বরিশালে আটকে আছে জেলা আ’লীগ সম্মেলন

চার উপজেলায় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি

২০১২ সালের ২৫ ডিসেম্বর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৫ সদস্যে নিয়ে গঠিত বরিশাল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি এখনও বহাল আছে। তিন বছর মেয়াদি এই কমিটি ৭ বছর অতিক্রম করেছে। ৫ জনের মধ্যে একজন মৃত্যুবরণ করায় ৪ জন দিয়ে কাগজে-কলমে চলছে কমিটির কার্যক্রম। অথচ বিভাগীয় সদর হিসাবে স্থানীয় রাজনীতিতে বরিশাল সদর উপজেলার গুরুত্ব অনেক বেশি। একই অবস্থা জেলার আরও তিন উপজেলা যথাক্রমে হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ ও বানারীপাড়ায়। যা নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে তৃণমূলের নেতা কর্মীদের মধ্যে।

দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, সম্মেলন পরবর্তী কমিটিতে পদ-পদবি বণ্টন এবং কমিটি কুক্ষিগত করার অভিযোগসহ নানা বিষয়ে নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা ঐকমত্যে পৌঁছতে না পারায় এই সংকট চলছে। এর ফলে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনও করা যাচ্ছে না। গত ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলনের আগে জেলা সম্মেলন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। আগামী মার্চের মধ্যে জেলা সম্মেলন করার জন্য কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বরিশাল-৫ (বরিশাল সদর-সিটি এলাকা) সংসদ সদস্য পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নিস্ক্রিয়তায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের প্রাণ হচ্ছে সদর উপজেলা। এ কমিটি নিষ্ক্রিয় থাকলে তার প্রভাব পড়ে গোটা জেলায়। সদরে বর্তমানে যে কমিটি রয়েছে তার কোন তালিকাও নেই কেন্দ্রে। তাই এ কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তারা কোন ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড কমিটি গঠন করলেও সেগুলোও বৈধ হবে না। কেন্দ্র থেকে আগামী মার্চের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তার আগে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সম্পন্ন করতে হবে। নতুন কমিটিতে যাতে যোগ্য নেতৃত্বে আসে সে বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

জানা গেছে, ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেন বর্তমান সভাপতি মনিরুল ইসলাম ছবি ও সম্পাদক হালিম রেজা মোফাজ্জেল। কমিটির অপর তিন নেতার মধ্যে জামাল গাজী মৃত্যুবরণ করেছেন এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা বেগম মহিলা আওয়ামী লীগ ও মাহাতাব হোসেন সুরুজ জেলা আওয়ামী লীগের পদ নিয়ে রাজনীতি করছেন। চন্দ্রমোহন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগেরর সভাপতি মতিউর রহমান মতি বলেন, ৭ বছর ধরে কেবল সভাপতি ও সম্পাদকই আছেন উপজেলা কমিটিতে। তারা পদ ধরে রাখতে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে পকেট কমিটি গঠন করছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্যের কোন মতামত নেয়া হচ্ছেনা। তার সমর্থকদেরও কমিটিতে রাখা হচ্ছে না। শায়েস্তাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মামুন তালুকদার বলেন, সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেই বললেই চলে। বর্তমান কমিটি পুনরায় পদ ধরে রাখতে তারা ওয়ার্ড এবং ইউনিয়নে পকেট কমিটি গঠন করছেন।

উপজেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ার কথা স্বীকার করে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম ছবি বললেন, সমন্বয়হীনতার কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়নি। এখন ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কাউন্সিল করার চেষ্টা করছি। এরপর উপজেলা কমিটির কাউন্সিল হবে। সম্পাদক হালিম রেজা মোফাজ্জেল বললেন, কাজে ব্যঁস্ত থাকায় সময় হয়নি। তাই কমিটি করা যায়নি।

শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২০ , ১১ মাঘ ১৪২৬, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

বরিশালে আটকে আছে জেলা আ’লীগ সম্মেলন

চার উপজেলায় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি

মানবেন্দ্র বটব্যাল, বরিশাল

২০১২ সালের ২৫ ডিসেম্বর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৫ সদস্যে নিয়ে গঠিত বরিশাল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি এখনও বহাল আছে। তিন বছর মেয়াদি এই কমিটি ৭ বছর অতিক্রম করেছে। ৫ জনের মধ্যে একজন মৃত্যুবরণ করায় ৪ জন দিয়ে কাগজে-কলমে চলছে কমিটির কার্যক্রম। অথচ বিভাগীয় সদর হিসাবে স্থানীয় রাজনীতিতে বরিশাল সদর উপজেলার গুরুত্ব অনেক বেশি। একই অবস্থা জেলার আরও তিন উপজেলা যথাক্রমে হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ ও বানারীপাড়ায়। যা নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে তৃণমূলের নেতা কর্মীদের মধ্যে।

দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, সম্মেলন পরবর্তী কমিটিতে পদ-পদবি বণ্টন এবং কমিটি কুক্ষিগত করার অভিযোগসহ নানা বিষয়ে নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা ঐকমত্যে পৌঁছতে না পারায় এই সংকট চলছে। এর ফলে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনও করা যাচ্ছে না। গত ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলনের আগে জেলা সম্মেলন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। আগামী মার্চের মধ্যে জেলা সম্মেলন করার জন্য কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বরিশাল-৫ (বরিশাল সদর-সিটি এলাকা) সংসদ সদস্য পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নিস্ক্রিয়তায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের প্রাণ হচ্ছে সদর উপজেলা। এ কমিটি নিষ্ক্রিয় থাকলে তার প্রভাব পড়ে গোটা জেলায়। সদরে বর্তমানে যে কমিটি রয়েছে তার কোন তালিকাও নেই কেন্দ্রে। তাই এ কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তারা কোন ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড কমিটি গঠন করলেও সেগুলোও বৈধ হবে না। কেন্দ্র থেকে আগামী মার্চের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তার আগে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সম্পন্ন করতে হবে। নতুন কমিটিতে যাতে যোগ্য নেতৃত্বে আসে সে বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

জানা গেছে, ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেন বর্তমান সভাপতি মনিরুল ইসলাম ছবি ও সম্পাদক হালিম রেজা মোফাজ্জেল। কমিটির অপর তিন নেতার মধ্যে জামাল গাজী মৃত্যুবরণ করেছেন এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা বেগম মহিলা আওয়ামী লীগ ও মাহাতাব হোসেন সুরুজ জেলা আওয়ামী লীগের পদ নিয়ে রাজনীতি করছেন। চন্দ্রমোহন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগেরর সভাপতি মতিউর রহমান মতি বলেন, ৭ বছর ধরে কেবল সভাপতি ও সম্পাদকই আছেন উপজেলা কমিটিতে। তারা পদ ধরে রাখতে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে পকেট কমিটি গঠন করছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্যের কোন মতামত নেয়া হচ্ছেনা। তার সমর্থকদেরও কমিটিতে রাখা হচ্ছে না। শায়েস্তাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মামুন তালুকদার বলেন, সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেই বললেই চলে। বর্তমান কমিটি পুনরায় পদ ধরে রাখতে তারা ওয়ার্ড এবং ইউনিয়নে পকেট কমিটি গঠন করছেন।

উপজেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ার কথা স্বীকার করে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম ছবি বললেন, সমন্বয়হীনতার কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়নি। এখন ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কাউন্সিল করার চেষ্টা করছি। এরপর উপজেলা কমিটির কাউন্সিল হবে। সম্পাদক হালিম রেজা মোফাজ্জেল বললেন, কাজে ব্যঁস্ত থাকায় সময় হয়নি। তাই কমিটি করা যায়নি।