একাধিক মামলায় বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণার পর যখন আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দলের নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে, এমন পরিস্থিতিতে ‘নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দেয়া’ বিএনপির অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে দশম জাতীয় সংসদের সময় নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে হওয়া মামলার মধ্যে পৃথক পৃথক মামলায়। গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৃথক এসব মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের মীর সরাফত আলী খান, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী রয়েছে। যদিও রায়ের সময় সাজার দণ্ড পাওয়া অনেক নেতা আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

আদালত সূত্র জানায়, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ ৪৯ নেতাকর্মীকে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (সিএমএম) ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ ও মোহাম্মদ শেখ সাদী গতকাল এই রায় দেন। চারটি মামলায় তাদের এই কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে গত ২ মাসে ঢাকার আদালতে ২১টি মামলায় বিএনপির ২৬৫ জনের কারাদণ্ড হলো। আর বিগত ১ বছরে ২৯টি মামলায় ২৯৯ জনের কারাদণ্ড হলো। এর আগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান (হাবীব), ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আলিম (নকি), বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম, যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারের সাজা হয়েছে।

এ নিয়ে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, একের পর এক বিএনপি নেতাকর্মীদের সাজা দেয়া হচ্ছে। চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে এবং নির্বাচনে বিএনপি নেতাদের অযোগ্য করার জন্যই এই সাজা হচ্ছে।

যে অভিযোগে বিএনপি নেতাদের সাজা হলো

মামলার এজাহারের অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি সন্ধ্যার সময় নিউমার্কেটের ৪ নম্বর গেটে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য বিএনপি নেতাকর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এই ঘটনায় স্থানীয় বিএনপির ১৩ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে পুলিশ নিউমার্কেট থানায় মামলা করে। পরে তদন্ত করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। তাতে বলা হয়, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য সেদিন বিএনপি নেতাকর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। এই ঘটনার সঙ্গে বিএনপি নেতা হাবিবুন নবী খান সোহেল, আজিজুল বারী হেলাল ও মীর সরাফাত আলী সফুর জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। পুলিশের দেয়া ওই অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে আদালত ২০২১ সালের ১৫ মার্চ বিএনপি নেতা হাবিবুর নবী খান সোহেলসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এই মামলায় পুলিশের পক্ষ থেকে সাক্ষী করা হয়েছিল ২০ জনকে। রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে সাক্ষী হাজির করেছেন পাঁচজন। আর ওই পাঁচজনই ছিলেন পুলিশ বাহিনীর সদস্য। প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় গত ১৭ জুলাই। আর ৫ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া হয় গত ৯ নভেম্বর।

গত রোববার ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ এই রায় দেন। দণ্ডবিধির ১৪৩ (বেআইনি সমাবেশ) ধারার অপরাধে হাবীব উন নবী খান সোহেলসহ ১৪ জনের ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর দণ্ডবিধির ৩২৩ (আঘাত) ধারায় তাদের এক বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

এছাড়া ২০১৫ সালে মে মাসে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেয়ার মামলায় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ সাতজনকে দুই বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দণ্ডবিধির ৪৩৫ (বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করে আগুন দেয়া) ধারায় সাইফুল ইসলামদের সাজা দিয়েছেন আদালত। ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদী গতকাল এই রায় দেন। এই মামলায় পুলিশ চারজনের সাক্ষ্য নিয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন পুলিশ বাহিনীর সদস্য।

এছাড়া ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দায়ের করা একটি মামলায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলামসহ ১৪ জনকে ২ বছর ৩ মাস করে সাজা দিয়েছেন আদালত। দণ্ডবিধির ১৪৩ (বেআইনি সমাবেশ) ধারার অপরাধে রফিকুলসহ ১৪ জনের ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর দণ্ডবিধির ৩৩২ (সরকারি কাজে বাধা দেয়া) ধারায় তাদের প্রত্যেকের দুই বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় করা মামলায় বিএনপির ১৪ নেতা–কর্মীর ২ বছর ৩ মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ এ রায় দেন। রায়ের সময় আসামিদের কেউ আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

অন্যদিকে পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার আরেক মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল এবং যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ ২৫ জনকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাস করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ এ রায় দেন। দণ্ডিত অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন বিএনপির তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সেক্রেটারি রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাবেক সেক্রেটারি আকরামুল হাসান মিন্টু, হাবিবুর রশিদ হাবিব ও যুবদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি এনামুল হক এনাম। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারসহ ১২ জন খালাস পেয়েছেন। ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হয়ে ফেনীতে যাওয়ার কথা ছিল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। তিনি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গেলে আসামিরা পুলিশের কাজে বাধা দেন। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ ঘটনায় পল্টন মডেল থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট এ মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়।

অন্যদিকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর বংশালে পুলিশের ওপর হামলা ও দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়ার মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের ৬২ নেতাকর্মীকে ৪২ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে খন্দকার আখতার হামিদ খান পবনও এই মামলার আসামি। ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ শেখ সাদী আসামিদের অনুপস্থিতিতে গতকাল রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার আগে ম্যাজিস্ট্রেট তাদের জামিন বাতিল করেন এবং আসামিরা অনুপস্থিত থাকায় তাদের ‘পলাতক’ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে বংশাল থানার ওসি আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন আদালত। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার বা আত্মসমর্পণের দিন থেকে তাদের শাস্তি কার্যকর হবে বলে ম্যাজিস্ট্রেট তার রায়ে উল্লেখ করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বংশালের নবাব কাঁটরায় হোটেল সুফিয়া (প্রাইভেট) লিমিটেডের সামনে বিএনপির একদল নেতাকর্মী জড়ো হন। একপর্যায়ে তারা দোকানপাট ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা ও দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বংশাল থানায় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের ৮০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে। তদন্ত শেষে পুলিশ ২০১৯ সালের ২৬ জুলাই ৬২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে এবং ২০২২ সালের ১৪ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।

মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০২৩ , ৬ অগ্রায়ন ১৪৩০, ৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫

একাধিক মামলায় বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণার পর যখন আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দলের নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে, এমন পরিস্থিতিতে ‘নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দেয়া’ বিএনপির অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে দশম জাতীয় সংসদের সময় নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে হওয়া মামলার মধ্যে পৃথক পৃথক মামলায়। গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৃথক এসব মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের মীর সরাফত আলী খান, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী রয়েছে। যদিও রায়ের সময় সাজার দণ্ড পাওয়া অনেক নেতা আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

আদালত সূত্র জানায়, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ ৪৯ নেতাকর্মীকে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (সিএমএম) ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ ও মোহাম্মদ শেখ সাদী গতকাল এই রায় দেন। চারটি মামলায় তাদের এই কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে গত ২ মাসে ঢাকার আদালতে ২১টি মামলায় বিএনপির ২৬৫ জনের কারাদণ্ড হলো। আর বিগত ১ বছরে ২৯টি মামলায় ২৯৯ জনের কারাদণ্ড হলো। এর আগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান (হাবীব), ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আলিম (নকি), বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম, যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারের সাজা হয়েছে।

এ নিয়ে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, একের পর এক বিএনপি নেতাকর্মীদের সাজা দেয়া হচ্ছে। চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে এবং নির্বাচনে বিএনপি নেতাদের অযোগ্য করার জন্যই এই সাজা হচ্ছে।

যে অভিযোগে বিএনপি নেতাদের সাজা হলো

মামলার এজাহারের অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি সন্ধ্যার সময় নিউমার্কেটের ৪ নম্বর গেটে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য বিএনপি নেতাকর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এই ঘটনায় স্থানীয় বিএনপির ১৩ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে পুলিশ নিউমার্কেট থানায় মামলা করে। পরে তদন্ত করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। তাতে বলা হয়, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য সেদিন বিএনপি নেতাকর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। এই ঘটনার সঙ্গে বিএনপি নেতা হাবিবুন নবী খান সোহেল, আজিজুল বারী হেলাল ও মীর সরাফাত আলী সফুর জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। পুলিশের দেয়া ওই অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে আদালত ২০২১ সালের ১৫ মার্চ বিএনপি নেতা হাবিবুর নবী খান সোহেলসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এই মামলায় পুলিশের পক্ষ থেকে সাক্ষী করা হয়েছিল ২০ জনকে। রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে সাক্ষী হাজির করেছেন পাঁচজন। আর ওই পাঁচজনই ছিলেন পুলিশ বাহিনীর সদস্য। প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় গত ১৭ জুলাই। আর ৫ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া হয় গত ৯ নভেম্বর।

গত রোববার ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ এই রায় দেন। দণ্ডবিধির ১৪৩ (বেআইনি সমাবেশ) ধারার অপরাধে হাবীব উন নবী খান সোহেলসহ ১৪ জনের ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর দণ্ডবিধির ৩২৩ (আঘাত) ধারায় তাদের এক বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

এছাড়া ২০১৫ সালে মে মাসে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেয়ার মামলায় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ সাতজনকে দুই বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দণ্ডবিধির ৪৩৫ (বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করে আগুন দেয়া) ধারায় সাইফুল ইসলামদের সাজা দিয়েছেন আদালত। ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদী গতকাল এই রায় দেন। এই মামলায় পুলিশ চারজনের সাক্ষ্য নিয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন পুলিশ বাহিনীর সদস্য।

এছাড়া ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দায়ের করা একটি মামলায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলামসহ ১৪ জনকে ২ বছর ৩ মাস করে সাজা দিয়েছেন আদালত। দণ্ডবিধির ১৪৩ (বেআইনি সমাবেশ) ধারার অপরাধে রফিকুলসহ ১৪ জনের ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর দণ্ডবিধির ৩৩২ (সরকারি কাজে বাধা দেয়া) ধারায় তাদের প্রত্যেকের দুই বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় করা মামলায় বিএনপির ১৪ নেতা–কর্মীর ২ বছর ৩ মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ এ রায় দেন। রায়ের সময় আসামিদের কেউ আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

অন্যদিকে পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার আরেক মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল এবং যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ ২৫ জনকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাস করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ এ রায় দেন। দণ্ডিত অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন বিএনপির তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সেক্রেটারি রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাবেক সেক্রেটারি আকরামুল হাসান মিন্টু, হাবিবুর রশিদ হাবিব ও যুবদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি এনামুল হক এনাম। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারসহ ১২ জন খালাস পেয়েছেন। ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হয়ে ফেনীতে যাওয়ার কথা ছিল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। তিনি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গেলে আসামিরা পুলিশের কাজে বাধা দেন। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ ঘটনায় পল্টন মডেল থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট এ মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়।

অন্যদিকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর বংশালে পুলিশের ওপর হামলা ও দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়ার মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের ৬২ নেতাকর্মীকে ৪২ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে খন্দকার আখতার হামিদ খান পবনও এই মামলার আসামি। ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ শেখ সাদী আসামিদের অনুপস্থিতিতে গতকাল রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার আগে ম্যাজিস্ট্রেট তাদের জামিন বাতিল করেন এবং আসামিরা অনুপস্থিত থাকায় তাদের ‘পলাতক’ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে বংশাল থানার ওসি আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন আদালত। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার বা আত্মসমর্পণের দিন থেকে তাদের শাস্তি কার্যকর হবে বলে ম্যাজিস্ট্রেট তার রায়ে উল্লেখ করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বংশালের নবাব কাঁটরায় হোটেল সুফিয়া (প্রাইভেট) লিমিটেডের সামনে বিএনপির একদল নেতাকর্মী জড়ো হন। একপর্যায়ে তারা দোকানপাট ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা ও দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বংশাল থানায় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের ৮০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে। তদন্ত শেষে পুলিশ ২০১৯ সালের ২৬ জুলাই ৬২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে এবং ২০২২ সালের ১৪ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।