সৈকতে শিল্পের রং

সৈকতের উন্মুক্ত মঞ্চে সুরের মূর্চ্ছনা, নৃত্যের ঝংকার আর বাউলের একতারায় অনন্য এক সন্ধ্যার সৃষ্টি হয়েছিল পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের লাবনী পয়েন্টে। সাগর ও সূর্যের মিলনের এমন নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্যরে সঙ্গে তাল মিলিয়েই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে শুরু হলো দুই দিনব্যাপী ‘সৈকত সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২০’।

নীলাকাশে রঙ-বেরঙের বেলুন উড়িয়ে গতকাল সন্ধ্যায় বর্ণিল এই উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আশরাফুল আফসারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আদিবুল ইসলাম, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল।

এতে স্বাগত বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব বদরুল আনম ভূঁইয়া।

উদ্বোধনকালে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ঋদ্ধ, সৃজনশীল ও মানবিক সমাজ গঠনের অংশ হিসেবে এ বছর বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে এই প্রথমবারের মতো এই উৎসব শুরু করেছি। আশা করছি এখন থেকে প্রতিবছর এই আয়োজনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, প্রতি জেলা উপজেলায় বিস্তৃত পরিসরে কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই আয়োজন। পর্যটন এলাকায় এ ধরনের আয়োজন নিয়মিতভাবে করা হলে আমাদের দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে বিদেশি পর্যটকদেরও একটা সুনিবিড় সম্পর্ক তৈরি হবে।

উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী ও কক্সবাজার, বান্দরবান ও চট্টগ্রামের নিয়ে শুরু হয় সংস্কৃতির মহাযজ্ঞ।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই অ্যাক্রোবেটিক শো পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অ্যাক্রোবেটিক দল। শারীরিক কসরতের নৈপূণ্যে সৈকতের উন্মুক্ত মঞ্চ থেকে আগত দর্শকদের মাঝে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেন অ্যাক্রোবেটিকের শিল্পীরা। এরপর সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের ত্রিপুরা নৃ-গোষ্ঠীর শিল্পীরা। নৃত্যের মুদ্রায় পাহাড়ি সংস্কৃতিকে তুলে ধরে সৈকতে আগত শিল্পানুরাগীদেরকে বিমোহিত করেন। উদ্বোধনী সন্ধ্যায় মারমা সম্প্রদায়ের শিল্পীরা পরিবেশন করে ময়ূর নৃত্য ও ছাতা নৃত্য, স্রোতের সম্প্রদায়ের শিল্পীরা নাচের মাধ্যমে তুলে ধরে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির নববর্ষের নৃত্য ও যুগল নৃত্য। চাকমা সম্প্রদায়ের শিল্পীরা পরিবেশন করে বিজু নৃত্য ও জুম নৃত্য। নাচের পর গান একক গান নিয়ে মঞ্চে আসেন স্থানীয় শিল্পী মানষী বড়ুয়া। ভালোবেসে সখি নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনেরও মন্দিরে’ কবিগুরুর এমন বাণীর সুরে অনুষ্ঠানস্থলে রবীন্দ্রনাথকে মূর্ত করে তোলেন স্থানীয় এই শিল্পী। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও এককসংগীত পরিবেশন করে মিনা মল্লিক, মেহরীন রাহাব্বাত ইফশিতা ও মো. জাহিদ।

এদিনের আয়োজনে সমবেত নৃত্য, সমবেত সংগীত, একক সংগীত পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। এছাড়া বাউল গান ও অ্যাক্রোবেটিকের চমকপ্রদ নৈপুণ্যে প্রথমদিনের পুরো আয়োজনকে মনোজ্ঞ করে তোলে জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা।

উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে লাবণী পয়েন্টের বিস্তীর্ণ প্রান্তরে স্থাপন করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪৩ ফুট দৈর্ঘ্যরে প্রতিকৃতি।

জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীসহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিল্পী অংশ নিচ্ছে প্রথমবারের এই উৎসবে। বিকেল ৪টায় শুরু হয়ে উৎসব শেষ হবে রাত ৮টায়।

আজ শেষ হচ্ছে দুইদিনের এই উৎসব। নিয়মিত পরিবেশনার পাশাপাশি আজ সমাপনী আয়োজনের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে ব্যান্ড-শো।

শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২০ , ১১ মাঘ ১৪২৬, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

