কান্দাগাও প্রাথমিককে নিম্নœমাধ্যমিকে উন্নীত করা হলেও নিয়োগ হয়নি কোন শিক্ষক

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার কান্দাগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পঞ্চম শ্রেুী থেকে অষ্টম শ্রেুীতে উন্নীত করা হলেও নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক, শ্রেুী কক্ষ ও সুযোগ সুবিধা। দশ বছরেও বাড়ানো হয়নি শ্রেুী কক্ষ বৃদ্ধি। নিয়োগ করা হয়নি শিক্ষকসহ লোকবল। ফলে পূর্বের শিক্ষক, জনবল ও শ্রেুীকক্ষ দিয়ে ৮ম শ্রেুী পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বোগলাবাজার ইউনিয়নের কান্দাগাও গ্রামে ১৯৫০ সালে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে। এ বিদ্যালয় ছাড়া প্রায় চার কিলোমিটারের মধ্যে আর কোন বিদ্যালয় নেই। ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়েছে। এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১ম শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে ৫৩৩ জন। বিদ্যালয়ের প্রাথমিক স্তরে কর্মরত শিক্ষক আছেন ৮ জন। শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ ও আসবাবপত্র সংকটে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে পাঠদানে বেগ পেতে হচ্ছে শিক্ষকদের। যেখানে প্রাথমিক স্তরের পাঠদানে অবকাঠামো ও শিক্ষক সংকট, সেই বিদ্যালয়েই ২০১৩ সালে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম পর্যন্ত অতিরিক্ত তিনটি শ্রেণির পাঠদান চালু করা হয়। এতে পাঠদানে প্রচন্ড চাপের মধ্যে পড়েছেন বিদ্যালয়টির শিক্ষকরা। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে মূলত পাঠদানের জন্য কোনো শিক্ষক নেই। তা ছাড়া শ্রেণিকক্ষ, আসবাবপত্র ও পাঠদানের জন্য শিক্ষা উপকরণ ও কোনো অর্থ বরাদ্দ নেই। তাছাড়া এ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেুী পর্যন্ত নেই কোন বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক। প্রাথমিক লেবেলের শিক্ষক দিয়েই চলছে ৬ষ্ট থেকে ৮ম শ্রেণীর কার্যক্রম। নিম্ম মাধ্যমিক পর্যায়ের জন্য আরও ৭জন শিক্ষক দরকার এ বিদ্যালয়ে।

শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকটে পাঠদান সচল রাখতে শিক্ষকদের এমনিতেই চাপের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। নি¤œ মাধ্যমিকের নতুন কারিকুলাম চালু হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের দাবি, শিক্ষাবান্ধব এই উদ্যোগটিকে সফল করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় শিক্ষকের ব্যবস্থা এবং অবকাঠামো সংকট দূর করতে হবে।

বিদ্যালয়টির অধিকাংশ ক্লাস চলে পরিত্যক্ত টিনশেড ভবনে।শুষ্ক মৌসুমে কোনমতে শ্রেুী কার্যক্রম চালানো গেলেও বর্ষা মৌসুমে পুরনো ভবনের টিনের ছিদ্রপথে পানি পড়ার কারণে শ্রেণী কার্যক্রমে বিঘœ ঘটে। প্রাক-প্রাথমিকসহ ৯টি শ্রেণীর জন্য ১৩টি শ্রেণীকক্ষ দরকার। বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী শ্রেণীকক্ষসহ ৭টি কক্ষে পালাক্রমে ও গাদাগাদি করে কোনমতে শ্রেণী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তাছাড়া পাঠদানও ফলপ্রসূ হচ্ছে না। এ অবস্থায় জেএসসি ফলাফলে বিদ্যালয়টি উপজেলার মধ্যে ভালো করছে সব সময়। কিন্তু নতুন কারিকুলাম চালু হওয়া এবং বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের কাক্সিক্ষত শিখনফল অর্জন অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ ইমাম হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের ৪ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো নিম্নœ বা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। নিকটবর্তী উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় অধিকাংশ ছেলেমেয়ে পঞ্চম শ্রেণি পাসের পর ঝরে পড়ত। কিন্তু ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির পাঠদান চালু হওয়ায় ওই ১৫ গ্রামের মেয়েদের ঝরে পড়া ও বাল্যবিয়ের হার কমেছে। কিন্তু শিক্ষক ও অবকাঠামো সংকটের কারণে সঠিকভাবে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না। প্রথমদিকে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চালু করা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত প্রধান শিক্ষককে মূল বেতনের ৩৫ ভাগ ও সহকারী শিক্ষকদের মূল বেতনের ২৫ ভাগ দেয়ার কথা। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, আসবারপত্র সংকট, ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর সংকট থাকায় সঠিকভাবে পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটছে। এ বিদ্যালয়ে ২০২১ ও ২২ সালের সমাপনী পরীক্ষায় পিএসসি ও জেএসসিতে শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করে উপজেলায় রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এদিকে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর না থাকায় নিরপত্তাহীনতায় ভোগেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া গত দশ বছর ধরে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা শ্রেণী কার্যক্রম চললেও সরকারিভাবে অফিস ম্যানেজমেন্টের জন্য কোন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অবকাঠামো সংকটসহ নানা সমস্যার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পঞ্চানন কুমার সানা বলেন, সমস্যা সমাধান পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিদ্যালয়টি আমাদের বিশেষ নজরে আছে। উপজেলা শিক্ষা কমিটির মাসিক মিটিংয়ে বিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানে আলোচনাপূর্বক দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহের নিগার তনু বলেন কান্দাগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও অবকাঠামো সংকটের বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩ , ৩০ কার্তিক ১৪৩০, ৩০ রবিউস সানি ১৪৪৫

