নামজারিতে ঘুষ, তহশিলদারদের এসিল্যান্ডের নির্দেশনার অডিও ফাঁস

‘প্রতি নামজারিতে আমার অফিসে ৪ হাজার করে ঘুষ দিবেন এবং আপনারা অফিসে দেড় হাজার করে রাখবেন।’ স্থানীয় ইউনিয়ন তহশিলদারদের এভাবেই দিক নির্দেশনা দিয়েছেন নাজিরপুরের এসিল্যান্ড। পিরোজপুরের নাজিরপুরে স্থানীয় তহশিলদারদের সঙ্গে উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমানের এ সংক্রান্ত কথোপকথনের একটি অডিও সস্প্রতি ফাঁস হয়েছে।

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান সংবাদ প্রতিনিধিকে জানান, অডিওটা শুনেছি, এটা দুঃখজনক। তাদের সঙ্গে এমন কোন আলোচনা আমার হয়নি। আমি এখানে নতুন এসেছি। খাসজমি উদ্ধারসহ কিছু কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সেই কার্যক্রমগুলো শুরু করতে গিয়ে আমি বিভিন্ন ধরনের রোষানলের শিকার হচ্ছি। অডিওতে এখানে বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা আছে, এটা কোন জায়গায়, কোন প্রেক্ষিতে বলা হয়েছে, এটাও আমি পুরোপুরি বুঝতে পারছি না। আমি সিনিয়র স্কেল পরীক্ষার জন্য এই মুহূর্তে ঢাকায় অবস্থান করছি। পরীক্ষা দিয়ে আজ স্টেশনে যাবো। অফিসে গিয়ে বুঝতে পারব, বিষয়টি কী হয়েছে।

অডিও কথোপকথন থেকে জানা যায়, নাজিরপুর উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের ভূমি সহকারী তহশিলদারদের নিয়ে গত জুলাইয়ে বৈঠক করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান। বৈঠকে তিনি ভূমি সহকারী তহশিলদারদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখন আমাকে পরিষ্কার করে একটি বিষয় আপনাদের অবগত করতে হবে, আমি ইউএনও স্যারের চাপে আছি। ধরেন, আমার অফিস থেকে নামজারিতে অতিরিক্ত আদায় বন্ধ করা হলো। আপনারা পার কেইসে যে ডিল করেন। এটা আপনারা নিশ্চিত করবেন কীভাবে, যে আপনারা টাকা নিচ্ছেন না? আপনাদের মতামত শুনি। আপনারা কী চান? কত করে নেয়া হোক? খোলামেলা আলোচনা করেন, মতামত দেন সবাই এখানে যারা উপস্থিত আছেন। যদি বলেন স্যার, আপনি যদি না করে দেন, তাহলে নিশ্চিত করব আমরা কোন টাকা-পয়সার লেনদেন করব না। কিন্তু বাস্তবে এটা কখনো হবে না। আপনারা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন। কাজ করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই মানে খরচা আছে এবং বিভিন্ন ধরনের বিষয় আছে। যেটার কারণে এটা নিতে হচ্ছে বা নিচ্ছেন। এটা কমবেশি সবাই নিচ্ছে। কিন্তু এটা যে এই অফিসে দেয়া হইতেছে বিধায় আপনারা এটাকে বড় আকারে একটা কিছু করবেন, এই ধরনের অভিযোগ আসলে আমার জন্য বিব্রতকর। আমার প্রস্তাব হচ্ছে পার নামজারিতে আমার অফিসে ৪ হাজার করে দিবেন। আপনারা অফিসে দেড় হাজার করে রাখবেন।

জানা যায়, জমি খারিজ বা নামজারি করতে সরকার নির্ধারিত খরচ ১ হাজার ১৭০ টাকা হলেও নাজিরপুরের বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়গুলোর তহশিলদাররা দলিলভেদে নেন ৫ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ নামজারির আবেদনের জন্য কোর্ট ফি ২০ টাকা, নোটিশ জারি ফি ৫০ টাকা, রেকর্ড সংশোধন বা হালকরণ ফি ১ হাজার টাকা ও প্রতি কপি মিউটেশন খতিয়ান সরবরাহ বাবদ ১০০ টাকার বাইরে আর কোন খরচ নেই। তবে চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ না দিলে ভূমি কার্যালয় থেকে জমির নামজারি করতে পারেন না বলে অভিযোগ আছে।

এ বিষয়ে উপজেলা ভূমি অফিসের হয়রানির স্বীকার ভুক্তভোগীরা জানান, জমির খাজনা (দাখিলা) দেয়ার জন্য গেলেও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ না দিলে ঘুরতে হয় মাসের পর মাস।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ডা. সঞ্জীব দাস বলেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি। অভিযোগটি খুব গুরুত্ব সহকারে নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন, তদন্তে যদি ঘটনার সত্যতা প্রমান হয় তাহলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মো. জাহেদুর রহমান এক ক্ষুদে বার্তায় সংবাদ প্রতিনিধিকে জানান, অডিও কথোপকথনটি আমিও শুনেছি। বিষয়টির তদন্ত চলামন রয়েছে।

মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৫ আশ্বিন ১৪৩০, ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

