পুঁজিবাজারে ব্যাপক পতন

এক দিনে সূচক কমলো ৮৯ পয়েন্ট, ফিরে গেছে ৫ বছর আগের অবস্থানে, সাত দিনে কমেছে ৩৩৪ পয়েন্ট

অর্থনীতির আকার ও আয়তন যখন বড় হচ্ছে তখন দেশের পুঁজিবাজার দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। বাজারের সূচক কমে ফিরে যাচ্ছে শুরুর অবস্থানে। গত সপ্তাহের ধারাবাহিক পতনের পর চলতি সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন গতকালও বড় ধরনের পতন হয়েছে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ৮৯ পয়েন্ট কমে গেছে। এতে বাজারটি প্রায় পাঁচ বছর আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। ডিএসই প্রধান সূচক এখন শুরুর অবস্থান থেকে মাত্র ৬৮ পয়েন্ট দূরে রয়েছে। একই অবস্থা চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও। এছাড়া টাকার অঙ্কে লেনদেনও খুব কম। পুঁজিবাজারে লেনদেন আটকে আছে ২০০ কোটি টাকার ঘরে। গতকালও বাজারে লেনদেন হয়েছে মাত্র ২৮৬ কোটি টাকা। বাজারের এই অবস্থায় ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বাজার থেকে পুঁজি নিয়ে বের হওয়ার পথও বন্ধ হয়ে গেছে। কেননা এখন বাজার থেকে বের হতে চাইলে বিনিয়োগকৃত পুঁজির অর্ধেকও ফিরে পাবেন না তারা। সুতরাং, ব্যাপক লোকসানের কথা চিন্তা করে অর্থের প্রয়োজন হলেও এখন আর বাজার থেকে বের হতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।

বাজারের এই খারাপ পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ বলেন, পুঁজিবাজারে অনেক দিন ধরেই আস্থার সংকট চলছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। এই ?মুহূর্তে পুঁজিবাজারেকে তুলে ধরতে হলে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। আর সেজন্য তারল্য দরকার। আরেক বাজার বিশ্লেষক সার্প সিকিউরিটিজের পরিচালক গোলাম ওয়াদুদ বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, বাজারে অনেক ভালো শেয়ার এখন অযৌক্তিক কম দামে লেনদেন হচ্ছে। সে সব শেয়ার হাতে থাকলে বিক্রি না করাই ভাল। পুঁজিবাজার সাপোর্ট পাচ্ছে না তাই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। বাজার তারল্য সংকট কাটাতে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের যে দাবি উঠেছে সেটার ব্যবস্থা দ্রুত করতে হবে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, পুঁজিবাজারে এমন বড় দরপতন গত সপ্তাহজুড়েই ছিল। ফলে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচকের ২৬১ পয়েন্ট পতন হয়। তবে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার সূচকের সামান্য উত্থান হয় কিন্তু গতকাল আবারও বড় পতন হলো। এমন ধারাবাহিক বড় পতনের কবলে ডিএসইর বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক বেশ আগেই শুরুর অবস্থান থেকেও নিচে নেমে গেছে। সোমবার ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিক পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচকটিও শুরুর অবস্থানের নিচে চলে গেছে। প্রধান মূল্যসূচক এমন জায়গায় অবস্থান করছে, এটিও যে কোন সময় শুরুর অবস্থানের নিচে চলে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শেয়ারবাজারের এমন ভয়াবহ পতনের কবলে পড়ে প্রতিনিয়ত পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। দিন যত যাচ্ছে তাদের বোবাকান্না ততই বেড়ে চলছে। পুঁজিহারা এসব বিনিয়োগকারীরা কোন দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না। অনেকে শেয়ারবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আবার যারা এখনও শেয়ারবাজারে আছেন তাদের অনেকেই বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজছেন। আনোয়ার হোসেন নামের একজন বিনিয়োগকারী বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে এসে অনেকটাই নিঃস্ব হয়ে গেছি। বাজার থেকে বেরিয়ে যাব তারও কোন পথ পাচ্ছি না। সবাই ২০১০ সালের ধসের কথা বলেন। কিন্তু এখন শেয়ারবাজারের যে অবস্থা তা ২০১০ সালের থেকেও খারাপ। এ বাজারে যত অপেক্ষা করা হচ্ছে লোকসান ততই বাড়ছে। আলমগীর নামের আরও এক বিনিয়োগকারী বলেন, বাজারের দায়িত্বশীলরা কেউ নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। সবাই নিজের পকেট ভরার চেষ্টা করছেন। ক্ষতি যা হওয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হচ্ছে। আমার প্রতিদিন পুঁজি হারিয়ে নিস্ব হচ্ছি। বিনিয়োগ করা পুঁজি কীভাবে রক্ষা করব তার কোন উপায় পাচ্ছি না।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সোমবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এদিন ডিএসইতে মাত্র ২১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩১৩টির। আর দুটি প্রতিষ্ঠানের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১১ শতাংশ কমে ৪ হাজার ১২৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের দিন এ সূচকটি ১৫ পয়েন্ট বেড়েছিল। অবশ্য তার আগের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমে ২৬১ পয়েন্ট। এতে শেষ সাত কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৩৪ পয়েন্ট কমলো। এমন পতনের কবলে পড়ে ডিএসইএক্স ২০১৫ সালের ৭ মে’র পর সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে গেছে। সেই সঙ্গে সূচকটি প্রায় শুরুর কাছাকাছি চলে এসেছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক হিসেবে ডিএসইএক্স ৪ হাজার ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে যাত্রা শুরু করে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি। এ হিসাবে শুরুর অবস্থান থেকে সূচকটি এখন মাত্র ৬৮ পয়েন্ট বেশি আছে।

