প্রথমবারের মতো ইউরোপের দুই শীর্ষ পদে নারী!

দীর্ঘ বিতর্কের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ পদগুলোর জন্য প্রার্থী তালিকা স্থির করছেন সদস্য দেশগুলোর শীর্ষ নেতারা। কমিশনের শীর্ষ পদে জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন দার লায়েনের নাম প্রস্তাবে সম্মত হয়েছেন। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রধান ক্রিস্টেন ল্যাগার্ডকে ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের (ইসিবি) প্রথম নারী প্রধান হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। তবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অনুমোদন নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

গত রোববার থেকে তিন দিনের (রোববার-মঙ্গলবার পর্যন্ত) ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৩ দিন ধরে দরকষাকষির পর অবশেষে ইইউ ৫ শীর্ষ পদের জন্য প্রার্থী তালিকা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছলেন সদস্য দেশগুলোর শীর্ষ নেতারা। তবে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে। মনোনীত প্রার্থীরা শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অনুমোদন পাবেন কিনা, সে বিষয়ে সংশয় দূর হচ্ছে না। একদিকে ইইউ দেশগুলোর জাতীয় সরকার, অন্যদিকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের মধ্যে সংঘাত দেখা দিলে পুরো প্রক্রিয়া আবার জটিল হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল (বুধবার) পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশনে এ সংঘাতের আঁচ পাওয়া যেতে পারে বরে ধারণা করা হচ্ছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রচারের শুরুতেই প্রধান রাজনৈতিক শিবিরগুলো তাদের শীর্ষ প্রার্থীদের নাম স্থির করেছিল। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল জানার পর দেখা গেল, কোন প্রার্থীই শীর্ষ পদগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন পাচ্ছেন না। গত রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত অনেক আলাপ আলোচনার পর একেবারে নতুন কিছু নাম উঠে এসেছে। ফলে ইউরোপে গণতন্ত্রের ক্ষতি হলো বলে সমালোচনার ঝড় উঠছে। ইইউ শীর্ষ নেতারা সম্মিলিতভাবে কমিশনের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য জার্মানির বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন দার লায়েনকে মনোনীত করেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী ডাচ লেবার নেতা ফ্রান্স টিমেরম্যানের নাম খারিজ হয়ে যাওয়ার পর অনেকটা আকস্মিকভাবেই উরসুলার নাম চলে আসে। ৬০ বছর বয়সী এ নারীই ইইউ কমিশনের বর্তমান প্রধান জ্যাঁ ক্লদ জাঙ্কারের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। শুধু জার্মানি ভোটদানে বিরত ছিল। কারণ জার্মানির মহাজোট সরকারের শরিক এসপিডি দল এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে ফন দার লায়েনের একাধিক বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জন্য জার্মানিতে প্রবল চাপের মুখে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে এক পার্লামেন্টারি কমিটি। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান পদে ফ্রান্সের ক্রিস্টিনা ল্যাগার্দ-এর নাম মনোনীত করা হয়। ল্যাগার্দ বর্তমানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। ইউরোপের এ দুই শীর্ষ পদের জন্য দুই নারীর নাম উঠে আসায় নীতিগতভাবে একাধিক মহল সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। এর আগে এ দুই পদে কোন নারীকে দেখা যায়নি।

শুধু ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রধানের পদ নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। গতকাল বুধবার পার্লামেন্ট সদস্যরা আড়াই বছরের জন্য এ পদে ইতালির দাভিদ সাসোলি অথবা জার্মানির স্কা কেলার’কে নির্বাচিত করতে পারেন। ইইউয়ের সদস্য দেশেগুলোর সরকার পরিষদের বিদায়ী প্রধান ডোনাল্ড টাস্ক এ প্রার্থী তালিকাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, শীর্ষ নেতারা নারী ও পুরুষ প্রার্থীদের মধ্যে আদর্শ ভারসাম্য বজায় রাখতে পেরেছেন। বড় ও ছোট দেশগুলোর মধ্যেও ক্ষমতা বণ্টনের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।

ইউরোপের শীর্ষ পদে মনোনয়ন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরের মধ্যে জটিল বিভাজন পুরো প্রক্রিয়াকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ইইউ কমিশনের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জ্যাঁ ক্লদ জাঙ্কার বলেন, রাজনৈতিক শিবিরগুলোর শীর্ষ প্রার্থী স্থির করার বর্তমান প্রক্রিয়া কার্যত ভেঙে পড়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে পুরো প্রক্রিয়ার সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০১৯ , ২০ আষাঢ় ১৪২৫, ৩০ শাওয়াল ১৪৪০

প্রথমবারের মতো ইউরোপের দুই শীর্ষ পদে নারী!