সৈকতে শিল্পের রং

কক্সবাজার থেকে নীহার আহমেদ

image

কক্সবাজারে ‘সৈকত সাংস্কৃতিক উৎসব’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান -সংবাদ

সৈকতের উন্মুক্ত মঞ্চে সুরের মূর্চ্ছনা, নৃত্যের ঝংকার আর বাউলের একতারায় অনন্য এক সন্ধ্যার সৃষ্টি হয়েছিল পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের লাবনী পয়েন্টে। সাগর ও সূর্যের মিলনের এমন নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্যরে সঙ্গে তাল মিলিয়েই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে শুরু হলো দুই দিনব্যাপী ‘সৈকত সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২০’।

নীলাকাশে রঙ-বেরঙের বেলুন উড়িয়ে গতকাল সন্ধ্যায় বর্ণিল এই উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আশরাফুল আফসারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আদিবুল ইসলাম, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল।

এতে স্বাগত বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব বদরুল আনম ভূঁইয়া।

উদ্বোধনকালে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ঋদ্ধ, সৃজনশীল ও মানবিক সমাজ গঠনের অংশ হিসেবে এ বছর বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে এই প্রথমবারের মতো এই উৎসব শুরু করেছি। আশা করছি এখন থেকে প্রতিবছর এই আয়োজনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, প্রতি জেলা উপজেলায় বিস্তৃত পরিসরে কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই আয়োজন। পর্যটন এলাকায় এ ধরনের আয়োজন নিয়মিতভাবে করা হলে আমাদের দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে বিদেশি পর্যটকদেরও একটা সুনিবিড় সম্পর্ক তৈরি হবে।

উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী ও কক্সবাজার, বান্দরবান ও চট্টগ্রামের নিয়ে শুরু হয় সংস্কৃতির মহাযজ্ঞ।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই অ্যাক্রোবেটিক শো পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অ্যাক্রোবেটিক দল। শারীরিক কসরতের নৈপূণ্যে সৈকতের উন্মুক্ত মঞ্চ থেকে আগত দর্শকদের মাঝে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেন অ্যাক্রোবেটিকের শিল্পীরা। এরপর সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের ত্রিপুরা নৃ-গোষ্ঠীর শিল্পীরা। নৃত্যের মুদ্রায় পাহাড়ি সংস্কৃতিকে তুলে ধরে সৈকতে আগত শিল্পানুরাগীদেরকে বিমোহিত করেন। উদ্বোধনী সন্ধ্যায় মারমা সম্প্রদায়ের শিল্পীরা পরিবেশন করে ময়ূর নৃত্য ও ছাতা নৃত্য, স্রোতের সম্প্রদায়ের শিল্পীরা নাচের মাধ্যমে তুলে ধরে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির নববর্ষের নৃত্য ও যুগল নৃত্য। চাকমা সম্প্রদায়ের শিল্পীরা পরিবেশন করে বিজু নৃত্য ও জুম নৃত্য। নাচের পর গান একক গান নিয়ে মঞ্চে আসেন স্থানীয় শিল্পী মানষী বড়ুয়া। ভালোবেসে সখি নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনেরও মন্দিরে’ কবিগুরুর এমন বাণীর সুরে অনুষ্ঠানস্থলে রবীন্দ্রনাথকে মূর্ত করে তোলেন স্থানীয় এই শিল্পী। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও এককসংগীত পরিবেশন করে মিনা মল্লিক, মেহরীন রাহাব্বাত ইফশিতা ও মো. জাহিদ।

এদিনের আয়োজনে সমবেত নৃত্য, সমবেত সংগীত, একক সংগীত পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। এছাড়া বাউল গান ও অ্যাক্রোবেটিকের চমকপ্রদ নৈপুণ্যে প্রথমদিনের পুরো আয়োজনকে মনোজ্ঞ করে তোলে জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা।

উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে লাবণী পয়েন্টের বিস্তীর্ণ প্রান্তরে স্থাপন করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪৩ ফুট দৈর্ঘ্যরে প্রতিকৃতি।

জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীসহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিল্পী অংশ নিচ্ছে প্রথমবারের এই উৎসবে। বিকেল ৪টায় শুরু হয়ে উৎসব শেষ হবে রাত ৮টায়।

আজ শেষ হচ্ছে দুইদিনের এই উৎসব। নিয়মিত পরিবেশনার পাশাপাশি আজ সমাপনী আয়োজনের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে ব্যান্ড-শো।