আ’লীগ দু’পক্ষে সংঘর্ষ নিহত ১, আহত ১৭

কুমিল্লায় ও নরসিংদীতে গতকাল আওয়ামী লীগের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটা পৃথক দুটি সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৮ জন। উভয় ঘটনাতেই টেঁটা ও বন্দুকের ব্যবহার হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা-২ আসনের এমপি সেলিমা আহমাদ মেরীর অনুসারী জেলা পরিষদ সদস্য (মেঘনা উপজেলা) আবদুল কাইয়ুম গ্রুপ এবং মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির গ্রুপের মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এরই সূত্র ধরে গতকাল সকাল ৮টার দিকে দুই গ্রুপের লোকজনের মধ্যে মেঘনা উপজেলার চালিভাঙ্গা গ্রামে দফায় দফায় সংঘর্ষ, গুলিবিনিময়, টেঁটা ও লাঠিসোঁটা দিয়ে আঘাত-পাল্টা আঘাতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ১৮ জন আহত হয়েছেন। আহতদের বেশিরভাগকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চালিভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. নিজাম সরকার মারা যান। তিনি স্থানীয় নলচর গ্রামের মো. আব্বাসের ছেলে, মেঘনা উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবিরের ছোট ভাই।

স্থানীয়রা জানায়, আহতদের বেশিরভাগ টেঁটাবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন আছে। এছাড়া কয়েকজন গুলিবিদ্ধ রয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহতরা হলেন- মো. ইব্রাহীম (২৭), শাকিল (২১), খালেদ হাসান (১৮), টিটু (২৯), রমজান (৩৪), দেলোয়ার (৩০), আনিছ সরকার (২৪), সুমন (২২), ওয়াসিম (৩৫), হানিফ (৪৫)। অন্য আহতদের সোনারগাঁ ও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া হয়েছে।

চালিভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, জেলা পরিষদ সদস্য আবদুল কাইয়ুম ও তার লোকজন আমার ছোট ভাই নিজাম সরকারকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আবদুল কাইয়ুম বলেন, চেয়ারম্যান হুমায়ুনের লোকজন নিজেরা মারামারি করে আমাদের উপর দায় চাপাচ্ছে। এতে আমাদের লোকজন আহত হয়েছেন। মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল আলম বলেন, এমন হামলা ও হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি করছি। নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি পক্ষ পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জিএস সুমন সরকার বলেন, হামলা ও হত্যাকারী তাদের মদদদাতা যেই হোক না কেন তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।

মেঘনা থানার ওসি মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।

এদিকে নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী থানার চরদিঘলদীতে দুটি বিবাদমান গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে টেঁটাবিদ্ধসহ উভয়পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছে। সকালে চরদিঘলদী ইউয়িনের চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন শাহিন ও তার প্রতিপক্ষ ইকবাল হোসেন গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন- চরদীঘলদী ইউনিয়নের নয়াকান্দি এলাকার সুরজ মিয়ার ছেলে নাজিম উদ্দিন (৫২), নবাবপুরের মালেক মিয়ার ছেলে মো. সবুজ (৩৫), মান্নান মিয়ার ছেলে কবির মিয়া (৪৪), আবদুল হকের ছেলে শাকিল (২৫), কালু মিয়ার ছেলে এমদাদুল মিয়া (২৮), চরদিঘলদী গ্রামের কুদ্দুস মিয়ার ছেলে আবদুল মিয়া (৪৩) ও মৃত তাইজুদ্দিন মিয়ার ছেলে মনোয়ার (৪৫)।

এদের মধ্যে ৫ জনকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং দুইজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কবির মিয়া বলেন, ‘১৫ বছর পর মালয়েশিয়া থেকে সম্প্রতি এলাকায় ফিরেছিলাম। এলাকায় কী চলছে, তা-ও জানতাম না। ভোরে তারা হঠাৎ হামলা চালালে আমি সামনে পড়ে যাই। তারা আমার হাত-পাসহ পাঁচ জায়গায় টেঁটা বিদ্ধ করেছে। হাসপাতালে আসার পর শরীর থেকে এসব টেঁটা অপসারণ করা হয়।’

মাধবদী থানার ওসি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চরদিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন শাহিন ও ইকবাল হোসেন গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখনও কেউ মামলা করতে থানায় আসেনি।

মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৫ আশ্বিন ১৪৩০, ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