সংবাদ ডেস্ক

image

দীর্ঘ বিতর্কের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ পদগুলোর জন্য প্রার্থী তালিকা স্থির করছেন সদস্য দেশগুলোর শীর্ষ নেতারা। কমিশনের শীর্ষ পদে জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন দার লায়েনের নাম প্রস্তাবে সম্মত হয়েছেন। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রধান ক্রিস্টেন ল্যাগার্ডকে ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের (ইসিবি) প্রথম নারী প্রধান হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। তবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অনুমোদন নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

গত রোববার থেকে তিন দিনের (রোববার-মঙ্গলবার পর্যন্ত) ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৩ দিন ধরে দরকষাকষির পর অবশেষে ইইউ ৫ শীর্ষ পদের জন্য প্রার্থী তালিকা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছলেন সদস্য দেশগুলোর শীর্ষ নেতারা। তবে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে। মনোনীত প্রার্থীরা শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অনুমোদন পাবেন কিনা, সে বিষয়ে সংশয় দূর হচ্ছে না। একদিকে ইইউ দেশগুলোর জাতীয় সরকার, অন্যদিকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের মধ্যে সংঘাত দেখা দিলে পুরো প্রক্রিয়া আবার জটিল হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল (বুধবার) পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশনে এ সংঘাতের আঁচ পাওয়া যেতে পারে বরে ধারণা করা হচ্ছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রচারের শুরুতেই প্রধান রাজনৈতিক শিবিরগুলো তাদের শীর্ষ প্রার্থীদের নাম স্থির করেছিল। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল জানার পর দেখা গেল, কোন প্রার্থীই শীর্ষ পদগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন পাচ্ছেন না। গত রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত অনেক আলাপ আলোচনার পর একেবারে নতুন কিছু নাম উঠে এসেছে। ফলে ইউরোপে গণতন্ত্রের ক্ষতি হলো বলে সমালোচনার ঝড় উঠছে। ইইউ শীর্ষ নেতারা সম্মিলিতভাবে কমিশনের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য জার্মানির বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন দার লায়েনকে মনোনীত করেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী ডাচ লেবার নেতা ফ্রান্স টিমেরম্যানের নাম খারিজ হয়ে যাওয়ার পর অনেকটা আকস্মিকভাবেই উরসুলার নাম চলে আসে। ৬০ বছর বয়সী এ নারীই ইইউ কমিশনের বর্তমান প্রধান জ্যাঁ ক্লদ জাঙ্কারের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। শুধু জার্মানি ভোটদানে বিরত ছিল। কারণ জার্মানির মহাজোট সরকারের শরিক এসপিডি দল এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে ফন দার লায়েনের একাধিক বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জন্য জার্মানিতে প্রবল চাপের মুখে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে এক পার্লামেন্টারি কমিটি। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান পদে ফ্রান্সের ক্রিস্টিনা ল্যাগার্দ-এর নাম মনোনীত করা হয়। ল্যাগার্দ বর্তমানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। ইউরোপের এ দুই শীর্ষ পদের জন্য দুই নারীর নাম উঠে আসায় নীতিগতভাবে একাধিক মহল সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। এর আগে এ দুই পদে কোন নারীকে দেখা যায়নি।

শুধু ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রধানের পদ নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। গতকাল বুধবার পার্লামেন্ট সদস্যরা আড়াই বছরের জন্য এ পদে ইতালির দাভিদ সাসোলি অথবা জার্মানির স্কা কেলার’কে নির্বাচিত করতে পারেন। ইইউয়ের সদস্য দেশেগুলোর সরকার পরিষদের বিদায়ী প্রধান ডোনাল্ড টাস্ক এ প্রার্থী তালিকাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, শীর্ষ নেতারা নারী ও পুরুষ প্রার্থীদের মধ্যে আদর্শ ভারসাম্য বজায় রাখতে পেরেছেন। বড় ও ছোট দেশগুলোর মধ্যেও ক্ষমতা বণ্টনের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।

ইউরোপের শীর্ষ পদে মনোনয়ন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরের মধ্যে জটিল বিভাজন পুরো প্রক্রিয়াকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ইইউ কমিশনের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জ্যাঁ ক্লদ জাঙ্কার বলেন, রাজনৈতিক শিবিরগুলোর শীর্ষ প্রার্থী স্থির করার বর্তমান প্রক্রিয়া কার্যত ভেঙে পড়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে পুরো প্রক্রিয়ার সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন।