মামলার তদন্তে নেমেছে ডিবি পুলিশ

রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের ওসিসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় মাস আগে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এক ব্যবসায়ীকে থানায় পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে মামলা তদন্তে নেমেছে ডিবি পুলিশ। গত ১৫ জানুয়ারি দায়ের হওয়া মামলাটি গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালত থেকে তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবি পুলিশ। ডিবির উত্তর বিভাগ মামলাটি তদন্ত শুরু করেছে।

এ বিষয়ে ডিবির উত্তর বিভাগের উপ কমিশনার মশিউর রহমান জানান, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগে করা মামলার নথি বৃহস্পতিবার বিকেলে হাতে পাওয়া গেছে। আমরা মামলার অভিযোগের বিষয়ে অবগত হয়েছি। বিষয়টি তদন্তের পক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিষয়টি স্পর্শকাতর বিধায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্তে যা পাওয়া যাবে তা প্রতিবেদন আকারে আদালতে দেয়া হবে।

ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু মামলার সব আসামি পুলিশের সদস্য। আর অভিযোগ হচ্ছে মাদক মামলায় ফাসিয়ে অর্থ চাওয়া এবং অর্থের জন্য নির্যাতন করে মারা তাই ঘটনাস্থল পরিদর্শন ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদসহ প্রকৃত ঘটনা কী তা বের করতে তদন্তে কিছুটা সময় লাগবে। আসামিকে কি মাদকসহ গ্রেফতার করা হয়েছে কি না, ধরলে তাকে থানায় নির্যাতন করা হয়েছে কি না এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হবে। ঘটনায় পুলিশের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সতত্য মিললে কোনভাবেই ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ফুটপাতে পোশাক বিক্রেতা আলমগীর নামের এক ব্যবসায়ীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ইয়াবা মামলায় ফাঁসিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী। মামলার আসামি করা হয় উত্তর পশ্চিম থানার ওসি তপন কুমার শাহ, এসআই মো. মিজানুর রহমান, এএসআই নামজুল ও মো. সোহাগ। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ বাদীর জবাববন্দি শুনে ডিবি পুলিশের উত্তরের ডিসিকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ৫ মার্চ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, আলমগীর ভ্যানে করে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় পোশাক বিক্রি করতেন। গত ১৬ ডিসেম্বর আলমগীরকে ৭ নম্বর সেক্টরে যেতে বলেন শান্ত নামের এক ব?্যক্তি। সেখানে যাওয়া মাত্র উত্তর পশ্চিম থানার এস আই মিজানুর রহমান আলমগীরের পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলেন, পকেটে ইয়াবা আছে। পরে তাকে মারধর করা হয়। আসামিরা আলমগীরের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আলমগীর তার স্ত্রীকে ফোন করে ৫০ হাজার টাকা দিতে বলেন। ভ্যান চালক লালুর মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দেন আলমগীরের স্ত্রী। রাত ৩টা পর্যন্ত আলমগীর বাসায় না যাওয়ায় তার স্ত্রী তাকে ফোন করেন। থানা থেকে একজন বলেন, আলমগীরের কাছে ইয়াবা পাওয়া গেছে। পরে তার স্ত্রী থানায় যান। আলমগীর তার স্ত্রীকে জানান, আসামিরা ইয়াবা পাওয়ার মিথ্যা অভিযোগে তাকে ধরে এনেছে। আসামিরা ৫ লাখ টাকার দাবিতে তাকে নির্যাতন করেছেন। টাকা দিতে না পারায় এবং মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে অস্বীকার করায় মিজানুর রহমান, এএসআই নাজমুল এবং আরেক পুলিশ সোহাগ তাকে থানার চারতলায় নিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছে। তাকে পঙ্গু করে দিয়েছে।

পুলিশ আলমগীরকে আদালতে নেয়ার জন্য যখন গাড়িতে তোলে, তখন তিনি খুব অসুস্থ ছিলেন। কয়েকজন মিলে তাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে তোলে। পরে আদালত থেকে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে মারা যান আলমগীর হোসেন। বাদীর অভিযোগ, ওসি তপন চন্দ্র সাহার সহযোগিতা ও নির্দেশে অপর তিন আসামি আলমগীরকে পিটিয়ে জখম করেছেন। নির্যাতনের কারণেই মারা গেছেন আলমগীর হোসেন।

শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২০ , ১১ মাঘ ১৪২৬, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

