টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যাল অব অর্থরস

কানাডার মূলধারায় বাঙালি লেখকদের সম্পৃক্তি

শিউলী জাহান

এবছর টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যাল অফ অথর্স (টিফা), বাংলায় টরন্টো আন্তর্জাতিক লেখক উৎসব শুরু হয়েছিল ২১ সেপ্টেম্বর। চলেছে এগারো দিন ধরে। উৎসবের চতুর্থ দিন ২৪ সেপ্টেম্বর ছিল বাঙালি লেখক ও পাঠকদের জন্য একটি বিশেষ দিন। টিফার মঞ্চে সেদিন সকাল থেকে শুরু করে সারাদিনব্যাপী তিনটি বিশেষ আয়োজন ছিল কানাডা অভিবাসী বাংলাভাষী কবি-সাহিত্যিকদের অংশগ্রহণে।

প্রথম পর্বের শিরোনাম ছিল ‘রাইটিং এজ এ প্যাশন’। এই পর্বে সকাল সাড়ে এগারোটায় মঞ্চ আলোকিত করেন কানাডাবাসী যে তিন জ্যেষ্ঠ বাঙালি লেখক তাঁরা হলেন ড. দিলীপ চক্রবর্তী, রোকসানা লেইস, ও সুধীর সাহা। ইংরেজি ভাষায় উপস্থাপিত তাঁদের আলোচনায় উঠে আসে নিজেদের লেখালেখির শুরুর কথা। প্রবাসে থেকেও বাংলা ভাষায় লেখালেখি চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণার কথা। দ্বিতীয় পর্ব ‘বেঙ্গলিজ ইন ক্যানলিট’ পর্বে তুখোড় আলোচনায় অংশগ্রহণ করেনবাঙালি বংশোদ্ভূত ইংরেজি মাধ্যমের তিন লেখক কে. গান্ধার চক্রবর্তী, আরিফ আনোয়ার ও লাবণি ইসলাম। ইংরেজিতে লিখলেও বাঙালি পূর্বপুরুষের শেকড় কীভাবে তাঁদের রচনায় প্রবাহিত হয়ে চলেছে সেসব প্রসঙ্গ বিস্তারে উঠে আসে আলাপনে। মাঝে মাঝেই দরকার হয় গান্ধার এবং লাবণির কবিতা থেকে উচ্চারণ। আরিফ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন কানাডা থেকে প্রকাশিত ইংরেজিতে লেখা তাঁর উপন্যাস ‘দ্য স্টর্ম’-এ বাংলা হরফ ব্যবহার প্রসঙ্গে।শেষ পর্ব ছিল ‘রিডিং বেঙ্গলি পোয়েমস’। এই পর্বে কবি ও কবিতা নিয়ে আলোচনায় যুক্ত হন শেখর গোমেজ, আঞ্জুমান রোজী, কাজী হেলাল ও শিউলী জাহান। কবিতার সাথে সময় যাপন নিয়ে এই চার কবি যেমন কথা বলেন, তেমনই তাঁরা পাঠ করেন নিজেদের লেখা বাংলা কবিতা। পরিকল্পনা অনুযায়ী কবিতাগুলোর ইংরেজি ভাষান্তরও উপস্থাপন করা হয় দর্শকদের উদ্দেশে।

বাঙালি লেখকদের নিয়ে দিনব্যাপী এই পুরো আয়োজনের পরিচালনা ও সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও সংগঠক সুব্রত কুমার দাস। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ২০২০ সালে টিফাতে প্রথমবারের মতো বাংলা ভাষা অন্তর্ভুক্ত হবার পর থেকে সুব্রত এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন টরন্টো এবং আশেপাশের শহরগুলোর কবিলেখকদের সাথে নিয়ে।

কানাডার বৃহত্তম এই লেখক উৎসব দীর্ঘ এগারোদিনব্যাপী উদযাপিত হয়। যার প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে- স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে লেখা ও পাঠের প্রতি আগ্রহ ও উৎসাহকে জাগিয়ে তোলা। সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ কানাডীয় সাহিত্যকে অন্য ভাষার লেখক ও পাঠকের সামনে তুলে ধরা এবং বিশেষত তরুণ লেখক ও পাঠকদের আনন্দের সাথে পাঠে অবগাহন ও বিভিন্ন দেশের সাহিত্যিকদের সাথে পরিচিত হবার একটি সুযোগ তৈরি করে দেয়া।