প্রধান মূল্যসূচকের থেকেও করুণ দশা বিরাজ করছে ডিএসইর অপর সূচকগুলোর। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক ডিএসই-৩০ ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি চালু হয়। সে সময় এ সূচকটি ছিল ১ হাজার ৪৬০ পয়েন্টে। ধারাবাহিক দরপতনের কারণে এ সূচকটি এখন ১ হাজার ৩৮৭ পয়েন্টে নেমে গেছে। ডিএসইর আর একটি সূচক ‘ডিএসই শরিয়াহ্’। ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি এ সূচকটি যাত্রা শুরু করে। শুরুতে এ সূচকটি ছিল ৯৪১ পয়েন্টে। বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে সূচকটি ২০ পয়েন্ট কমে ৯২৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে বৃহৎ বা বড় মূলধনের কোম্পানির জন্য চলতি বছর ‘সিএনআই-ডিএসই সিলেক্ট ইনডেক্স (সিডিএসইটি)’ নামে নতুন সূচক চালু করেছে ডিএসই। বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি থেকে অফিশিয়ালি ডিএসইর ওয়েবসাইটে সূচকটি উন্মুক্ত করা হয়। ৪০টি কোম্পানি নিয়ে শুরু হওয়া সূচকটির ভিত্তি ভ্যালু ধরা হয় ১০০০ পয়েন্ট। তবে এখন সূচকটি ৮৩৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে।

সূচকের করুণ দশার মধ্যে দেখা দিয়েছে তারল্য সংকটও। গত বছরের ৫ ডিসেম্বরের পর ডিএসইর লেনদেন আর লেনদেন ৪শ’ কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করতে পারেনি। বাজারটিতে লেনদেনের পরিমাণ ২শ’ থেকে ৩শ’ কোটি টাকার ঘরে আটকে আছে। সোমবার লেনদেন হয়েছে ২৮৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৬০ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দুরবস্থায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজারটির সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৪৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৫৬৩ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ২৫২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৩০টির, কমেছে ২০৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির দাম।

মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২০ , ৩০ পৌষ ১৪২৬, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

