ঘুষ ছাড়া সেবা মিলে না

  • দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য
  • দুদকের ১০ সুপারিশ

ভূমি অফিসগুলোতে দুর্নীতি ও হয়রানি সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ঘুষ ছাড়া ভূমি অফিসে কোন সেবা পাওয়া যায় না। দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যের কাছে সেবাপ্রার্থীরা রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে শুরু করে উপজেলা ও জেলা ভূমি অফিসগুলো এখন দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) ভূমি দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগের পাহাড় জমেছে। দুদকের কর্মকর্তারা প্রতি সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমি অফিসগুলোতে ঝটিকা অভিযান চালাচ্ছেন। সম্প্রতি দেশের জেলাগুলোতে সরকারি সেবাদানকারী অফিস এবং প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে দুদকের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকদের যে চিঠি দেয়া হচ্ছে তার মধ্যে ভূমি অফিসগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এরপরও দুর্নীতি-জালিয়াতি বন্ধ হচ্ছে না। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে তাদের এক বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে। দুদক দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে ভূমি অফিসে ৮ খাতে দুর্নীতি হচ্ছে বলে তথ্য পেয়েছে। এসব ক্ষেত্রের দুর্নীতি ঠেকাতে দুদক ১০টি সুপারিশ তৈরি করে উচ্চ পর্যায়ে জানিয়েছে। দুদক সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

দুদকের ভূমি অফিস দুর্নীতি সংক্রান্ত বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ভূমি রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি কর, ভূমি রেকর্ড, খাস জমি, পরিত্যক্ত ও অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া কোন সেবা পায় না। বিভিন্ন সময়ে এমন অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালিয়ে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পেয়েছে দুদক। এসব ক্ষেত্রে ঘুষ ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও কারও বিরুদ্ধে স্থায়ী কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এক অফিস থেকে শাস্তিমূলক বদলি করলেও ওই অসাধু কর্মকর্তারা নতুন অফিসে আগের মতোই ঘুষ ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। অনেকে বছরের পর বছর একই অফিসে চাকরি করে অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছে।

দুদকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভূমি অফিসগুলোতে সবচেয়ে বেশি জালিয়াতির ঘটনা ঘটে নামজারি, ভূমি রেজিস্ট্রেশন, ভূমি অধিগ্রহণ, সরকারি খাস জমি, পরিত্যক্ত জমি এবং অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে। নামজারিতে ঘুষ লেনদেন ওপেন সিক্রেট। ঘুষ ছাড়া কোন নামজারি হয় না। এ ঘুষের সঙ্গে দালাল থেকে শুরু করে পদস্থ কর্মকর্তাদের একটি অংশ জড়িত। অফিসের পিয়ন ও দালালদের মাধ্যম ছাড়া ভুক্তভোগীরা নামজারি করতে পারেন না। যারা টাকা দিতে চান না তাদের নামজারিতে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। ভূমি রেজিস্ট্রেশনেও জালিয়াতি করা হয়। জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি জমি যে কারও নামে এবং একজনের জমি অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করে দেয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তারা জড়িত। ভূমি কর ঠিকমতো আদায় হয় না। বছরের পর বছর কর আদায় না করে কর্মকর্তারা ঘুষসহ নানা জালিয়াতির মাধ্যমে কর ফাঁকিবাজদের সহযোগিতা করে। কোন কোন ক্ষেত্রে কর আদায় না করে জালিয়াতির মাধ্যমে তা মওকুফ দেখানো হয়। ভূমি রেকর্ড টাকা ছাড়া হয় না। এসব জালিয়াতি নিয়ে দুদকে প্রায়ই অভিযোগ আসে।