টিফার কর্মসূচি শুধু এই লেখক উৎসবেই সীমাবদ্ধ নয়। সারাবছর ধরেই কানাডিয়ান লেখক ও পাঠকদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আয়োজন করে থাকে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-প্রকাশিত নতুন গ্রন্থ ও লেখকদের নিয়ে টরন্টো লিট্ আপ, শিশু-কিশোর সাহিত্য নিয়ে টিফা কিডস, টিফা বুক ক্লাব, প্রকাশকদের নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর্স প্রোগ্রাম। শিরোনামে লেখক উৎসব হলেও এই উৎসব মূলত লেখক, পাঠক ও শিল্প-সাহিত্য অনুরাগী সবার জন্য।

বর্তমান টিফার পরিচালক রোল্যান্ড গালিভার নিজে একজন কানাডিয়ান নাগরিক নন। তিনি একজন স্কটিশ। এডিনবার্গের বাসিন্দা তিনি। তিনিই প্রথম একজন নন-কানাডিয়ান যিনি টিফার ডাইরেক্টর হিসেবে নির্বাচিত হলেন। তিনি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে টিফায় যোগ দেন এবং এডিনবার্গে বসেই টিফার সকল কর্মসূচি পরিচালনা করেন ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত- করোনার মহামারীর কারণে। অবশেষে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে তিনি কানাডায় আসেন। গালিভার এডিনবার্গ ইন্টারন্যাশনাল বুক ফেস্টিভ্যাল-এর একজন সফল সহকারি পরিচালক ছিলেন।

রোল্যান্ড গালিভার স্কটল্যান্ড থেকে কানাডায় আমাদের বাঙালিদের জন্য সুবাতাস বয়ে এনেছেন এবং এজন্য তার নামটিও আমাদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। কেননা ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৪৩ বছরে এই আন্তর্জাতিক লেখক উৎসবে অন্তর্ভুক্ত ছিল শুধুমাত্র ইংরেজি ও ফরাসি ভাষা। বহুভাষা ও বহুসংস্কৃতির দেশ কানাডায় রাষ্ট্রভাষার অন্যান্য ভাষায় সাহিত্যচর্চার কমতি নেই। আর সেকারণেইটিফাতে অন্য ভাষার অন্তর্ভুক্তিও প্রত্যাশা করা যেতেই পারে। রোল্যান্ড গালিভার এই উদ্যোগটি গ্রহণ করায় ২০২০ সালে টরন্টো মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ভাষা হিসেবে বাংলাসহ অন্য যে কটি ভাষার লেখকেরা যুক্ত হন সেগুলো হলো স্প্যানিশ এবং ইতালিয়ান। ২০২২ সালে অন্য যে ভাষাগুলোর লেখকেরা আমন্ত্রিত হন সেগুলো হলো বাংলা, জাপানিজ, পর্তুগিজ, স্প্যানিশ এবং তামিল। আর এবছরঅন্য ভাষাগুলোর মধ্যে প্রধান যে তিনটি ভাষা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তার মধ্যে বাংলা ছাড়া অন্যতম হচ্ছে আরবি ও তামিল।

২০২০ সালে প্রথমবার তিনটি সেশনে যুক্ত হন এগারো বাঙালি কবি-লেখক। কোভিড থাকায় পুরো আয়োজনটি সেবার ছিল অনলাইনে। অশোক চক্রবর্তী, ড দিলীপ চক্রবর্তী, আকবর হোসেন, সৈয়দ ইকবাল, নাহার মনিকা, সাঈদ যাদীদ, সুজিত কুসুম পাল, সুরজিত রায় মজুমদার, তাসমিনা খান এবং মানসী সাহাকে সাথে নিয়ে টিফায় বাংলাভাষিদের প্রতিনিধিত্ব করেন সুব্রত।

