চুয়াডাঙ্গায় প্রান্তিক খামারিদের মেলা

দুধ ও মাংসের জন্য উন্নত জাতের গরু আমদানির দাবি

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জনপদ চুয়াডাঙ্গায় গতকাল দুই দিনের গরু মেলা শুরু হয়েছে। মেলাকে কেন্দ্র করে ‘গরুর রাজধানী খ্যাত’ এ জনপদে চলে আসেন সারাদেশের প্রায় তিন হাজারেরও বেশি খামারি। চুয়াডাঙ্গার টাউন ফুটবল মাঠে এই মেলার আয়োজন করে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ)। মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া মিলে ত্রি-জেলা গরু মেলা উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ।

অনুষ্ঠানে প্রান্তিক খামারিরা বলেন, ‘দুধ ও মাংসের জন্য ভালো জাতের গরু দরকার। যেহেতু দেশে মাংসের চাহিদা অনেক বেশি। তাছাড়া দেশের যেসব অঞ্চলে দুধের গাভি ভালো হয় না, গরম বেশি, ঘাসের জোগান কম; সেসব অঞ্চলের ব্রাহমা ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন এই মুহূর্তে দেশে সবচেয়ে বেশি দুধ উৎপাদিত হয় সিরাজগঞ্জে। একইভাবে কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা মাংসের গরু তৈরির রাজধানী। ওই অঞ্চলের মানুষ দুধের গরু চায় না। এসব জায়গায় ব্রাহমার উৎপাদন করা যেতে পারে।’

দেশে পোল্ট্রি শিল্প না থাকলে গরিব মানুষ মুরগির স্বাদ গ্রহণ করতে পারত না। একইভাবে সাধারণ মানুষের জন্য কম দামি গরুর গোশত দরকার, যা ব্রাহমার মাধ্যমে করা সম্ভব বলেও মনে করেন খামারিরা।

অনুষ্ঠানে বিডিএফএ-এর সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন তুলে ধরেন খামারিদের সুখ-দুঃখ। তিনি বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রামের পর এবারই প্রথম প্রান্তিক পর্যায়ে মেহেরপুর কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা নিয়ে ত্রি-জেলা গরু মেলার আয়োজন করা হয়েছে। তৃণমূলের খামরীদের উৎসাহ দেয়া, অভিজ্ঞতা বিনিময়, প্রশিক্ষণ এবং তাদের দুঃখ-দুর্দশা তুলে ধরতে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।’

মাংস উৎপাদনে বাংলাদেশ সয়ংসম্পূর্ণ হলেও গত কয়েক বছর ধরে মাংসের দাম প্রতিনিয়ত বেড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে সুর্নিদিষ্ট কিছু বিষয়ে কাজ করা গেলে মাংসের দাম কমানো সম্ভব বলে জানান মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, ‘মাংসের চাহিদা পূরণে ব্রাহমা জাতের গরু উৎপাদনে সরকার এক দশক আগে নানা প্রকল্প নেয়। যখন খামারিরা ব্রাহামা জাতের গরু পালন করে মাংসের উৎপাদন বাড়াতে থাকেন তখনি এটি আমদানি বন্ধ করে দেয়া হয়।’

বর্তমানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দেশীয় জাতের গরু কৃত্রিম প্রজননের জন্য ৪ ধরনের সিমেন প্রস্তুত করে। আরসিসি/নর্থ বেঙ্গল গ্রে/শাহীওয়াল/ মুন্সীগঞ্জ-এই সব জাতের গরু থেকে দুধ উৎপাদন করা সম্ভব নয়; শুধুমাত্র মাংস উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই জাতের একটা ২ বছরের গরু থেকে ১২০-১৫০ কেজি মাংস আহরণ করা সম্ভব। অন্যদিকে দেশীয় গরুর সঙ্গে এই সব জাত সংকরায়ন না করে ব্রাহমানের মতো উন্নত জাতের সংকরায়ন করা হয়, তাহলে সমপরিমাণ শ্রম ও ব্যয়ের পরিবর্তে ২ বছরের একটা গরু থেকে ২৫০-৩০০ কেজি মাংস আহরণ করা সম্ভব। এই একটা মাত্র পদক্ষেপই মাংসের উৎপাদন খরচের অনেক অংশ কমানো সম্ভব, যা সরাসরি মাংসের মূল্যহ্রাসে সাহায্য করবে।