দুদক সূত্রে জানা যায়; খাস জমি, পরিত্যক্ত জমি এবং অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। টাকার বিনিময়ে ভূমি কর্মকর্তা সরকারি খাস জমি যে কারও নামে বন্দোবস্ত দিচ্ছে। একই ব্যক্তিকে বারবার বন্দোবস্ত দিচ্ছে। একাধিকবার বন্দোবস্ত নিয়ে ওইসব জমিতে বহুতল ভবনও তৈরি করছে বন্দোবস্ত নেয়া ব্যক্তিরা। অনেক পরিত্যক্ত জমি বছরের পর বছর বেদখলে থাকলেও সেগুলো উদ্ধারে ভূমি অফিসের কোন উদ্যোগ নেই। জালিয়াতি করে অর্পিত সম্পত্তির নথিপত্র গায়েব করার অভিযোগও রয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ভূমি অফিসে অভিযান চালাচ্ছে দুদক। বিশেষ করে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের ভূমি অফিসগুলোতে ব্যাপক জালিয়াতি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ জমা পড়ছে। অভিযোগ পেয়ে দুদক নিয়মিত অভিযান চালিয়ে অনিয়ম প্রতিহত করতে সুপারিশ করছে সংশ্লিষ্ট মহলে। কিন্তু এরপরও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হলেও কিছুদিন পর আবার ‘যেই সেই’।

ভূমি অফিসে দুর্নীতি বন্ধ করতে দুদক যে ১০ দফা সুপারিশ করেছে তার মধ্যে রয়েছে- আয়কর মেলার আদলে প্রতি বছর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রেশন অফিস এবং ভূমি জরিপ অধিদফতরের যৌথ উদ্যোগে ভূমি সেবা মেলার আয়োজন করা। এসব মেলায় তাৎক্ষণিকভাবে ভূমি রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, ভূমিকর গ্রহণের ব্যবস্থা করা। কমপক্ষে মাসব্যাপী মেলার মাধ্যমে এ জাতীয় সেবা দেয়া হলে ভূমির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পাশাপাশি ভূমি রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া ভূমি অফিসগুলো সম্পর্কে মানুষের যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে তার পরিবর্তন হতে পারে। যেহেতু ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করা হয়েছে তাই ২৫ বিঘার ঊর্ধ্বে যাদের ভূমি রয়েছে তাদের ভূমি কর অন্য উপযোগ বিলের ন্যায় ব্যাংকে জমা দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বিদ্দমান রেজিস্ট্রেশন আইনে জমির মালিকানা যাচাইয়ের কোন পদ্ধতি নেই। তাই প্রচলিত ১৯০৮ সালের ভূমি রেজিস্ট্রেশন আইনের সংশোধন করে ভূমি মালিকানা, ভূমির প্রকৃতি ইত্যাদি নিশ্চিত হয়ে রেজিস্ট্রেশনের বিধান প্রণয়ন করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভূমি সংক্রান্ত দফতরসমূহকে একই ছাতার নিচে আনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অন্ততপক্ষে এসব দফতরের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের আইনি পরিকাঠামো সৃষ্টি করা দরকার। এছাড়াও খাস, পরিত্যক্ত, হাটবাজার, জলমহাল, বলু মহাল, পাথর মহাল ও অর্পিত সম্পত্তিসহ সরকারি সব সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এ জাতীয় সম্পত্তিতে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বিলবোর্ড স্থাপন করা যেতে পারে। ভূমি ব্যবস্থাপনা, ভূমি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য কম্পিউটারনির্ভর ল্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম প্রণয়ন করা প্রয়োজন। ভূমি জরিপের হালনাগাদকরণ এবং হালনাগাদকৃত মূল রেকর্ড পত্রের স্বকীয়তা বজায় রাখার নিমিত্তে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। ডিজিটালাইজড ব্যবস্থার মাধ্যমে ভূমি সংক্রান্ত কার্যালয়সমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে ভূমির মালিকানা নির্ধারণের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনয়ন করা প্রয়োজন। ভূমি সংক্রান্ত প্রতিটি আবেদনের বিপরীতে যথাযথ পরিদর্শন করে রিপোর্ট দেয়ার নিমিত্তে পরিদর্শনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ভ্রমণ ভাতাদি ও অন্য ব্যয় নির্বাহের জন্য যথাযথ বাজেট বরাদ্ধ দেয়া প্রয়োজন। ভূমি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ফরম বিনামূল্যে সর্বজনীন করার জন্য ফরমসমূহ ওয়েবসাইটে দেয়া যেতে পারে। আর সরকারি জমিসহ (খাস জমি) অন্য জমির ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সব কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগের ভারসাম্য আনা এবং সংস্কার করা যেতে পারে।

