হিন্দু পারিবারিক আইন পাস করে আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে হিন্দু পারিবারিক আইন পরিবর্তন প্রতিরোধ কমিটি। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সদস্যরা এ কথা জানান। কমিটির লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও কতিপয় এনজিও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হিন্দু নারীদের সম্পত্তিতে অধিকার নেই এ বাহানা তুলে হিন্দু পরিবারগুলোকে ধ্বংস করার এক গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।
সংবাদ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন হিন্দু পারিবারিক আইন পরিবর্তন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. জে, কে পাল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. নলিনী রঞ্জন বসাক এবং যুগ্ম সদস্যসচিব গৌতক কে, এদবর। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হিন্দু মহাজোটের নেতা গোবিন্দ প্রামাণিক, আইনজীবী নারায়ণ চন্দ্র দাস সাবেক ডিআইজি সঞ্চিত বৈড়ে এবং ঢাবি অধ্যাপক ধীরেন বিশ্বাস প্রমুখ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক শ্যামল কুমার রায়।
হিন্দু পারিবারিক আইন পরিবর্তন প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন হিন্দু ধর্মের ২৮টি ধর্মীয় সংগঠন। হিন্দু শাস্ত্রের বাইরে গিয়ে হিন্দু পারিবারিক তথা উত্তরাধিকার আইনের পরিবর্তন বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় মেনে নেবে না বলে সংগঠনের নেতাকর্মীরা জানান। বক্তারা বলেন, বিগত তিন দশক ধরে মহিলা পরিষদসহ কয়েকটি এনজিও ও সুশীল সমাজ হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীদের সম্পত্তির অধিকার নিয়ে অপপ্রচার করে আসছে। তাদের মতে হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীরা বাপের সম্পত্তির মালিকানা পায় না। এটা একটা ডাহা মিথ্যা প্রচার। কতিপয় এনজিও ও নারীবাদী সংগঠনের এখতিয়ার নেই হিন্দু আইন পরিবর্তনের ডাক দেয়ার। দেশের হিন্দু নারীদেরও সম্মতি নেই এতে।
জে কে পাল বলেন, হিন্দু নারীরা বিয়ের সময় বাবা-মায়ের ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে যা কিছু পায় সেটি স্ত্রীধন হিসেবে পরিচিত। এই স্ত্রীধনের ওপর ওই নারীর পূর্ণ অধিকার আছে। আর এই স্ত্রীধন স্থাবর-অস্থাবর যেকোন কিছু হতে পারে। হিন্দু নারীরা কিছুই পান না এটা ঠিক নয়। ১৯৫৬ সালে ভারতে সব ধর্ম নিয়ে একই পারিবারিক আইন করতে চেয়েছিল। মুসলিমরা তা মানবে না বলে সেটা আর হয়নি। তিনি আরও বলেন, হিন্দু নারীর সম্পত্তির অধিকার ও বিবাহ মুসলিমদের মতো দেখলে বা বিচার করলে চলবে না। মুসলিম আইনে বিবাহ একটি চুক্তি। হিন্দু আইনে বিবাহ কোন চুক্তি নয়। এটি একটি ধর্মীয় আচার।
হিন্দু মহাজোটের নেতা গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, হাইকোর্টের ফুটপাতে কত নারী দিনরাত শুয়ে থাকে। এরা কোন ধর্মের? এরা সবাই মুসলিম। এসব নারীর কি সম্পত্তি নেই? অবশ্যই আছে। কিন্তু এরা ভোগদখল করতে পারে না। সম্পত্তির অধিকার থাকা সত্ত্বেও এরা আজ ফুটপাতে। বাংলাদেশে কয়জন হিন্দু নারীকে ফুটপাতে এভাবে ঘুমিয়ে থাকতে দেখেন। নারীরা সুরক্ষা পায়। তিনি বলেন, মুসলিমদের পারিবারিক আইন বানরের পিঠাভাগের মতো। আর এসব করে আমরা আইনজীবীরা নিজেদের রোজগার বাড়িয়ে চলছি। আদালতে মুসলিমরা প্রায়ই বলে সম্পত্তি ঠিকমতো বণ্টন হয়নি। এই অজুহাতে মুসলিম পরিবারগুলোতে ভাইয়ে বোনে বছরের পর বছর মামলা চলে। তার বিপরীতে কয়টি হিন্দু পরিবারে ভাইয়ে বোনে মামলা হয়?
