একাত্তরের গণহত্যার খণ্ডচিত্র

সাদেকুর রহমান

(গতকালের পর)

এই গ্রাম থেকে ২ কিলোমিটার দূরে রায়গঞ্জ ব্রিজের পাশে খানসেনারা অবস্থান গ্রহণ করেছিল। ওই দিন এই গ্রামের সদ্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন নওয়াজিশের নেতৃত্বে গ্রামের একটি বাড়িতে দুপুরের আহার গ্রহণ করছিলেন। খবর পেয়ে শত্রুসেনারা এই গ্রামের ওপর তিনদিক থেকে ঘিরে হামলা চালায়। গ্রামের অনেক ঘরবাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং একটানা গুলি করতে করতে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি চালান; কিন্তু তাদের গুলির পরিমাণ সীমিত থাকায় একপর্যায়ে তারা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের ধরতে না পেরে খানসেনারা গ্রামের লোকজনের ওপর এলোপাতাড়িভাবে গুলি করতে থাকে এবং একপর্যায়ে তারা অনেককে ধরে এই গ্রামের পাশে ঢড়কা বিলের তীরে যে বাঁশঝাড় ছিল, সেখানে নিয়ে হত্যা করে।

বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় ৭৯ জন নিরীহ মানুষকে। এছাড়াও আগুনে পুড়ে মারা যান আপর আলী, বাচ্চানী খাতুন, মইনুদ্দিন মুন্সী, আব্দুস সালাম মুন্সী, হাজেরা খাতুন ও আজিজুর রহমান। শত্রুসেনারা চলে যাওয়ার পরে লাশগুলোকে একত্রিত করে গ্রামের একপ্রান্তে কয়েকটি গর্ত করে মাটিচাপা দেয়া হয়। এটিই উপজেলার সর্ববৃহৎ ও জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম গণকবর। নাগেশ্বরী উপজেলা সদরের অদূরে শহীদ মিনারের কাছে গণকবরটি আজও রয়েছে। সেদিনের গুলির চিহ্ন শরীরে নিয়ে এই গ্রামের অনেকে এখনো বেঁচে আছেন।

একই দিনে ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট অধিনায়ক ক্যাপ্টেন আতাউল্লাহ খানের নেতৃত্বে রাজাকার ও পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের মনিয়ার হাট, শ্রীপুর, হাজিরহাট, টালানাপা গ্রামে ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ ২৯ জনকে পাখির মতো গুলি করে মারা হয়।

ছাব্বিশা গণহত্যা : একাত্তরের ১৭ নভেম্বর টাঙ্গাইল জেলার ভুঞাপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ছাব্বিশা গ্রামে পৈশাচিক গণহত্যা সংঘটিত হয়। ভুঞাপুরে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার আব্দুল হাকিম, জহুরুল হক চান মিঞা, আব্দুল হাইয়ের দল এবং স্থানীয় মুক্তিবাহিনীর সহায়তায় হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করে। সেদিনই বেলা ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জ থেকে যমুনা নদী পার হয়ে এক ব্যাটালিয়ন পাকিস্তানি হানাদার সৈন্য কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে ভুঞাপুরের দিকে অগ্রসর হয়। তারা এ দেশীয় কিছু দালাল রাজাকারদের সহযোগিতায় মাটিকাটা, কালীগঞ্জ ও তেঘড়ি গ্রামের উদ্দেশে লঞ্চ থেকে নামে। এ সংবাদ পেয়ে ভুঞাপুরে অবস্থানরত বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। পাকিস্তানি বাহিনীর এ অবস্থানটি ছিল অতর্কিত অথচ পরিকল্পিত।

পাকিস্তানি সেনারা ছাব্বিশা উত্তর-পশ্চিম প্রান্তের স্থানে পৌঁছালে কিছু মুক্তিযোদ্ধা বেতুয়া গ্রামে এসে অবস্থান নেন। ভুঞাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও ভুঞাপুর ডাকবাংলোতে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা দুই ভাগে ভাগ হয়ে একটি দল পূর্ব ভুঞাপুর লৌহজং নদীর পাড়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রতিরোধ করার জন্য অবস্থান নেয়। অন্য দলটি ছাব্বিশা গ্রামে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধা ও শত্রুসেনাদের সঙ্গে দীর্ঘসময় প্রচ- গুলি বিনিময় হয়। সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। উভয় পক্ষের গুলিবর্ষণ চলে একপর্যায়ে শত্রুসেনাদের প্রচ- আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবারুদ ফুরিয়ে গেলে মুক্তিসেনারা নিরূপায় হয়ে সরে যায়।