২০২২ সালে আবারও আমন্ত্রণ পান বাংলাভাষিরা। হারবারফ্রন্টের মূল মঞ্চে দুটি পর্বে অংশ নেন নয়জন। হারবরফ্রন্টের বিশাল মঞ্চে সেবার বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণকারী কানাডায় অভিবাসী যে লেখকেরা অংশ নিয়েছিলেন তাঁরা হলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুমানা চৌধুরী, আকতার হোসেন, বাদল ঘোষ, শুজা রশীদ ও ভজন সরকার এবং পশ্চিমবংগ থেকে দেবাঞ্জনা মুখার্জী, শ্রেয়সী বোস ও ভাস্বতী ঘোষ।

বিদেশ থেকে অতিথি হিসেবে বাঙালি বংশোদ্ভূত অন্য যে লেখক ২০২১ সালে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন তিনি হলেন লন্ডনের বাসিন্দা ঔপন্যাসিক তাহমিমা আনাম। ঐ একই বছরে আরও আমন্ত্রিত হন অভিনেত্রী নন্দনা দেবসেন। বিখ্যাত কবি নবনীতা দেবসেনের কবিতার ইংরেজি অনুবাদক হিসেবে মুম্বাই থেকে নন্দনার যোগদান।

বরাবরের মতো আবারও আমার একই অনুভব- উদ্যোগ নেয়া যেমন সহজ নয়, তেমনি সেই উদ্যোগকে অব্যাহতভাবে এগিয়ে নেয়াও দুষ্কর। আর যারা এই এগিয়ে নেবার কাজটি করতে পারেন তাদের প্রতি আন্তরিক অভিবাদন ও শ্রদ্ধা প্রতিনিয়ত। আগামীর আয়োজন হবে আরও সমৃদ্ধ আমাদের নতুন প্রজন্মের ব্যাপক অংশগ্রহণে, সকল গতানুগতিক স্থবিরতা ঝেড়ে ফেলে, এটাই প্রত্যাশা।

বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৩ , ৮ অগ্রায়ন ১৪৩০, ৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫

টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যাল অব অর্থরস

কানাডার মূলধারায় বাঙালি লেখকদের সম্পৃক্তি

শিউলী জাহান

image

এবছর টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যাল অফ অথর্স (টিফা), বাংলায় টরন্টো আন্তর্জাতিক লেখক উৎসব শুরু হয়েছিল ২১ সেপ্টেম্বর। চলেছে এগারো দিন ধরে। উৎসবের চতুর্থ দিন ২৪ সেপ্টেম্বর ছিল বাঙালি লেখক ও পাঠকদের জন্য একটি বিশেষ দিন। টিফার মঞ্চে সেদিন সকাল থেকে শুরু করে সারাদিনব্যাপী তিনটি বিশেষ আয়োজন ছিল কানাডা অভিবাসী বাংলাভাষী কবি-সাহিত্যিকদের অংশগ্রহণে।

