আজিজ আহমেদের স্বজনদের পাসপোর্ট অনুসন্ধানে দুদকের চিঠি, ইসির তদন্ত কমিটি গঠন

কোনো ব্যক্তির একাধিক নাগরিকত্ব থাকলেও তিনি যদি নিজেকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে তাকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তবে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের স্বজনদের পাসপোর্ট অনুসন্ধানে দুদকের চিঠি পেয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘এনআইডি সংশোধনের আবেদনসমূহ ক্যাটাগরিকরণ ও দ্রুত নিষ্পত্তি’ শীর্ষক কর্মশালায় সিইসি বলেন, ‘দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে অনেকে (এনআইডি সংশ্লিষ্টরা) জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে চাচ্ছিলেন না; কিংবা দেরি করছিলেন। বলা হচ্ছিল সার্টিফিকেট লাগবে। কোনো মন্ত্রণালয় থেকে সার্টিফিকেট নেয়াটা অর্থহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন যে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক, তাহলে তিনি এনআইডি পাবেন; তাকে এনআইডি দিতেই হবে।’

সিইসি বলেন, ‘এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তির নাম ধারণ করে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। কেউ কেউ আবার বাবার নাম পরিবর্তন করে চাচার নাম বসিয়ে তার সম্পত্তি হরণের চেষ্টা করছে। এই জিনিসগুলো গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করে উপায় বের করতে হবে। এ ধরনের ঘটনা ঘটায় আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছি।’ জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের সময়সীমা বেঁধে দেয়ারও পরামর্শ দেন হাবিবুল আউয়াল।

সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘পর্যবেক্ষণ করে দেখা হবে আমাদের কর্মকর্তারা সময়মতো সার্ভিস দিচ্ছেন কিনা। সেবা দিতে যেন দেরি না করি, হয়রানি না করি, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’

এদিকে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের দুই ভাইয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতির বিষয়ে ইসি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।

ইসি সূত্র বলছে, ‘আজিজ আহমেদের দুই ভাই হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফের এনআইডি জালিয়াতির বিষয়টি তদন্ত করার জন্য ইসির একজন যুগ্ম-সচিবকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

জানা গেছে, নিজেদের নামের পাশাপাশি মা-বাবার নাম পাল্টে এনআইডি সংগ্রহ করেন আজিজ আহমেদের দুই ভাই হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফ। তোফায়েল নিয়েছেন দুটি এনআইডি। একটি তানভীর আহমেদ তানজীল নামে, আরেকটি আসল নামে। হারিছ আহমেদ এনআইডি নেন মোহাম্মদ হাসান নামে। মোহাম্মদ হাসান নামে করা এনআইডিতে হারিছ নিজের ছবি পরিবর্তন করেন ২০১৯ সালে। ছবি বদলানোর জন্য সুপারিশ করেছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ। মিথ্যা তথ্য দিয়ে এনআইডি করা এবং একাধিক এনআইডি করা আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

শুধু এনআইডি নয়, মিথ্যা তথ্য দিয়ে পাসপোর্টও তৈরি করেছেন আলোচিত আজিজের এই দুই ভাই হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফ। তাদের স্ত্রীরাও একই কাজ করেছেন। সেনাপ্রধান থাকার সময়ই আজিজ আহমেদের ভাইদের ভুয়া তথ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট করানোর ক্ষেত্রে তার প্রভাব খাটানোর বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।

আজিজ আহমেদ ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ছিলেন। এর আগে চার বছর বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) প্রধান ছিলেন। দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কথা জানিয়ে গত ২১ মে আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র সরকার নিষেধাজ্ঞা দেয়।

এসব কারণে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের স্বজনদের পাসপোর্ট অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সংশ্লিষ্ট বিভাগে এ চিঠি দেয় দুদক।

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ভাই হারিছ ২টি এবং আনিস ১টি খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ তাদের সাজা মওকুফের প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪ , ২৮ জৈষ্ঠ্য ১৪৩১ ৪ জিলহজ্ব ১৪৪৫

