শহীদ মিনারের জনস্রোত গ্রন্থমেলায়

‘একুশ মানে স্মৃতি রক্ত ফাগুন দিন, একুশ মানে বুকের মাঝে বাংলা রাখার ঋণ।’ একুশ মানে মাথা নত না করে- স্বগৌরবে নিজস্ব জাতীয়তাবোধে শির উঁচু করে দাঁড়ানো। তাজা রক্তের বিনিময়ে সত্যের জয় নিশ্চিত করা। তাইতো বাঙালির হৃদয়ে একুশ অমলিন। প্রতি বছর একুশে আসে বাঙালির জাতীয়তাবোধকে শানিত করতে। শেখায়- দুঃশাসনের শৃঙ্খল ছিঁড়ে ফেলতে। বাঙালির হৃদয়ে পুনরায় প্রকম্পিত হয় বিদ্রোহের দামামা। সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, শফিউরদের স্মৃতিকে স্মরণ করে শপথ নেয় শত বাঁধা মোকাবিলার। একুশের স্মরণে পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে থাকে নানা আয়োজন। একুশকে স্মরণ করেইতো অমর একুশে গ্রন্থমেলা। মাসব্যাপী এমন আয়োজন পৃথিবীর অন্য কোথাও মিলে না। এটি বাঙালির অহঙ্কার। অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে বরাবরের মতো এবারও গ্রন্থমেলায় ভিন্ন আমেজ লক্ষ্য করা গেছে।

গতকাল ছিল অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। জাতীয় শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এদিন সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছে শহীদদের স্মৃতির রক্ষার্থে নির্মিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ফুলে ফুলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদী ভরে দিয়েছে বাংলা ভাষাবাসীরা। নীরবে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়েছে মহান ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা এদিন জনতার স্রোত ছিল অনেক দীর্ঘ। আর সেই স্রোত এসে ঠেকেছে গ্রন্থমেলায়। গতকাল বইমেলা লোকে লোকারণ্য ছিল। কোথাও তিল ধারণের জায়গাটুকু ছিল না। এদিন মেলায় আগত দর্শনার্থীর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে আগের সব দিনকে। বইমেলায় প্রবেশের প্রধান দুটি প্রবেশপথ তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও দোয়েল চত্বরে প্রবেশের মুখে জনস্রোতের কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হিমশিম খেতে হয়েছে। মানুষের ¯স্রোতের কারণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে সামান্য চেক করা হলেও বাংলা একাডেমি অংশে ঢোকার সময় কোন পুলিশকে চেক করতে দেখা যায়নি। গতকাল কয়েক সহস্র মানুষের ভিড় ছিল গ্রন্থমেলায়। বিকিকিনিও ছিল বেশ। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের অধিকাংশই বই নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

সরেজমিন গতকাল অমর একুশে গ্রন্থমেলা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, অনেকে ভাষা শহীদদের স্মরণে সাদা কালো পাঞ্জাবি ও শাড়ি পরেছেন। মুখে ও হাতে এঁকেছেন নানা ধরনের আলপনা। যেখানে ফুটে উঠেছে স্মৃতির মিনার, বাংলা বর্ণমালা ও শহীদের স্মৃতি সকালে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে সব শ্রেণী পেশার মানুষ এসেছেন বইমেলায়। সকাল থেকেই বইমেলায় মানুষের আনাগোনা থাকলেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাইনে দাঁড়িয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর কারণে অনেকেই বিকেল বেলাকে বইমেলায় যাওয়ার জন্য বাছাই করেন। সকাল থেকেই বইপ্রেমী ও দর্শনার্থীদের আগমনে ভরপুর ছিল বইমেলা প্রাঙ্গণ। তবে বিকেল হতেই বইমেলায় মানুষের ঢল নামে। বইমেলা প্রাঙ্গণে যতটুকু চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। অন্য দিনগুলোতে মেলা বিকেল ৩টায় শুরু হলেও আজ মেলা শুরু হয় সকাল ৮টায়। মেলা চলে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।

তাম্রলিপি প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী সোহরাব হোসেন বলেন, আজ সকাল থেকেই মেলায় মানুষের যাতায়াত ছিল। বিকেলে মানুষের যাতায়াত আরও বাড়ে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে বেচাকেনা। শেষের দিকে বিক্রি আরও বাড়বে আশা করছি। কাকলী প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী এনামুল হক রাসেল বলেন, আজকে বিক্রি অনেক ভালো। খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে। শেষ দিন পর্যন্ত এমন বিক্রি হোক এটাই চাই। অন্য প্রকাশের বিক্রয়কর্মী টিপু বলেন, প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি বই বিক্রি হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সকাল থেকেই আমাদের স্টলে জনসমাগম বেশি। বিক্রিও ভালো হচ্ছে।

সপরিবারে গাজীপুর থেকে মেলায় এসেছেন ওয়াহিদুর রহমান। তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমরা ভাষা আন্দোলনকারীদের স্মরণ করি। সেই সঙ্গে এদিন বইমেলা জমজমাট হয়। তাই মেলায় আসার জন্য একুশে ফেব্রুয়ারিকে বাছাই করা। মেলায় এসে খুব ভালো লাগছে। পরিবারের সব সদস্যকে বই কিনে দিয়েছি। নিজেও কিনেছি। এ এক অন্যরকম ভালো লাগা। যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর থেকে গ্রন্থমেলায় এসেছেন বিশিষ্ট নজরুল বিশেষজ্ঞ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। আলোকায়ন প্রকাশনীর সামনে দেখা হয় তার সঙ্গে। মেলায় আসার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেলায় এসে খুবই ভালো লাগছে। আমি প্রতিবছর একদিনের জন্য হলেও অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আসি। এমনিতেই মাতৃভাষা দিবসের দিনে মেলায় প্রচুর ভিড় হয়, তার ওপর আজ আবার শুক্রবার। এজন্য মেলায় ভিড় ছিল প্রচুর।

বইমেলায় প্রচ্ছদশিল্পীকে পুলিশের হেনস্থা : রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলার লিটলম্যাগ চত্বরে হেনস্থার শিকার হয়েছেন প্রচ্ছদশিল্পী চারু পিন্টু। শফিউল নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লিটলম্যাগ চত্বরে ধুমপানের প্রস্তুতির সময় চারু পিন্টুকে কলার ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন পুলিশ কর্মকর্তা শফিউল। এ সময় লেখক-প্রকাশক-শিল্পীদের গালাগালিও করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। তার সঙ্গে রাসেলসহ আরও দু-একজন পুলিশ কনস্টেবল ছিলেন।

একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত লেখক, সম্পাদক ও শিল্পীরা এ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান। এ সময় লেখক-প্রকাশক-শিল্পীদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কিও হয়। এর প্রতিবাদে লেখক-প্রকাশক-শিল্পী-পাঠকরা মেলার প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল শেষে তারা আবার লিটলম্যাগ চত্বরে আসলে সেখানে বাংলা একাডেমির নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত হন। এ সময় ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে লেখক-প্রকাশক-শিল্পীদের সঙ্গে পুলিশের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হাতজোড় করতে বাধ্য হন বাংলা একাডেমির নিরাপত্তা কর্মকর্তা। এ সময় তিনি বলেন, পুলিশ কর্মকর্তাদের কেউ আপনার সঙ্গে অন্যায় করে থাকলে আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। লেখক-প্রকাশকরা তখন দাবি করেন, অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। তবে এ সময় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত থাকলেও তাকে ক্ষমা চাইতে দেখা যায়নি। তিনি আগের মতোই ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেন।

মাধবী তাপসী নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, চারু দা সিগারেটটা আরেকজনের কাছ থেকে নিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় কোন কথা না বলে তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে শুরু করে পুলিশ। আমি বলেছি, এভাবে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন কেন। তারা আমাকেও ধমক দিয়েছে। এরপর আমাকেও ধরে নিয়ে যাবে বলে হুমকি দিয়েছে! তিনি আরও বলেন, তার আচরণে সবাই যখন ক্ষুব্ধ তখনও ওই পুলিশ বলেছেন, সব শালাকে ধরে নিয়ে যাব। সব লেখককে ধরে নিয়ে যাব। ঠ্যাঙ ভেঙে দেব।

এ সময় ওই পুলিশ কর্মকর্তা হিমাদ্র কাজী নামে একজনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ভুক্তভোগী হিমাদ্র বলেন, ওই পুলিশ আমাকে ধাক্কা দিয়েছে। তখন আমি আরেকজনের ওপর গিয়ে পড়েছি। আমরা বলেছি, সবকিছুরই একটা নিয়ম আছে। আপনি এভাবে কাউকে ধরে নিয়ে যেতে পারেন না। তিনি কিছু না শুনেই ধাক্কা দিতে দিতে চারু দাকে নিয়ে গেছে! চারু দা কি চোর? উনি একজন আর্টিস্ট।

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৯ ফল্গুন ১৪২৬, ২৭ জমাদিউল সানি ১৪৪১