প্রথম পর্বের শিরোনাম ছিল ‘রাইটিং এজ এ প্যাশন’। এই পর্বে সকাল সাড়ে এগারোটায় মঞ্চ আলোকিত করেন কানাডাবাসী যে তিন জ্যেষ্ঠ বাঙালি লেখক তাঁরা হলেন ড. দিলীপ চক্রবর্তী, রোকসানা লেইস, ও সুধীর সাহা। ইংরেজি ভাষায় উপস্থাপিত তাঁদের আলোচনায় উঠে আসে নিজেদের লেখালেখির শুরুর কথা। প্রবাসে থেকেও বাংলা ভাষায় লেখালেখি চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণার কথা। দ্বিতীয় পর্ব ‘বেঙ্গলিজ ইন ক্যানলিট’ পর্বে তুখোড় আলোচনায় অংশগ্রহণ করেনবাঙালি বংশোদ্ভূত ইংরেজি মাধ্যমের তিন লেখক কে. গান্ধার চক্রবর্তী, আরিফ আনোয়ার ও লাবণি ইসলাম। ইংরেজিতে লিখলেও বাঙালি পূর্বপুরুষের শেকড় কীভাবে তাঁদের রচনায় প্রবাহিত হয়ে চলেছে সেসব প্রসঙ্গ বিস্তারে উঠে আসে আলাপনে। মাঝে মাঝেই দরকার হয় গান্ধার এবং লাবণির কবিতা থেকে উচ্চারণ। আরিফ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন কানাডা থেকে প্রকাশিত ইংরেজিতে লেখা তাঁর উপন্যাস ‘দ্য স্টর্ম’-এ বাংলা হরফ ব্যবহার প্রসঙ্গে।শেষ পর্ব ছিল ‘রিডিং বেঙ্গলি পোয়েমস’। এই পর্বে কবি ও কবিতা নিয়ে আলোচনায় যুক্ত হন শেখর গোমেজ, আঞ্জুমান রোজী, কাজী হেলাল ও শিউলী জাহান। কবিতার সাথে সময় যাপন নিয়ে এই চার কবি যেমন কথা বলেন, তেমনই তাঁরা পাঠ করেন নিজেদের লেখা বাংলা কবিতা। পরিকল্পনা অনুযায়ী কবিতাগুলোর ইংরেজি ভাষান্তরও উপস্থাপন করা হয় দর্শকদের উদ্দেশে।

বাঙালি লেখকদের নিয়ে দিনব্যাপী এই পুরো আয়োজনের পরিচালনা ও সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও সংগঠক সুব্রত কুমার দাস। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ২০২০ সালে টিফাতে প্রথমবারের মতো বাংলা ভাষা অন্তর্ভুক্ত হবার পর থেকে সুব্রত এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন টরন্টো এবং আশেপাশের শহরগুলোর কবিলেখকদের সাথে নিয়ে।

কানাডার বৃহত্তম এই লেখক উৎসব দীর্ঘ এগারোদিনব্যাপী উদযাপিত হয়। যার প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে- স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে লেখা ও পাঠের প্রতি আগ্রহ ও উৎসাহকে জাগিয়ে তোলা। সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ কানাডীয় সাহিত্যকে অন্য ভাষার লেখক ও পাঠকের সামনে তুলে ধরা এবং বিশেষত তরুণ লেখক ও পাঠকদের আনন্দের সাথে পাঠে অবগাহন ও বিভিন্ন দেশের সাহিত্যিকদের সাথে পরিচিত হবার একটি সুযোগ তৈরি করে দেয়া।

টিফার কর্মসূচি শুধু এই লেখক উৎসবেই সীমাবদ্ধ নয়। সারাবছর ধরেই কানাডিয়ান লেখক ও পাঠকদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আয়োজন করে থাকে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-প্রকাশিত নতুন গ্রন্থ ও লেখকদের নিয়ে টরন্টো লিট্ আপ, শিশু-কিশোর সাহিত্য নিয়ে টিফা কিডস, টিফা বুক ক্লাব, প্রকাশকদের নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর্স প্রোগ্রাম। শিরোনামে লেখক উৎসব হলেও এই উৎসব মূলত লেখক, পাঠক ও শিল্প-সাহিত্য অনুরাগী সবার জন্য।

বর্তমান টিফার পরিচালক রোল্যান্ড গালিভার নিজে একজন কানাডিয়ান নাগরিক নন। তিনি একজন স্কটিশ। এডিনবার্গের বাসিন্দা তিনি। তিনিই প্রথম একজন নন-কানাডিয়ান যিনি টিফার ডাইরেক্টর হিসেবে নির্বাচিত হলেন। তিনি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে টিফায় যোগ দেন এবং এডিনবার্গে বসেই টিফার সকল কর্মসূচি পরিচালনা করেন ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত- করোনার মহামারীর কারণে। অবশেষে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে তিনি কানাডায় আসেন। গালিভার এডিনবার্গ ইন্টারন্যাশনাল বুক ফেস্টিভ্যাল-এর একজন সফল সহকারি পরিচালক ছিলেন।

