বারোভূতে লুটেপুটে খাচ্ছে খুলনা রেলওয়ের কোটি কোটি টাকার সম্পদ

বারোভূতে লুটেপুটে খাচ্ছে খুলনা রেলওয়ের সম্পত্তি। সম্পত্তি দখল, চুরি, ছিনতাই, মাদকসেবন এখানকার নিত্যঘটনা। স্টেশন এলাকা থেকে রেলের ডগ স্পাইক, রেলপাটি, যাত্রীবাহী বগি থেকে ফ্যান, লাইট, জানালার কাচ, কুশন, বৈদ্যুতিক তারসহ নানা যন্ত্রাংশ চুরি হয়। ফাঁকা বগিতে ভাসমান পতিতা, মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের নিরাপদ আড্ডা জমে। তাছাড়া সংরক্ষিত এলাকায় একাধিক রহস্যজনক অগ্নিকা-ের ঘটনায় জড়িতরা বরাবরই রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। যাত্রীদের সেবায় নিয়োজিত রেলওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে যাত্রী হয়রানি, চোরাচালান, মাদকব্যবসায়ীদের সহযোগিতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। খুলনা-বেনাপোল রুটের কমিউটার ট্রেনটি চোরাচালানিদের নিরাপদ বাহনে পরিণত হয়েছে।

খুলনা রেলস্টেশনসহ আশপাশ এলাকায় রেলওয়ের প্রায় ১৯৫.৪৪ একর জমি রয়েছে। এর মধ্যে ১৫৬.৬৩ একর জমি রেলওয়ের অপারেশনাল কাজে ব্যবহৃত হয়। পরিকল্পিত নগর উন্নয়নের উদ্দেশ্যে প্রায় ৬.৫২ একর জমি কেডিএ খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কিনে নিয়েছে। কিছু জমি খুলনা সিটি করপোরেশন এবং বিআইডব্লিউটিএ’র দখলে রয়েছে। বাকি সব জমি যথেচ্ছ ব্যবহৃত হচ্ছে। নগরীর পূর্বদিকে ক্লে রোড, পশ্চিমে জব্বার সরণি, উত্তরে বড় বাজারের ওয়েস্টমেকট রোডের দক্ষিণ পাশ এবং দক্ষিণে খুলনা-যশোর রোডের চৌহদ্দির মধ্যে তিল পরিমাণ জমি ফাঁকা নেই। নিউমার্কেটের সামনে, জোড়াগেট, জংশন, খালিশপুর, দৌলতপুর, ফুলবাড়িগেটসহ বিভিন স্থানে রেললাইনের দুই পাশের বিপুল পরিমাণ জমি দখল হয়েছে অনেক আগেই। যে যেভাবে পারছে দখলে নিয়ে কাঁচা, পাকা ও সেমিপাকা স্থাপনা তৈরি করছে। গড়ে উঠছে একের পর এক বস্তি, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বড় বাজার এলাকায় ড্রেন বন্ধ করে স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। কথিত লিজ বা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি আবার কেউ কেউ কোন কোন ক্ষেত্রে ‘সিন্ডিকেট’ করে রেলওয়ের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় এসব মার্কেট ও ব্যবসাকেন্দ্র গড়ে তুলছে।

সরজমিনে দেখা যায়, খুলনা রেললাইনের দু’পাশে অবৈধ দখলদারের রাজত্ব চলছে দাপটের সঙ্গেই। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করেই বছরের পর বছর এসব দখলদার রেললাইনের দু’পাশের জমি ভোগ দখলে আছে। তবে প্রতি বছরই বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা পাচ্ছে রেলওয়ের কর্মকর্তারা। সম্প্রতি রেলওয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে কয়েক দফা এসব অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করলেও সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই তা আবারও স্ব স্ব অবস্থায় ফিরে গেছে সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছরেও মহানগরী খুলনা, রূপসা, ফুলতলা ও বাগেরহাট এলাকার রেললাইনের পার্শ্ববর্তী জমিতে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। খুলনাস্থ কানুনগো অফিস ম্যানেজ করেই দখলে রয়েছে এসব অবৈধ দখলদাররা।