মেলায় একুশের আমেজ

শহীদ মিনারের জনস্রোত গ্রন্থমেলায়

আবদুল্লাহ আল জোবায়ের

‘একুশ মানে স্মৃতি রক্ত ফাগুন দিন, একুশ মানে বুকের মাঝে বাংলা রাখার ঋণ।’ একুশ মানে মাথা নত না করে- স্বগৌরবে নিজস্ব জাতীয়তাবোধে শির উঁচু করে দাঁড়ানো। তাজা রক্তের বিনিময়ে সত্যের জয় নিশ্চিত করা। তাইতো বাঙালির হৃদয়ে একুশ অমলিন। প্রতি বছর একুশে আসে বাঙালির জাতীয়তাবোধকে শানিত করতে। শেখায়- দুঃশাসনের শৃঙ্খল ছিঁড়ে ফেলতে। বাঙালির হৃদয়ে পুনরায় প্রকম্পিত হয় বিদ্রোহের দামামা। সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, শফিউরদের স্মৃতিকে স্মরণ করে শপথ নেয় শত বাঁধা মোকাবিলার। একুশের স্মরণে পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে থাকে নানা আয়োজন। একুশকে স্মরণ করেইতো অমর একুশে গ্রন্থমেলা। মাসব্যাপী এমন আয়োজন পৃথিবীর অন্য কোথাও মিলে না। এটি বাঙালির অহঙ্কার। অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে বরাবরের মতো এবারও গ্রন্থমেলায় ভিন্ন আমেজ লক্ষ্য করা গেছে।

গতকাল ছিল অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। জাতীয় শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এদিন সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছে শহীদদের স্মৃতির রক্ষার্থে নির্মিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ফুলে ফুলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদী ভরে দিয়েছে বাংলা ভাষাবাসীরা। নীরবে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়েছে মহান ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা এদিন জনতার স্রোত ছিল অনেক দীর্ঘ। আর সেই স্রোত এসে ঠেকেছে গ্রন্থমেলায়। গতকাল বইমেলা লোকে লোকারণ্য ছিল। কোথাও তিল ধারণের জায়গাটুকু ছিল না। এদিন মেলায় আগত দর্শনার্থীর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে আগের সব দিনকে। বইমেলায় প্রবেশের প্রধান দুটি প্রবেশপথ তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও দোয়েল চত্বরে প্রবেশের মুখে জনস্রোতের কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হিমশিম খেতে হয়েছে। মানুষের ¯স্রোতের কারণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে সামান্য চেক করা হলেও বাংলা একাডেমি অংশে ঢোকার সময় কোন পুলিশকে চেক করতে দেখা যায়নি। গতকাল কয়েক সহস্র মানুষের ভিড় ছিল গ্রন্থমেলায়। বিকিকিনিও ছিল বেশ। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের অধিকাংশই বই নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

সরেজমিন গতকাল অমর একুশে গ্রন্থমেলা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, অনেকে ভাষা শহীদদের স্মরণে সাদা কালো পাঞ্জাবি ও শাড়ি পরেছেন। মুখে ও হাতে এঁকেছেন নানা ধরনের আলপনা। যেখানে ফুটে উঠেছে স্মৃতির মিনার, বাংলা বর্ণমালা ও শহীদের স্মৃতি সকালে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে সব শ্রেণী পেশার মানুষ এসেছেন বইমেলায়। সকাল থেকেই বইমেলায় মানুষের আনাগোনা থাকলেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাইনে দাঁড়িয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর কারণে অনেকেই বিকেল বেলাকে বইমেলায় যাওয়ার জন্য বাছাই করেন। সকাল থেকেই বইপ্রেমী ও দর্শনার্থীদের আগমনে ভরপুর ছিল বইমেলা প্রাঙ্গণ। তবে বিকেল হতেই বইমেলায় মানুষের ঢল নামে। বইমেলা প্রাঙ্গণে যতটুকু চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। অন্য দিনগুলোতে মেলা বিকেল ৩টায় শুরু হলেও আজ মেলা শুরু হয় সকাল ৮টায়। মেলা চলে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।

তাম্রলিপি প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী সোহরাব হোসেন বলেন, আজ সকাল থেকেই মেলায় মানুষের যাতায়াত ছিল। বিকেলে মানুষের যাতায়াত আরও বাড়ে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে বেচাকেনা। শেষের দিকে বিক্রি আরও বাড়বে আশা করছি। কাকলী প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী এনামুল হক রাসেল বলেন, আজকে বিক্রি অনেক ভালো। খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে। শেষ দিন পর্যন্ত এমন বিক্রি হোক এটাই চাই। অন্য প্রকাশের বিক্রয়কর্মী টিপু বলেন, প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি বই বিক্রি হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সকাল থেকেই আমাদের স্টলে জনসমাগম বেশি। বিক্রিও ভালো হচ্ছে।

সপরিবারে গাজীপুর থেকে মেলায় এসেছেন ওয়াহিদুর রহমান। তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমরা ভাষা আন্দোলনকারীদের স্মরণ করি। সেই সঙ্গে এদিন বইমেলা জমজমাট হয়। তাই মেলায় আসার জন্য একুশে ফেব্রুয়ারিকে বাছাই করা। মেলায় এসে খুব ভালো লাগছে। পরিবারের সব সদস্যকে বই কিনে দিয়েছি। নিজেও কিনেছি। এ এক অন্যরকম ভালো লাগা। যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর থেকে গ্রন্থমেলায় এসেছেন বিশিষ্ট নজরুল বিশেষজ্ঞ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। আলোকায়ন প্রকাশনীর সামনে দেখা হয় তার সঙ্গে। মেলায় আসার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেলায় এসে খুবই ভালো লাগছে। আমি প্রতিবছর একদিনের জন্য হলেও অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আসি। এমনিতেই মাতৃভাষা দিবসের দিনে মেলায় প্রচুর ভিড় হয়, তার ওপর আজ আবার শুক্রবার। এজন্য মেলায় ভিড় ছিল প্রচুর।

বইমেলায় প্রচ্ছদশিল্পীকে পুলিশের হেনস্থা : রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলার লিটলম্যাগ চত্বরে হেনস্থার শিকার হয়েছেন প্রচ্ছদশিল্পী চারু পিন্টু। শফিউল নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লিটলম্যাগ চত্বরে ধুমপানের প্রস্তুতির সময় চারু পিন্টুকে কলার ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন পুলিশ কর্মকর্তা শফিউল। এ সময় লেখক-প্রকাশক-শিল্পীদের গালাগালিও করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। তার সঙ্গে রাসেলসহ আরও দু-একজন পুলিশ কনস্টেবল ছিলেন।

একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত লেখক, সম্পাদক ও শিল্পীরা এ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান। এ সময় লেখক-প্রকাশক-শিল্পীদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কিও হয়। এর প্রতিবাদে লেখক-প্রকাশক-শিল্পী-পাঠকরা মেলার প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল শেষে তারা আবার লিটলম্যাগ চত্বরে আসলে সেখানে বাংলা একাডেমির নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত হন। এ সময় ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে লেখক-প্রকাশক-শিল্পীদের সঙ্গে পুলিশের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হাতজোড় করতে বাধ্য হন বাংলা একাডেমির নিরাপত্তা কর্মকর্তা। এ সময় তিনি বলেন, পুলিশ কর্মকর্তাদের কেউ আপনার সঙ্গে অন্যায় করে থাকলে আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। লেখক-প্রকাশকরা তখন দাবি করেন, অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। তবে এ সময় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত থাকলেও তাকে ক্ষমা চাইতে দেখা যায়নি। তিনি আগের মতোই ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেন।

মাধবী তাপসী নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, চারু দা সিগারেটটা আরেকজনের কাছ থেকে নিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় কোন কথা না বলে তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে শুরু করে পুলিশ। আমি বলেছি, এভাবে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন কেন। তারা আমাকেও ধমক দিয়েছে। এরপর আমাকেও ধরে নিয়ে যাবে বলে হুমকি দিয়েছে! তিনি আরও বলেন, তার আচরণে সবাই যখন ক্ষুব্ধ তখনও ওই পুলিশ বলেছেন, সব শালাকে ধরে নিয়ে যাব। সব লেখককে ধরে নিয়ে যাব। ঠ্যাঙ ভেঙে দেব।

এ সময় ওই পুলিশ কর্মকর্তা হিমাদ্র কাজী নামে একজনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ভুক্তভোগী হিমাদ্র বলেন, ওই পুলিশ আমাকে ধাক্কা দিয়েছে। তখন আমি আরেকজনের ওপর গিয়ে পড়েছি। আমরা বলেছি, সবকিছুরই একটা নিয়ম আছে। আপনি এভাবে কাউকে ধরে নিয়ে যেতে পারেন না। তিনি কিছু না শুনেই ধাক্কা দিতে দিতে চারু দাকে নিয়ে গেছে! চারু দা কি চোর? উনি একজন আর্টিস্ট।