সংলাপের মাধ্যমে কিছুটা হলেও প্রত্যেকের ওপর একটা দায়িত্ববোধ বা একটা চাপ সৃষ্টি হতে পারে।’