নামজারিতে ঘুষ, তহশিলদারদের এসিল্যান্ডের নির্দেশনার অডিও ফাঁস

প্রতিনিধি, নাজিরপুর (পিরোজপুর)

‘প্রতি নামজারিতে আমার অফিসে ৪ হাজার করে ঘুষ দিবেন এবং আপনারা অফিসে দেড় হাজার করে রাখবেন।’ স্থানীয় ইউনিয়ন তহশিলদারদের এভাবেই দিক নির্দেশনা দিয়েছেন নাজিরপুরের এসিল্যান্ড। পিরোজপুরের নাজিরপুরে স্থানীয় তহশিলদারদের সঙ্গে উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমানের এ সংক্রান্ত কথোপকথনের একটি অডিও সস্প্রতি ফাঁস হয়েছে।

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান সংবাদ প্রতিনিধিকে জানান, অডিওটা শুনেছি, এটা দুঃখজনক। তাদের সঙ্গে এমন কোন আলোচনা আমার হয়নি। আমি এখানে নতুন এসেছি। খাসজমি উদ্ধারসহ কিছু কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সেই কার্যক্রমগুলো শুরু করতে গিয়ে আমি বিভিন্ন ধরনের রোষানলের শিকার হচ্ছি। অডিওতে এখানে বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা আছে, এটা কোন জায়গায়, কোন প্রেক্ষিতে বলা হয়েছে, এটাও আমি পুরোপুরি বুঝতে পারছি না। আমি সিনিয়র স্কেল পরীক্ষার জন্য এই মুহূর্তে ঢাকায় অবস্থান করছি। পরীক্ষা দিয়ে আজ স্টেশনে যাবো। অফিসে গিয়ে বুঝতে পারব, বিষয়টি কী হয়েছে।

অডিও কথোপকথন থেকে জানা যায়, নাজিরপুর উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের ভূমি সহকারী তহশিলদারদের নিয়ে গত জুলাইয়ে বৈঠক করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান। বৈঠকে তিনি ভূমি সহকারী তহশিলদারদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখন আমাকে পরিষ্কার করে একটি বিষয় আপনাদের অবগত করতে হবে, আমি ইউএনও স্যারের চাপে আছি। ধরেন, আমার অফিস থেকে নামজারিতে অতিরিক্ত আদায় বন্ধ করা হলো। আপনারা পার কেইসে যে ডিল করেন। এটা আপনারা নিশ্চিত করবেন কীভাবে, যে আপনারা টাকা নিচ্ছেন না? আপনাদের মতামত শুনি। আপনারা কী চান? কত করে নেয়া হোক? খোলামেলা আলোচনা করেন, মতামত দেন সবাই এখানে যারা উপস্থিত আছেন। যদি বলেন স্যার, আপনি যদি না করে দেন, তাহলে নিশ্চিত করব আমরা কোন টাকা-পয়সার লেনদেন করব না। কিন্তু বাস্তবে এটা কখনো হবে না। আপনারা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন। কাজ করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই মানে খরচা আছে এবং বিভিন্ন ধরনের বিষয় আছে। যেটার কারণে এটা নিতে হচ্ছে বা নিচ্ছেন। এটা কমবেশি সবাই নিচ্ছে। কিন্তু এটা যে এই অফিসে দেয়া হইতেছে বিধায় আপনারা এটাকে বড় আকারে একটা কিছু করবেন, এই ধরনের অভিযোগ আসলে আমার জন্য বিব্রতকর। আমার প্রস্তাব হচ্ছে পার নামজারিতে আমার অফিসে ৪ হাজার করে দিবেন। আপনারা অফিসে দেড় হাজার করে রাখবেন।

জানা যায়, জমি খারিজ বা নামজারি করতে সরকার নির্ধারিত খরচ ১ হাজার ১৭০ টাকা হলেও নাজিরপুরের বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়গুলোর তহশিলদাররা দলিলভেদে নেন ৫ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ নামজারির আবেদনের জন্য কোর্ট ফি ২০ টাকা, নোটিশ জারি ফি ৫০ টাকা, রেকর্ড সংশোধন বা হালকরণ ফি ১ হাজার টাকা ও প্রতি কপি মিউটেশন খতিয়ান সরবরাহ বাবদ ১০০ টাকার বাইরে আর কোন খরচ নেই। তবে চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ না দিলে ভূমি কার্যালয় থেকে জমির নামজারি করতে পারেন না বলে অভিযোগ আছে।

এ বিষয়ে উপজেলা ভূমি অফিসের হয়রানির স্বীকার ভুক্তভোগীরা জানান, জমির খাজনা (দাখিলা) দেয়ার জন্য গেলেও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ না দিলে ঘুরতে হয় মাসের পর মাস।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ডা. সঞ্জীব দাস বলেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি। অভিযোগটি খুব গুরুত্ব সহকারে নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন, তদন্তে যদি ঘটনার সত্যতা প্রমান হয় তাহলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মো. জাহেদুর রহমান এক ক্ষুদে বার্তায় সংবাদ প্রতিনিধিকে জানান, অডিও কথোপকথনটি আমিও শুনেছি। বিষয়টির তদন্ত চলামন রয়েছে।