আওয়ামী লীগের ৭১ বছরে পদার্পণ

দেশের সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। আওয়ামী লীগ ৭১ বছরে পদার্পণ করল। ১৯৪৯ সালের ২৩-২৪ জুন পুরান ঢাকার কেএম দাস লেনের বশির সাহেবের রোজ গার্ডেনের বাসভবনে একটি রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। মুসলিম লীগের প্রগতিশীল নেতাকর্মীরা সংগঠন থেকে বেরিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন এই আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘আওয়ামী লীগ’ নাম নিয়ে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে বিকাশ লাভ করে দলটি। প্রথম সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। ১৯৬৬ সালের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই রাজনেতিক সংগঠন পাকিস্তানি সামরিক শাসন, জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে সব আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এ দেশের গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়।

বঙ্গবন্ধু ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম আওয়ামী লীগ’ প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে লিখেছেন, কোথাও হল বা জায়গা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত হুমায়ুন সাহেবের রোজ গার্ডেনের বাড়িতে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘সকলেই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন; তার নাম দেয়া হলোÑ ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। আমি মনে করেছিলাম, পাকিস্তান হয়ে গেছে। সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দরকার নেই। একটা অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হবে, যার একটা সুষ্ঠু ম্যানিফেস্টো থাকবে।

বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসার পর তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির জনক। উনসত্তরের গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসক-শোষক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালির যে জাগরণ ও বিজয় সূচিত হয়Ñ সেই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল আওয়ামী লীগ এবং এই আন্দোলনের পথ ধরেই বাঙালি জাতি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা, ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর নেতৃত্বশূন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ। এরপর দলের মধ্যে ভাঙনও দেখা দেয়। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। তার নেতৃত্বে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ আবার ঐক্যবদ্ধ হয়। তিন দশক ধরে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে। এই সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি চারবার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পেরেছে এ দলটি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের সাড়ে তিন বছর এবং ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৫ বছর, ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনা করছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর অনেকটা সুসংহত হতে সক্ষম হয়ে জোট সরকারবিরোধী আন্দোলনে সফলতার পরিচয়ও দিয়েছিল দলটি। কিন্তু এই আন্দোলনের শেষপর্যায়ে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিলে আবারও নতুন সংকটের মুখে পড়ে যায় দলটি। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাসহ প্রথম সারির অসংখ্য নেতারা গ্রেফতার এবং একাংশের সংস্কার তৎপরতায় কিছুটা সংকটে পড়ে দলীয় কার্যক্রম। তবে সব প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও মহাজাট ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি গঠিত হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াত জোটের শত প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তৃতীয়বার জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। টানা তৃতীয় মেয়াদে (মোট চারবার) প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে এই মেয়াদে আওয়ামী লীগ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করবে। পাশপাশি চলতি মেয়াদেই বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের কাজ করছে সরকার।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি

আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করতে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া এই সংগঠনটির পক্ষ থেকে প্রতি বছরের মতো এবারও ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সূর্যোদয়ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। বেলা ১১টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানের নেতৃত্বে কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আলহাজ অ্যাড. শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এস. এম কামাল হোসেন ও মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

এ উপলক্ষে আগামীকাল বিকেল ৪টায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় নেতারা বক্তব্য রাখবেন।

ওবায়দুল কাদেরের আহ্বান

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সব কর্মসূচি যথাযথ মর্যাদায় পালন করতে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সব জেলা, উপজেলাসহ সব স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

রবিবার, ২৩ জুন ২০১৯ , ৯ আষাঢ় ১৪২৫, ১৯ শাওয়াল ১৪৪০

আওয়ামী লীগের ৭১ বছরে পদার্পণ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

দেশের সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। আওয়ামী লীগ ৭১ বছরে পদার্পণ করল। ১৯৪৯ সালের ২৩-২৪ জুন পুরান ঢাকার কেএম দাস লেনের বশির সাহেবের রোজ গার্ডেনের বাসভবনে একটি রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। মুসলিম লীগের প্রগতিশীল নেতাকর্মীরা সংগঠন থেকে বেরিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন এই আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘আওয়ামী লীগ’ নাম নিয়ে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে বিকাশ লাভ করে দলটি। প্রথম সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। ১৯৬৬ সালের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই রাজনেতিক সংগঠন পাকিস্তানি সামরিক শাসন, জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে সব আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এ দেশের গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়।

বঙ্গবন্ধু ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম আওয়ামী লীগ’ প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে লিখেছেন, কোথাও হল বা জায়গা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত হুমায়ুন সাহেবের রোজ গার্ডেনের বাড়িতে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘সকলেই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন; তার নাম দেয়া হলোÑ ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। আমি মনে করেছিলাম, পাকিস্তান হয়ে গেছে। সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দরকার নেই। একটা অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হবে, যার একটা সুষ্ঠু ম্যানিফেস্টো থাকবে।

বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসার পর তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির জনক। উনসত্তরের গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসক-শোষক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালির যে জাগরণ ও বিজয় সূচিত হয়Ñ সেই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল আওয়ামী লীগ এবং এই আন্দোলনের পথ ধরেই বাঙালি জাতি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা, ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর নেতৃত্বশূন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ। এরপর দলের মধ্যে ভাঙনও দেখা দেয়। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। তার নেতৃত্বে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ আবার ঐক্যবদ্ধ হয়। তিন দশক ধরে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে। এই সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি চারবার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পেরেছে এ দলটি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের সাড়ে তিন বছর এবং ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৫ বছর, ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনা করছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর অনেকটা সুসংহত হতে সক্ষম হয়ে জোট সরকারবিরোধী আন্দোলনে সফলতার পরিচয়ও দিয়েছিল দলটি। কিন্তু এই আন্দোলনের শেষপর্যায়ে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিলে আবারও নতুন সংকটের মুখে পড়ে যায় দলটি। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাসহ প্রথম সারির অসংখ্য নেতারা গ্রেফতার এবং একাংশের সংস্কার তৎপরতায় কিছুটা সংকটে পড়ে দলীয় কার্যক্রম। তবে সব প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও মহাজাট ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি গঠিত হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াত জোটের শত প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তৃতীয়বার জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। টানা তৃতীয় মেয়াদে (মোট চারবার) প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে এই মেয়াদে আওয়ামী লীগ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করবে। পাশপাশি চলতি মেয়াদেই বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের কাজ করছে সরকার।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি

আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করতে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া এই সংগঠনটির পক্ষ থেকে প্রতি বছরের মতো এবারও ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সূর্যোদয়ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। বেলা ১১টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানের নেতৃত্বে কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আলহাজ অ্যাড. শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এস. এম কামাল হোসেন ও মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

এ উপলক্ষে আগামীকাল বিকেল ৪টায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় নেতারা বক্তব্য রাখবেন।

ওবায়দুল কাদেরের আহ্বান

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সব কর্মসূচি যথাযথ মর্যাদায় পালন করতে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সব জেলা, উপজেলাসহ সব স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।