উজ্জীবিত আ’লীগ

প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করব : তাপস উন্নত নগরী গড়ব : আতিক

ঢাকার দুই সিটিতেই মেয়র পদে এবং অধিকাংশ আসনে কাউন্সিলর পদে জয়লাভ করে উজ্জীবিত আওয়ামী লীগ। জাতীয় নির্বাচনের পর রাজধানীর এই নির্বাচনকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিল ক্ষমতাসীনরা। প্রার্থী বাছাই-মনোনয়ন থেকে শুরু করে ভোট পর্যন্ত; সব প্রক্রিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিবিড় তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়। গতকাল নগরবাসীর ভোটে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ, দুই সিটিতেই মেয়র পদে জয় পায় নৌকার দুই প্রার্থী। দুই সিটির কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরের মোট ১৭২টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন প্রায় ৭৩৬ জন। তবে অধিকাংশ পদেই বিজয়ী হয় ক্ষমতাসীনরা। ফলে নগর, থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় প্রার্থীদের ভোট দিয়ে বিজয়ী করায় নগরবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রেখেই ঢাকার অভিভাবক হিসেবে নগরবাসী আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বেছে নিয়েছেন। তাদের মতে, ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়ের নেপথ্যেও স্থানীয় উন্নয়নের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে।

দশের অধিক ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। দক্ষিণের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (ঢাকা-৭) হাজী মো. সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম দলীয় সমর্থন না পেয়ে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করে জয়লাভ করেছেন। উত্তরে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি মুরাদ হোসেন এবং দক্ষিণে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে মামুন রশিদ শুভ্র (দক্ষিণের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক) জয়লাভ করেছেন। এ দুজন প্রথম মনোনয়ন (সমর্থন) তালিকায় থাকলেও পরে বাদপড়ায় বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করেন। বিদ্রোহীদের বিষয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দৃশ্যমান কঠোর অবস্থান দেখা যায়নি। দলের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র বলছে, একই ওয়ার্ডে অনেক সময় যোগ্য ব্যক্তিও মনোনয়ন বঞ্চিত হন। পরে দেখা যায় তিনি জয়ী হন।

নগর, থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কর্মীরাও দলীয় কাউন্সিলরদের জয়ে চাঙ্গা হয়ে ওঠেছেন। নির্বাচন সামনে রেখে টানা এক মাস রাতদিন পরিশ্রম সফল হয়েছে বলে তারা মনে করছেন। বিছিন্ন কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হয়। ভোটে ব্যাপক জয় পেয়ে দুই সিটিতেই আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ শুরু করব : তাপস

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এ বিজয় ঢাকাবাসীর জন্য উৎসর্গ করে বলেছেন, ঢাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া ও উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে এ রায় ঢাকাবাসীর বিজয়। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডির ৭ নম্বর সড়কে নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমার বিশ্বাস ছিল ঢাকাবাসী উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে অভূতপূর্ব সাড়া দেবে। দায়িত্বভার গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ শুরু করব। ঢাকাবাসীর কাক্সিক্ষত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে আমরা সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করব। নির্বাচিত কাউন্সিলর ও নেতকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমার অনুরোধ, ব্যানার-ফেস্টুন পোস্টার সোমবারের মধ্যে অপসারণ করে ফেলবেন। আমরা চাই একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নগরী।

উন্নত নগরী গড়ার কাজ শুরু করব : আতিকুল

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, এখন আমার লক্ষ্য সবাইকে নিয়ে সবার ঢাকা গড়ে তোলা। এই অপরিকল্পিত শহরকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি। বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত ঘোষণার পরপরই নেতাকর্মীদের পোস্টার সরানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে আতিকুল বলেন, অনেক এলাকায় পোস্টার সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। পোস্টার সরাতে অন্য প্রার্থীদেরও দায়িত্ব¡ নিতে হবে। বুধবারের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন করতে হবে। সবাইকে নিয়ে উন্নত নগরী গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জে এগিয়ে যাবেন উল্লেখ করে আতিকুল ইসলাম বলেন, এটি একলা চলার পথ না। বিভিন্ন খাতে বিশেষজ্ঞ যারা আছেন, তাদের নিয়ে নগরের সমস্যা দূর করব।

শনিবার ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে নগরীবাসী ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দিয়ে দুইজন মেয়র এবং ১৭২ জন কাউন্সিল-সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচন করে। দুই সিটিতে অর্ধকোটিরও বেশি ভোটার থাকলেও প্রার্থী নির্বাচনে ২৭ শতাংশ লোক ভোট দেয়।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং নির্বাচন কমিশন সিটি ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে দাবি করলেও বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেয়। ভোটের পরদিন ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরাতালের ডাক দিলেও হরতাল করতে পারেনি দলটি।

সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২০ মাঘ ১৪২৬, ৮ জমাদিউল সানি ১৪৪১

