পদ্মা সেতুর সাড়ে তিন কিলোমিটার দৃশ্যমান

পদ্মা সেতুর প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে। গতকাল সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩১ ও ৩২ নম্বর পিয়ারে বসানো হয়েছে ২৩ নাম্বার স্প্যান (ইস্পাতের কাঠামো)। এর ফলে সেতুর ৩ হাজার ৪৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি সেতুর ৫ ও ৬ নম্বর পিয়ারে বসানো হয়েছিল ২২তম স্প্যান। সেতুর ৪২টি পিয়ারে বসানো হবে ৪১ স্প্যান। বাকি স্প্যান আগামী জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে প্রকল্প সূত্র জানায়। এদিকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। কারণ, পদ্মা সেতুতে প্রায় ১ হাজার ১০০ চীনা নাগরিক কর্মরত। তাদের মধ্যে চীনা নববর্ষ উপলক্ষে প্রায় ২০০ নাগরিক ছুটিতে চীনে গিয়ে করোনাভাইরাসের কারণে আটকা পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

এ বিষয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের উপসহকারী প্রকৌশলী হুমায়ূন কবীর সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের ২৩তম স্প্যানটিকে বসানোর জন্য ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ‘তিয়ান-ই’ ভাসমান ক্রেন দিয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে বহন করা হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাজিরা প্রান্তের ৩১ ও ৩২ নম্বর পিয়ারের কাছে আনা হয় স্প্যানটি। এরপর স্প্যানটিকে পিলারে উপরে তোলার কার্যক্রম শুরু হয়। দুপুর ২টার দিকে স্প্যানটি বসানো হয়। এভাবে স্প্যান বসাতে পারলে ২০২০ সালেই ৪১টি স্প্যান বসানো শেষ হবে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর মোট ৪২টি পিয়ারের মধ্যে বর্তমানে কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৩৫টির। সেতুতে দুই হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ৪১০টি রেল স্ল্যাব বসানো হয়েছে। দুই হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ১২৫টি স্ল্যাব বসানো শেষ হয়েছে। পদ্মা সেতুর মোট ৪১টি স্প্যানের মধ্যে চীন থেকে মাওয়ায় এসেছে ৩৩টি স্প্যান। এর মধ্যে ২৩টি স্প্যান বসে গেছে।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ৩১ জানুয়ারি পদ্মা সেতুর ২৩তম স্প্যান বসানোর কথা ছিল। কিন্তু ওইদিন সকাল থেকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে স্প্যান বসানো সম্ভব ছিল না। প্রতি মাসেই তিনটি স্প্যান বসানোর কথা থাকলেও জানুয়ারিতে স্প্যান উঠেছে দুটি। তবে ফেব্রুয়ারিতে এর সংখ্যা বাড়বে। পদ্মা সেতুর খুঁটির উপর যে স্প্যানগুলো বসানো হয়েছে, সে স্প্যানের উপর ইতোমধ্যে এক কিলোমিটার রেল স্ল্যাব বসে গেছে। আর স্প্যানের উপর প্রায় ৪০০ মিটার রোডওয়ে স্ল্যাব বা রাস্তার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ হয়েছে ৮৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৭৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। এভাবে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ।

আবদুল কাদের বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে পদ্মা সেতুর নির্মাণে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। কারণ, পদ্মা সেতুতে প্রায় ১ হাজার ১০০ চীনা নাগরিক কর্মরত। তাদের মধ্যে চীনা নববর্ষ উপলক্ষে প্রায় ২০০ নাগরিক ছুটিতে চীনে গিয়ে করোনাভাইরাসের কারণে আটকা পড়েছেন। করোনাভাইরাস নিয়ে আমরা আতঙ্কিত নই। তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চীনা কর্মকর্তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আলাদা। যারা তাদের সার্ভ করেন, তারা যেন সব সময় সেফটি ড্রেস (মাস্ক ও গ্লাভস) পরিধান করে থাকেন, সে বিষয়ে জোর দেয়া হচ্ছে। এছাড়া চীনা কর্মীদের আলাদা ক্যাম্প রয়েছে। অন্যদের সঙ্গে যেন অতিরিক্ত মেলামেশা না করেন, সে বিষয়গুলো দেখা হচ্ছে। তবে চীন থেকে ইতোমধ্যে ৩২ জন চীনা নাগরিক এসেছেন। তাদের প্রকল্প এলাকায়ই আলাদা করে রাখা হয়েছে। তারা বিশেষ পর্যবেক্ষণে রয়েছেন বলে জানান তিনি।

সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২০ মাঘ ১৪২৬, ৮ জমাদিউল সানি ১৪৪১