জানা যায়, নগরীর নিক্সন মার্কেটের পশ্চিমে ও রেলওয়ে বয়েজ স্কুলের মধ্যবর্তী স্থানে প্রায় এক বিঘা জমির ওপর রেলওয়ে হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি বাসভবন ছিল। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত বিশাল ভবনটি ২০১৫ সালেও ব্যবহারের উপযোগী ছিল। অভিযোগ রয়েছে, ২১নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নাজির উদ্দিন নান্নু এবং স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুজ্জামান মিয়া স্বপনসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি রেলের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ভবনটি পরিত্যক্ত দেখিয়ে দখলে নেন। এরপর সেখানে মার্কেট তৈরির উদ্যোগ নেন তারা। ভান্ডারিয়ার হায়দার আলী রেলওয়ের জমি দখল করে সাবেক এক মন্ত্রীর বাবার নামে নির্মাণ করেছেন বিশাল এক মার্কেট। একইভাবে ডাকবাংলার মোড়সংলগ্ন রেলের জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মার্কেট, মশিউর রহমান মার্কেট, ডাকবাংলো সুপার মার্কেট, নিক্সন মার্কেট, দরবেশ মার্কেট, ভাসানী মার্কেট, রেলওয়ে কর্মচারী মার্কেট, শেরেবাংলা মার্কেট, নিউমার্কেটের সামনে রেলওয়ে কর্মচারী মার্কেট, সুপার মার্কেট, স্টেশন রোড মার্কেট ও নান্নু মার্কেট। রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং কাউন্সিল অফিসটি এখন ক্ষমতাসীন দলের ২১নং কার্যালয়। ২১নং ওয়ার্ড বিএনপি অফিসটিও রেলের জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে।

অপরদিকে ১৯৯৮ সালে পূর্ব রূপসা-বাগেরহাট রুটটি বন্ধ ঘোষণায় দেখাশুনার কেউ না থাকায় রেলপথটির কয়েক কোটি টাকার সম্পদ প্রতিনিয়ত চুরি হচ্ছে। প্রায় ৩২ কিলোমিটার সড়কের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তিও চলে গেছে প্রভাবশালীদের দখলে। এসব সম্পত্তি যে যার ইচ্ছামত দখল করে সেখানে নানাবিধ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। কেউ কেউ বসতভিটার সঙ্গে ঘিরে ভোগদখল করছে আবার কেউ স-মিল, রাইস মিল, হাট-বাজার, বসতবাড়ি, দোকানপাট, পানবরজ, ইট-বালুর আড়ৎসহ নানা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। একটি অসমর্থিত সূত্র জানিয়েছে, ১৯৯৭ সাল থেকে রেলওয়ের অব্যহৃত জমির লাইসেন্স প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় জমি দখল কর্মকান্ড বেড়েছে।

জানাগেছে, খুলনাঞ্চলের রেলের জমি বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় খুলনা রেলওয়ের কাচারি অফিস থেকে। এ অফিসের কর্তাব্যক্তিদের সন্তষ্ট ও বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে জমির লিজ গ্রহণ করতে হয়। তাদের চাহিদা মতো উৎকোচ না দিলে হয়রানির শিকার হতে হয়। এখান থেকে অন্তত বারোজন কানুনগো উৎকোচ বাণিজ্যে তাদের নিজের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন বলে জানা যায়। বর্তমান কানুনগো মো. মনোয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধেও রয়েছে ওই একইরকম অভিযোগ।

সূত্র জানিয়েছেন, রেললাইনের দু’পাশে ২৫ ফুট পর্যন্ত কোন জমি ব্যবহার করার জন্য লিজ দেয়া হয় না। কিন্তু খুলনার কানুনগো অফিসের অন্তর্ভুক্ত বাজারগুলোতে এই আইনের কোন তোয়াক্কাই করা হয় না। প্রকৃতপক্ষে বেশিরভাগ মানুষ রেলওয়ের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি লিজ করে আনার পর তার দুই থেকে তিন গুণ দখল করে আছে। রেলওয়ের কানুনগো অফিসকে ম্যানেজ করেই এসব কাজ করা হচ্ছে। তবে বিগত বছরেও রেললাইনের দু’পাশে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান করা হয়। তৎকালীন সময়ে বেশ কিছু অবৈধ দখলদারের স্থাপনাও ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই কানুনগো অফিস ম্যানেজ করে ফেলেন ওই সকল অবৈধ দখলদাররা। তবে বেশ কিছু বড় মার্কেট ও স্থাপনা ভাঙতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিলেও অদৃশ্য কারণেই সেগুলো আর ভাঙা হয়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১৯-২০ অর্থবছরে খুলনাস্থ কানুনগো অফিসের অন্তর্ভুক্ত রেলওয়ের জমি ব্যবহারকারীদের নবায়ন শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। এ ব্যাপারে খুলনা রেলওয়ের কানুনগো মো. মনোয়ারুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রেললাইনের দু’পাশে অবৈধ দখলদারের তালিকা আছে। লিজ নেয়া জমি থেকে বেশি জমি দখলে আছে, তাদের নবায়ন করা হয়নি। এগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জুন ক্লোজিংয়ের পর পুনরায় রেললাইনের দু’পাশের জমি উদ্ধারে অভিযান প্রস্তুতি চলছে।

