ট্রাম্প যুক্তরাজ্যের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখিয়েছেন

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান্ট

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। গত মঙ্গলবার এক টুইটবার্তায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও এর প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র প্রতি অশ্রদ্ধা দেখিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে ট্রাম্পের মন্তব্য ‘অসম্মানজনক ও ভুল’। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার কিম ডারখের ইমেইল ফাঁসের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ট্রাম্প ওই রাষ্ট্রদূতকে ‘বড় ধরনের বেকুব’ বলার পর ক্ষমতাসীন টোরি দলের নেতৃত্ব প্রত্যাশী হান্ট এমন প্রতিক্রিয়া দেখান। সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত কিম ডেরচেরকে যুক্তরাষ্ট্র আর চায় নাÑ এমন আভাস দিয়ে গত ৯ জুলাই এক টুইট পোস্ট করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ওই টুইটবার্তায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’রও সমালোচনা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে মে’কে ব্যর্থ দাবি করে ট্রাম্প বলেন, তার (স্বয়ং ট্রাম্পের) পরামর্শ শুনলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে আর এ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হতো না। মূলত ট্রাম্পের এমন টুইটে ক্ষুব্ধ হয় যুক্তরাজ্য। একইদিন ট্রাম্পের টুইটটি রিটুইট করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। এতে তিনি বলেন, ট্রাম্প যেসব কথা বলেছেন সেগুলো আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও দেশের জন্য অসম্মানজনক ও ভুল। মার্কিন রাষ্ট্রদূতরাও তাদের গোপন ব্যক্তিগত অভিমত দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠান। আমাদের রাষ্ট্রদূতও একই কাজ করেন। ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মৈত্রী ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এর সঙ্গে আমি একমত। তবে মিত্রদের উচিত পরস্পরের প্রতি সম্মান দেখানো। থেরেসা মে সবসময়ই আপনার প্রতি সম্মান দেখিয়ে আসছেন। জেরেমি হান্ট বলেন, রাষ্ট্রদূতকে সরকারই নিয়োগ দিয়েছে এবং আমি যদি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হই যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রদূতই বহাল থাকবেন।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার কিম ডারখের নিজ দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো কিছু ইমেইল সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়। এসব মেইলে ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘অদক্ষ’ ও ‘অকার্যকর’ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। ওই মেইল ফাঁস হলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ট্রাম্প। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে টুইটারে দেয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘এটা ভালো খবর যে যুক্তরাজ্য নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী পেতে চলেছে।’ এর জেরে দুই ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, কিভাবে এসব ইমেইল ফাঁস হলোÑ সেটি তারা তদন্ত করে দেখতে শুরু করেছে। ২০১৭ সাল থেকে প্রায় দুই বছর সময়কালের এসব ইমেইলে স্যার কিম খোলাখুলিভাবে ইরান, রাশিয়া ও চীন সম্পর্কে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। ২২ জুনের একটি মেমোতে রাষ্ট্রদূত লিখেছেন যে, ইরান প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অসংলগ্ন ও বিশৃঙ্খল। দেশটির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি খুব তাড়াতাড়ি আরও সুসংলগ্ন হবে বলেও মনে হয় না। এটা একটা বিভক্ত প্রশাসন। ফাঁস হওয়া বার্তায় আরও দেখা যায়, ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা এখনও আছে। কেননা ট্রাম্পের চারপাশে রয়েছেন উগ্রপন্থি চিন্তারধারার একদল উপদেষ্টা। দুই বছর আগের একটি বিস্তারিত বিবরণীতে ট্রাম্প প্রচারণা ও রাশিয়ার গোপন আঁতাত নিয়েও কথা বলেন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে, কিভাবে ট্রাম্প প্রশাসন প্রথম দিন থেকে হোয়াইট হাউজের ভেতরের অভ্যন্তরীণ লড়াই এবং বিশৃঙ্খলার ভেতরে পড়েছে এবং কোন না কোনভাবে রাশিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে কেলেঙ্কারির মধ্যে পড়েছে। রাষ্ট্রদূত লিখেছেন, আগের কয়েক দশকে যখন ট্রাম্প ও কুশনারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার মতো ঝুঁকিতে পড়েছিল, তখন কৌশলী রাশিয়ান অর্থ লগ্নিকারীরা তাদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০১৯ , ২৭ আষাঢ় ১৪২৫, ৭ জ্বিলকদ ১৪৪০