খামারিদের দাবির মুখে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ বলেন, ‘মাংসের কথা বিবেচনা করে ব্রাহমা আমদানি, প্রজনন ও লালন-পালনের অনুমতি দেয়ার বিষয়টি আমরা চিন্তা করবো। এ নিয়ে সব পক্ষের মতামত নেয়া হবে।’

আলোচনা সভা শেষে দুপুরের পর জমে উঠে গরু মেলা। টাকা অবরোধের কবলে থাকা চুয়াডাঙ্গা শহর ও আশপাশের মানুষ দলে দলে ছুটে আসেন মেলা প্রাঙ্গনে। এ আয়োজনে গরু প্রদর্শনী ছাড়াও ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র‌্যাম্প শো। কম দামে গরুর সুষম খাদ্য তৈরি ও জাত উন্নয়নবিষয়ক দুটি প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন বিশেষজ্ঞরা। র?্যাম্পে হেঁটে বেড়িয়েছে ৩৮টি গরু, আর মেলায় তোলা হয় ২৫০টি বিভিন্ন জাতের গরু।

প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া ব্যক্তিরা জানান, দেশে শিক্ষিত তরুণেরা আধুনিক পদ্ধতিতে ষাঁড় পালনের দিকে ঝুঁকছেন। মূলত সবার সঙ্গে সবার যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা এ প্রদর্শনীর উদ্দেশ। আজ মেলার শেষ দিনে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার (ছেলুন), বিশেষ অতিথি থাকবেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার।

শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০২৩ , ২৫ কার্তিক ১৪৩০, ২৫ রবিউস সানি ১৪৪৫

চুয়াডাঙ্গায় প্রান্তিক খামারিদের মেলা

দুধ ও মাংসের জন্য উন্নত জাতের গরু আমদানির দাবি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জনপদ চুয়াডাঙ্গায় গতকাল দুই দিনের গরু মেলা শুরু হয়েছে। মেলাকে কেন্দ্র করে ‘গরুর রাজধানী খ্যাত’ এ জনপদে চলে আসেন সারাদেশের প্রায় তিন হাজারেরও বেশি খামারি। চুয়াডাঙ্গার টাউন ফুটবল মাঠে এই মেলার আয়োজন করে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ)। মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া মিলে ত্রি-জেলা গরু মেলা উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ।

অনুষ্ঠানে প্রান্তিক খামারিরা বলেন, ‘দুধ ও মাংসের জন্য ভালো জাতের গরু দরকার। যেহেতু দেশে মাংসের চাহিদা অনেক বেশি। তাছাড়া দেশের যেসব অঞ্চলে দুধের গাভি ভালো হয় না, গরম বেশি, ঘাসের জোগান কম; সেসব অঞ্চলের ব্রাহমা ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন এই মুহূর্তে দেশে সবচেয়ে বেশি দুধ উৎপাদিত হয় সিরাজগঞ্জে। একইভাবে কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা মাংসের গরু তৈরির রাজধানী। ওই অঞ্চলের মানুষ দুধের গরু চায় না। এসব জায়গায় ব্রাহমার উৎপাদন করা যেতে পারে।’

দেশে পোল্ট্রি শিল্প না থাকলে গরিব মানুষ মুরগির স্বাদ গ্রহণ করতে পারত না। একইভাবে সাধারণ মানুষের জন্য কম দামি গরুর গোশত দরকার, যা ব্রাহমার মাধ্যমে করা সম্ভব বলেও মনে করেন খামারিরা।