রবিবার, ১৬ জুন ২০১৯ , ২ আষাঢ় ১৪২৫, ১২ শাওয়াল ১৪৪০

ভূমি অফিসে দুর্নীতি-অনিয়ম

ঘুষ ছাড়া সেবা মিলে না

বাকী বিল্লাহ ও সাইফ বাবলু

  • দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য
  • দুদকের ১০ সুপারিশ

ভূমি অফিসগুলোতে দুর্নীতি ও হয়রানি সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ঘুষ ছাড়া ভূমি অফিসে কোন সেবা পাওয়া যায় না। দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যের কাছে সেবাপ্রার্থীরা রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে শুরু করে উপজেলা ও জেলা ভূমি অফিসগুলো এখন দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) ভূমি দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগের পাহাড় জমেছে। দুদকের কর্মকর্তারা প্রতি সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমি অফিসগুলোতে ঝটিকা অভিযান চালাচ্ছেন। সম্প্রতি দেশের জেলাগুলোতে সরকারি সেবাদানকারী অফিস এবং প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে দুদকের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকদের যে চিঠি দেয়া হচ্ছে তার মধ্যে ভূমি অফিসগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এরপরও দুর্নীতি-জালিয়াতি বন্ধ হচ্ছে না। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে তাদের এক বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে। দুদক দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে ভূমি অফিসে ৮ খাতে দুর্নীতি হচ্ছে বলে তথ্য পেয়েছে। এসব ক্ষেত্রের দুর্নীতি ঠেকাতে দুদক ১০টি সুপারিশ তৈরি করে উচ্চ পর্যায়ে জানিয়েছে। দুদক সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

দুদকের ভূমি অফিস দুর্নীতি সংক্রান্ত বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ভূমি রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি কর, ভূমি রেকর্ড, খাস জমি, পরিত্যক্ত ও অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া কোন সেবা পায় না। বিভিন্ন সময়ে এমন অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালিয়ে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পেয়েছে দুদক। এসব ক্ষেত্রে ঘুষ ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও কারও বিরুদ্ধে স্থায়ী কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এক অফিস থেকে শাস্তিমূলক বদলি করলেও ওই অসাধু কর্মকর্তারা নতুন অফিসে আগের মতোই ঘুষ ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। অনেকে বছরের পর বছর একই অফিসে চাকরি করে অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছে।

দুদকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভূমি অফিসগুলোতে সবচেয়ে বেশি জালিয়াতির ঘটনা ঘটে নামজারি, ভূমি রেজিস্ট্রেশন, ভূমি অধিগ্রহণ, সরকারি খাস জমি, পরিত্যক্ত জমি এবং অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে। নামজারিতে ঘুষ লেনদেন ওপেন সিক্রেট। ঘুষ ছাড়া কোন নামজারি হয় না। এ ঘুষের সঙ্গে দালাল থেকে শুরু করে পদস্থ কর্মকর্তাদের একটি অংশ জড়িত। অফিসের পিয়ন ও দালালদের মাধ্যম ছাড়া ভুক্তভোগীরা নামজারি করতে পারেন না। যারা টাকা দিতে চান না তাদের নামজারিতে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। ভূমি রেজিস্ট্রেশনেও জালিয়াতি করা হয়। জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি জমি যে কারও নামে এবং একজনের জমি অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করে দেয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তারা জড়িত। ভূমি কর ঠিকমতো আদায় হয় না। বছরের পর বছর কর আদায় না করে কর্মকর্তারা ঘুষসহ নানা জালিয়াতির মাধ্যমে কর ফাঁকিবাজদের সহযোগিতা করে। কোন কোন ক্ষেত্রে কর আদায় না করে জালিয়াতির মাধ্যমে তা মওকুফ দেখানো হয়। ভূমি রেকর্ড টাকা ছাড়া হয় না। এসব জালিয়াতি নিয়ে দুদকে প্রায়ই অভিযোগ আসে।