রবিবার, ১৪ জুলাই ২০১৯ , ৩০ আষাঢ় ১৪২৫, ১০ জিলকদ ১৪৪০

বারোভূতে লুটেপুটে খাচ্ছে খুলনা রেলওয়ের কোটি কোটি টাকার সম্পদ

শুভ্র শচীন, খুলনা

বারোভূতে লুটেপুটে খাচ্ছে খুলনা রেলওয়ের সম্পত্তি। সম্পত্তি দখল, চুরি, ছিনতাই, মাদকসেবন এখানকার নিত্যঘটনা। স্টেশন এলাকা থেকে রেলের ডগ স্পাইক, রেলপাটি, যাত্রীবাহী বগি থেকে ফ্যান, লাইট, জানালার কাচ, কুশন, বৈদ্যুতিক তারসহ নানা যন্ত্রাংশ চুরি হয়। ফাঁকা বগিতে ভাসমান পতিতা, মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের নিরাপদ আড্ডা জমে। তাছাড়া সংরক্ষিত এলাকায় একাধিক রহস্যজনক অগ্নিকা-ের ঘটনায় জড়িতরা বরাবরই রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। যাত্রীদের সেবায় নিয়োজিত রেলওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে যাত্রী হয়রানি, চোরাচালান, মাদকব্যবসায়ীদের সহযোগিতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। খুলনা-বেনাপোল রুটের কমিউটার ট্রেনটি চোরাচালানিদের নিরাপদ বাহনে পরিণত হয়েছে।

খুলনা রেলস্টেশনসহ আশপাশ এলাকায় রেলওয়ের প্রায় ১৯৫.৪৪ একর জমি রয়েছে। এর মধ্যে ১৫৬.৬৩ একর জমি রেলওয়ের অপারেশনাল কাজে ব্যবহৃত হয়। পরিকল্পিত নগর উন্নয়নের উদ্দেশ্যে প্রায় ৬.৫২ একর জমি কেডিএ খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কিনে নিয়েছে। কিছু জমি খুলনা সিটি করপোরেশন এবং বিআইডব্লিউটিএ’র দখলে রয়েছে। বাকি সব জমি যথেচ্ছ ব্যবহৃত হচ্ছে। নগরীর পূর্বদিকে ক্লে রোড, পশ্চিমে জব্বার সরণি, উত্তরে বড় বাজারের ওয়েস্টমেকট রোডের দক্ষিণ পাশ এবং দক্ষিণে খুলনা-যশোর রোডের চৌহদ্দির মধ্যে তিল পরিমাণ জমি ফাঁকা নেই। নিউমার্কেটের সামনে, জোড়াগেট, জংশন, খালিশপুর, দৌলতপুর, ফুলবাড়িগেটসহ বিভিন স্থানে রেললাইনের দুই পাশের বিপুল পরিমাণ জমি দখল হয়েছে অনেক আগেই। যে যেভাবে পারছে দখলে নিয়ে কাঁচা, পাকা ও সেমিপাকা স্থাপনা তৈরি করছে। গড়ে উঠছে একের পর এক বস্তি, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বড় বাজার এলাকায় ড্রেন বন্ধ করে স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। কথিত লিজ বা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি আবার কেউ কেউ কোন কোন ক্ষেত্রে ‘সিন্ডিকেট’ করে রেলওয়ের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় এসব মার্কেট ও ব্যবসাকেন্দ্র গড়ে তুলছে।

সরজমিনে দেখা যায়, খুলনা রেললাইনের দু’পাশে অবৈধ দখলদারের রাজত্ব চলছে দাপটের সঙ্গেই। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করেই বছরের পর বছর এসব দখলদার রেললাইনের দু’পাশের জমি ভোগ দখলে আছে। তবে প্রতি বছরই বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা পাচ্ছে রেলওয়ের কর্মকর্তারা। সম্প্রতি রেলওয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে কয়েক দফা এসব অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করলেও সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই তা আবারও স্ব স্ব অবস্থায় ফিরে গেছে সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছরেও মহানগরী খুলনা, রূপসা, ফুলতলা ও বাগেরহাট এলাকার রেললাইনের পার্শ্ববর্তী জমিতে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। খুলনাস্থ কানুনগো অফিস ম্যানেজ করেই দখলে রয়েছে এসব অবৈধ দখলদাররা।