কান্দাগাও প্রাথমিককে নিম্নœমাধ্যমিকে উন্নীত করা হলেও নিয়োগ হয়নি কোন শিক্ষক

সংবাদদাতা, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ)

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার কান্দাগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পঞ্চম শ্রেুী থেকে অষ্টম শ্রেুীতে উন্নীত করা হলেও নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক, শ্রেুী কক্ষ ও সুযোগ সুবিধা। দশ বছরেও বাড়ানো হয়নি শ্রেুী কক্ষ বৃদ্ধি। নিয়োগ করা হয়নি শিক্ষকসহ লোকবল। ফলে পূর্বের শিক্ষক, জনবল ও শ্রেুীকক্ষ দিয়ে ৮ম শ্রেুী পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বোগলাবাজার ইউনিয়নের কান্দাগাও গ্রামে ১৯৫০ সালে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে। এ বিদ্যালয় ছাড়া প্রায় চার কিলোমিটারের মধ্যে আর কোন বিদ্যালয় নেই। ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়েছে। এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১ম শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে ৫৩৩ জন। বিদ্যালয়ের প্রাথমিক স্তরে কর্মরত শিক্ষক আছেন ৮ জন। শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ ও আসবাবপত্র সংকটে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে পাঠদানে বেগ পেতে হচ্ছে শিক্ষকদের। যেখানে প্রাথমিক স্তরের পাঠদানে অবকাঠামো ও শিক্ষক সংকট, সেই বিদ্যালয়েই ২০১৩ সালে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম পর্যন্ত অতিরিক্ত তিনটি শ্রেণির পাঠদান চালু করা হয়। এতে পাঠদানে প্রচন্ড চাপের মধ্যে পড়েছেন বিদ্যালয়টির শিক্ষকরা। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে মূলত পাঠদানের জন্য কোনো শিক্ষক নেই। তা ছাড়া শ্রেণিকক্ষ, আসবাবপত্র ও পাঠদানের জন্য শিক্ষা উপকরণ ও কোনো অর্থ বরাদ্দ নেই। তাছাড়া এ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেুী পর্যন্ত নেই কোন বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক। প্রাথমিক লেবেলের শিক্ষক দিয়েই চলছে ৬ষ্ট থেকে ৮ম শ্রেণীর কার্যক্রম। নিম্ম মাধ্যমিক পর্যায়ের জন্য আরও ৭জন শিক্ষক দরকার এ বিদ্যালয়ে।

শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকটে পাঠদান সচল রাখতে শিক্ষকদের এমনিতেই চাপের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। নি¤œ মাধ্যমিকের নতুন কারিকুলাম চালু হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের দাবি, শিক্ষাবান্ধব এই উদ্যোগটিকে সফল করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় শিক্ষকের ব্যবস্থা এবং অবকাঠামো সংকট দূর করতে হবে।

বিদ্যালয়টির অধিকাংশ ক্লাস চলে পরিত্যক্ত টিনশেড ভবনে।শুষ্ক মৌসুমে কোনমতে শ্রেুী কার্যক্রম চালানো গেলেও বর্ষা মৌসুমে পুরনো ভবনের টিনের ছিদ্রপথে পানি পড়ার কারণে শ্রেণী কার্যক্রমে বিঘœ ঘটে। প্রাক-প্রাথমিকসহ ৯টি শ্রেণীর জন্য ১৩টি শ্রেণীকক্ষ দরকার। বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী শ্রেণীকক্ষসহ ৭টি কক্ষে পালাক্রমে ও গাদাগাদি করে কোনমতে শ্রেণী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তাছাড়া পাঠদানও ফলপ্রসূ হচ্ছে না। এ অবস্থায় জেএসসি ফলাফলে বিদ্যালয়টি উপজেলার মধ্যে ভালো করছে সব সময়। কিন্তু নতুন কারিকুলাম চালু হওয়া এবং বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের কাক্সিক্ষত শিখনফল অর্জন অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ ইমাম হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের ৪ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো নিম্নœ বা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। নিকটবর্তী উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় অধিকাংশ ছেলেমেয়ে পঞ্চম শ্রেণি পাসের পর ঝরে পড়ত। কিন্তু ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির পাঠদান চালু হওয়ায় ওই ১৫ গ্রামের মেয়েদের ঝরে পড়া ও বাল্যবিয়ের হার কমেছে। কিন্তু শিক্ষক ও অবকাঠামো সংকটের কারণে সঠিকভাবে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না। প্রথমদিকে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চালু করা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত প্রধান শিক্ষককে মূল বেতনের ৩৫ ভাগ ও সহকারী শিক্ষকদের মূল বেতনের ২৫ ভাগ দেয়ার কথা। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, আসবারপত্র সংকট, ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর সংকট থাকায় সঠিকভাবে পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটছে। এ বিদ্যালয়ে ২০২১ ও ২২ সালের সমাপনী পরীক্ষায় পিএসসি ও জেএসসিতে শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করে উপজেলায় রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এদিকে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর না থাকায় নিরপত্তাহীনতায় ভোগেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া গত দশ বছর ধরে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা শ্রেণী কার্যক্রম চললেও সরকারিভাবে অফিস ম্যানেজমেন্টের জন্য কোন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অবকাঠামো সংকটসহ নানা সমস্যার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পঞ্চানন কুমার সানা বলেন, সমস্যা সমাধান পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিদ্যালয়টি আমাদের বিশেষ নজরে আছে। উপজেলা শিক্ষা কমিটির মাসিক মিটিংয়ে বিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানে আলোচনাপূর্বক দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহের নিগার তনু বলেন কান্দাগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও অবকাঠামো সংকটের বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।