এরপর খানসেনারা গ্রামে ঢুকে নির্বিচারে গণহত্যা ও জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে। প্রথমেই গণহত্যা করে ছাব্বিশা গ্রামে। বৃদ্ধ, যুবা নারী ও শিশু যাকে পায় তাকেই তারা গুলি করে হত্যা করে। কিছু সময়ের মধ্যে ছাব্বিশা গ্রাম পরিণত হয় গণহত্যাস্থলে। এ গণহত্যায় ৪৩ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে নৃশংসভাবে হত্যা করে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী। তারা প্রায় ৪শ ঘরবাড়ি, দোকানপাট জ্বালিয়ে দেয়। পাকিস্তানি সৈন্যরা তিনজন গর্ভবতী নারীকে লাথি মেরে বাচ্চা প্রসব করায়। এই গণহত্যা ভুঞাপুরের আকাশ-বাতাসকেও ভারি করে তোলে।

মুগরুল গণহত্যা : ১৯৭১ সালের ১৮ নভেম্বর রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি ইউনিয়নের মুগরুল গ্রামে গণহত্যা সংঘটিত হয়। সেদিন ছিল পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর। সেই মহিমান্বিত রজনীর ভোরবেলা পাকিস্তানি বাহিনী মুগরুল গ্রামটি ঘিরে ফেলে। এরপর তারা গ্রামের ১৫ জনকে বেঁধে গুলি করে হত্যা করে। এর আগে অক্টোবর মাসে রাজাকাররা সেই এলাকার নিরীহ ৩৮ মানুষকে ধরে গুলি করে হত্যা করে এবং একটি গর্ত করে তাদের মাটিচাপা দিয়ে রাখে।

মোহনপুর থানার সাঁকোয়া-মুগরুল গ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এদেশীয় দোসর রাজাকারদের একটি ক্যাম্প ছিল। ক্যাম্পটিতে রাজাকার আবদুল মহিনের নেতৃত্বে রাজাকাররা এলাকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে নিরীহ লোকজনকে ধরে আনতো সাঁকোয়া গ্রামে। সেখানে নির্মমভাবে অত্যাচার করার পর তাদের হত্যা করা হতো। রাজাকাররা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের ধরে বেয়োনেট দিয়ে বুক ফেড়ে হত্যা করত।

তারা মুক্তিকামী মানুষদের প্রথমে সাঁকোয়া গ্রামে ধরে আনত, তারপর তাদের অত্যাচার করে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের কথা জানার চে’া করত। পরে ধৃত ব্যক্তিদের পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিত। এই রাজাকারেরা আবার বন্দিদের ছাড়িয়ে আনার কথা বলে তাদের পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায় করত।

(চলবে)

[লেখক: সমন্বয়ক ও গবেষক, ‘প্রবাসে প্রিয়জন’ অনুষ্ঠান, বাংলাদেশ টেলিভিশন]

মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৩ , ২৮ কার্তিক ১৪৩০, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৫

একাত্তরের গণহত্যার খণ্ডচিত্র

সাদেকুর রহমান

(গতকালের পর)

এই গ্রাম থেকে ২ কিলোমিটার দূরে রায়গঞ্জ ব্রিজের পাশে খানসেনারা অবস্থান গ্রহণ করেছিল। ওই দিন এই গ্রামের সদ্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন নওয়াজিশের নেতৃত্বে গ্রামের একটি বাড়িতে দুপুরের আহার গ্রহণ করছিলেন। খবর পেয়ে শত্রুসেনারা এই গ্রামের ওপর তিনদিক থেকে ঘিরে হামলা চালায়। গ্রামের অনেক ঘরবাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং একটানা গুলি করতে করতে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি চালান; কিন্তু তাদের গুলির পরিমাণ সীমিত থাকায় একপর্যায়ে তারা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের ধরতে না পেরে খানসেনারা গ্রামের লোকজনের ওপর এলোপাতাড়িভাবে গুলি করতে থাকে এবং একপর্যায়ে তারা অনেককে ধরে এই গ্রামের পাশে ঢড়কা বিলের তীরে যে বাঁশঝাড় ছিল, সেখানে নিয়ে হত্যা করে।

বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় ৭৯ জন নিরীহ মানুষকে। এছাড়াও আগুনে পুড়ে মারা যান আপর আলী, বাচ্চানী খাতুন, মইনুদ্দিন মুন্সী, আব্দুস সালাম মুন্সী, হাজেরা খাতুন ও আজিজুর রহমান। শত্রুসেনারা চলে যাওয়ার পরে লাশগুলোকে একত্রিত করে গ্রামের একপ্রান্তে কয়েকটি গর্ত করে মাটিচাপা দেয়া হয়। এটিই উপজেলার সর্ববৃহৎ ও জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম গণকবর। নাগেশ্বরী উপজেলা সদরের অদূরে শহীদ মিনারের কাছে গণকবরটি আজও রয়েছে। সেদিনের গুলির চিহ্ন শরীরে নিয়ে এই গ্রামের অনেকে এখনো বেঁচে আছেন।

একই দিনে ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট অধিনায়ক ক্যাপ্টেন আতাউল্লাহ খানের নেতৃত্বে রাজাকার ও পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের মনিয়ার হাট, শ্রীপুর, হাজিরহাট, টালানাপা গ্রামে ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ ২৯ জনকে পাখির মতো গুলি করে মারা হয়।

ছাব্বিশা গণহত্যা : একাত্তরের ১৭ নভেম্বর টাঙ্গাইল জেলার ভুঞাপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ছাব্বিশা গ্রামে পৈশাচিক গণহত্যা সংঘটিত হয়। ভুঞাপুরে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার আব্দুল হাকিম, জহুরুল হক চান মিঞা, আব্দুল হাইয়ের দল এবং স্থানীয় মুক্তিবাহিনীর সহায়তায় হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করে। সেদিনই বেলা ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জ থেকে যমুনা নদী পার হয়ে এক ব্যাটালিয়ন পাকিস্তানি হানাদার সৈন্য কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে ভুঞাপুরের দিকে অগ্রসর হয়। তারা এ দেশীয় কিছু দালাল রাজাকারদের সহযোগিতায় মাটিকাটা, কালীগঞ্জ ও তেঘড়ি গ্রামের উদ্দেশে লঞ্চ থেকে নামে। এ সংবাদ পেয়ে ভুঞাপুরে অবস্থানরত বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। পাকিস্তানি বাহিনীর এ অবস্থানটি ছিল অতর্কিত অথচ পরিকল্পিত।

পাকিস্তানি সেনারা ছাব্বিশা উত্তর-পশ্চিম প্রান্তের স্থানে পৌঁছালে কিছু মুক্তিযোদ্ধা বেতুয়া গ্রামে এসে অবস্থান নেন। ভুঞাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও ভুঞাপুর ডাকবাংলোতে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা দুই ভাগে ভাগ হয়ে একটি দল পূর্ব ভুঞাপুর লৌহজং নদীর পাড়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রতিরোধ করার জন্য অবস্থান নেয়। অন্য দলটি ছাব্বিশা গ্রামে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধা ও শত্রুসেনাদের সঙ্গে দীর্ঘসময় প্রচ- গুলি বিনিময় হয়। সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। উভয় পক্ষের গুলিবর্ষণ চলে একপর্যায়ে শত্রুসেনাদের প্রচ- আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবারুদ ফুরিয়ে গেলে মুক্তিসেনারা নিরূপায় হয়ে সরে যায়।

এরপর খানসেনারা গ্রামে ঢুকে নির্বিচারে গণহত্যা ও জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে। প্রথমেই গণহত্যা করে ছাব্বিশা গ্রামে। বৃদ্ধ, যুবা নারী ও শিশু যাকে পায় তাকেই তারা গুলি করে হত্যা করে। কিছু সময়ের মধ্যে ছাব্বিশা গ্রাম পরিণত হয় গণহত্যাস্থলে। এ গণহত্যায় ৪৩ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে নৃশংসভাবে হত্যা করে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী। তারা প্রায় ৪শ ঘরবাড়ি, দোকানপাট জ্বালিয়ে দেয়। পাকিস্তানি সৈন্যরা তিনজন গর্ভবতী নারীকে লাথি মেরে বাচ্চা প্রসব করায়। এই গণহত্যা ভুঞাপুরের আকাশ-বাতাসকেও ভারি করে তোলে।

মুগরুল গণহত্যা : ১৯৭১ সালের ১৮ নভেম্বর রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি ইউনিয়নের মুগরুল গ্রামে গণহত্যা সংঘটিত হয়। সেদিন ছিল পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর। সেই মহিমান্বিত রজনীর ভোরবেলা পাকিস্তানি বাহিনী মুগরুল গ্রামটি ঘিরে ফেলে। এরপর তারা গ্রামের ১৫ জনকে বেঁধে গুলি করে হত্যা করে। এর আগে অক্টোবর মাসে রাজাকাররা সেই এলাকার নিরীহ ৩৮ মানুষকে ধরে গুলি করে হত্যা করে এবং একটি গর্ত করে তাদের মাটিচাপা দিয়ে রাখে।

মোহনপুর থানার সাঁকোয়া-মুগরুল গ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এদেশীয় দোসর রাজাকারদের একটি ক্যাম্প ছিল। ক্যাম্পটিতে রাজাকার আবদুল মহিনের নেতৃত্বে রাজাকাররা এলাকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে নিরীহ লোকজনকে ধরে আনতো সাঁকোয়া গ্রামে। সেখানে নির্মমভাবে অত্যাচার করার পর তাদের হত্যা করা হতো। রাজাকাররা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের ধরে বেয়োনেট দিয়ে বুক ফেড়ে হত্যা করত।

তারা মুক্তিকামী মানুষদের প্রথমে সাঁকোয়া গ্রামে ধরে আনত, তারপর তাদের অত্যাচার করে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের কথা জানার চে’া করত। পরে ধৃত ব্যক্তিদের পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিত। এই রাজাকারেরা আবার বন্দিদের ছাড়িয়ে আনার কথা বলে তাদের পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায় করত।

(চলবে)

[লেখক: সমন্বয়ক ও গবেষক, ‘প্রবাসে প্রিয়জন’ অনুষ্ঠান, বাংলাদেশ টেলিভিশন]