২০১৩ সালে শেষবার কোনো আইসিসি প্রতিযোগিতায় শিরোপা জিতেছিল ভারত। ধোনির নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিল দেশ। তার পরে নয় বছরের শূন্যতা। এই সময়ের মধ্যে ভারত নয়বার কোনো না কোনো আইসিসি প্রতিযোগিতার নকআউটে খেলেছে। প্রত্যেক বারই হারতে হয়েছে। বার বার চাপের ম্যাচে মুখ থুবড়ে পড়েছে ভারতীয় দল। তা হলে কি বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন ‘চোকার্স’ ভারত! যে তকমা এতদিন দক্ষিণ আফ্রিকাকে দেয়া হত, সেই তকমা কি এবার থেকে ভারতের গায়েও এঁটে গেলো।
শুরুটা হয়েছিল ২০১৪ সালের টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল থেকে। শ্রীলঙ্কার কাছে হেরেছিলেন ধোনিরা। পরে আরও দুটি টি-২০ বিশ্বকাপের নকআউট খেলেছে ভারত। ২০১৬ সালে দেশের মাটিতে সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ও ২০২২ সালের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে দলকে। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হার বড় ধাক্কা দিয়েছিল ভারতকে।
একই অবস্থা তিনটি একদিনের বিশ্বকাপের ক্ষেত্রেও। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ও ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ চারে হেরেছিলেন ভিরাট কোহলিরা। ২০২৩ সালে দেশের মাটিতে ফাইনালে সেই পরাজিত হয়েও মাঠ ছাড়তে হল রোহিত শর্মাদের।
সাদা বলের মতো লাল বলের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হওয়ার পর থেকে পর পর দুটি ফাইনাল খেলেছে ভারত। প্রথমবার নিউজিল্যান্ড ও পরেরবার অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারতে হয়েছে। সব মিলিয়ে নয়বছরে মোট নয়বার।
কিন্তু কেন বার বার এমনটা হচ্ছে? এমন নয় যে এই প্রতিটি ক্ষেত্রে গ্রুপপর্বে ভারত খারাপ খেলেছে। বরং প্রতিবার গ্রুপপর্বে দাপট দেখিয়েছে তারা। চলতি বছর টানা ১০টি ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে খেই হারিয়ে ফেলছে ভারত? শুধুই কি চাপ?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুটি কারণে এটা হতে পারে। ১) বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে সেমিফাইনাল বা ফাইনালের চাপ নিতে না পেরে সহজ বিষয়ে ভুল করা। স্বাভাবিক খেলা খেলতে না পারা। ২) প্রতিপক্ষ সম্পর্কে বেশি হোমওয়ার্ক না করে মাঠে খেলতে নামা। ফলে প্রতিপক্ষের ভুলত্রুটি ধরতে না পারা।
চলতি বিশ্বকাপে ভারত প্রতিটি ম্যাচে যে পরিকল্পনা নিয়ে খেলেছে তাতে মনে হয়নি প্রতিপক্ষ সম্পর্কে হোমওয়ার্ক না করে তারা নেমেছে। প্রতিটি দলের ভয়ঙ্কর ক্রিকেটারদের সামনে আলাদা করে ফিল্ডিং সাজানো হয়েছিল। বোলারেরা আলাদা পরিকল্পনা করে বল করছিলেন। তা হলে কি ফাইনালে সে সব গুলিয়ে গেল? ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পরিকল্পনা না করেই নেমে পড়লেন রোহিতেরা? তা হয়তো নয়। কিন্তু প্রতিটি ম্যাচে পরিকল্পনা কাজে না-ও লাগতে পারে। সেটাই দেখা গিয়েছে ফাইনালে।
ফাইনালে ভারতকে সমস্যায় ফেলেছে ব্যাটিং। চলতি বিশ্বকাপে যেভাবে মাঝের ওভারে ভারতীয় ব্যাটারেরা খেলেছেন তা ফাইনালে দেখা যায়নি। একটা সময় ভিরাট কোহলি ও কেএল রাহুল এত ধীরে খেলেছেন যে ওভারের পর ওভার রান হয়নি। যেন একটি আবরণের মধ্যে নিজেদের ঢুকিয়ে রেখেছিলেন তারা। তারই সুবিধা নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। অর্থাৎ, বদলটা হয়েছে মানসিকতায়। ফাইনাল জিততে হলে একটু সাহস দেখাতে হয়। আহমেদাবাদের ফাইনালে সেই সাহসটা দেখাতেই ভুলে গিয়েছিল ভারত। টস জিতে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স যেমন প্রথমে বল করে সাহস দেখিয়েছিলেন তার পালটা সাহস দেখাতে পারলেন না কোহলিরা। সেখানেই তফাত হয়ে গেল।
ব্যাটিং ব্যর্থতার পরে চাপ নিতে পারল না দলের ফিল্ডিং এবং বোলিংও। মোহাম্মদ সামি উইকেট নিলেও বলের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি না। অতিরিক্ত রান দিলেন। ফলে অস্ট্রেলিয়ার ওপর চাপ কমল। ভিরাট ও শুভমনের মধ্যে দিয়ে ক্যাচ গলে চার হল। উইকেটের পিছনে বেশ কয়েকটি বল ধরতে সমস্যায় পড়লেন রাহুল। ভারতের স্পিনারেরাও উইকেট থেকে সুবিধা তুলতে পারেননি। প্রথমার্ধের চাপ দেখা গিয়েছে দ্বিতীয়ার্ধেও।
এই চাপে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে ভারত। কয়েক বছর আগেও ‘চোকার্স’ তকমার ওপর অধিকার ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। ১৯৯৯ বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল, ২০১৫ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে যে ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা চাপের কাছে হারত সেটাই দেখা যাচ্ছে ভারতের ক্ষেত্রেও। ফলে প্রশ্ন ওঠাটা অস্বাভাবিক নয় যে ভারতের গায়েও কি লেগে গিয়েছে ‘চোকার্স’ তকমা। যতদিন না রোহিত, কোহলিরা কোনো আইসিসি প্রতিযোগিতা জিততে পারেন, ততদিন কিন্তু এই তকমা লেগেই থাকবে।
মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০২৩ , ৬ অগ্রায়ন ১৪৩০, ৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫
সংবাদ স্পোর্টস ডেস্ক
২০১৩ সালে শেষবার কোনো আইসিসি প্রতিযোগিতায় শিরোপা জিতেছিল ভারত। ধোনির নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিল দেশ। তার পরে নয় বছরের শূন্যতা। এই সময়ের মধ্যে ভারত নয়বার কোনো না কোনো আইসিসি প্রতিযোগিতার নকআউটে খেলেছে। প্রত্যেক বারই হারতে হয়েছে। বার বার চাপের ম্যাচে মুখ থুবড়ে পড়েছে ভারতীয় দল। তা হলে কি বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন ‘চোকার্স’ ভারত! যে তকমা এতদিন দক্ষিণ আফ্রিকাকে দেয়া হত, সেই তকমা কি এবার থেকে ভারতের গায়েও এঁটে গেলো।
শুরুটা হয়েছিল ২০১৪ সালের টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল থেকে। শ্রীলঙ্কার কাছে হেরেছিলেন ধোনিরা। পরে আরও দুটি টি-২০ বিশ্বকাপের নকআউট খেলেছে ভারত। ২০১৬ সালে দেশের মাটিতে সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ও ২০২২ সালের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে দলকে। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হার বড় ধাক্কা দিয়েছিল ভারতকে।
একই অবস্থা তিনটি একদিনের বিশ্বকাপের ক্ষেত্রেও। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ও ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ চারে হেরেছিলেন ভিরাট কোহলিরা। ২০২৩ সালে দেশের মাটিতে ফাইনালে সেই পরাজিত হয়েও মাঠ ছাড়তে হল রোহিত শর্মাদের।
সাদা বলের মতো লাল বলের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হওয়ার পর থেকে পর পর দুটি ফাইনাল খেলেছে ভারত। প্রথমবার নিউজিল্যান্ড ও পরেরবার অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারতে হয়েছে। সব মিলিয়ে নয়বছরে মোট নয়বার।
কিন্তু কেন বার বার এমনটা হচ্ছে? এমন নয় যে এই প্রতিটি ক্ষেত্রে গ্রুপপর্বে ভারত খারাপ খেলেছে। বরং প্রতিবার গ্রুপপর্বে দাপট দেখিয়েছে তারা। চলতি বছর টানা ১০টি ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে খেই হারিয়ে ফেলছে ভারত? শুধুই কি চাপ?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুটি কারণে এটা হতে পারে। ১) বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে সেমিফাইনাল বা ফাইনালের চাপ নিতে না পেরে সহজ বিষয়ে ভুল করা। স্বাভাবিক খেলা খেলতে না পারা। ২) প্রতিপক্ষ সম্পর্কে বেশি হোমওয়ার্ক না করে মাঠে খেলতে নামা। ফলে প্রতিপক্ষের ভুলত্রুটি ধরতে না পারা।
চলতি বিশ্বকাপে ভারত প্রতিটি ম্যাচে যে পরিকল্পনা নিয়ে খেলেছে তাতে মনে হয়নি প্রতিপক্ষ সম্পর্কে হোমওয়ার্ক না করে তারা নেমেছে। প্রতিটি দলের ভয়ঙ্কর ক্রিকেটারদের সামনে আলাদা করে ফিল্ডিং সাজানো হয়েছিল। বোলারেরা আলাদা পরিকল্পনা করে বল করছিলেন। তা হলে কি ফাইনালে সে সব গুলিয়ে গেল? ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পরিকল্পনা না করেই নেমে পড়লেন রোহিতেরা? তা হয়তো নয়। কিন্তু প্রতিটি ম্যাচে পরিকল্পনা কাজে না-ও লাগতে পারে। সেটাই দেখা গিয়েছে ফাইনালে।
ফাইনালে ভারতকে সমস্যায় ফেলেছে ব্যাটিং। চলতি বিশ্বকাপে যেভাবে মাঝের ওভারে ভারতীয় ব্যাটারেরা খেলেছেন তা ফাইনালে দেখা যায়নি। একটা সময় ভিরাট কোহলি ও কেএল রাহুল এত ধীরে খেলেছেন যে ওভারের পর ওভার রান হয়নি। যেন একটি আবরণের মধ্যে নিজেদের ঢুকিয়ে রেখেছিলেন তারা। তারই সুবিধা নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। অর্থাৎ, বদলটা হয়েছে মানসিকতায়। ফাইনাল জিততে হলে একটু সাহস দেখাতে হয়। আহমেদাবাদের ফাইনালে সেই সাহসটা দেখাতেই ভুলে গিয়েছিল ভারত। টস জিতে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স যেমন প্রথমে বল করে সাহস দেখিয়েছিলেন তার পালটা সাহস দেখাতে পারলেন না কোহলিরা। সেখানেই তফাত হয়ে গেল।
ব্যাটিং ব্যর্থতার পরে চাপ নিতে পারল না দলের ফিল্ডিং এবং বোলিংও। মোহাম্মদ সামি উইকেট নিলেও বলের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি না। অতিরিক্ত রান দিলেন। ফলে অস্ট্রেলিয়ার ওপর চাপ কমল। ভিরাট ও শুভমনের মধ্যে দিয়ে ক্যাচ গলে চার হল। উইকেটের পিছনে বেশ কয়েকটি বল ধরতে সমস্যায় পড়লেন রাহুল। ভারতের স্পিনারেরাও উইকেট থেকে সুবিধা তুলতে পারেননি। প্রথমার্ধের চাপ দেখা গিয়েছে দ্বিতীয়ার্ধেও।
এই চাপে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে ভারত। কয়েক বছর আগেও ‘চোকার্স’ তকমার ওপর অধিকার ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। ১৯৯৯ বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল, ২০১৫ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে যে ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা চাপের কাছে হারত সেটাই দেখা যাচ্ছে ভারতের ক্ষেত্রেও। ফলে প্রশ্ন ওঠাটা অস্বাভাবিক নয় যে ভারতের গায়েও কি লেগে গিয়েছে ‘চোকার্স’ তকমা। যতদিন না রোহিত, কোহলিরা কোনো আইসিসি প্রতিযোগিতা জিততে পারেন, ততদিন কিন্তু এই তকমা লেগেই থাকবে।