দেশে জ্বালানি খাতের কী অবস্থা হবে, তা নিয়ে শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে বাণিজ্যিক খাতে পরিণত করা একটি ভয়াবহ ইঙ্গিত বলে মন্তব্য করেছেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা শামসুল আলম। তিনি বলেন, জ্বালানি খাতে সুবিচার নিশ্চিত করতে হলে বাণিজ্যিক খাত থেকে এটিকে সরিয়ে নিয়ে সেবা খাতে পরিণত করা গেলে দেশের মানুষ এর ফল ভোগ করবে।

ক্ষোভের সঙ্গে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘১৯৯০ সাল থেকেই এই চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু জ্বালানি বণ্টনের ক্ষেত্রে সমতা বজায় রাখা হচ্ছে না। ২০২৪ সালে জ্বালানি খাতে কি অবস্থা হবে, তা নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি।’

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত ‘জ্বালানি রূপান্তরে সুবিচার চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় মূল বক্তব্য দেন জ্বালানিবিষয়ক সাংবাদিক আরিফুজ্জামান তুহিন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক গবেষক মাহা মির্জা, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম, অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া প্রমুখ।

শামসুল আলম বলেন, যদি আমরা ন্যূনতম ব্যয়ে এবং সমতার ভিত্তিতে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারতাম, তাহলে আজ এ সংকট তৈরি হতো না। আমাদের যদি রপ্তানি চলমান থাকত, তাহলে আরও গ্যাস-কয়লা উত্তোলন হতো। কিন্তু তখন তা চেয়ে দেখা ছাড়া উপায় ছিল না। তবে জ্বালানি থাকার সুবিধাটাও আমরা পেলাম না, আমদানির পরিবেশ তৈরি করে একটা উন্নয়নের কাহিনি তৈরি করলাম। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, দেশে জ্বালানি সংকটের যে বিকল্প, তাতে আমরা নজর দিই না। এর বিকল্প হলো নিজের দেশের সম্পদের দিকে তাকানো। বাংলাদেশের মাটির নিচে প্রচুর ভূ-সম্পদ রয়েছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোও নিশ্চিত করেছে যে দেশে কি পরিমাণ গ্যাসের সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, বিশ্বের অন্য যেসব দেশে গ্যাসের সম্ভাবনা আমাদের মতো, তারা অনেকদূর এগিয়ে গেছে। কারণ তারা আমাদের মতো মাটির নিচে সম্পদ রেখে আমদানিতে ঝুঁকে যায়নি। সাগরের তলদেশে জ্বালানির সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা তার যথাযথ ব্যবহার করতে পারছি না। কিন্তু অতীত থেকে বর্তমান কোনো সরকারই এ বিষয়কে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেনি।

জ্বালানি রূপান্তর সুবিচার নিশ্চিতে ক্যাবের পক্ষ থেকে যেসব দাবি উত্থাপন করা হয়, সেগুলো হলোÑ সৌর তথা নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন আইপিপি মডেলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নয়। না লাভ, না ক্ষতির নীতিতে উন্নয়ন হতে হবে। সরকারকে এ খাত থেকে রাজস্ব আহরণ পরিহার করতে হবে। প্রয়োজনে নির্দিষ্ট মেয়াদে ভর্তুকি দিতে হবে। কৃষি ও গ্রামীণ পরিবহনে মাছ চাষ ও সেচ, পশু-পক্ষী পালন ও হালকা পরিবহনে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত হতে হবে। নিরপেক্ষ/স্বাধীন পক্ষকে দিয়ে পরিবেশগত প্রভাব নিরীক্ষণ (ইআইএ) করাতে হবে। এখানে বিইআরসি, ক্যাবসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রতিনিধি থাকতে হবে। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ হতে হবে। প্রশাসনের বাইরে অংশীজন প্রতিনিধি সমন্বয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত কমিটি/কমিশন দ্বারা জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিরোধ/অসন্তোষ নিষ্পত্তি হতে হবে। জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিবেশ সুরক্ষা আইন- ১৯৯৫ যথাযথভাবে প্রতিপালিত হতে হবে এবং অন্যথায় বাধ্যতামূলক আইনি ব্যবস্থা গৃহীত হতে হবে। শুধু আবাদ-অযোগ্য জমি ব্যতীত অন্য কোনো জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প হবে না, তা বিধি দ্বারা নিশ্চিত হতে হবে। জ্বালানি রূপান্তরে ন্যায্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিযোগিতাহীন কোনো বিনিয়োগে বিদ্যুৎ বা জ্বালানি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না। তাই দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০ অবিলম্বে বাতিল হতে হবে। স্রেডা আইন ২০১২ এর ৬(১৭) উপধারা অনুযায়ী সৌর তথা নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের মূল্যহার বিইআরসি কর্তৃক নির্ধারিত হতে হবে। জ্বালানি রূপান্তরে সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিইআরসি আইনের সংশোধনী বাতিল করে গণশুনানির ভিত্তিতে সব পর্যায়ের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যহার নির্ধারণের একক এখতিয়ার বিইআরসিকে ফিরিয়ে দিতে হবে। ৫ শতাংশের চেয়ে কম পরিমাণ জমিতে বসবাসকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের বাস্তুচ্যুত করা হলে সরকারের দায়িত্বে অন্যত্র সমপরিমাণ জমিতে তাদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।

বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩ , ১৫ অগ্রায়ন ১৪৩০, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫

দেশে জ্বালানি খাতের কী অবস্থা হবে, তা নিয়ে শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে বাণিজ্যিক খাতে পরিণত করা একটি ভয়াবহ ইঙ্গিত বলে মন্তব্য করেছেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা শামসুল আলম। তিনি বলেন, জ্বালানি খাতে সুবিচার নিশ্চিত করতে হলে বাণিজ্যিক খাত থেকে এটিকে সরিয়ে নিয়ে সেবা খাতে পরিণত করা গেলে দেশের মানুষ এর ফল ভোগ করবে।

ক্ষোভের সঙ্গে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘১৯৯০ সাল থেকেই এই চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু জ্বালানি বণ্টনের ক্ষেত্রে সমতা বজায় রাখা হচ্ছে না। ২০২৪ সালে জ্বালানি খাতে কি অবস্থা হবে, তা নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি।’

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত ‘জ্বালানি রূপান্তরে সুবিচার চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় মূল বক্তব্য দেন জ্বালানিবিষয়ক সাংবাদিক আরিফুজ্জামান তুহিন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক গবেষক মাহা মির্জা, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম, অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া প্রমুখ।

শামসুল আলম বলেন, যদি আমরা ন্যূনতম ব্যয়ে এবং সমতার ভিত্তিতে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারতাম, তাহলে আজ এ সংকট তৈরি হতো না। আমাদের যদি রপ্তানি চলমান থাকত, তাহলে আরও গ্যাস-কয়লা উত্তোলন হতো। কিন্তু তখন তা চেয়ে দেখা ছাড়া উপায় ছিল না। তবে জ্বালানি থাকার সুবিধাটাও আমরা পেলাম না, আমদানির পরিবেশ তৈরি করে একটা উন্নয়নের কাহিনি তৈরি করলাম। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, দেশে জ্বালানি সংকটের যে বিকল্প, তাতে আমরা নজর দিই না। এর বিকল্প হলো নিজের দেশের সম্পদের দিকে তাকানো। বাংলাদেশের মাটির নিচে প্রচুর ভূ-সম্পদ রয়েছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোও নিশ্চিত করেছে যে দেশে কি পরিমাণ গ্যাসের সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, বিশ্বের অন্য যেসব দেশে গ্যাসের সম্ভাবনা আমাদের মতো, তারা অনেকদূর এগিয়ে গেছে। কারণ তারা আমাদের মতো মাটির নিচে সম্পদ রেখে আমদানিতে ঝুঁকে যায়নি। সাগরের তলদেশে জ্বালানির সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা তার যথাযথ ব্যবহার করতে পারছি না। কিন্তু অতীত থেকে বর্তমান কোনো সরকারই এ বিষয়কে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেনি।

জ্বালানি রূপান্তর সুবিচার নিশ্চিতে ক্যাবের পক্ষ থেকে যেসব দাবি উত্থাপন করা হয়, সেগুলো হলোÑ সৌর তথা নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন আইপিপি মডেলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নয়। না লাভ, না ক্ষতির নীতিতে উন্নয়ন হতে হবে। সরকারকে এ খাত থেকে রাজস্ব আহরণ পরিহার করতে হবে। প্রয়োজনে নির্দিষ্ট মেয়াদে ভর্তুকি দিতে হবে। কৃষি ও গ্রামীণ পরিবহনে মাছ চাষ ও সেচ, পশু-পক্ষী পালন ও হালকা পরিবহনে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত হতে হবে। নিরপেক্ষ/স্বাধীন পক্ষকে দিয়ে পরিবেশগত প্রভাব নিরীক্ষণ (ইআইএ) করাতে হবে। এখানে বিইআরসি, ক্যাবসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রতিনিধি থাকতে হবে। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ হতে হবে। প্রশাসনের বাইরে অংশীজন প্রতিনিধি সমন্বয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত কমিটি/কমিশন দ্বারা জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিরোধ/অসন্তোষ নিষ্পত্তি হতে হবে। জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিবেশ সুরক্ষা আইন- ১৯৯৫ যথাযথভাবে প্রতিপালিত হতে হবে এবং অন্যথায় বাধ্যতামূলক আইনি ব্যবস্থা গৃহীত হতে হবে। শুধু আবাদ-অযোগ্য জমি ব্যতীত অন্য কোনো জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প হবে না, তা বিধি দ্বারা নিশ্চিত হতে হবে। জ্বালানি রূপান্তরে ন্যায্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিযোগিতাহীন কোনো বিনিয়োগে বিদ্যুৎ বা জ্বালানি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না। তাই দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০ অবিলম্বে বাতিল হতে হবে। স্রেডা আইন ২০১২ এর ৬(১৭) উপধারা অনুযায়ী সৌর তথা নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের মূল্যহার বিইআরসি কর্তৃক নির্ধারিত হতে হবে। জ্বালানি রূপান্তরে সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিইআরসি আইনের সংশোধনী বাতিল করে গণশুনানির ভিত্তিতে সব পর্যায়ের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যহার নির্ধারণের একক এখতিয়ার বিইআরসিকে ফিরিয়ে দিতে হবে। ৫ শতাংশের চেয়ে কম পরিমাণ জমিতে বসবাসকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের বাস্তুচ্যুত করা হলে সরকারের দায়িত্বে অন্যত্র সমপরিমাণ জমিতে তাদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।