ইরানের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ তেলের ট্যাংকারকে ‘বাধা দেয়ার’ অভিযোগ

পারস্য উপসাগরে কয়েকটি ইরানি নৌকা একটি ব্রিটিশ তেল ট্যাঙ্কারকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। গত বুধবার পারস্য উপসাগরে ইরানি জলসীমার কাছে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ওই কর্মকর্তাদের দাবি। তবে তেল ট্যাংকার আটকের প্রচেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান। তেহরান ও ওয়াশিংটনের এমন পরস্পরবিরোধী অবস্থানের প্রেক্ষপটে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পারস্য উপসাগরে কয়েকটি ইরানি নৌকা একটি ব্রিটিশ তেলবাহী ট্যাংকার আটকে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্যের রয়্যাল নেভির জাহাজের তাড়া খেয়ে পিছু হটেছে। সংবাদ মাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।

এ কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব এমন এক সময়ে দেখা দিল যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চরম রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের কূটনৈতিক সম্পর্কও খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। গত সপ্তাহে জিব্রাল্টার উপকূলে ব্রিটিশ রাজকীয় মেরিন ইরানি সুপার-ট্যাঙ্কার গ্রেস ১ জব্দ করার প্রায় এক সপ্তাহ পর এ হয়রানির ঘটনাটি ঘটল। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, হরমুজ প্রণালীর উত্তর দিকের প্রবেশ মুখে ইরানের বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর বলে ধারণা করা পাঁচটি নৌকা তেলবাহী জাহাজ ব্রিটিশ হ্যারিটেজকে থামতে বলে, কিন্তু একটি ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ তাদের সতর্ক করলে তারা সরে পড়ে। এ প্রসঙ্গে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ‘সেখানে থাকা রাজকীয় নৌবাহিনীর এইচএমএস মন্ট্রোজ (যুদ্ধজাহাজ) তাদের বন্দুকগুলো ওই বোটগুলোর দিকে তাক করে রেডিও মারফত তাদের সতর্ক করে, এরপর তারা সেখান থেকে চলে যায়।’ ‘এটি হয়রানিমূলক কর্মকা- এবং ওই প্রণালীতে বিঘœ সৃষ্টির প্রচেষ্টা’ বলে দাবি করেছেন আরেক মার্কিন কর্মকর্তা।

এদিকে ব্রিটিশ সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘তেলের ট্যাংকার আটকানোর চেষ্টার এ পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী। আমরা এ বিষয়ে চিন্তিত এবং ওই অঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছি।’ ওই মুখপাত্র জানান, এইচএমএস মন্ট্রোস নামের জাহাজটি তিনটি ইরানি নৌকা ও তেলের ট্যাংকার ‘ব্রিটিশ হেরিটেজ’-এর মধ্যে অবস্থান নেয়ার আগে ইরানি নৌযানগুলোকে মৌখিকভাবে সতর্কও করে। ইরানের এ ধরনের কার্যক্রম ‘আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী’ বলে মন্তব্য করেন ওই মুখপাত্র। ইরানের একটি তেলের ট্যাংকার আটক করার ঘটনার প্রতিশোধ নেয়ার বিষয়ে আগে থেকেই হুমকি দিয়েছে তেহরান। গত সপ্তাহে ব্রিটিশ রয়্যাল মেরিন একটি ইরানি তেলের ট্যাংকার আটক করতে জিব্রাল্টারের কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে ওই ট্যাঙ্কারটি ইরান থেকে সিরিয়ায় অশোধিত তেল নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহে সেটি আটক করে তারা। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এক ইরানি কর্মকর্তা বলেন, ইরানি জাহাজকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া না হলে প্রতিশোধ হিসেবে একটি ব্রিটিশ জাহাজ আটক করা উচিত। এ বিষয়ে অভিযোগ জানানো জন্য তেহরানে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকেও ডেকে পাঠায় ইরান। তারা বলেছে, এটি ‘এক ধরনের দস্যুবৃত্তি’।

ইরানের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করে দেশটির ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশটির তেল রফতানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ওয়াশিংটনের উদ্যোগকে কেন্দ্র করে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র দেশগুলোর উত্তেজনা তীব্র হয়ে ওঠে। এসব নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় ২০১৫ সালের চুক্তিতে বেঁধে দেয়া পারমাণবিক তৎপরতার সীমা লঙ্ঘন করতে শুরু করে ইরান। মে ও জুনে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় জলসীমায় বেশ কয়েকটি তেল ট্যাঙ্কারে হামলা হয়। এসব হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র। দায় অস্বীকার করে ইরান। গত মাসে হরমুজ প্রণালীর কাছে একটি মার্কিন গোয়েন্দা ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করে ইরান। এর জবাবে ইরানে বিমান হামলার নির্দেশ দিয়েও শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত থেকে সরে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সর্বশেষ হরমুজ প্রণালী ও ইয়েমেন উপকূলের বাব আল মানডাব প্রণালীতে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলোর জাহাজগুলোকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য সামরিক জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে ওয়াশিংটন।

এর আগে জুন মাসে দুটি তেলের ট্যাংকারে হামলা হওয়ার ঘটনায় ‘প্রায় নিশ্চিতভাবে’ ইরান জড়িত রয়েছে বলে মন্তব্য করার পর দেশ দুটির (যুক্তরাজ্য-ইরান) সম্পর্কে অবনতি ঘটেছে।

শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০১৯ , ২৮ আষাঢ় ১৪২৫, ৮ জিলকদ ১৪৪০