পুঁজিবাজারে ব্যাপক পতন

এক দিনে সূচক কমলো ৮৯ পয়েন্ট, ফিরে গেছে ৫ বছর আগের অবস্থানে, সাত দিনে কমেছে ৩৩৪ পয়েন্ট

রোকন মাহমুদ

অর্থনীতির আকার ও আয়তন যখন বড় হচ্ছে তখন দেশের পুঁজিবাজার দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। বাজারের সূচক কমে ফিরে যাচ্ছে শুরুর অবস্থানে। গত সপ্তাহের ধারাবাহিক পতনের পর চলতি সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন গতকালও বড় ধরনের পতন হয়েছে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ৮৯ পয়েন্ট কমে গেছে। এতে বাজারটি প্রায় পাঁচ বছর আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। ডিএসই প্রধান সূচক এখন শুরুর অবস্থান থেকে মাত্র ৬৮ পয়েন্ট দূরে রয়েছে। একই অবস্থা চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও। এছাড়া টাকার অঙ্কে লেনদেনও খুব কম। পুঁজিবাজারে লেনদেন আটকে আছে ২০০ কোটি টাকার ঘরে। গতকালও বাজারে লেনদেন হয়েছে মাত্র ২৮৬ কোটি টাকা। বাজারের এই অবস্থায় ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বাজার থেকে পুঁজি নিয়ে বের হওয়ার পথও বন্ধ হয়ে গেছে। কেননা এখন বাজার থেকে বের হতে চাইলে বিনিয়োগকৃত পুঁজির অর্ধেকও ফিরে পাবেন না তারা। সুতরাং, ব্যাপক লোকসানের কথা চিন্তা করে অর্থের প্রয়োজন হলেও এখন আর বাজার থেকে বের হতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।

বাজারের এই খারাপ পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ বলেন, পুঁজিবাজারে অনেক দিন ধরেই আস্থার সংকট চলছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। এই ?মুহূর্তে পুঁজিবাজারেকে তুলে ধরতে হলে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। আর সেজন্য তারল্য দরকার। আরেক বাজার বিশ্লেষক সার্প সিকিউরিটিজের পরিচালক গোলাম ওয়াদুদ বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, বাজারে অনেক ভালো শেয়ার এখন অযৌক্তিক কম দামে লেনদেন হচ্ছে। সে সব শেয়ার হাতে থাকলে বিক্রি না করাই ভাল। পুঁজিবাজার সাপোর্ট পাচ্ছে না তাই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। বাজার তারল্য সংকট কাটাতে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের যে দাবি উঠেছে সেটার ব্যবস্থা দ্রুত করতে হবে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, পুঁজিবাজারে এমন বড় দরপতন গত সপ্তাহজুড়েই ছিল। ফলে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচকের ২৬১ পয়েন্ট পতন হয়। তবে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার সূচকের সামান্য উত্থান হয় কিন্তু গতকাল আবারও বড় পতন হলো। এমন ধারাবাহিক বড় পতনের কবলে ডিএসইর বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক বেশ আগেই শুরুর অবস্থান থেকেও নিচে নেমে গেছে। সোমবার ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিক পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচকটিও শুরুর অবস্থানের নিচে চলে গেছে। প্রধান মূল্যসূচক এমন জায়গায় অবস্থান করছে, এটিও যে কোন সময় শুরুর অবস্থানের নিচে চলে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শেয়ারবাজারের এমন ভয়াবহ পতনের কবলে পড়ে প্রতিনিয়ত পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। দিন যত যাচ্ছে তাদের বোবাকান্না ততই বেড়ে চলছে। পুঁজিহারা এসব বিনিয়োগকারীরা কোন দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না। অনেকে শেয়ারবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আবার যারা এখনও শেয়ারবাজারে আছেন তাদের অনেকেই বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজছেন। আনোয়ার হোসেন নামের একজন বিনিয়োগকারী বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে এসে অনেকটাই নিঃস্ব হয়ে গেছি। বাজার থেকে বেরিয়ে যাব তারও কোন পথ পাচ্ছি না। সবাই ২০১০ সালের ধসের কথা বলেন। কিন্তু এখন শেয়ারবাজারের যে অবস্থা তা ২০১০ সালের থেকেও খারাপ। এ বাজারে যত অপেক্ষা করা হচ্ছে লোকসান ততই বাড়ছে। আলমগীর নামের আরও এক বিনিয়োগকারী বলেন, বাজারের দায়িত্বশীলরা কেউ নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। সবাই নিজের পকেট ভরার চেষ্টা করছেন। ক্ষতি যা হওয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হচ্ছে। আমার প্রতিদিন পুঁজি হারিয়ে নিস্ব হচ্ছি। বিনিয়োগ করা পুঁজি কীভাবে রক্ষা করব তার কোন উপায় পাচ্ছি না।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সোমবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এদিন ডিএসইতে মাত্র ২১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩১৩টির। আর দুটি প্রতিষ্ঠানের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১১ শতাংশ কমে ৪ হাজার ১২৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের দিন এ সূচকটি ১৫ পয়েন্ট বেড়েছিল। অবশ্য তার আগের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমে ২৬১ পয়েন্ট। এতে শেষ সাত কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৩৪ পয়েন্ট কমলো। এমন পতনের কবলে পড়ে ডিএসইএক্স ২০১৫ সালের ৭ মে’র পর সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে গেছে। সেই সঙ্গে সূচকটি প্রায় শুরুর কাছাকাছি চলে এসেছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক হিসেবে ডিএসইএক্স ৪ হাজার ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে যাত্রা শুরু করে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি। এ হিসাবে শুরুর অবস্থান থেকে সূচকটি এখন মাত্র ৬৮ পয়েন্ট বেশি আছে।

প্রধান মূল্যসূচকের থেকেও করুণ দশা বিরাজ করছে ডিএসইর অপর সূচকগুলোর। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক ডিএসই-৩০ ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি চালু হয়। সে সময় এ সূচকটি ছিল ১ হাজার ৪৬০ পয়েন্টে। ধারাবাহিক দরপতনের কারণে এ সূচকটি এখন ১ হাজার ৩৮৭ পয়েন্টে নেমে গেছে। ডিএসইর আর একটি সূচক ‘ডিএসই শরিয়াহ্’। ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি এ সূচকটি যাত্রা শুরু করে। শুরুতে এ সূচকটি ছিল ৯৪১ পয়েন্টে। বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে সূচকটি ২০ পয়েন্ট কমে ৯২৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে বৃহৎ বা বড় মূলধনের কোম্পানির জন্য চলতি বছর ‘সিএনআই-ডিএসই সিলেক্ট ইনডেক্স (সিডিএসইটি)’ নামে নতুন সূচক চালু করেছে ডিএসই। বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি থেকে অফিশিয়ালি ডিএসইর ওয়েবসাইটে সূচকটি উন্মুক্ত করা হয়। ৪০টি কোম্পানি নিয়ে শুরু হওয়া সূচকটির ভিত্তি ভ্যালু ধরা হয় ১০০০ পয়েন্ট। তবে এখন সূচকটি ৮৩৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে।

সূচকের করুণ দশার মধ্যে দেখা দিয়েছে তারল্য সংকটও। গত বছরের ৫ ডিসেম্বরের পর ডিএসইর লেনদেন আর লেনদেন ৪শ’ কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করতে পারেনি। বাজারটিতে লেনদেনের পরিমাণ ২শ’ থেকে ৩শ’ কোটি টাকার ঘরে আটকে আছে। সোমবার লেনদেন হয়েছে ২৮৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৬০ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দুরবস্থায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজারটির সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৪৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৫৬৩ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ২৫২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৩০টির, কমেছে ২০৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির দাম।