জানা যায়, নগরীর নিক্সন মার্কেটের পশ্চিমে ও রেলওয়ে বয়েজ স্কুলের মধ্যবর্তী স্থানে প্রায় এক বিঘা জমির ওপর রেলওয়ে হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি বাসভবন ছিল। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত বিশাল ভবনটি ২০১৫ সালেও ব্যবহারের উপযোগী ছিল। অভিযোগ রয়েছে, ২১নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নাজির উদ্দিন নান্নু এবং স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুজ্জামান মিয়া স্বপনসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি রেলের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ভবনটি পরিত্যক্ত দেখিয়ে দখলে নেন। এরপর সেখানে মার্কেট তৈরির উদ্যোগ নেন তারা। ভান্ডারিয়ার হায়দার আলী রেলওয়ের জমি দখল করে সাবেক এক মন্ত্রীর বাবার নামে নির্মাণ করেছেন বিশাল এক মার্কেট। একইভাবে ডাকবাংলার মোড়সংলগ্ন রেলের জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মার্কেট, মশিউর রহমান মার্কেট, ডাকবাংলো সুপার মার্কেট, নিক্সন মার্কেট, দরবেশ মার্কেট, ভাসানী মার্কেট, রেলওয়ে কর্মচারী মার্কেট, শেরেবাংলা মার্কেট, নিউমার্কেটের সামনে রেলওয়ে কর্মচারী মার্কেট, সুপার মার্কেট, স্টেশন রোড মার্কেট ও নান্নু মার্কেট। রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং কাউন্সিল অফিসটি এখন ক্ষমতাসীন দলের ২১নং কার্যালয়। ২১নং ওয়ার্ড বিএনপি অফিসটিও রেলের জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে।

অপরদিকে ১৯৯৮ সালে পূর্ব রূপসা-বাগেরহাট রুটটি বন্ধ ঘোষণায় দেখাশুনার কেউ না থাকায় রেলপথটির কয়েক কোটি টাকার সম্পদ প্রতিনিয়ত চুরি হচ্ছে। প্রায় ৩২ কিলোমিটার সড়কের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তিও চলে গেছে প্রভাবশালীদের দখলে। এসব সম্পত্তি যে যার ইচ্ছামত দখল করে সেখানে নানাবিধ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। কেউ কেউ বসতভিটার সঙ্গে ঘিরে ভোগদখল করছে আবার কেউ স-মিল, রাইস মিল, হাট-বাজার, বসতবাড়ি, দোকানপাট, পানবরজ, ইট-বালুর আড়ৎসহ নানা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। একটি অসমর্থিত সূত্র জানিয়েছে, ১৯৯৭ সাল থেকে রেলওয়ের অব্যহৃত জমির লাইসেন্স প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় জমি দখল কর্মকান্ড বেড়েছে।

জানাগেছে, খুলনাঞ্চলের রেলের জমি বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় খুলনা রেলওয়ের কাচারি অফিস থেকে। এ অফিসের কর্তাব্যক্তিদের সন্তষ্ট ও বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে জমির লিজ গ্রহণ করতে হয়। তাদের চাহিদা মতো উৎকোচ না দিলে হয়রানির শিকার হতে হয়। এখান থেকে অন্তত বারোজন কানুনগো উৎকোচ বাণিজ্যে তাদের নিজের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন বলে জানা যায়। বর্তমান কানুনগো মো. মনোয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধেও রয়েছে ওই একইরকম অভিযোগ।

সূত্র জানিয়েছেন, রেললাইনের দু’পাশে ২৫ ফুট পর্যন্ত কোন জমি ব্যবহার করার জন্য লিজ দেয়া হয় না। কিন্তু খুলনার কানুনগো অফিসের অন্তর্ভুক্ত বাজারগুলোতে এই আইনের কোন তোয়াক্কাই করা হয় না। প্রকৃতপক্ষে বেশিরভাগ মানুষ রেলওয়ের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি লিজ করে আনার পর তার দুই থেকে তিন গুণ দখল করে আছে। রেলওয়ের কানুনগো অফিসকে ম্যানেজ করেই এসব কাজ করা হচ্ছে। তবে বিগত বছরেও রেললাইনের দু’পাশে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান করা হয়। তৎকালীন সময়ে বেশ কিছু অবৈধ দখলদারের স্থাপনাও ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই কানুনগো অফিস ম্যানেজ করে ফেলেন ওই সকল অবৈধ দখলদাররা। তবে বেশ কিছু বড় মার্কেট ও স্থাপনা ভাঙতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিলেও অদৃশ্য কারণেই সেগুলো আর ভাঙা হয়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১৯-২০ অর্থবছরে খুলনাস্থ কানুনগো অফিসের অন্তর্ভুক্ত রেলওয়ের জমি ব্যবহারকারীদের নবায়ন শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। এ ব্যাপারে খুলনা রেলওয়ের কানুনগো মো. মনোয়ারুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রেললাইনের দু’পাশে অবৈধ দখলদারের তালিকা আছে। লিজ নেয়া জমি থেকে বেশি জমি দখলে আছে, তাদের নবায়ন করা হয়নি। এগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জুন ক্লোজিংয়ের পর পুনরায় রেললাইনের দু’পাশের জমি উদ্ধারে অভিযান প্রস্তুতি চলছে।