উজ্জীবিত আ’লীগ

প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করব : তাপস উন্নত নগরী গড়ব : আতিক

ফয়েজ আহমেদ তুষার |

image

ঢাকার দুই সিটিতেই মেয়র পদে এবং অধিকাংশ আসনে কাউন্সিলর পদে জয়লাভ করে উজ্জীবিত আওয়ামী লীগ। জাতীয় নির্বাচনের পর রাজধানীর এই নির্বাচনকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিল ক্ষমতাসীনরা। প্রার্থী বাছাই-মনোনয়ন থেকে শুরু করে ভোট পর্যন্ত; সব প্রক্রিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিবিড় তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়। গতকাল নগরবাসীর ভোটে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ, দুই সিটিতেই মেয়র পদে জয় পায় নৌকার দুই প্রার্থী। দুই সিটির কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরের মোট ১৭২টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন প্রায় ৭৩৬ জন। তবে অধিকাংশ পদেই বিজয়ী হয় ক্ষমতাসীনরা। ফলে নগর, থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় প্রার্থীদের ভোট দিয়ে বিজয়ী করায় নগরবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রেখেই ঢাকার অভিভাবক হিসেবে নগরবাসী আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বেছে নিয়েছেন। তাদের মতে, ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়ের নেপথ্যেও স্থানীয় উন্নয়নের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে।

দশের অধিক ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। দক্ষিণের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (ঢাকা-৭) হাজী মো. সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম দলীয় সমর্থন না পেয়ে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করে জয়লাভ করেছেন। উত্তরে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি মুরাদ হোসেন এবং দক্ষিণে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে মামুন রশিদ শুভ্র (দক্ষিণের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক) জয়লাভ করেছেন। এ দুজন প্রথম মনোনয়ন (সমর্থন) তালিকায় থাকলেও পরে বাদপড়ায় বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করেন। বিদ্রোহীদের বিষয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দৃশ্যমান কঠোর অবস্থান দেখা যায়নি। দলের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র বলছে, একই ওয়ার্ডে অনেক সময় যোগ্য ব্যক্তিও মনোনয়ন বঞ্চিত হন। পরে দেখা যায় তিনি জয়ী হন।

নগর, থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কর্মীরাও দলীয় কাউন্সিলরদের জয়ে চাঙ্গা হয়ে ওঠেছেন। নির্বাচন সামনে রেখে টানা এক মাস রাতদিন পরিশ্রম সফল হয়েছে বলে তারা মনে করছেন। বিছিন্ন কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হয়। ভোটে ব্যাপক জয় পেয়ে দুই সিটিতেই আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ শুরু করব : তাপস

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এ বিজয় ঢাকাবাসীর জন্য উৎসর্গ করে বলেছেন, ঢাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া ও উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে এ রায় ঢাকাবাসীর বিজয়। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডির ৭ নম্বর সড়কে নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমার বিশ্বাস ছিল ঢাকাবাসী উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে অভূতপূর্ব সাড়া দেবে। দায়িত্বভার গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ শুরু করব। ঢাকাবাসীর কাক্সিক্ষত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে আমরা সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করব। নির্বাচিত কাউন্সিলর ও নেতকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমার অনুরোধ, ব্যানার-ফেস্টুন পোস্টার সোমবারের মধ্যে অপসারণ করে ফেলবেন। আমরা চাই একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নগরী।

উন্নত নগরী গড়ার কাজ শুরু করব : আতিকুল

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, এখন আমার লক্ষ্য সবাইকে নিয়ে সবার ঢাকা গড়ে তোলা। এই অপরিকল্পিত শহরকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি। বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত ঘোষণার পরপরই নেতাকর্মীদের পোস্টার সরানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে আতিকুল বলেন, অনেক এলাকায় পোস্টার সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। পোস্টার সরাতে অন্য প্রার্থীদেরও দায়িত্ব¡ নিতে হবে। বুধবারের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন করতে হবে। সবাইকে নিয়ে উন্নত নগরী গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জে এগিয়ে যাবেন উল্লেখ করে আতিকুল ইসলাম বলেন, এটি একলা চলার পথ না। বিভিন্ন খাতে বিশেষজ্ঞ যারা আছেন, তাদের নিয়ে নগরের সমস্যা দূর করব।

শনিবার ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে নগরীবাসী ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দিয়ে দুইজন মেয়র এবং ১৭২ জন কাউন্সিল-সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচন করে। দুই সিটিতে অর্ধকোটিরও বেশি ভোটার থাকলেও প্রার্থী নির্বাচনে ২৭ শতাংশ লোক ভোট দেয়।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং নির্বাচন কমিশন সিটি ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে দাবি করলেও বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেয়। ভোটের পরদিন ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরাতালের ডাক দিলেও হরতাল করতে পারেনি দলটি।