ট্রাম্প যুক্তরাজ্যের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখিয়েছেন

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান্ট

সংবাদ ডেস্ক

image

জেরেমি হান্ট

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। গত মঙ্গলবার এক টুইটবার্তায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও এর প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র প্রতি অশ্রদ্ধা দেখিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে ট্রাম্পের মন্তব্য ‘অসম্মানজনক ও ভুল’। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার কিম ডারখের ইমেইল ফাঁসের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ট্রাম্প ওই রাষ্ট্রদূতকে ‘বড় ধরনের বেকুব’ বলার পর ক্ষমতাসীন টোরি দলের নেতৃত্ব প্রত্যাশী হান্ট এমন প্রতিক্রিয়া দেখান। সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত কিম ডেরচেরকে যুক্তরাষ্ট্র আর চায় নাÑ এমন আভাস দিয়ে গত ৯ জুলাই এক টুইট পোস্ট করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ওই টুইটবার্তায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’রও সমালোচনা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে মে’কে ব্যর্থ দাবি করে ট্রাম্প বলেন, তার (স্বয়ং ট্রাম্পের) পরামর্শ শুনলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে আর এ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হতো না। মূলত ট্রাম্পের এমন টুইটে ক্ষুব্ধ হয় যুক্তরাজ্য। একইদিন ট্রাম্পের টুইটটি রিটুইট করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। এতে তিনি বলেন, ট্রাম্প যেসব কথা বলেছেন সেগুলো আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও দেশের জন্য অসম্মানজনক ও ভুল। মার্কিন রাষ্ট্রদূতরাও তাদের গোপন ব্যক্তিগত অভিমত দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠান। আমাদের রাষ্ট্রদূতও একই কাজ করেন। ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মৈত্রী ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এর সঙ্গে আমি একমত। তবে মিত্রদের উচিত পরস্পরের প্রতি সম্মান দেখানো। থেরেসা মে সবসময়ই আপনার প্রতি সম্মান দেখিয়ে আসছেন। জেরেমি হান্ট বলেন, রাষ্ট্রদূতকে সরকারই নিয়োগ দিয়েছে এবং আমি যদি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হই যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রদূতই বহাল থাকবেন।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার কিম ডারখের নিজ দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো কিছু ইমেইল সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়। এসব মেইলে ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘অদক্ষ’ ও ‘অকার্যকর’ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। ওই মেইল ফাঁস হলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ট্রাম্প। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে টুইটারে দেয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘এটা ভালো খবর যে যুক্তরাজ্য নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী পেতে চলেছে।’ এর জেরে দুই ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, কিভাবে এসব ইমেইল ফাঁস হলোÑ সেটি তারা তদন্ত করে দেখতে শুরু করেছে। ২০১৭ সাল থেকে প্রায় দুই বছর সময়কালের এসব ইমেইলে স্যার কিম খোলাখুলিভাবে ইরান, রাশিয়া ও চীন সম্পর্কে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। ২২ জুনের একটি মেমোতে রাষ্ট্রদূত লিখেছেন যে, ইরান প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অসংলগ্ন ও বিশৃঙ্খল। দেশটির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি খুব তাড়াতাড়ি আরও সুসংলগ্ন হবে বলেও মনে হয় না। এটা একটা বিভক্ত প্রশাসন। ফাঁস হওয়া বার্তায় আরও দেখা যায়, ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা এখনও আছে। কেননা ট্রাম্পের চারপাশে রয়েছেন উগ্রপন্থি চিন্তারধারার একদল উপদেষ্টা। দুই বছর আগের একটি বিস্তারিত বিবরণীতে ট্রাম্প প্রচারণা ও রাশিয়ার গোপন আঁতাত নিয়েও কথা বলেন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে, কিভাবে ট্রাম্প প্রশাসন প্রথম দিন থেকে হোয়াইট হাউজের ভেতরের অভ্যন্তরীণ লড়াই এবং বিশৃঙ্খলার ভেতরে পড়েছে এবং কোন না কোনভাবে রাশিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে কেলেঙ্কারির মধ্যে পড়েছে। রাষ্ট্রদূত লিখেছেন, আগের কয়েক দশকে যখন ট্রাম্প ও কুশনারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার মতো ঝুঁকিতে পড়েছিল, তখন কৌশলী রাশিয়ান অর্থ লগ্নিকারীরা তাদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন।