ইটভাটায় বিবর্ণ বাংলাদেশ

স্কুলসংলগ্ন ৮ ইটভাটা!

মো. সাদেকুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দু-আড়াইশো মিটার দূরত্বের মধ্যেই গড়ে উঠেছে ইটভাটা। এছাড়াও পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াও চলছে জেলায় আরও অনেক ইটভাটা। তাদের বিরুদ্ধে এনফোর্সম্যান্ট কার্যক্রম চালানো হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ কর্মকর্তারা। পরিবেশের ছাড়পত্র ও নবায়ন নেই এমন আরো কয়েকটি ইটভাটার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর। জানা গেছে- ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোট ১৭০টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৫০টি ইটভাটা চলছে অনিয়মে। ৩৫টির নবায়ন নেই, আর বাকি ১০-১৫টি চলছে ছাড়পত্র ছাড়া। এসব ইটভাটার মধ্যে সরাইলের শাহজাদাপুরের নিউ সমতা ব্রিকস, রাজামাড়িয়াকান্দির মেসার্স সূবর্ণ ব্রিকস, বিজয়নগরের টানমনিপুরের মেসার্স রতন ব্রিকস, সদর উপজেলার মেহেদী আলম ব্রিকস, গোকর্ণঘাটের রনি ব্রিকস ও মেসার্স আরব ব্রিকসের বিরুদ্ধে বিচার আদালত করার উদ্যোগ নিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর। ছাড়পত্র ও নবায়ন ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে চলছে এই ইটভাটাগুলো।

গোকর্ণঘাটের আরব ব্রিকস ২০০৩ সালে পরিবেশের চট্টগ্রাম অঞ্চল কার্যালয় থেকে ছাড়পত্র গ্রহণ করে। এরপর ২০১৫ সাল পর্যন্ত ছাড়পত্র নবায়ন করলেও ২০১৬ সাল থেকে এই ইটভাটাটি কোন ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে। তাছাড়া ইটভাটার ৬শ মিটার দূরত্বের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৫শ’ মিটারের মধ্যে পৌরসভার সীমানা ও আবাসিক এলাকা রয়েছে। মোট কথা নিষিদ্ধ এলাকাতে চলছে ইটভাটাটি। একই স্থানে থাকা রনি ব্রিকসও চলছে কোন ছাড়পত্র ছাড়াই।

পরিবেশ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, এতদিন আদালতে রীটের মাধ্যমে চলছিল এই ইটভাটাটি। এটি ছাড়াও আরও ২টি ইটভাটা রয়েছে যারা আদালতে রিটের মাধ্যমে এতদিন চালিয়েছে। আদালত থেকে তাদের রিট খারিজ হয়ে যাওয়ায় পরিবেশ অধিদফতর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে।

এদিকে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে জেলার বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গা ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। বিজয়নগর উপজেলার ভূঁইয়া ব্রিকস নামের ইটভাটাটি গড়ে উঠেছে রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫শ’ মিটার দূরত্বের মধ্যে। হাজী ব্রিকসের অবস্থান চান্দুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৬শ’ মিটার দূরত্বে। বুধন্তী আহলাদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৬শ’ মিটার দূরত্বে চান্দুরার টিএন্ডসি ব্রিকসের অবস্থান। সরাইলের রাজামারিয়াকান্দির নিউ মায়ের দোয়া ব্রিকস বৈশামুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রায় ৬শ মিটার দূরত্বে গড়ে উঠেছে। শাহবাজপুর ইউনিয়নের মদিনা ব্রিকস রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫শ মিটার দূরত্বে রয়েছে। সদর উপজেলার বাকাইলের পবন ব্রিকস বাকাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাত্র ৩শ মিটার দূরত্বে।

আখাউড়ার মোগড়ায় তিতাস ব্রিকস রেললাইন থেকে দেড়শ এবং মোগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয থেকে ৬শ মিটার দূরত্বে গড়ে উঠেছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯)-এর ৮নং ধারার ৩(ঙ) উপধারাতে বিশেষ কোন স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা অনুরূপ কোন স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না বলে উল্লেখ রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিবেশ অধিদফতরের রিসার্চ অফিসার মো: রুনায়েত আমিন রেজা বলেন, এসব ইটভাটাকে আমরা অবস্থান পরিবর্তনের জন্যে দুই দফা নোটিশ করেছি।

এরপর আমরা চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেব। আর যেসব ইটভাটা নবায়ন ও ছাড়পত্র ছাড়া অবৈধভাবে চলছে সেসব ইটভাটার বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট মামলা কার্যক্রম গ্রহণের জন্যে আমরা চট্টগ্রাম অঞ্চল কার্যালয়ে পাঠিয়েছি।

৩ ফসলিতে ২৮ ভাটা!

মামুন রেজা, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া)

কুষ্টিয়া দৌলতপুরে তিন ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ইটভাটা। উপজেলা প্রশাসনের চারপাশে এসব ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। তাছাড়া, এসকল ইট ভাটায় সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে কাঠ পোড়ানো হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে উপজেলার দৌলতপুর হাসপাতালের পাশে ইয়াছিন আলী ও আবদুল্লাহ আল মামুন, জহুরুল আলম, দৌলতপুর খা পাড়া এলাকায় কালু খান, দৌলতপুর সোনাইকান্দিতে সরকারি খাস জমিতে নজরুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম ওলি, রিফাইতপুর গলাকাটি মোড়ে নজরুল ইসলাম, আবদুস সালাম, ঝুমুর আলী, দৌলতপুর কলেজ পাড়ায় হান্নান খান, চকদৌলতপুর এলাকায় রমজান আলীর দুটি, স্বরুপপুর গ্রামে আবদুস সাত্তার, বজলুর রহমান কটা, বাজুডাঙ্গা এলাকায় নুরুল ইসলাম, মানিকদিয়াড় সাদিপুরে আবু বক্কর সিদ্দিক, মামুন অর রশিদ ও হুমায়নের দুটি, আনারুল ইসলাম ও ইদবার হোসেন, ডাংমড়কা এলাকায় আবুল কালাম আজাদ, ফজলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, শাজাহান সিরাজ, জয়রামপুরে মতিউর রহমান, চামনা গ্রামে জাহিদুল ইসলাম এন্টু বিশ্বাস, খলিশাকুন্ডিতে কামাল হোসেন, বড়গাংদিয়ায় হাবলু মোল্লার ইটভাটায় পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিন ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ এসকল ইটভাটা। ফলে, আশংকাজনক হারে আবাদি জমি কমে যাওয়ায় খাদ্যশষ্য উৎপাদন কমে গেছে। এ সকল ইটভাটায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর ফলে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এসকল ইটভাটার মালিকরা সমিতি গঠন করে প্রতিটি ইটের প্রকৃত দৈর্ঘ্য-প্রস্থ এক থেকে দেড় ইঞ্চি কম করে ইট তৈরী করায় ইট ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ব্যাপারে ইটভাটা মালিকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তারা জানান, সবকিছু ম্যানেজ করে ব্যবসা করছি। এদিকে নতুন করে কৃষি জমিতে পুকুর খনন না করার নির্দেশনা থাকলেও প্রতিদিন শ্যালো মেশিন চালিত ট্রলি এবং রাতের আঁধারে বিভিন্ন এলাকা থেকে ড্রাম ট্রাকে করে মাটি নিয়ে আসা হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, নতুন করে কৃষি জমিতে পুকুর খনন না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যদি কেউ এ নির্দেশ না মানেন তাকে ছাড় দেয়া হবেনা।

ইটের সাইজ ছোট করার বিষয়টি ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। সম্প্রতি অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের প্রতিবাদে উপজেলা কৃষক সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে একটি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। এতে বক্তব্য রাখেন কৃষক নেতা বিষু নারায়ন চৌধুরী, মোহাম্মদ ইউসুফ, আশরাফ উদ্দীন, উপজেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম, জয়নাল আবেদিনসহ বিভিন্ন এলাকার নেতৃবৃন্দ। এ বিষয়ে হাইদগাও এলাকার আলী আকবর বলেন, আমার জমি থেকে জোর পূবর্ক এসকেভেটর দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে আমি প্রতিবাদ করার চেষ্ঠা করলে এমপির ভাই নাকি বালু তোলার জন্য বলেছে বাচা নামের এক ব্যক্তি ফোন দিয়ে আমাকে জানান, এ কারনেও অনেকে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। ইজারাদার মনছুর আলম পাপপী বলেন, আমি ইজারা পেলেও স্থানীয় কিছু লোকজন যারা দীর্ঘদিন ধরে বালিগুলো নিয়ে ব্যবসা করে আসছেন তাদেরকে কিছু লাভ করে দিয়ে দিয়েছেন, সেখানে স্থানীয় এমপির আত্মীয় স্বজন ও দলীয় লোকজনও আছে। এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ শামশুল হক চৌধুরীর ভাই মুজিবুল হক চৌধুরী নবাব বলেন, যারা নাম বিক্রি করছে তারা প্রশাসনিক সুযোগ নেয়ার জন্য করছে, এটার সঙ্গে আমার কোন আত্মীয় স্বজন জড়িত না, তবে শ্রীমাই খাল থেকে বালু নিয়ে পটিয়ার কয়েকটি সড়ক নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান বলেন, ইজারাদার যদি কোন ধরণের শর্ত ভঙ্গ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে, এলাকাবাসীও তাদের ফসলি জমি থেকে এসকেভেটর দিয়ে বালু উত্তোলন করে নেয়ার বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন, বিষয়টি আমি গুরুত্ব্সহকারে নিয়ে দেখছেন বলে তিনি জানান।

বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২০ , ২৬ পৌষ ১৪২৬, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

ইটভাটায় বিবর্ণ বাংলাদেশ

image

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : স্কুলের অদূরে গড়ে উঠা ইটভাটা -সংবাদ

স্কুলসংলগ্ন ৮ ইটভাটা!

মো. সাদেকুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দু-আড়াইশো মিটার দূরত্বের মধ্যেই গড়ে উঠেছে ইটভাটা। এছাড়াও পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াও চলছে জেলায় আরও অনেক ইটভাটা। তাদের বিরুদ্ধে এনফোর্সম্যান্ট কার্যক্রম চালানো হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ কর্মকর্তারা। পরিবেশের ছাড়পত্র ও নবায়ন নেই এমন আরো কয়েকটি ইটভাটার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর। জানা গেছে- ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোট ১৭০টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৫০টি ইটভাটা চলছে অনিয়মে। ৩৫টির নবায়ন নেই, আর বাকি ১০-১৫টি চলছে ছাড়পত্র ছাড়া। এসব ইটভাটার মধ্যে সরাইলের শাহজাদাপুরের নিউ সমতা ব্রিকস, রাজামাড়িয়াকান্দির মেসার্স সূবর্ণ ব্রিকস, বিজয়নগরের টানমনিপুরের মেসার্স রতন ব্রিকস, সদর উপজেলার মেহেদী আলম ব্রিকস, গোকর্ণঘাটের রনি ব্রিকস ও মেসার্স আরব ব্রিকসের বিরুদ্ধে বিচার আদালত করার উদ্যোগ নিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর। ছাড়পত্র ও নবায়ন ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে চলছে এই ইটভাটাগুলো।

গোকর্ণঘাটের আরব ব্রিকস ২০০৩ সালে পরিবেশের চট্টগ্রাম অঞ্চল কার্যালয় থেকে ছাড়পত্র গ্রহণ করে। এরপর ২০১৫ সাল পর্যন্ত ছাড়পত্র নবায়ন করলেও ২০১৬ সাল থেকে এই ইটভাটাটি কোন ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে। তাছাড়া ইটভাটার ৬শ মিটার দূরত্বের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৫শ’ মিটারের মধ্যে পৌরসভার সীমানা ও আবাসিক এলাকা রয়েছে। মোট কথা নিষিদ্ধ এলাকাতে চলছে ইটভাটাটি। একই স্থানে থাকা রনি ব্রিকসও চলছে কোন ছাড়পত্র ছাড়াই।

পরিবেশ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, এতদিন আদালতে রীটের মাধ্যমে চলছিল এই ইটভাটাটি। এটি ছাড়াও আরও ২টি ইটভাটা রয়েছে যারা আদালতে রিটের মাধ্যমে এতদিন চালিয়েছে। আদালত থেকে তাদের রিট খারিজ হয়ে যাওয়ায় পরিবেশ অধিদফতর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে।

এদিকে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে জেলার বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গা ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। বিজয়নগর উপজেলার ভূঁইয়া ব্রিকস নামের ইটভাটাটি গড়ে উঠেছে রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫শ’ মিটার দূরত্বের মধ্যে। হাজী ব্রিকসের অবস্থান চান্দুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৬শ’ মিটার দূরত্বে। বুধন্তী আহলাদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৬শ’ মিটার দূরত্বে চান্দুরার টিএন্ডসি ব্রিকসের অবস্থান। সরাইলের রাজামারিয়াকান্দির নিউ মায়ের দোয়া ব্রিকস বৈশামুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রায় ৬শ মিটার দূরত্বে গড়ে উঠেছে। শাহবাজপুর ইউনিয়নের মদিনা ব্রিকস রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫শ মিটার দূরত্বে রয়েছে। সদর উপজেলার বাকাইলের পবন ব্রিকস বাকাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাত্র ৩শ মিটার দূরত্বে।

আখাউড়ার মোগড়ায় তিতাস ব্রিকস রেললাইন থেকে দেড়শ এবং মোগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয থেকে ৬শ মিটার দূরত্বে গড়ে উঠেছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯)-এর ৮নং ধারার ৩(ঙ) উপধারাতে বিশেষ কোন স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা অনুরূপ কোন স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না বলে উল্লেখ রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিবেশ অধিদফতরের রিসার্চ অফিসার মো: রুনায়েত আমিন রেজা বলেন, এসব ইটভাটাকে আমরা অবস্থান পরিবর্তনের জন্যে দুই দফা নোটিশ করেছি।

এরপর আমরা চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেব। আর যেসব ইটভাটা নবায়ন ও ছাড়পত্র ছাড়া অবৈধভাবে চলছে সেসব ইটভাটার বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট মামলা কার্যক্রম গ্রহণের জন্যে আমরা চট্টগ্রাম অঞ্চল কার্যালয়ে পাঠিয়েছি।

৩ ফসলিতে ২৮ ভাটা!

মামুন রেজা, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া)

কুষ্টিয়া দৌলতপুরে তিন ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ইটভাটা। উপজেলা প্রশাসনের চারপাশে এসব ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। তাছাড়া, এসকল ইট ভাটায় সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে কাঠ পোড়ানো হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে উপজেলার দৌলতপুর হাসপাতালের পাশে ইয়াছিন আলী ও আবদুল্লাহ আল মামুন, জহুরুল আলম, দৌলতপুর খা পাড়া এলাকায় কালু খান, দৌলতপুর সোনাইকান্দিতে সরকারি খাস জমিতে নজরুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম ওলি, রিফাইতপুর গলাকাটি মোড়ে নজরুল ইসলাম, আবদুস সালাম, ঝুমুর আলী, দৌলতপুর কলেজ পাড়ায় হান্নান খান, চকদৌলতপুর এলাকায় রমজান আলীর দুটি, স্বরুপপুর গ্রামে আবদুস সাত্তার, বজলুর রহমান কটা, বাজুডাঙ্গা এলাকায় নুরুল ইসলাম, মানিকদিয়াড় সাদিপুরে আবু বক্কর সিদ্দিক, মামুন অর রশিদ ও হুমায়নের দুটি, আনারুল ইসলাম ও ইদবার হোসেন, ডাংমড়কা এলাকায় আবুল কালাম আজাদ, ফজলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, শাজাহান সিরাজ, জয়রামপুরে মতিউর রহমান, চামনা গ্রামে জাহিদুল ইসলাম এন্টু বিশ্বাস, খলিশাকুন্ডিতে কামাল হোসেন, বড়গাংদিয়ায় হাবলু মোল্লার ইটভাটায় পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিন ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ এসকল ইটভাটা। ফলে, আশংকাজনক হারে আবাদি জমি কমে যাওয়ায় খাদ্যশষ্য উৎপাদন কমে গেছে। এ সকল ইটভাটায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর ফলে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এসকল ইটভাটার মালিকরা সমিতি গঠন করে প্রতিটি ইটের প্রকৃত দৈর্ঘ্য-প্রস্থ এক থেকে দেড় ইঞ্চি কম করে ইট তৈরী করায় ইট ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ব্যাপারে ইটভাটা মালিকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তারা জানান, সবকিছু ম্যানেজ করে ব্যবসা করছি। এদিকে নতুন করে কৃষি জমিতে পুকুর খনন না করার নির্দেশনা থাকলেও প্রতিদিন শ্যালো মেশিন চালিত ট্রলি এবং রাতের আঁধারে বিভিন্ন এলাকা থেকে ড্রাম ট্রাকে করে মাটি নিয়ে আসা হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, নতুন করে কৃষি জমিতে পুকুর খনন না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যদি কেউ এ নির্দেশ না মানেন তাকে ছাড় দেয়া হবেনা।

ইটের সাইজ ছোট করার বিষয়টি ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। সম্প্রতি অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের প্রতিবাদে উপজেলা কৃষক সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে একটি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। এতে বক্তব্য রাখেন কৃষক নেতা বিষু নারায়ন চৌধুরী, মোহাম্মদ ইউসুফ, আশরাফ উদ্দীন, উপজেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম, জয়নাল আবেদিনসহ বিভিন্ন এলাকার নেতৃবৃন্দ। এ বিষয়ে হাইদগাও এলাকার আলী আকবর বলেন, আমার জমি থেকে জোর পূবর্ক এসকেভেটর দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে আমি প্রতিবাদ করার চেষ্ঠা করলে এমপির ভাই নাকি বালু তোলার জন্য বলেছে বাচা নামের এক ব্যক্তি ফোন দিয়ে আমাকে জানান, এ কারনেও অনেকে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। ইজারাদার মনছুর আলম পাপপী বলেন, আমি ইজারা পেলেও স্থানীয় কিছু লোকজন যারা দীর্ঘদিন ধরে বালিগুলো নিয়ে ব্যবসা করে আসছেন তাদেরকে কিছু লাভ করে দিয়ে দিয়েছেন, সেখানে স্থানীয় এমপির আত্মীয় স্বজন ও দলীয় লোকজনও আছে। এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ শামশুল হক চৌধুরীর ভাই মুজিবুল হক চৌধুরী নবাব বলেন, যারা নাম বিক্রি করছে তারা প্রশাসনিক সুযোগ নেয়ার জন্য করছে, এটার সঙ্গে আমার কোন আত্মীয় স্বজন জড়িত না, তবে শ্রীমাই খাল থেকে বালু নিয়ে পটিয়ার কয়েকটি সড়ক নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান বলেন, ইজারাদার যদি কোন ধরণের শর্ত ভঙ্গ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে, এলাকাবাসীও তাদের ফসলি জমি থেকে এসকেভেটর দিয়ে বালু উত্তোলন করে নেয়ার বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন, বিষয়টি আমি গুরুত্ব্সহকারে নিয়ে দেখছেন বলে তিনি জানান।