ব্যবসায়ীকে থানায় পিটিয়ে হত্যা

মামলার তদন্তে নেমেছে ডিবি পুলিশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের ওসিসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় মাস আগে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এক ব্যবসায়ীকে থানায় পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে মামলা তদন্তে নেমেছে ডিবি পুলিশ। গত ১৫ জানুয়ারি দায়ের হওয়া মামলাটি গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালত থেকে তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবি পুলিশ। ডিবির উত্তর বিভাগ মামলাটি তদন্ত শুরু করেছে।

এ বিষয়ে ডিবির উত্তর বিভাগের উপ কমিশনার মশিউর রহমান জানান, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগে করা মামলার নথি বৃহস্পতিবার বিকেলে হাতে পাওয়া গেছে। আমরা মামলার অভিযোগের বিষয়ে অবগত হয়েছি। বিষয়টি তদন্তের পক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিষয়টি স্পর্শকাতর বিধায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্তে যা পাওয়া যাবে তা প্রতিবেদন আকারে আদালতে দেয়া হবে।

ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু মামলার সব আসামি পুলিশের সদস্য। আর অভিযোগ হচ্ছে মাদক মামলায় ফাসিয়ে অর্থ চাওয়া এবং অর্থের জন্য নির্যাতন করে মারা তাই ঘটনাস্থল পরিদর্শন ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদসহ প্রকৃত ঘটনা কী তা বের করতে তদন্তে কিছুটা সময় লাগবে। আসামিকে কি মাদকসহ গ্রেফতার করা হয়েছে কি না, ধরলে তাকে থানায় নির্যাতন করা হয়েছে কি না এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হবে। ঘটনায় পুলিশের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সতত্য মিললে কোনভাবেই ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ফুটপাতে পোশাক বিক্রেতা আলমগীর নামের এক ব্যবসায়ীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ইয়াবা মামলায় ফাঁসিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী। মামলার আসামি করা হয় উত্তর পশ্চিম থানার ওসি তপন কুমার শাহ, এসআই মো. মিজানুর রহমান, এএসআই নামজুল ও মো. সোহাগ। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ বাদীর জবাববন্দি শুনে ডিবি পুলিশের উত্তরের ডিসিকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ৫ মার্চ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, আলমগীর ভ্যানে করে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় পোশাক বিক্রি করতেন। গত ১৬ ডিসেম্বর আলমগীরকে ৭ নম্বর সেক্টরে যেতে বলেন শান্ত নামের এক ব?্যক্তি। সেখানে যাওয়া মাত্র উত্তর পশ্চিম থানার এস আই মিজানুর রহমান আলমগীরের পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলেন, পকেটে ইয়াবা আছে। পরে তাকে মারধর করা হয়। আসামিরা আলমগীরের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আলমগীর তার স্ত্রীকে ফোন করে ৫০ হাজার টাকা দিতে বলেন। ভ্যান চালক লালুর মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দেন আলমগীরের স্ত্রী। রাত ৩টা পর্যন্ত আলমগীর বাসায় না যাওয়ায় তার স্ত্রী তাকে ফোন করেন। থানা থেকে একজন বলেন, আলমগীরের কাছে ইয়াবা পাওয়া গেছে। পরে তার স্ত্রী থানায় যান। আলমগীর তার স্ত্রীকে জানান, আসামিরা ইয়াবা পাওয়ার মিথ্যা অভিযোগে তাকে ধরে এনেছে। আসামিরা ৫ লাখ টাকার দাবিতে তাকে নির্যাতন করেছেন। টাকা দিতে না পারায় এবং মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে অস্বীকার করায় মিজানুর রহমান, এএসআই নাজমুল এবং আরেক পুলিশ সোহাগ তাকে থানার চারতলায় নিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছে। তাকে পঙ্গু করে দিয়েছে।

পুলিশ আলমগীরকে আদালতে নেয়ার জন্য যখন গাড়িতে তোলে, তখন তিনি খুব অসুস্থ ছিলেন। কয়েকজন মিলে তাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে তোলে। পরে আদালত থেকে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে মারা যান আলমগীর হোসেন। বাদীর অভিযোগ, ওসি তপন চন্দ্র সাহার সহযোগিতা ও নির্দেশে অপর তিন আসামি আলমগীরকে পিটিয়ে জখম করেছেন। নির্যাতনের কারণেই মারা গেছেন আলমগীর হোসেন।