অনুষ্ঠানে বিডিএফএ-এর সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন তুলে ধরেন খামারিদের সুখ-দুঃখ। তিনি বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রামের পর এবারই প্রথম প্রান্তিক পর্যায়ে মেহেরপুর কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা নিয়ে ত্রি-জেলা গরু মেলার আয়োজন করা হয়েছে। তৃণমূলের খামরীদের উৎসাহ দেয়া, অভিজ্ঞতা বিনিময়, প্রশিক্ষণ এবং তাদের দুঃখ-দুর্দশা তুলে ধরতে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।’

মাংস উৎপাদনে বাংলাদেশ সয়ংসম্পূর্ণ হলেও গত কয়েক বছর ধরে মাংসের দাম প্রতিনিয়ত বেড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে সুর্নিদিষ্ট কিছু বিষয়ে কাজ করা গেলে মাংসের দাম কমানো সম্ভব বলে জানান মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, ‘মাংসের চাহিদা পূরণে ব্রাহমা জাতের গরু উৎপাদনে সরকার এক দশক আগে নানা প্রকল্প নেয়। যখন খামারিরা ব্রাহামা জাতের গরু পালন করে মাংসের উৎপাদন বাড়াতে থাকেন তখনি এটি আমদানি বন্ধ করে দেয়া হয়।’

বর্তমানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দেশীয় জাতের গরু কৃত্রিম প্রজননের জন্য ৪ ধরনের সিমেন প্রস্তুত করে। আরসিসি/নর্থ বেঙ্গল গ্রে/শাহীওয়াল/ মুন্সীগঞ্জ-এই সব জাতের গরু থেকে দুধ উৎপাদন করা সম্ভব নয়; শুধুমাত্র মাংস উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই জাতের একটা ২ বছরের গরু থেকে ১২০-১৫০ কেজি মাংস আহরণ করা সম্ভব। অন্যদিকে দেশীয় গরুর সঙ্গে এই সব জাত সংকরায়ন না করে ব্রাহমানের মতো উন্নত জাতের সংকরায়ন করা হয়, তাহলে সমপরিমাণ শ্রম ও ব্যয়ের পরিবর্তে ২ বছরের একটা গরু থেকে ২৫০-৩০০ কেজি মাংস আহরণ করা সম্ভব। এই একটা মাত্র পদক্ষেপই মাংসের উৎপাদন খরচের অনেক অংশ কমানো সম্ভব, যা সরাসরি মাংসের মূল্যহ্রাসে সাহায্য করবে।

খামারিদের দাবির মুখে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ বলেন, ‘মাংসের কথা বিবেচনা করে ব্রাহমা আমদানি, প্রজনন ও লালন-পালনের অনুমতি দেয়ার বিষয়টি আমরা চিন্তা করবো। এ নিয়ে সব পক্ষের মতামত নেয়া হবে।’

আলোচনা সভা শেষে দুপুরের পর জমে উঠে গরু মেলা। টাকা অবরোধের কবলে থাকা চুয়াডাঙ্গা শহর ও আশপাশের মানুষ দলে দলে ছুটে আসেন মেলা প্রাঙ্গনে। এ আয়োজনে গরু প্রদর্শনী ছাড়াও ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র‌্যাম্প শো। কম দামে গরুর সুষম খাদ্য তৈরি ও জাত উন্নয়নবিষয়ক দুটি প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন বিশেষজ্ঞরা। র?্যাম্পে হেঁটে বেড়িয়েছে ৩৮টি গরু, আর মেলায় তোলা হয় ২৫০টি বিভিন্ন জাতের গরু।

প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া ব্যক্তিরা জানান, দেশে শিক্ষিত তরুণেরা আধুনিক পদ্ধতিতে ষাঁড় পালনের দিকে ঝুঁকছেন। মূলত সবার সঙ্গে সবার যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা এ প্রদর্শনীর উদ্দেশ। আজ মেলার শেষ দিনে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার (ছেলুন), বিশেষ অতিথি থাকবেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার।