হেডের পরিবারকে খুন এবং ধর্ষণের হুমকি

অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম নায়ক ট্র্যাভিস হেড। সেমিফাইনালের পর ফাইনালেও ম্যাচের সেরা হয়েছেন তিনি। ফাইনালের পর সেই হেডের পরিবারকে খুন এবং ধর্ষণের হুমকি পেতে হলো। অভিযুক্ত এক ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমী।

ফাইনালে প্রথমে দারুণ ক্যাচ ধরে রোহিত শর্মাকে আউট করেন হেড। পরে চাপের মুখে ১২০ বলে ১৩৭ রানের নিখুঁত অপরাজিত ইনিংস খেলে রোহিত শর্মার দলকে বিশ্বকাপ জেতার লড়াই থেকে ছিটকে দিয়েছেন। তার অনবদ্য পারফরম্যান্স ফাইনালে দুই দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। এই হেডের ইনিংসের কাছেই গত টেস্ট বিশ্বকাপের ফাইনালেও হারতে হয়েছিল ভারতকে। হেড বার বার স্বপ্নভঙ্গ করছেন রোহিতদের।

তাতেই চটেছেন এক ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমী। ফাইনালের পর সমাজমাধ্যমে সরাসরি হেডকে হুমকি দিয়েছেন তিনি। অস্ট্রেলীয় ওপেনারের পরিবারকে খুন এবং স্ত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন। তার এই কদর্য আক্রমণ এবং মানসিকতার নিন্দা এবং সমালোচনা করেছেন বহু ক্রিকেটপ্রেমী। তার রুচি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার সমাজমাধ্যমেই পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। অস্ট্রেলিয়া দলের পক্ষ থেকে অবশ্য এই ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

বিশ্বকাপ খেলতে স্ত্রী, সন্তানকে নিয়েই ভারতে এসেছেন হেড। ফাইনাল ম্যাচ দেখতে গ্যালারিতেও ছিলেন হেডের স্ত্রী। বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ছবিও তুলেছেন তিনি। উল্লেখ্য চোটের জন্য প্রতিযোগিতার শুরু থেকে খেলতে পারেননি হেড। চোট সারিয়ে পরে ভারতে দলের সঙ্গে যোগ দেন তিনি।

‘রোহিত আউট না হলে, আমি

সেঞ্চুরি পেতাম কি না কে জানে’

ফাইনালে রোহিত শর্মা যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন একপর্যায়ে রানরেট ছিল আটের উপরে। এরপর অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ ধরে রোহিতকে তো ফিরিয়ে দেনই, পুরো ভারতের রানে গতিতে লাগাম পরিয়ে দেন ট্রাভিস হেড। এমন দুর্দান্ত ক্যাচের বলি হওয়ায় রোহিতকে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্ভাগা মানুষ বলে মনে করছেন এই অস্ট্রেলিয়ান।

ম্যাচ শেষে তাই রোহিতের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে হেড বলেন, ‘তিনি (রোহিত শর্মা) সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে দুর্ভাগা মানুষ। এর (ফিল্ডিং) জন্য আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি। সত্যি বলতে, সে আউট না হলে, আমি সেঞ্চুরি করতে পারতাম কি না কে জানে। বিশ্বকাপ ফাইনালে যারা সেঞ্চুরি করেছেন, তাদের তালিকায় থাকাটা খুবই বিশেষ। সেই ক্যাচ ধরে রাখাটা দারুণ বিষয় ছিল।’

ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৩০ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৭ রান তুলে নেন রোহিত। কিন্তু আরও একটি বাউন্ডারি মারতে গিয়ে কভারে হেডের সেই অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হন ভারতীয় অধিনায়ক। এই ক্যাচেই শিরোপার কাছে চলে যায় অজিরা। মাঝারি পুঁজি নিয়েও অবশ্য বোলারদের সৌজন্যে দারুণ সূচনা পেয়েছিল দলটি। কিন্তু সে চাপও অব্যাহত রাখতে পারেনি তারা। হেডের সেঞ্চুরি উল্টো ভারতকে কোণঠাসা করে দেয়। এরপর তাকে যখন ফেরাতে পারে স্বাগতিকরা, ততক্ষণে অজিদের জয় প্রায় নিশ্চিত।

