গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল কাচাবাজার, কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজার ও মুদি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, চিনির দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। যথারীতি চড়া চাল, ডাল, আটা, ময়দা, মসলাসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম।
খোলা বাজারে খোলা সাদা চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। আর প্যাকেজাত সাদা চিনি ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায় আর প্যাকেটজাত লাল চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায়। খুচরা বাজারে আলু এখনও ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। বাজারভেদে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজন ১২০ থেকে ১৩৫ টাকায়।
খুচরা বাজারে মানভেদে খোলা আটা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা আর খোলা ময়দা ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মানভেদে বিআর আটাশের চাল ৫৬ থেকে ৬০ টাকা, মানভেদে মিনিকেট চাল ৭০ থেকে ৭২ টাকায়।
পাশাপাশি মানভেদে দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে কেজি ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায়, আমদানি রসুন ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। আমদানি করা আদা ২২০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
গত মাসে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিমাপ করা হয়েছে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছর এই সময়ে এই হার ছিল ৮.৫০ শতাংশ। বর্তমানে এটি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
গত সেপ্টেম্বর মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রথমবারের মতো তিনটি কৃষিপণ্যের দাম বেঁধে দেয় সরকার। সেগুলো হচ্ছে ডিম, আলু ও দেশি পেঁয়াজ। বেঁধে দেয়া দাম অনুযায়ী, প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২ টাকা, আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা (হিমাগার পর্যায়ে ২৬-২৭) এবং দেশি পেঁয়াজের দাম ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ঢাকা মহানগরীর গতকালের দরদামের হিসেবে, এক বছরে দেশি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬১ দশমিক ১১ শতাংশ। আলু ১০২ দশমিক ১৩ শতাংশ। চিনি ৩১ দশমিক ১১ শতাংশ।
টিসিবির ঢাকা মহানগরীর গতকালের দরদামের হিসেবে, এক মাসে মোটা চাল ৪ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, মাঝারি চাল ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। খোলা আটা ৯ দশমিক ২০ শতাংশ। খোলা ময়দা ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ।
চালের দরদাম ও দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে রাজধানী মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজারের ফেনী রাইছ স্টোরের স্বত্তাধিকারী মো. ইউসুফ সংবাদকে বলেন, ‘বিআর আটাশ চালের দাম কেজিতে চার টাকা বাড়ছে। নাজিরেও বাড়ছে চার টাকা আর মিনিকেটে বাড়ছে দুই টাকা। কয়েক বছর থেকে ধান কাটা-মারির মৌসুমে আর চালের দাম কমে না। এখন অফ সিজনে দাম কমে। সিজন সময়ে আগে কমতো।’
তিনি বলেন, ‘ধরেন, সিজন আসলে আজ কিনতাম দশ টাকা, কাল কিনতাম আট টাকা আর পরশু কিনতাম আট টাকায়। ডেইলি কমতো। এখন আর সেটা নাই। এখন সিজনটা যখন উঠে তখন মিল মালিকরা মরিয়া হয়ে যায়। কার আগে কে ধান কিনবে। আগে লট বেচা না হওয়া পর্যন্ত বাড়তও না, কমতোও না। পরের লট বাড়বো, না হয় কমবো, না হয় একই থাকবো। আগে সিজন আসলে দোকানপাট খালি কইরা ফালাইতাম, এখন আরও বেশি করে উঠাই। সিজন আইলে দাম আরও বাড়ে।’
খোলা আটা-ময়দার দরদামের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজারের মেসার্স সরকার ট্রেডার্স বিক্রেতা অপু বলেন, ‘খোলা আটা ৫০ কেজি টাকা আর খোলা ময়দা ৭০ টাকা। দাম আরও বাড়তে পারে।’
কারওয়ান বাজারের খোলা আটা-ময়দার দরবৃদ্ধি ও দরদামের বিষয়ে জানতে চাইলে পাইকারি বিক্রেতা লাকসাম জেনারেল স্টোরের স্বত্তাধিকারী সংবাদকে বলেন, ‘তীর ব্যান্ডের ৫০ কেজির এক বস্তা খোলা ময়দা বিক্রি করছি ৩ হাজার ৫০০ টাকা আর ৫০ কেজির ১ বস্তা খোলা আটা ২ হাজার ২৫০ টাকা। গম না আসলে দামতো বাড়বোই। দাম আরও বাড়ার সম্ভবনা আছে।’