আজিজ আহমেদের স্বজনদের পাসপোর্ট অনুসন্ধানে দুদকের চিঠি, ইসির তদন্ত কমিটি গঠন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

কোনো ব্যক্তির একাধিক নাগরিকত্ব থাকলেও তিনি যদি নিজেকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে তাকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তবে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের স্বজনদের পাসপোর্ট অনুসন্ধানে দুদকের চিঠি পেয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘এনআইডি সংশোধনের আবেদনসমূহ ক্যাটাগরিকরণ ও দ্রুত নিষ্পত্তি’ শীর্ষক কর্মশালায় সিইসি বলেন, ‘দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে অনেকে (এনআইডি সংশ্লিষ্টরা) জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে চাচ্ছিলেন না; কিংবা দেরি করছিলেন। বলা হচ্ছিল সার্টিফিকেট লাগবে। কোনো মন্ত্রণালয় থেকে সার্টিফিকেট নেয়াটা অর্থহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন যে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক, তাহলে তিনি এনআইডি পাবেন; তাকে এনআইডি দিতেই হবে।’

সিইসি বলেন, ‘এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তির নাম ধারণ করে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। কেউ কেউ আবার বাবার নাম পরিবর্তন করে চাচার নাম বসিয়ে তার সম্পত্তি হরণের চেষ্টা করছে। এই জিনিসগুলো গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করে উপায় বের করতে হবে। এ ধরনের ঘটনা ঘটায় আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছি।’ জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের সময়সীমা বেঁধে দেয়ারও পরামর্শ দেন হাবিবুল আউয়াল।

সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘পর্যবেক্ষণ করে দেখা হবে আমাদের কর্মকর্তারা সময়মতো সার্ভিস দিচ্ছেন কিনা। সেবা দিতে যেন দেরি না করি, হয়রানি না করি, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’

এদিকে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের দুই ভাইয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতির বিষয়ে ইসি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।

ইসি সূত্র বলছে, ‘আজিজ আহমেদের দুই ভাই হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফের এনআইডি জালিয়াতির বিষয়টি তদন্ত করার জন্য ইসির একজন যুগ্ম-সচিবকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

জানা গেছে, নিজেদের নামের পাশাপাশি মা-বাবার নাম পাল্টে এনআইডি সংগ্রহ করেন আজিজ আহমেদের দুই ভাই হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফ। তোফায়েল নিয়েছেন দুটি এনআইডি। একটি তানভীর আহমেদ তানজীল নামে, আরেকটি আসল নামে। হারিছ আহমেদ এনআইডি নেন মোহাম্মদ হাসান নামে। মোহাম্মদ হাসান নামে করা এনআইডিতে হারিছ নিজের ছবি পরিবর্তন করেন ২০১৯ সালে। ছবি বদলানোর জন্য সুপারিশ করেছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ। মিথ্যা তথ্য দিয়ে এনআইডি করা এবং একাধিক এনআইডি করা আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

শুধু এনআইডি নয়, মিথ্যা তথ্য দিয়ে পাসপোর্টও তৈরি করেছেন আলোচিত আজিজের এই দুই ভাই হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফ। তাদের স্ত্রীরাও একই কাজ করেছেন। সেনাপ্রধান থাকার সময়ই আজিজ আহমেদের ভাইদের ভুয়া তথ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট করানোর ক্ষেত্রে তার প্রভাব খাটানোর বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।

আজিজ আহমেদ ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ছিলেন। এর আগে চার বছর বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) প্রধান ছিলেন। দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কথা জানিয়ে গত ২১ মে আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র সরকার নিষেধাজ্ঞা দেয়।

এসব কারণে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের স্বজনদের পাসপোর্ট অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সংশ্লিষ্ট বিভাগে এ চিঠি দেয় দুদক।

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ভাই হারিছ ২টি এবং আনিস ১টি খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ তাদের সাজা মওকুফের প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।