বিশ্বকাপ ইতিহাসে চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে সেমিফাইনাল ও ফাইনালে ম্যাচসেরা হন তিনি। সেমিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বল হাতে ২ উইকেট ও ব্যাট হাতে ৪৮ বলে ৬২ রান করে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন হেড। হেডের আগে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সেমিফাইনাল ও ফাইনালে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন ভারতের মহিন্দার অমরনাথ, শ্রীলঙ্কার অরবিন্দ ডি সিলভা এবং অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্ন। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে অমরনাথ, ১৯৯৬ সালে ডি সিলভা ও ১৯৯৯ সালে ওয়ার্ন ম্যাচসেরা হয়েছিলেন।

বিশ্বের সপ্তম ও অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে বিশ^কাপের ফাইনালে সেঞ্চুরি করেন হেড।

বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে দুটি সেঞ্চুরি করেছেন হেড। গত রোববারের ফাইনাল ছাড়াও এই বছরের জুনে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ১৬৩ রান করেছিলেন তিনি। বিশ্বকাপ ইতিহাসে সেমিফাইনাল ও ফাইনাল মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক এখন হেড। এতে ভেঙেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভিভ রিচাডর্সের ৪৪ বছরের রেকর্ড। ১৩তম ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬২ রান এবং ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ১৩৭ রান করেছেন তিনি। সেমিফাইনাল ও ফাইনাল মিলিয়ে হেডের সর্বমোট রান ১৯৯। ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪২ এবং ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১৩৮ রান করেছিলেন ভিভ। বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল ও ফাইনাল মিলিয়ে মোট ১৮০ রান নিয়ে ১৯৭৯ আসরে রেকর্ডের মালিক ছিলেন ভিভ।

মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০২৩ , ৬ অগ্রায়ন ১৪৩০, ৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫

হেডের পরিবারকে খুন এবং ধর্ষণের হুমকি

সংবাদ স্পোর্টস ডেস্ক

image

অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম নায়ক ট্র্যাভিস হেড। সেমিফাইনালের পর ফাইনালেও ম্যাচের সেরা হয়েছেন তিনি। ফাইনালের পর সেই হেডের পরিবারকে খুন এবং ধর্ষণের হুমকি পেতে হলো। অভিযুক্ত এক ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমী।

ফাইনালে প্রথমে দারুণ ক্যাচ ধরে রোহিত শর্মাকে আউট করেন হেড। পরে চাপের মুখে ১২০ বলে ১৩৭ রানের নিখুঁত অপরাজিত ইনিংস খেলে রোহিত শর্মার দলকে বিশ্বকাপ জেতার লড়াই থেকে ছিটকে দিয়েছেন। তার অনবদ্য পারফরম্যান্স ফাইনালে দুই দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। এই হেডের ইনিংসের কাছেই গত টেস্ট বিশ্বকাপের ফাইনালেও হারতে হয়েছিল ভারতকে। হেড বার বার স্বপ্নভঙ্গ করছেন রোহিতদের।

তাতেই চটেছেন এক ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমী। ফাইনালের পর সমাজমাধ্যমে সরাসরি হেডকে হুমকি দিয়েছেন তিনি। অস্ট্রেলীয় ওপেনারের পরিবারকে খুন এবং স্ত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন। তার এই কদর্য আক্রমণ এবং মানসিকতার নিন্দা এবং সমালোচনা করেছেন বহু ক্রিকেটপ্রেমী। তার রুচি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার সমাজমাধ্যমেই পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। অস্ট্রেলিয়া দলের পক্ষ থেকে অবশ্য এই ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

বিশ্বকাপ খেলতে স্ত্রী, সন্তানকে নিয়েই ভারতে এসেছেন হেড। ফাইনাল ম্যাচ দেখতে গ্যালারিতেও ছিলেন হেডের স্ত্রী। বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ছবিও তুলেছেন তিনি। উল্লেখ্য চোটের জন্য প্রতিযোগিতার শুরু থেকে খেলতে পারেননি হেড। চোট সারিয়ে পরে ভারতে দলের সঙ্গে যোগ দেন তিনি।

‘রোহিত আউট না হলে, আমি

সেঞ্চুরি পেতাম কি না কে জানে’

ফাইনালে রোহিত শর্মা যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন একপর্যায়ে রানরেট ছিল আটের উপরে। এরপর অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ ধরে রোহিতকে তো ফিরিয়ে দেনই, পুরো ভারতের রানে গতিতে লাগাম পরিয়ে দেন ট্রাভিস হেড। এমন দুর্দান্ত ক্যাচের বলি হওয়ায় রোহিতকে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্ভাগা মানুষ বলে মনে করছেন এই অস্ট্রেলিয়ান।

ম্যাচ শেষে তাই রোহিতের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে হেড বলেন, ‘তিনি (রোহিত শর্মা) সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে দুর্ভাগা মানুষ। এর (ফিল্ডিং) জন্য আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি। সত্যি বলতে, সে আউট না হলে, আমি সেঞ্চুরি করতে পারতাম কি না কে জানে। বিশ্বকাপ ফাইনালে যারা সেঞ্চুরি করেছেন, তাদের তালিকায় থাকাটা খুবই বিশেষ। সেই ক্যাচ ধরে রাখাটা দারুণ বিষয় ছিল।’

ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৩০ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৭ রান তুলে নেন রোহিত। কিন্তু আরও একটি বাউন্ডারি মারতে গিয়ে কভারে হেডের সেই অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হন ভারতীয় অধিনায়ক। এই ক্যাচেই শিরোপার কাছে চলে যায় অজিরা। মাঝারি পুঁজি নিয়েও অবশ্য বোলারদের সৌজন্যে দারুণ সূচনা পেয়েছিল দলটি। কিন্তু সে চাপও অব্যাহত রাখতে পারেনি তারা। হেডের সেঞ্চুরি উল্টো ভারতকে কোণঠাসা করে দেয়। এরপর তাকে যখন ফেরাতে পারে স্বাগতিকরা, ততক্ষণে অজিদের জয় প্রায় নিশ্চিত।

বিশ্বকাপ ইতিহাসে চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে সেমিফাইনাল ও ফাইনালে ম্যাচসেরা হন তিনি। সেমিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বল হাতে ২ উইকেট ও ব্যাট হাতে ৪৮ বলে ৬২ রান করে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন হেড। হেডের আগে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সেমিফাইনাল ও ফাইনালে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন ভারতের মহিন্দার অমরনাথ, শ্রীলঙ্কার অরবিন্দ ডি সিলভা এবং অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্ন। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে অমরনাথ, ১৯৯৬ সালে ডি সিলভা ও ১৯৯৯ সালে ওয়ার্ন ম্যাচসেরা হয়েছিলেন।

বিশ্বের সপ্তম ও অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে বিশ^কাপের ফাইনালে সেঞ্চুরি করেন হেড।

বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে দুটি সেঞ্চুরি করেছেন হেড। গত রোববারের ফাইনাল ছাড়াও এই বছরের জুনে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ১৬৩ রান করেছিলেন তিনি। বিশ্বকাপ ইতিহাসে সেমিফাইনাল ও ফাইনাল মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক এখন হেড। এতে ভেঙেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভিভ রিচাডর্সের ৪৪ বছরের রেকর্ড। ১৩তম ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬২ রান এবং ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ১৩৭ রান করেছেন তিনি। সেমিফাইনাল ও ফাইনাল মিলিয়ে হেডের সর্বমোট রান ১৯৯। ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪২ এবং ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১৩৮ রান করেছিলেন ভিভ। বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল ও ফাইনাল মিলিয়ে মোট ১৮০ রান নিয়ে ১৯৭৯ আসরে রেকর্ডের মালিক ছিলেন ভিভ।