এক কেজি দেশি পেঁয়াজ, আর এক ডজন ফার্মের মুরগির ডিম কিনে ওই বাজার থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন রহমান মিয়া। বাজারে পণ্যের দামের বিষয়ে কথা হলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম ডাবল ডাবল হইছে। জিনিসপত্রের দামে মানুষের কষ্ট বাড়ছে। যাতায়াত খরচ বাড়ছে। সব কিছুরই দাম বাড়ছে।’
তিনি বলেন, শুধু খাবার যোগার করতেই ইনকামটা ব্যায় হয়ে যায়। আর কিছু হয় না। তাই আগে ফলমূল রেগুলার কিনলেও এখন আর তা পারেন না।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি বছরেই কিন্তু জিনিপত্রের দাম বাড়ে। যেটুকু দাম বাড়ার কথা, তার থেকে বেশি দাম বাড়ছে। এইবার নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে। সিন্ডিকেট কইরা এগুলা করতাছে। সরকার যদি একটু নজর দেয় তাহলে একটু কমতে পারে। তাছাড়া আর কোনো উপায় নেই। জনগণ তো আর কমাইতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়লে মধ্যবিত্তের বাড়ে কষ্ট। উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্তের কোনো কষ্ট হয় না। নিম্নবৃত্তরা এক পেশা থেকে অন্য পেশায় যেতে পারে, মধ্যবিত্তরা তা পারে না।’
একই প্রসঙ্গে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী স্বপন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, আগে তিনি ৫০ কেজি করে চাল কিনতেন। এরপর কিনতেন ২৫ কেজি করে। এখন সেটাও আর সম্ভব হচ্ছে না তার পক্ষে। তিনি এখন ৫ কেজি করে চাল কেনেন, যা দুই দিনেই শেষ হয়ে যায়।
আগে আলু, পেঁয়াজও কিনতেন বেশি করে। একবারে ৫ কেজি। এখন কেনেন আধা কেজি। গরুর মাংস আর কিনছেন না। মাঝে মধ্যে ব্রয়লার মুরগি আর পাঙ্গাস মাছ কেনেন তিনি।
বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজের পরিস্থিতি বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ছয় জনের পরিবারে বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাসের বিল, বাচ্চাদের লেখাপড়ার খরচ। আর অসুখ-বিসুখ তো লেগেই আছে। ওষুধের দামও বেড়ে গেছে। ক্ষেত্র বিশেষে দুই-তিন গুণ। ১০ টাকার পাতা ২০-৩০ টাকা হয়ে গেছে।
‘মুদি দোকানে বাকি, সবজিওয়ালার কাছে বাকি। বেতন পাওয়ার পর বকেয়া দিয়ে হাত খালি হয়ে যায়।’
এই পরিস্থিতিতে সামাজিকতা রক্ষা করাও কঠিন হয়ে উঠেছে বলেও জানান তিনি।
সৎভাবে যারা জীবন নির্বাহ করে, তাদের জন্য চলাই দুস্কর হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবস্থা বাইরে ফিটফাট দেখালেও ভিতরে সদরঘাট হয়ে গেছে।’
রাজধানী কারওরান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, খোলা আটা ৫০ টাকা। আর খোলা ময়দা ৭০ টাকা। দাম কমতে পারে কিনা জানতে চাইলে আনসার আলী স্টোরের বিক্রেতা বলেন, ‘দেশে যেটা বাড়ে, সেটা কি আর পরে সেভাবে কমে? তবে, বাড়ার সম্ভবনাই আছে।’
একই বাজারে পাইকারি চিনি বিক্রয় করেন মেসার্স আমীন জেনারেল স্টোর। চিনির দামের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আমীন সংবাদকে বলেন, ‘আজ ৫০ কেজির এক বস্তা খোলা চিনি বিক্রি করছি ৬ হাজার ৮৭০ টাকায়।’
চলতি নভেম্বরের শুরুতে দেশের বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের চিনি আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের নির্দেশনানুসারে অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে টনপ্রতি কাস্টমস ডিউটি (সিডি) ৩ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ১৫০০ টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি পরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক ৬ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ, উভয় ধরনের চিনির আমদানি শুল্ক কমিয়ে অর্ধেক করা হলেও দাম না কমে উল্টো বেড়েছে।
এর আগে গত ১৪ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া সরকার নির্ধারিত নতুন দর অনুযায়ী খোলা চিনির কেজি ১৩০ টাকা। একইভাবে প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর ২০ থেকে ২২ লাখ টন চিনির চাহিদা আছে। এর মধ্যে স্থানীয় মিলগুলো ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টন উৎপাদন করে। ফলে, বাকি চিনির যোগান দিতে বাংলাদেশকে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়।
গত বছর ৬ আগস্ট দেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫২ শতাংশ বাড়ে। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ৮০ টাকা থেকে ৩৪ টাকা বেড়ে হয় ১১৪ টাকা। পেট্রোলের দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৮৯ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা হয়।
মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০২৩ , ৬ অগ্রায়ন ১৪৩০, ৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫
আমিরুল মোমিনিন সাগর
গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল কাচাবাজার, কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজার ও মুদি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, চিনির দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। যথারীতি চড়া চাল, ডাল, আটা, ময়দা, মসলাসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম।
খোলা বাজারে খোলা সাদা চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। আর প্যাকেজাত সাদা চিনি ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায় আর প্যাকেটজাত লাল চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায়। খুচরা বাজারে আলু এখনও ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। বাজারভেদে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজন ১২০ থেকে ১৩৫ টাকায়।
খুচরা বাজারে মানভেদে খোলা আটা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা আর খোলা ময়দা ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মানভেদে বিআর আটাশের চাল ৫৬ থেকে ৬০ টাকা, মানভেদে মিনিকেট চাল ৭০ থেকে ৭২ টাকায়।
পাশাপাশি মানভেদে দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে কেজি ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায়, আমদানি রসুন ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। আমদানি করা আদা ২২০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
গত মাসে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিমাপ করা হয়েছে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছর এই সময়ে এই হার ছিল ৮.৫০ শতাংশ। বর্তমানে এটি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
গত সেপ্টেম্বর মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রথমবারের মতো তিনটি কৃষিপণ্যের দাম বেঁধে দেয় সরকার। সেগুলো হচ্ছে ডিম, আলু ও দেশি পেঁয়াজ। বেঁধে দেয়া দাম অনুযায়ী, প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২ টাকা, আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা (হিমাগার পর্যায়ে ২৬-২৭) এবং দেশি পেঁয়াজের দাম ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ঢাকা মহানগরীর গতকালের দরদামের হিসেবে, এক বছরে দেশি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬১ দশমিক ১১ শতাংশ। আলু ১০২ দশমিক ১৩ শতাংশ। চিনি ৩১ দশমিক ১১ শতাংশ।
টিসিবির ঢাকা মহানগরীর গতকালের দরদামের হিসেবে, এক মাসে মোটা চাল ৪ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, মাঝারি চাল ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। খোলা আটা ৯ দশমিক ২০ শতাংশ। খোলা ময়দা ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ।
চালের দরদাম ও দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে রাজধানী মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজারের ফেনী রাইছ স্টোরের স্বত্তাধিকারী মো. ইউসুফ সংবাদকে বলেন, ‘বিআর আটাশ চালের দাম কেজিতে চার টাকা বাড়ছে। নাজিরেও বাড়ছে চার টাকা আর মিনিকেটে বাড়ছে দুই টাকা। কয়েক বছর থেকে ধান কাটা-মারির মৌসুমে আর চালের দাম কমে না। এখন অফ সিজনে দাম কমে। সিজন সময়ে আগে কমতো।’
তিনি বলেন, ‘ধরেন, সিজন আসলে আজ কিনতাম দশ টাকা, কাল কিনতাম আট টাকা আর পরশু কিনতাম আট টাকায়। ডেইলি কমতো। এখন আর সেটা নাই। এখন সিজনটা যখন উঠে তখন মিল মালিকরা মরিয়া হয়ে যায়। কার আগে কে ধান কিনবে। আগে লট বেচা না হওয়া পর্যন্ত বাড়তও না, কমতোও না। পরের লট বাড়বো, না হয় কমবো, না হয় একই থাকবো। আগে সিজন আসলে দোকানপাট খালি কইরা ফালাইতাম, এখন আরও বেশি করে উঠাই। সিজন আইলে দাম আরও বাড়ে।’
খোলা আটা-ময়দার দরদামের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজারের মেসার্স সরকার ট্রেডার্স বিক্রেতা অপু বলেন, ‘খোলা আটা ৫০ কেজি টাকা আর খোলা ময়দা ৭০ টাকা। দাম আরও বাড়তে পারে।’
কারওয়ান বাজারের খোলা আটা-ময়দার দরবৃদ্ধি ও দরদামের বিষয়ে জানতে চাইলে পাইকারি বিক্রেতা লাকসাম জেনারেল স্টোরের স্বত্তাধিকারী সংবাদকে বলেন, ‘তীর ব্যান্ডের ৫০ কেজির এক বস্তা খোলা ময়দা বিক্রি করছি ৩ হাজার ৫০০ টাকা আর ৫০ কেজির ১ বস্তা খোলা আটা ২ হাজার ২৫০ টাকা। গম না আসলে দামতো বাড়বোই। দাম আরও বাড়ার সম্ভবনা আছে।’
এক কেজি দেশি পেঁয়াজ, আর এক ডজন ফার্মের মুরগির ডিম কিনে ওই বাজার থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন রহমান মিয়া। বাজারে পণ্যের দামের বিষয়ে কথা হলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম ডাবল ডাবল হইছে। জিনিসপত্রের দামে মানুষের কষ্ট বাড়ছে। যাতায়াত খরচ বাড়ছে। সব কিছুরই দাম বাড়ছে।’
তিনি বলেন, শুধু খাবার যোগার করতেই ইনকামটা ব্যায় হয়ে যায়। আর কিছু হয় না। তাই আগে ফলমূল রেগুলার কিনলেও এখন আর তা পারেন না।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি বছরেই কিন্তু জিনিপত্রের দাম বাড়ে। যেটুকু দাম বাড়ার কথা, তার থেকে বেশি দাম বাড়ছে। এইবার নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে। সিন্ডিকেট কইরা এগুলা করতাছে। সরকার যদি একটু নজর দেয় তাহলে একটু কমতে পারে। তাছাড়া আর কোনো উপায় নেই। জনগণ তো আর কমাইতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়লে মধ্যবিত্তের বাড়ে কষ্ট। উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্তের কোনো কষ্ট হয় না। নিম্নবৃত্তরা এক পেশা থেকে অন্য পেশায় যেতে পারে, মধ্যবিত্তরা তা পারে না।’
একই প্রসঙ্গে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী স্বপন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, আগে তিনি ৫০ কেজি করে চাল কিনতেন। এরপর কিনতেন ২৫ কেজি করে। এখন সেটাও আর সম্ভব হচ্ছে না তার পক্ষে। তিনি এখন ৫ কেজি করে চাল কেনেন, যা দুই দিনেই শেষ হয়ে যায়।
আগে আলু, পেঁয়াজও কিনতেন বেশি করে। একবারে ৫ কেজি। এখন কেনেন আধা কেজি। গরুর মাংস আর কিনছেন না। মাঝে মধ্যে ব্রয়লার মুরগি আর পাঙ্গাস মাছ কেনেন তিনি।
বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজের পরিস্থিতি বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ছয় জনের পরিবারে বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাসের বিল, বাচ্চাদের লেখাপড়ার খরচ। আর অসুখ-বিসুখ তো লেগেই আছে। ওষুধের দামও বেড়ে গেছে। ক্ষেত্র বিশেষে দুই-তিন গুণ। ১০ টাকার পাতা ২০-৩০ টাকা হয়ে গেছে।
‘মুদি দোকানে বাকি, সবজিওয়ালার কাছে বাকি। বেতন পাওয়ার পর বকেয়া দিয়ে হাত খালি হয়ে যায়।’
এই পরিস্থিতিতে সামাজিকতা রক্ষা করাও কঠিন হয়ে উঠেছে বলেও জানান তিনি।
সৎভাবে যারা জীবন নির্বাহ করে, তাদের জন্য চলাই দুস্কর হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবস্থা বাইরে ফিটফাট দেখালেও ভিতরে সদরঘাট হয়ে গেছে।’
রাজধানী কারওরান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, খোলা আটা ৫০ টাকা। আর খোলা ময়দা ৭০ টাকা। দাম কমতে পারে কিনা জানতে চাইলে আনসার আলী স্টোরের বিক্রেতা বলেন, ‘দেশে যেটা বাড়ে, সেটা কি আর পরে সেভাবে কমে? তবে, বাড়ার সম্ভবনাই আছে।’
একই বাজারে পাইকারি চিনি বিক্রয় করেন মেসার্স আমীন জেনারেল স্টোর। চিনির দামের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আমীন সংবাদকে বলেন, ‘আজ ৫০ কেজির এক বস্তা খোলা চিনি বিক্রি করছি ৬ হাজার ৮৭০ টাকায়।’
চলতি নভেম্বরের শুরুতে দেশের বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের চিনি আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের নির্দেশনানুসারে অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে টনপ্রতি কাস্টমস ডিউটি (সিডি) ৩ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ১৫০০ টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি পরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক ৬ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ, উভয় ধরনের চিনির আমদানি শুল্ক কমিয়ে অর্ধেক করা হলেও দাম না কমে উল্টো বেড়েছে।
এর আগে গত ১৪ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া সরকার নির্ধারিত নতুন দর অনুযায়ী খোলা চিনির কেজি ১৩০ টাকা। একইভাবে প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর ২০ থেকে ২২ লাখ টন চিনির চাহিদা আছে। এর মধ্যে স্থানীয় মিলগুলো ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টন উৎপাদন করে। ফলে, বাকি চিনির যোগান দিতে বাংলাদেশকে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়।
গত বছর ৬ আগস্ট দেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫২ শতাংশ বাড়ে। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ৮০ টাকা থেকে ৩৪ টাকা বেড়ে হয় ১১৪ টাকা। পেট্রোলের দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৮৯ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা হয়।