আইনজীবী নারায়ণ চন্দ্র দাস বলেন, কথায় কথায় ভারতের উদাহরণ দেয়া হয়। ভারতে গরু মন্ত্রণালয় আছে। এ দেশে কি তা আছে? ভারতে হিন্দু আইন চলেছে তাদের মতো। আর এদেশে হিন্দু আইন চলেছে অন্যভাবে। সেটা বহু আগে থেকেই। তাই একে পরিবর্তন করার কোন সুযোগ নেই।
সাবেক ডিআইজি সঞ্চিত বৈড়ে বলেন, একসময় হিন্দুদের মন্দির নিয়ে সরকার একটা আইন করতে গিয়েছিল। তাতে মন্দিরের পুরোহিতকে বানানো হয়েছিল বেতনভুক কর্মচারী আর মাতবর হলো রাজনৈতিক নেতারা। আন্দোলন প্রতিবাদের মাধ্যমে এসব কর্মকান্ড বাতিল করা হয়েছিল। আশা করি, এসব কর্মকান্ড আন্দোলনের মাধ্যমে বাতিল করে দেয়া হবে।
ঢাবি অধ্যাপক ধীরেন বিশ্বাস বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রাণের দাবি ছিল শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল করা। স্বাধীন দেশে ভারত তো আর শত্রু নয়, তাই আইনের নাম বদলে রাখলেন অর্পিত সম্পত্তি। সেটা বাস্তবায়ন না করে এই আইনটা না চাইতেই কেন হিন্দুদের দিচ্ছেন তা বোধগম্য নয়। এ সময় উপস্থিত হিন্দু নারীরা এই আইন চাই না বলে সেøাগান দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরও বলেন, হিন্দু পারিবারিক আইন যেকোন পরিবর্তন হবে শাস্ত্র পরিপন্থী এবং সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার শামিল, যা হিন্দু সম্প্রদায় কোনভাবেই মেনে নেবে না। তাই ভবিষ্যতে হিন্দু আইন নিয়ে যেকোন প্রকার ষড়যন্ত্র সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করা হবে।
রবিবার, ১৪ জুলাই ২০১৯ , ৩০ আষাঢ় ১৪২৫, ১০ জিলকদ ১৪৪০
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
হিন্দু পারিবারিক আইন পাস করে আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে হিন্দু পারিবারিক আইন পরিবর্তন প্রতিরোধ কমিটি। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সদস্যরা এ কথা জানান। কমিটির লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও কতিপয় এনজিও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হিন্দু নারীদের সম্পত্তিতে অধিকার নেই এ বাহানা তুলে হিন্দু পরিবারগুলোকে ধ্বংস করার এক গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।
সংবাদ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন হিন্দু পারিবারিক আইন পরিবর্তন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. জে, কে পাল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. নলিনী রঞ্জন বসাক এবং যুগ্ম সদস্যসচিব গৌতক কে, এদবর। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হিন্দু মহাজোটের নেতা গোবিন্দ প্রামাণিক, আইনজীবী নারায়ণ চন্দ্র দাস সাবেক ডিআইজি সঞ্চিত বৈড়ে এবং ঢাবি অধ্যাপক ধীরেন বিশ্বাস প্রমুখ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক শ্যামল কুমার রায়।
হিন্দু পারিবারিক আইন পরিবর্তন প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন হিন্দু ধর্মের ২৮টি ধর্মীয় সংগঠন। হিন্দু শাস্ত্রের বাইরে গিয়ে হিন্দু পারিবারিক তথা উত্তরাধিকার আইনের পরিবর্তন বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় মেনে নেবে না বলে সংগঠনের নেতাকর্মীরা জানান। বক্তারা বলেন, বিগত তিন দশক ধরে মহিলা পরিষদসহ কয়েকটি এনজিও ও সুশীল সমাজ হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীদের সম্পত্তির অধিকার নিয়ে অপপ্রচার করে আসছে। তাদের মতে হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীরা বাপের সম্পত্তির মালিকানা পায় না। এটা একটা ডাহা মিথ্যা প্রচার। কতিপয় এনজিও ও নারীবাদী সংগঠনের এখতিয়ার নেই হিন্দু আইন পরিবর্তনের ডাক দেয়ার। দেশের হিন্দু নারীদেরও সম্মতি নেই এতে।
জে কে পাল বলেন, হিন্দু নারীরা বিয়ের সময় বাবা-মায়ের ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে যা কিছু পায় সেটি স্ত্রীধন হিসেবে পরিচিত। এই স্ত্রীধনের ওপর ওই নারীর পূর্ণ অধিকার আছে। আর এই স্ত্রীধন স্থাবর-অস্থাবর যেকোন কিছু হতে পারে। হিন্দু নারীরা কিছুই পান না এটা ঠিক নয়। ১৯৫৬ সালে ভারতে সব ধর্ম নিয়ে একই পারিবারিক আইন করতে চেয়েছিল। মুসলিমরা তা মানবে না বলে সেটা আর হয়নি। তিনি আরও বলেন, হিন্দু নারীর সম্পত্তির অধিকার ও বিবাহ মুসলিমদের মতো দেখলে বা বিচার করলে চলবে না। মুসলিম আইনে বিবাহ একটি চুক্তি। হিন্দু আইনে বিবাহ কোন চুক্তি নয়। এটি একটি ধর্মীয় আচার।
হিন্দু মহাজোটের নেতা গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, হাইকোর্টের ফুটপাতে কত নারী দিনরাত শুয়ে থাকে। এরা কোন ধর্মের? এরা সবাই মুসলিম। এসব নারীর কি সম্পত্তি নেই? অবশ্যই আছে। কিন্তু এরা ভোগদখল করতে পারে না। সম্পত্তির অধিকার থাকা সত্ত্বেও এরা আজ ফুটপাতে। বাংলাদেশে কয়জন হিন্দু নারীকে ফুটপাতে এভাবে ঘুমিয়ে থাকতে দেখেন। নারীরা সুরক্ষা পায়। তিনি বলেন, মুসলিমদের পারিবারিক আইন বানরের পিঠাভাগের মতো। আর এসব করে আমরা আইনজীবীরা নিজেদের রোজগার বাড়িয়ে চলছি। আদালতে মুসলিমরা প্রায়ই বলে সম্পত্তি ঠিকমতো বণ্টন হয়নি। এই অজুহাতে মুসলিম পরিবারগুলোতে ভাইয়ে বোনে বছরের পর বছর মামলা চলে। তার বিপরীতে কয়টি হিন্দু পরিবারে ভাইয়ে বোনে মামলা হয়?
আইনজীবী নারায়ণ চন্দ্র দাস বলেন, কথায় কথায় ভারতের উদাহরণ দেয়া হয়। ভারতে গরু মন্ত্রণালয় আছে। এ দেশে কি তা আছে? ভারতে হিন্দু আইন চলেছে তাদের মতো। আর এদেশে হিন্দু আইন চলেছে অন্যভাবে। সেটা বহু আগে থেকেই। তাই একে পরিবর্তন করার কোন সুযোগ নেই।
সাবেক ডিআইজি সঞ্চিত বৈড়ে বলেন, একসময় হিন্দুদের মন্দির নিয়ে সরকার একটা আইন করতে গিয়েছিল। তাতে মন্দিরের পুরোহিতকে বানানো হয়েছিল বেতনভুক কর্মচারী আর মাতবর হলো রাজনৈতিক নেতারা। আন্দোলন প্রতিবাদের মাধ্যমে এসব কর্মকান্ড বাতিল করা হয়েছিল। আশা করি, এসব কর্মকান্ড আন্দোলনের মাধ্যমে বাতিল করে দেয়া হবে।
ঢাবি অধ্যাপক ধীরেন বিশ্বাস বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রাণের দাবি ছিল শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল করা। স্বাধীন দেশে ভারত তো আর শত্রু নয়, তাই আইনের নাম বদলে রাখলেন অর্পিত সম্পত্তি। সেটা বাস্তবায়ন না করে এই আইনটা না চাইতেই কেন হিন্দুদের দিচ্ছেন তা বোধগম্য নয়। এ সময় উপস্থিত হিন্দু নারীরা এই আইন চাই না বলে সেøাগান দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরও বলেন, হিন্দু পারিবারিক আইন যেকোন পরিবর্তন হবে শাস্ত্র পরিপন্থী এবং সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার শামিল, যা হিন্দু সম্প্রদায় কোনভাবেই মেনে নেবে না। তাই ভবিষ্যতে হিন্দু আইন নিয়ে যেকোন প্রকার ষড়যন্ত্র সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করা হবে।