পদ্মা সেতুর সাড়ে তিন কিলোমিটার দৃশ্যমান

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

পদ্মা সেতুর প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে। গতকাল সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩১ ও ৩২ নম্বর পিয়ারে বসানো হয়েছে ২৩ নাম্বার স্প্যান (ইস্পাতের কাঠামো)। এর ফলে সেতুর ৩ হাজার ৪৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি সেতুর ৫ ও ৬ নম্বর পিয়ারে বসানো হয়েছিল ২২তম স্প্যান। সেতুর ৪২টি পিয়ারে বসানো হবে ৪১ স্প্যান। বাকি স্প্যান আগামী জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে প্রকল্প সূত্র জানায়। এদিকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। কারণ, পদ্মা সেতুতে প্রায় ১ হাজার ১০০ চীনা নাগরিক কর্মরত। তাদের মধ্যে চীনা নববর্ষ উপলক্ষে প্রায় ২০০ নাগরিক ছুটিতে চীনে গিয়ে করোনাভাইরাসের কারণে আটকা পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

এ বিষয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের উপসহকারী প্রকৌশলী হুমায়ূন কবীর সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের ২৩তম স্প্যানটিকে বসানোর জন্য ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ‘তিয়ান-ই’ ভাসমান ক্রেন দিয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে বহন করা হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাজিরা প্রান্তের ৩১ ও ৩২ নম্বর পিয়ারের কাছে আনা হয় স্প্যানটি। এরপর স্প্যানটিকে পিলারে উপরে তোলার কার্যক্রম শুরু হয়। দুপুর ২টার দিকে স্প্যানটি বসানো হয়। এভাবে স্প্যান বসাতে পারলে ২০২০ সালেই ৪১টি স্প্যান বসানো শেষ হবে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর মোট ৪২টি পিয়ারের মধ্যে বর্তমানে কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৩৫টির। সেতুতে দুই হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ৪১০টি রেল স্ল্যাব বসানো হয়েছে। দুই হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ১২৫টি স্ল্যাব বসানো শেষ হয়েছে। পদ্মা সেতুর মোট ৪১টি স্প্যানের মধ্যে চীন থেকে মাওয়ায় এসেছে ৩৩টি স্প্যান। এর মধ্যে ২৩টি স্প্যান বসে গেছে।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ৩১ জানুয়ারি পদ্মা সেতুর ২৩তম স্প্যান বসানোর কথা ছিল। কিন্তু ওইদিন সকাল থেকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে স্প্যান বসানো সম্ভব ছিল না। প্রতি মাসেই তিনটি স্প্যান বসানোর কথা থাকলেও জানুয়ারিতে স্প্যান উঠেছে দুটি। তবে ফেব্রুয়ারিতে এর সংখ্যা বাড়বে। পদ্মা সেতুর খুঁটির উপর যে স্প্যানগুলো বসানো হয়েছে, সে স্প্যানের উপর ইতোমধ্যে এক কিলোমিটার রেল স্ল্যাব বসে গেছে। আর স্প্যানের উপর প্রায় ৪০০ মিটার রোডওয়ে স্ল্যাব বা রাস্তার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ হয়েছে ৮৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৭৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। এভাবে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ।

আবদুল কাদের বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে পদ্মা সেতুর নির্মাণে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। কারণ, পদ্মা সেতুতে প্রায় ১ হাজার ১০০ চীনা নাগরিক কর্মরত। তাদের মধ্যে চীনা নববর্ষ উপলক্ষে প্রায় ২০০ নাগরিক ছুটিতে চীনে গিয়ে করোনাভাইরাসের কারণে আটকা পড়েছেন। করোনাভাইরাস নিয়ে আমরা আতঙ্কিত নই। তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চীনা কর্মকর্তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আলাদা। যারা তাদের সার্ভ করেন, তারা যেন সব সময় সেফটি ড্রেস (মাস্ক ও গ্লাভস) পরিধান করে থাকেন, সে বিষয়ে জোর দেয়া হচ্ছে। এছাড়া চীনা কর্মীদের আলাদা ক্যাম্প রয়েছে। অন্যদের সঙ্গে যেন অতিরিক্ত মেলামেশা না করেন, সে বিষয়গুলো দেখা হচ্ছে। তবে চীন থেকে ইতোমধ্যে ৩২ জন চীনা নাগরিক এসেছেন। তাদের প্রকল্প এলাকায়ই আলাদা করে রাখা হয়েছে। তারা বিশেষ পর্যবেক্ষণে রয়েছেন বলে জানান তিনি।