রোল্যান্ড গালিভার স্কটল্যান্ড থেকে কানাডায় আমাদের বাঙালিদের জন্য সুবাতাস বয়ে এনেছেন এবং এজন্য তার নামটিও আমাদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। কেননা ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৪৩ বছরে এই আন্তর্জাতিক লেখক উৎসবে অন্তর্ভুক্ত ছিল শুধুমাত্র ইংরেজি ও ফরাসি ভাষা। বহুভাষা ও বহুসংস্কৃতির দেশ কানাডায় রাষ্ট্রভাষার অন্যান্য ভাষায় সাহিত্যচর্চার কমতি নেই। আর সেকারণেইটিফাতে অন্য ভাষার অন্তর্ভুক্তিও প্রত্যাশা করা যেতেই পারে। রোল্যান্ড গালিভার এই উদ্যোগটি গ্রহণ করায় ২০২০ সালে টরন্টো মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ভাষা হিসেবে বাংলাসহ অন্য যে কটি ভাষার লেখকেরা যুক্ত হন সেগুলো হলো স্প্যানিশ এবং ইতালিয়ান। ২০২২ সালে অন্য যে ভাষাগুলোর লেখকেরা আমন্ত্রিত হন সেগুলো হলো বাংলা, জাপানিজ, পর্তুগিজ, স্প্যানিশ এবং তামিল। আর এবছরঅন্য ভাষাগুলোর মধ্যে প্রধান যে তিনটি ভাষা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তার মধ্যে বাংলা ছাড়া অন্যতম হচ্ছে আরবি ও তামিল।

২০২০ সালে প্রথমবার তিনটি সেশনে যুক্ত হন এগারো বাঙালি কবি-লেখক। কোভিড থাকায় পুরো আয়োজনটি সেবার ছিল অনলাইনে। অশোক চক্রবর্তী, ড দিলীপ চক্রবর্তী, আকবর হোসেন, সৈয়দ ইকবাল, নাহার মনিকা, সাঈদ যাদীদ, সুজিত কুসুম পাল, সুরজিত রায় মজুমদার, তাসমিনা খান এবং মানসী সাহাকে সাথে নিয়ে টিফায় বাংলাভাষিদের প্রতিনিধিত্ব করেন সুব্রত।

২০২২ সালে আবারও আমন্ত্রণ পান বাংলাভাষিরা। হারবারফ্রন্টের মূল মঞ্চে দুটি পর্বে অংশ নেন নয়জন। হারবরফ্রন্টের বিশাল মঞ্চে সেবার বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণকারী কানাডায় অভিবাসী যে লেখকেরা অংশ নিয়েছিলেন তাঁরা হলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুমানা চৌধুরী, আকতার হোসেন, বাদল ঘোষ, শুজা রশীদ ও ভজন সরকার এবং পশ্চিমবংগ থেকে দেবাঞ্জনা মুখার্জী, শ্রেয়সী বোস ও ভাস্বতী ঘোষ।

বিদেশ থেকে অতিথি হিসেবে বাঙালি বংশোদ্ভূত অন্য যে লেখক ২০২১ সালে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন তিনি হলেন লন্ডনের বাসিন্দা ঔপন্যাসিক তাহমিমা আনাম। ঐ একই বছরে আরও আমন্ত্রিত হন অভিনেত্রী নন্দনা দেবসেন। বিখ্যাত কবি নবনীতা দেবসেনের কবিতার ইংরেজি অনুবাদক হিসেবে মুম্বাই থেকে নন্দনার যোগদান।

বরাবরের মতো আবারও আমার একই অনুভব- উদ্যোগ নেয়া যেমন সহজ নয়, তেমনি সেই উদ্যোগকে অব্যাহতভাবে এগিয়ে নেয়াও দুষ্কর। আর যারা এই এগিয়ে নেবার কাজটি করতে পারেন তাদের প্রতি আন্তরিক অভিবাদন ও শ্রদ্ধা প্রতিনিয়ত। আগামীর আয়োজন হবে আরও সমৃদ্ধ আমাদের নতুন প্রজন্মের ব্যাপক অংশগ্রহণে, সকল গতানুগতিক স্থবিরতা ঝেড়ে ফেলে, এটাই প্রত্যাশা।