ইরানের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ তেলের ট্যাংকারকে ‘বাধা দেয়ার’ অভিযোগ

সংবাদ ডেস্ক |

image

পারস্য উপসাগরে কয়েকটি ইরানি নৌকা একটি ব্রিটিশ তেল ট্যাঙ্কারকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। গত বুধবার পারস্য উপসাগরে ইরানি জলসীমার কাছে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ওই কর্মকর্তাদের দাবি। তবে তেল ট্যাংকার আটকের প্রচেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান। তেহরান ও ওয়াশিংটনের এমন পরস্পরবিরোধী অবস্থানের প্রেক্ষপটে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পারস্য উপসাগরে কয়েকটি ইরানি নৌকা একটি ব্রিটিশ তেলবাহী ট্যাংকার আটকে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্যের রয়্যাল নেভির জাহাজের তাড়া খেয়ে পিছু হটেছে। সংবাদ মাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।

এ কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব এমন এক সময়ে দেখা দিল যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চরম রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের কূটনৈতিক সম্পর্কও খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। গত সপ্তাহে জিব্রাল্টার উপকূলে ব্রিটিশ রাজকীয় মেরিন ইরানি সুপার-ট্যাঙ্কার গ্রেস ১ জব্দ করার প্রায় এক সপ্তাহ পর এ হয়রানির ঘটনাটি ঘটল। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, হরমুজ প্রণালীর উত্তর দিকের প্রবেশ মুখে ইরানের বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর বলে ধারণা করা পাঁচটি নৌকা তেলবাহী জাহাজ ব্রিটিশ হ্যারিটেজকে থামতে বলে, কিন্তু একটি ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ তাদের সতর্ক করলে তারা সরে পড়ে। এ প্রসঙ্গে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ‘সেখানে থাকা রাজকীয় নৌবাহিনীর এইচএমএস মন্ট্রোজ (যুদ্ধজাহাজ) তাদের বন্দুকগুলো ওই বোটগুলোর দিকে তাক করে রেডিও মারফত তাদের সতর্ক করে, এরপর তারা সেখান থেকে চলে যায়।’ ‘এটি হয়রানিমূলক কর্মকা- এবং ওই প্রণালীতে বিঘœ সৃষ্টির প্রচেষ্টা’ বলে দাবি করেছেন আরেক মার্কিন কর্মকর্তা।

এদিকে ব্রিটিশ সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘তেলের ট্যাংকার আটকানোর চেষ্টার এ পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী। আমরা এ বিষয়ে চিন্তিত এবং ওই অঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছি।’ ওই মুখপাত্র জানান, এইচএমএস মন্ট্রোস নামের জাহাজটি তিনটি ইরানি নৌকা ও তেলের ট্যাংকার ‘ব্রিটিশ হেরিটেজ’-এর মধ্যে অবস্থান নেয়ার আগে ইরানি নৌযানগুলোকে মৌখিকভাবে সতর্কও করে। ইরানের এ ধরনের কার্যক্রম ‘আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী’ বলে মন্তব্য করেন ওই মুখপাত্র। ইরানের একটি তেলের ট্যাংকার আটক করার ঘটনার প্রতিশোধ নেয়ার বিষয়ে আগে থেকেই হুমকি দিয়েছে তেহরান। গত সপ্তাহে ব্রিটিশ রয়্যাল মেরিন একটি ইরানি তেলের ট্যাংকার আটক করতে জিব্রাল্টারের কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে ওই ট্যাঙ্কারটি ইরান থেকে সিরিয়ায় অশোধিত তেল নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহে সেটি আটক করে তারা। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এক ইরানি কর্মকর্তা বলেন, ইরানি জাহাজকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া না হলে প্রতিশোধ হিসেবে একটি ব্রিটিশ জাহাজ আটক করা উচিত। এ বিষয়ে অভিযোগ জানানো জন্য তেহরানে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকেও ডেকে পাঠায় ইরান। তারা বলেছে, এটি ‘এক ধরনের দস্যুবৃত্তি’।

ইরানের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করে দেশটির ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশটির তেল রফতানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ওয়াশিংটনের উদ্যোগকে কেন্দ্র করে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র দেশগুলোর উত্তেজনা তীব্র হয়ে ওঠে। এসব নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় ২০১৫ সালের চুক্তিতে বেঁধে দেয়া পারমাণবিক তৎপরতার সীমা লঙ্ঘন করতে শুরু করে ইরান। মে ও জুনে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় জলসীমায় বেশ কয়েকটি তেল ট্যাঙ্কারে হামলা হয়। এসব হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র। দায় অস্বীকার করে ইরান। গত মাসে হরমুজ প্রণালীর কাছে একটি মার্কিন গোয়েন্দা ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করে ইরান। এর জবাবে ইরানে বিমান হামলার নির্দেশ দিয়েও শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত থেকে সরে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সর্বশেষ হরমুজ প্রণালী ও ইয়েমেন উপকূলের বাব আল মানডাব প্রণালীতে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলোর জাহাজগুলোকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য সামরিক জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে ওয়াশিংটন।

এর আগে জুন মাসে দুটি তেলের ট্যাংকারে হামলা হওয়ার ঘটনায় ‘প্রায় নিশ্চিতভাবে’ ইরান জড়িত রয়েছে বলে মন্তব্য করার পর দেশ দুটির (যুক্তরাজ্য-ইরান) সম্পর্কে অবনতি ঘটেছে।