রংপুরে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতার বাড়িতে সশস্ত্র হামলা, লুটপাট

রংপুর নগরীর আলমনগর স্টেশন রোড এলাকায় ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মাজেরুল ইসলাম লিটনের বাড়িতে প্রকাশ্য দিবালোকে আওয়ামী লীগের মহানগর কোতয়ালী মেট্রো থানার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ডলারের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে লিটনসহ তার স্বজনদের গুরুতর আহত ও মালামাল লুট এমনকি ঘরের টিন পর্যন্ত খুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দুপুর ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নারকীয় এ তা-ব চালানো হলেও পুলিশ আসেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ঘটনায় রংপুর মেট্রো কোতয়ালী থানায় ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা লিটন নিজেই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় কোতয়ালী মেট্রো থানার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ডলার, রংপুর সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা শরীফ খান, মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেনসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

কোতয়ালী মেট্রো থানার ওসি মাহফুজার রহমান মামলা দায়ের হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, এ ঘটনার পর লিটনের পরিবারের নিরাপত্তার জন্য সেখানে সার্বক্ষণিক পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এদিকে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা লিটন অভিযোগ করেছেন, আসামিরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাব দেখিয়ে তাকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদান করছে। এমনকি বাড়ির সামনে দলবল নিয়ে মহড়া প্রদর্শন করছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন থানায় মামলা দায়ের করার পরেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকেই গ্রেপ্তার করেনি। উল্টো আসামিরা প্রকাশ্যেই বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

থানায় দায়ের করা মামলায় ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা মাজেরুল ইসলাম লিটন অভিযোগ করেন, রংপুর নগরীর শাপলা স্টেশন রোডের বাসাটি তার নিজস্ব বাসা। বাসার সামনে দোকান আছে আসামি নাজমুল করিম ডলার এখন বাসাটি ও দোকান তার বলে দাবি করে আসছে। ইতোপূর্বে সে আমার মরহুম পিতা মফিজ উদ্দিনকে বিবাদী করে তাকে ভাড়াটিয়া বানিয়ে আদালতে ১৯৮৭ সালে মামলা দায়ের করে। মামলাটি বিজ্ঞ আদালত খারিজ করে দেয়। এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিভিউ আবেদন বিচারাধীন আছে। আসামি ডলার বেশ কিছুদিন ধরে আমাকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদান করে আসছিল। এ ঘটনায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর আমি কোতয়ালী মেট্রো থানায় সাধারণ ডায়েরি করি।

এরপরেও গত ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুর ৩টার দিকে আসামি ডলারের নেতৃত্বে শতাধিক লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমার বাড়িতে প্রবেশ করে। এ সময় আমি দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম। তখন আমার ছেলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঋত্র বাঁধা দিলে তাকেও মারধর করে। খবর শুনে আমার দুলাভাই সিনিয়র আইনজীবী উৎপল আদনান ঘটনাস্থলে আসলে আসামিরা তার ওপরও হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে। এরপর আসামিরা আমাকে বাড়ির কাছে মুরাদ মেশিনারিজ নামে দোকানে জোর করে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। এরপর আসামিরা নারকীয় তা-ব চালায়। তারা আমার বাসার স্টিলের ক্যাবিনেট ভেঙে ১৫ ভরি স্বর্ণের অলঙ্কার, নগদ ১৮ লাখ টাকা, একটি ল্যাপটপ, দুটি স্ট্যান্ড ফ্যান, ৫৬ ইঞ্চি কালার টিভি, আইপিএসসহ অর্ধ কোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এছাড়া আমার বাসার ও ছাদের টাইলস ড্রিল মেশিন দিয়ে ভাঙচুর করে ৬টি ঘরের টিনের চাল খুলে নিয়ে যায়। ২ ঘণ্টা ধরে তা-ব চালায় তারা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।

লিটন অভিযোগ করেন, আসামিরা যেভাবে আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে দুই ঘণ্টা ধরে তা-ব চালিয়েছে যা পাকহানাদার বাহিনীর বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। তারা আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এই তা-ব চালিয়েছে। দুই দিন ধরে খোলা আকাশের নীচে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটছে বলে জানান তিনি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মামলা প্রধান আসামি নাজমুল করিম ডলারের সঙ্গে গতকাল বেলা সাড়ে ১০টায় তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যে জমিতে লিটন বাস করে ওটা তার পৈত্রিক সম্পত্তি। অবৈধভাবে দখল করে আছে সে। এ ঘটনায় বিভিন্ন আদালতে মামলা হয়েছে। সব মামলার রায় তার পক্ষে এসেছে। লিটনের বাড়িতে হামলা, মালামাল লুট করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আর কতদিন মামলা চলবে সহ্যের সীমা আছে তো। তিনি মালামাল ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা সত্য নয় বলে দাবি করে বলেন, ৫৬ ইঞ্চ কালার টিভি আর ল্যাপটপ ভেঙেছে বলছে, প্রয়োজন হলে কিনে দেয়া হবে। আর মালামাল সবই তার বাড়িতে আছে। লুটপাট হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

অন্যদিকে মামলার অন্যতম আসামি ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওই দিক দিয়ে তিনি না কি যাচ্ছিলেন। লোকজন দেখে পুরো বিষয়টি মীমাংসা করে দিতে বলেছেন বলে দাবি করেন। তারপরেও তাকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। অন্যদিকে রংপুর মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে যাননি। তার নামে যে মামলা হয়েছে, তিনি সেই মুরাদ নন বলে দাবি করেন।

মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৫ আশ্বিন ১৪৩০, ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

রংপুরে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতার বাড়িতে সশস্ত্র হামলা, লুটপাট

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

image

রংপুর নগরীর আলমনগর স্টেশন রোড এলাকায় ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মাজেরুল ইসলাম লিটনের বাড়িতে প্রকাশ্য দিবালোকে আওয়ামী লীগের মহানগর কোতয়ালী মেট্রো থানার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ডলারের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে লিটনসহ তার স্বজনদের গুরুতর আহত ও মালামাল লুট এমনকি ঘরের টিন পর্যন্ত খুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দুপুর ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নারকীয় এ তা-ব চালানো হলেও পুলিশ আসেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ঘটনায় রংপুর মেট্রো কোতয়ালী থানায় ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা লিটন নিজেই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় কোতয়ালী মেট্রো থানার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ডলার, রংপুর সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা শরীফ খান, মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেনসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

কোতয়ালী মেট্রো থানার ওসি মাহফুজার রহমান মামলা দায়ের হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, এ ঘটনার পর লিটনের পরিবারের নিরাপত্তার জন্য সেখানে সার্বক্ষণিক পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এদিকে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা লিটন অভিযোগ করেছেন, আসামিরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাব দেখিয়ে তাকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদান করছে। এমনকি বাড়ির সামনে দলবল নিয়ে মহড়া প্রদর্শন করছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন থানায় মামলা দায়ের করার পরেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকেই গ্রেপ্তার করেনি। উল্টো আসামিরা প্রকাশ্যেই বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

থানায় দায়ের করা মামলায় ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা মাজেরুল ইসলাম লিটন অভিযোগ করেন, রংপুর নগরীর শাপলা স্টেশন রোডের বাসাটি তার নিজস্ব বাসা। বাসার সামনে দোকান আছে আসামি নাজমুল করিম ডলার এখন বাসাটি ও দোকান তার বলে দাবি করে আসছে। ইতোপূর্বে সে আমার মরহুম পিতা মফিজ উদ্দিনকে বিবাদী করে তাকে ভাড়াটিয়া বানিয়ে আদালতে ১৯৮৭ সালে মামলা দায়ের করে। মামলাটি বিজ্ঞ আদালত খারিজ করে দেয়। এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিভিউ আবেদন বিচারাধীন আছে। আসামি ডলার বেশ কিছুদিন ধরে আমাকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদান করে আসছিল। এ ঘটনায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর আমি কোতয়ালী মেট্রো থানায় সাধারণ ডায়েরি করি।

এরপরেও গত ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুর ৩টার দিকে আসামি ডলারের নেতৃত্বে শতাধিক লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমার বাড়িতে প্রবেশ করে। এ সময় আমি দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম। তখন আমার ছেলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঋত্র বাঁধা দিলে তাকেও মারধর করে। খবর শুনে আমার দুলাভাই সিনিয়র আইনজীবী উৎপল আদনান ঘটনাস্থলে আসলে আসামিরা তার ওপরও হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে। এরপর আসামিরা আমাকে বাড়ির কাছে মুরাদ মেশিনারিজ নামে দোকানে জোর করে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। এরপর আসামিরা নারকীয় তা-ব চালায়। তারা আমার বাসার স্টিলের ক্যাবিনেট ভেঙে ১৫ ভরি স্বর্ণের অলঙ্কার, নগদ ১৮ লাখ টাকা, একটি ল্যাপটপ, দুটি স্ট্যান্ড ফ্যান, ৫৬ ইঞ্চি কালার টিভি, আইপিএসসহ অর্ধ কোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এছাড়া আমার বাসার ও ছাদের টাইলস ড্রিল মেশিন দিয়ে ভাঙচুর করে ৬টি ঘরের টিনের চাল খুলে নিয়ে যায়। ২ ঘণ্টা ধরে তা-ব চালায় তারা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।

লিটন অভিযোগ করেন, আসামিরা যেভাবে আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে দুই ঘণ্টা ধরে তা-ব চালিয়েছে যা পাকহানাদার বাহিনীর বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। তারা আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এই তা-ব চালিয়েছে। দুই দিন ধরে খোলা আকাশের নীচে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটছে বলে জানান তিনি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মামলা প্রধান আসামি নাজমুল করিম ডলারের সঙ্গে গতকাল বেলা সাড়ে ১০টায় তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যে জমিতে লিটন বাস করে ওটা তার পৈত্রিক সম্পত্তি। অবৈধভাবে দখল করে আছে সে। এ ঘটনায় বিভিন্ন আদালতে মামলা হয়েছে। সব মামলার রায় তার পক্ষে এসেছে। লিটনের বাড়িতে হামলা, মালামাল লুট করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আর কতদিন মামলা চলবে সহ্যের সীমা আছে তো। তিনি মালামাল ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা সত্য নয় বলে দাবি করে বলেন, ৫৬ ইঞ্চ কালার টিভি আর ল্যাপটপ ভেঙেছে বলছে, প্রয়োজন হলে কিনে দেয়া হবে। আর মালামাল সবই তার বাড়িতে আছে। লুটপাট হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

অন্যদিকে মামলার অন্যতম আসামি ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওই দিক দিয়ে তিনি না কি যাচ্ছিলেন। লোকজন দেখে পুরো বিষয়টি মীমাংসা করে দিতে বলেছেন বলে দাবি করেন। তারপরেও তাকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। অন্যদিকে রংপুর মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে যাননি। তার নামে যে মামলা হয়েছে, তিনি সেই মুরাদ নন বলে দাবি করেন।