দুদক সূত্রে জানা যায়; খাস জমি, পরিত্যক্ত জমি এবং অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। টাকার বিনিময়ে ভূমি কর্মকর্তা সরকারি খাস জমি যে কারও নামে বন্দোবস্ত দিচ্ছে। একই ব্যক্তিকে বারবার বন্দোবস্ত দিচ্ছে। একাধিকবার বন্দোবস্ত নিয়ে ওইসব জমিতে বহুতল ভবনও তৈরি করছে বন্দোবস্ত নেয়া ব্যক্তিরা। অনেক পরিত্যক্ত জমি বছরের পর বছর বেদখলে থাকলেও সেগুলো উদ্ধারে ভূমি অফিসের কোন উদ্যোগ নেই। জালিয়াতি করে অর্পিত সম্পত্তির নথিপত্র গায়েব করার অভিযোগও রয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ভূমি অফিসে অভিযান চালাচ্ছে দুদক। বিশেষ করে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের ভূমি অফিসগুলোতে ব্যাপক জালিয়াতি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ জমা পড়ছে। অভিযোগ পেয়ে দুদক নিয়মিত অভিযান চালিয়ে অনিয়ম প্রতিহত করতে সুপারিশ করছে সংশ্লিষ্ট মহলে। কিন্তু এরপরও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হলেও কিছুদিন পর আবার ‘যেই সেই’।

ভূমি অফিসে দুর্নীতি বন্ধ করতে দুদক যে ১০ দফা সুপারিশ করেছে তার মধ্যে রয়েছে- আয়কর মেলার আদলে প্রতি বছর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রেশন অফিস এবং ভূমি জরিপ অধিদফতরের যৌথ উদ্যোগে ভূমি সেবা মেলার আয়োজন করা। এসব মেলায় তাৎক্ষণিকভাবে ভূমি রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, ভূমিকর গ্রহণের ব্যবস্থা করা। কমপক্ষে মাসব্যাপী মেলার মাধ্যমে এ জাতীয় সেবা দেয়া হলে ভূমির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পাশাপাশি ভূমি রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া ভূমি অফিসগুলো সম্পর্কে মানুষের যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে তার পরিবর্তন হতে পারে। যেহেতু ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করা হয়েছে তাই ২৫ বিঘার ঊর্ধ্বে যাদের ভূমি রয়েছে তাদের ভূমি কর অন্য উপযোগ বিলের ন্যায় ব্যাংকে জমা দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বিদ্দমান রেজিস্ট্রেশন আইনে জমির মালিকানা যাচাইয়ের কোন পদ্ধতি নেই। তাই প্রচলিত ১৯০৮ সালের ভূমি রেজিস্ট্রেশন আইনের সংশোধন করে ভূমি মালিকানা, ভূমির প্রকৃতি ইত্যাদি নিশ্চিত হয়ে রেজিস্ট্রেশনের বিধান প্রণয়ন করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভূমি সংক্রান্ত দফতরসমূহকে একই ছাতার নিচে আনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অন্ততপক্ষে এসব দফতরের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের আইনি পরিকাঠামো সৃষ্টি করা দরকার। এছাড়াও খাস, পরিত্যক্ত, হাটবাজার, জলমহাল, বলু মহাল, পাথর মহাল ও অর্পিত সম্পত্তিসহ সরকারি সব সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এ জাতীয় সম্পত্তিতে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বিলবোর্ড স্থাপন করা যেতে পারে। ভূমি ব্যবস্থাপনা, ভূমি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য কম্পিউটারনির্ভর ল্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম প্রণয়ন করা প্রয়োজন। ভূমি জরিপের হালনাগাদকরণ এবং হালনাগাদকৃত মূল রেকর্ড পত্রের স্বকীয়তা বজায় রাখার নিমিত্তে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। ডিজিটালাইজড ব্যবস্থার মাধ্যমে ভূমি সংক্রান্ত কার্যালয়সমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে ভূমির মালিকানা নির্ধারণের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনয়ন করা প্রয়োজন। ভূমি সংক্রান্ত প্রতিটি আবেদনের বিপরীতে যথাযথ পরিদর্শন করে রিপোর্ট দেয়ার নিমিত্তে পরিদর্শনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ভ্রমণ ভাতাদি ও অন্য ব্যয় নির্বাহের জন্য যথাযথ বাজেট বরাদ্ধ দেয়া প্রয়োজন। ভূমি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ফরম বিনামূল্যে সর্বজনীন করার জন্য ফরমসমূহ ওয়েবসাইটে দেয়া যেতে পারে। আর সরকারি জমিসহ (খাস জমি) অন্য জমির ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সব কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগের ভারসাম্য আনা এবং সংস্কার করা যেতে পারে।