কুমিল্লা ও নরসিংদী

আ’লীগ দু’পক্ষে সংঘর্ষ নিহত ১, আহত ১৭

জেলা বার্তা পরিবেশক, কুমিল্লা ও নরসিংদী

কুমিল্লায় ও নরসিংদীতে গতকাল আওয়ামী লীগের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটা পৃথক দুটি সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৮ জন। উভয় ঘটনাতেই টেঁটা ও বন্দুকের ব্যবহার হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা-২ আসনের এমপি সেলিমা আহমাদ মেরীর অনুসারী জেলা পরিষদ সদস্য (মেঘনা উপজেলা) আবদুল কাইয়ুম গ্রুপ এবং মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির গ্রুপের মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এরই সূত্র ধরে গতকাল সকাল ৮টার দিকে দুই গ্রুপের লোকজনের মধ্যে মেঘনা উপজেলার চালিভাঙ্গা গ্রামে দফায় দফায় সংঘর্ষ, গুলিবিনিময়, টেঁটা ও লাঠিসোঁটা দিয়ে আঘাত-পাল্টা আঘাতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ১৮ জন আহত হয়েছেন। আহতদের বেশিরভাগকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চালিভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. নিজাম সরকার মারা যান। তিনি স্থানীয় নলচর গ্রামের মো. আব্বাসের ছেলে, মেঘনা উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবিরের ছোট ভাই।

স্থানীয়রা জানায়, আহতদের বেশিরভাগ টেঁটাবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন আছে। এছাড়া কয়েকজন গুলিবিদ্ধ রয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহতরা হলেন- মো. ইব্রাহীম (২৭), শাকিল (২১), খালেদ হাসান (১৮), টিটু (২৯), রমজান (৩৪), দেলোয়ার (৩০), আনিছ সরকার (২৪), সুমন (২২), ওয়াসিম (৩৫), হানিফ (৪৫)। অন্য আহতদের সোনারগাঁ ও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া হয়েছে।

চালিভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, জেলা পরিষদ সদস্য আবদুল কাইয়ুম ও তার লোকজন আমার ছোট ভাই নিজাম সরকারকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আবদুল কাইয়ুম বলেন, চেয়ারম্যান হুমায়ুনের লোকজন নিজেরা মারামারি করে আমাদের উপর দায় চাপাচ্ছে। এতে আমাদের লোকজন আহত হয়েছেন। মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল আলম বলেন, এমন হামলা ও হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি করছি। নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি পক্ষ পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জিএস সুমন সরকার বলেন, হামলা ও হত্যাকারী তাদের মদদদাতা যেই হোক না কেন তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।

মেঘনা থানার ওসি মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।

এদিকে নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী থানার চরদিঘলদীতে দুটি বিবাদমান গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে টেঁটাবিদ্ধসহ উভয়পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছে। সকালে চরদিঘলদী ইউয়িনের চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন শাহিন ও তার প্রতিপক্ষ ইকবাল হোসেন গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন- চরদীঘলদী ইউনিয়নের নয়াকান্দি এলাকার সুরজ মিয়ার ছেলে নাজিম উদ্দিন (৫২), নবাবপুরের মালেক মিয়ার ছেলে মো. সবুজ (৩৫), মান্নান মিয়ার ছেলে কবির মিয়া (৪৪), আবদুল হকের ছেলে শাকিল (২৫), কালু মিয়ার ছেলে এমদাদুল মিয়া (২৮), চরদিঘলদী গ্রামের কুদ্দুস মিয়ার ছেলে আবদুল মিয়া (৪৩) ও মৃত তাইজুদ্দিন মিয়ার ছেলে মনোয়ার (৪৫)।

এদের মধ্যে ৫ জনকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং দুইজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কবির মিয়া বলেন, ‘১৫ বছর পর মালয়েশিয়া থেকে সম্প্রতি এলাকায় ফিরেছিলাম। এলাকায় কী চলছে, তা-ও জানতাম না। ভোরে তারা হঠাৎ হামলা চালালে আমি সামনে পড়ে যাই। তারা আমার হাত-পাসহ পাঁচ জায়গায় টেঁটা বিদ্ধ করেছে। হাসপাতালে আসার পর শরীর থেকে এসব টেঁটা অপসারণ করা হয়।’

মাধবদী থানার ওসি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চরদিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন শাহিন ও ইকবাল হোসেন গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখনও কেউ মামলা করতে থানায় আসেনি।