সেনাদের ওপর হামলা

মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে

ইরাকে একটি ত্রুটিপূর্ণ ড্রোন যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান সংঘাতে জড়িয়ে পড়া থেকে রক্ষা করতে সহযোগিতা করেছে। বিষয়টির সঙ্গে অবগত দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২৬ অক্টোবর সূর্যোদয়ের আগে ইরানপন্থি একটি মিলিশিয়া গোষ্ঠী ইরবিল বিমানঘাঁটিতে হামলার জন্য একটি ড্রোন উৎক্ষেপণ করে। এটি মার্কিন বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে ঘাঁটিতে প্রবেশ করে। ভোর ৫টার দিকে মার্কিন ব্যারাকের দ্বিতীয় তলায় বিধ্বস্ত হয়। তারা আরও বলেছেন, কিন্তু ড্রোনটি বিস্ফোরণ ঘটাতে ব্যর্থ হয়ে। শেষ পর্যন্ত শুধু একজন মার্কিন সামান্য আঘাত পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ভাগ্যবান ছিল। কারণ ড্রোনটি বিস্ফোরিত হলে হত্যাকা- ঘটতে পারত। পেন্টাগনের তথ্য এবং ওই কর্মকর্তার মতে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের প্রতিক্রিয়ায় গত তিন সপ্তাহে ইরাক ও সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারা মার্কিন বাহিনীর ওপর অন্তত ৪০টি পৃথক ড্রোন ও রকেট হামলা চালিয়েছে। বোমাবর্ষণে এখন পর্যন্ত মাত্র কয়েক ডজন সেনা সামান্য আহত হয়েছেন। ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেক রকেট এবং ড্রোন প্রতিহত করেছে। দেশ দুটিতে ৩ হাজার ৪০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে।

ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসি থিংক ট্যাঙ্কে কর্মরত সাবেক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড শেঙ্কার সতর্ক করে বলেছেন, দৃশ্যত ইরান ও তার মিত্র গোষ্ঠী বা যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাত চায় বলে মনে হচ্ছে না, কিন্তু ঝুঁকি বাড়ছে। একটি বড় হামলা যুক্তরাষ্ট্রকে একটি সংঘাতের দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারার ‘খুব বাস্তবসম্মত উদ্বেগ’ রয়েছে। ইরাকি ও সিরিয়ান মিলিশিয়াদের সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি মনে করি তারা বিপুলসংখ্যক মার্কিন সেনা হত্যা করার পরিবর্তে হয়রানি করার জন্য আক্রমণগুলো পরিকল্পনা করছে। কিন্তু তারা আরও অনেক কিছু করতে পারে। কোন বড় হামলায় যদি বিপুলসংখ্যক সেনা নিহত হয় তাহলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কীভাবে জবাব দেবেন তা স্পষ্ট নয়। আগামী বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জনমত জরিপ পিছিয়ে রয়েছেন তিনি। এখন পর্যন্ত ইসরায়েলকে শুধু সামরিক সহযোগিতা নিশ্চিত করে তিনি মার্কিন ভূমিকা সীমিত রাখার চেষ্টা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে যখন জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, ইরান বা তার লেবাননি মিত্র হেজবুল্লাহ গোষ্ঠীর এই যুদ্ধে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা আছে কী না, তার উত্তরে তিনি বারবার বলেছেন যে, তারা যেন কিছুতেই এর মধ্যে না ঢোকে।

ইরানকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকার কড়া বার্তা দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি দুটি যুদ্ধবিমান বহনকারী জাহাজ পাঠিয়েছে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, যদি কেউ এতে হস্তক্ষেপ করে, তাহলে তাদের শুধু ইসরায়েল নয়, মার্কিন সৈন্যদের মোকাবিলাও করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্রদের দ্বারা পরিচালিত হয়। অন্য অংশটির ওপর প্রভাব রয়েছে ইরান ও তাদের সমর্থক গোষ্ঠীর। যুদ্ধের ঝুঁকি সম্পর্কে উভয় পক্ষই সচেতন। তারা এও জানে, স্নায়ুযুদ্ধ থেকে যদি তা সম্মুখ সমরে পরিণত হয়, তাহলে তা মধ্যপ্রাচ্যের সংঘর্ষকে আরও বড় করে তুলবে এবং সারা বিশ্বেই তার প্রভাব পড়বে। হামাসকে ইরান অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছে দাবি করে আসছে ইসরায়েল ও দেশটির পশ্চিমা মিত্ররা। যদিও তেহরান দাবি করেছে, ইসরায়েলে ৭ অক্টোবর হামাসের অভিযানে তাদের কোনও ভূমিকা ছিল না, যদিও তারা এই হামলাকে স্বাগত জানিয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইরাক সফর করেছেন। দেশটিতেই মার্কিন সেনাদের ওপর বেশিরভাগ হামলা হয়েছে। তিনি ইরাকি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানীকে মিলিশিয়াদের দমন করতে এবং হামলার তীব্রতা বৃদ্ধি এড়াতে চাপ দিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সুদানির ক্ষমতাসীন জোটের পাঁচজন সিনিয়র আইনপ্রণেতা, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং একজন মিলিশিয়া কমান্ডারের মতে, আক্রমণ করা বাদ দিতে, বা ইরানে গোষ্ঠীগুলো অর্থায়নকারীদের লাগাম টেনে ধরতে রাজি করানোর ক্ষেত্রে কোনও সাফল্য পাননি তিনি।

এই সাতজন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এবং তার সরকারের প্রায় ১০ জন সিনিয়র সদস্য ২৩ অক্টোবর বাগদাদে প্রায় এক ডজন মিলিশিয়া গ্রুপের কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এতে গোষ্ঠীগুলোকে মার্কিন সেনাদের ওপর আক্রমণ বন্ধ করার জন্য চাপ দেয়া হয়। তারা আরও বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় অবরোধ ও বোমাবর্ষণ বন্ধ না করা পর্যন্ত বেশির ভাগ গোষ্ঠীর কমান্ডার আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারের কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে কোন কাজ হয়নি।

image

হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের জেরে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনাদের ওপর হামলা বেড়েছে, গত এক সপ্তাহে হামলায় ৩৮ জন সেনা হতাহত হয়েছে -বিবিসি

আরও খবর
মধ্যপ্রাচ্যের পর এবার ভারত সফরে ব্লিঙ্কেন

শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০২৩ , ২৫ কার্তিক ১৪৩০, ২৫ রবিউস সানি ১৪৪৫

সেনাদের ওপর হামলা

মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে

image

হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের জেরে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনাদের ওপর হামলা বেড়েছে, গত এক সপ্তাহে হামলায় ৩৮ জন সেনা হতাহত হয়েছে -বিবিসি

ইরাকে একটি ত্রুটিপূর্ণ ড্রোন যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান সংঘাতে জড়িয়ে পড়া থেকে রক্ষা করতে সহযোগিতা করেছে। বিষয়টির সঙ্গে অবগত দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২৬ অক্টোবর সূর্যোদয়ের আগে ইরানপন্থি একটি মিলিশিয়া গোষ্ঠী ইরবিল বিমানঘাঁটিতে হামলার জন্য একটি ড্রোন উৎক্ষেপণ করে। এটি মার্কিন বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে ঘাঁটিতে প্রবেশ করে। ভোর ৫টার দিকে মার্কিন ব্যারাকের দ্বিতীয় তলায় বিধ্বস্ত হয়। তারা আরও বলেছেন, কিন্তু ড্রোনটি বিস্ফোরণ ঘটাতে ব্যর্থ হয়ে। শেষ পর্যন্ত শুধু একজন মার্কিন সামান্য আঘাত পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ভাগ্যবান ছিল। কারণ ড্রোনটি বিস্ফোরিত হলে হত্যাকা- ঘটতে পারত। পেন্টাগনের তথ্য এবং ওই কর্মকর্তার মতে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের প্রতিক্রিয়ায় গত তিন সপ্তাহে ইরাক ও সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারা মার্কিন বাহিনীর ওপর অন্তত ৪০টি পৃথক ড্রোন ও রকেট হামলা চালিয়েছে। বোমাবর্ষণে এখন পর্যন্ত মাত্র কয়েক ডজন সেনা সামান্য আহত হয়েছেন। ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেক রকেট এবং ড্রোন প্রতিহত করেছে। দেশ দুটিতে ৩ হাজার ৪০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে।

ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসি থিংক ট্যাঙ্কে কর্মরত সাবেক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড শেঙ্কার সতর্ক করে বলেছেন, দৃশ্যত ইরান ও তার মিত্র গোষ্ঠী বা যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাত চায় বলে মনে হচ্ছে না, কিন্তু ঝুঁকি বাড়ছে। একটি বড় হামলা যুক্তরাষ্ট্রকে একটি সংঘাতের দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারার ‘খুব বাস্তবসম্মত উদ্বেগ’ রয়েছে। ইরাকি ও সিরিয়ান মিলিশিয়াদের সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি মনে করি তারা বিপুলসংখ্যক মার্কিন সেনা হত্যা করার পরিবর্তে হয়রানি করার জন্য আক্রমণগুলো পরিকল্পনা করছে। কিন্তু তারা আরও অনেক কিছু করতে পারে। কোন বড় হামলায় যদি বিপুলসংখ্যক সেনা নিহত হয় তাহলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কীভাবে জবাব দেবেন তা স্পষ্ট নয়। আগামী বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জনমত জরিপ পিছিয়ে রয়েছেন তিনি। এখন পর্যন্ত ইসরায়েলকে শুধু সামরিক সহযোগিতা নিশ্চিত করে তিনি মার্কিন ভূমিকা সীমিত রাখার চেষ্টা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে যখন জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, ইরান বা তার লেবাননি মিত্র হেজবুল্লাহ গোষ্ঠীর এই যুদ্ধে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা আছে কী না, তার উত্তরে তিনি বারবার বলেছেন যে, তারা যেন কিছুতেই এর মধ্যে না ঢোকে।

ইরানকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকার কড়া বার্তা দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি দুটি যুদ্ধবিমান বহনকারী জাহাজ পাঠিয়েছে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, যদি কেউ এতে হস্তক্ষেপ করে, তাহলে তাদের শুধু ইসরায়েল নয়, মার্কিন সৈন্যদের মোকাবিলাও করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্রদের দ্বারা পরিচালিত হয়। অন্য অংশটির ওপর প্রভাব রয়েছে ইরান ও তাদের সমর্থক গোষ্ঠীর। যুদ্ধের ঝুঁকি সম্পর্কে উভয় পক্ষই সচেতন। তারা এও জানে, স্নায়ুযুদ্ধ থেকে যদি তা সম্মুখ সমরে পরিণত হয়, তাহলে তা মধ্যপ্রাচ্যের সংঘর্ষকে আরও বড় করে তুলবে এবং সারা বিশ্বেই তার প্রভাব পড়বে। হামাসকে ইরান অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছে দাবি করে আসছে ইসরায়েল ও দেশটির পশ্চিমা মিত্ররা। যদিও তেহরান দাবি করেছে, ইসরায়েলে ৭ অক্টোবর হামাসের অভিযানে তাদের কোনও ভূমিকা ছিল না, যদিও তারা এই হামলাকে স্বাগত জানিয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইরাক সফর করেছেন। দেশটিতেই মার্কিন সেনাদের ওপর বেশিরভাগ হামলা হয়েছে। তিনি ইরাকি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানীকে মিলিশিয়াদের দমন করতে এবং হামলার তীব্রতা বৃদ্ধি এড়াতে চাপ দিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সুদানির ক্ষমতাসীন জোটের পাঁচজন সিনিয়র আইনপ্রণেতা, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং একজন মিলিশিয়া কমান্ডারের মতে, আক্রমণ করা বাদ দিতে, বা ইরানে গোষ্ঠীগুলো অর্থায়নকারীদের লাগাম টেনে ধরতে রাজি করানোর ক্ষেত্রে কোনও সাফল্য পাননি তিনি।

এই সাতজন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এবং তার সরকারের প্রায় ১০ জন সিনিয়র সদস্য ২৩ অক্টোবর বাগদাদে প্রায় এক ডজন মিলিশিয়া গ্রুপের কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এতে গোষ্ঠীগুলোকে মার্কিন সেনাদের ওপর আক্রমণ বন্ধ করার জন্য চাপ দেয়া হয়। তারা আরও বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় অবরোধ ও বোমাবর্ষণ বন্ধ না করা পর্যন্ত বেশির ভাগ গোষ্ঠীর কমান্ডার আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারের কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে কোন কাজ হয়নি।