রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে

বকেয়া বেতন দাবিতে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বিক্ষোভ

বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা। গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর উত্তরা, বিমানবন্দর, বাড্ডা, মিরপুর, দারুসসালামসহ অন্তত ১০টি স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। ফলে প্রতিটি স্থানেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার নির্দেশিত সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের বিষয়টি ছিল উপেক্ষিত। ঢাকার পাশাপাশি মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া এলাকায় ১৬-১৭টি গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন করছেন বলে জানান গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার।

শ্রমিকদের এই বিক্ষোভে সড়কগুলোতে দীর্ঘ সময় ধরে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্বাভাবিক সময়ের মতো সব ধরনের যানবাহন চলাচল না করলেও জরুরি পণ্য পরিবহন ও সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের যানবাহনগুলো দীর্ঘসময় ধরে আটকে থাকতে দেখা গেছে।

বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে রাজধানীর বিমানবন্দর গোলচত্বর ও জসীমউদ্দীন এলাকার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রেদওয়ানটেক্স অ্যান্ড অ্যাপারেলস গার্মেন্টের শ্রমিকরা। দক্ষিণখান থানার ওসি শিকদার মো. শামীম হোসেন জানান, মালিকপক্ষকে বিক্ষোভের বিষয়টি জানানো হলে তারা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। গার্মেন্টস মালিকপক্ষের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের আশ্বাসে শ্রমিকরা সড়ক ছেড়েছেন।

রাজধানীর বাড্ডায় সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শামসুর রিজিয়া ফ্যাশনস লিমিটেডের শ্রমিকরা। তবে বেশিক্ষণ এ বিক্ষোভ স্থায়ী হয়নি। স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার মাসুম গনির আশ্বাসে তারা আন্দোলন স্থগিত করে সড়ক ছেড়ে দেন।

ভাসানটেক থানাধীন কাফরুল এলাকার মিনি সুপার মার্কেটের পাশে চিটাগাং ফ্যাশন নামে একটি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা এক মাসের বেতন ও দুই মাসের ওভারটাইমের বকেয়া পরিশোধের দাবি জানান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা চালায় কাফরুল ও ভাষানটেক থানা পুলিশ। শ্রমিকরা জানান, পুলিশের আশ্বাসে এর আগেও রাস্তায় নেমে ফিরে গেছেন তারা। তবে এবার বেতন-ভাতার সমস্যা মিটিয়ে তারা ঘরে ফিরবেন। তাদের ভাষ্যমতে, করোনার কারণে গার্মেন্টস বন্ধ। কিন্তু তার আগের বেতন ও ওভারটাইমের বকেয়া মেটায়নি কর্তৃপক্ষ।

কাফরুল থানার ওসি সেলিমুজ্জামান জানান, চিটাগাং ফ্যাশন গার্মেন্টসটি ভাসানটেক থানায় পড়েছে। তবে শ্রমিকদের আন্দোলন বিক্ষোভ চলছে উভয় পাশের সড়কে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ভাসানটেক থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইসরাঈল হোসেন জানান, চিটাগং ফ্যাশনস গার্মেন্টের মালিকের পক্ষে একজন এসেছেন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। তাদেরকে সড়ক ছেড়ে দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। বিষয়টি বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

বেতন-ভাতার দাবিতে মিরপুর থানাধীন দারুসসালাম এলাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা বুধবার সকাল থেকেই সড়ক অবরোধ করে রাখেন। মিরপুর মডেল থানার ওসি মোস্তাজিরুর রহমান জানান, আকিফ গার্মেন্টস, আরএসএফ ফ্যাশন্স, এমইসি ফ্যাশন্স, লুমিয়া প্রিন্টার্সসহ বেশ কয়েকটি ছোট ছোট গার্মেন্টস শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে বেতন-ভাতার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। পুলিশের কোন কথাই তারা শুনছে না। আবার ছোট ছোট কয়েকটি গার্মেন্টস শ্রমিকরা একত্রিত হওয়ায় গার্মেন্টস মালিকদের খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেই শ্রমিকদের এমন বিক্ষোভ চলছে, যা খুবই বিপজ্জনক। এক্ষেত্রে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষকেই উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

দুপুর ১২টা থেকে মিরপুর-১২ নম্বর এলাকায় রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন শুরু করেছেন শ্রমিকরা। শ্রমিকরা জানায়, বকেয়া বেতন না দিয়েই গার্মেন্টস মালিকরা উধাও হয়ে গেছেন। তাই নিরুপায় হয়ে তারা রাস্তায় নেমেছেন। 

জলি তালুকদার বলেন, বকেয়া বেতন, ছাঁটাই ও লে-অফের কারণে শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। মালিকরা শ্রমিকদের ছাঁটাই ও বেতন না দিয়ে সড়কে নামানোর মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে আরও সুবিধা নিতে দর কষাকষির পাঁয়তারা করছে বলে মনে করেন এই শ্রমিক নেত্রী। তিনি অবিলম্বে শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ ও ছাঁটাই বন্ধের আহ্বান জানান।

এদিকে, সম্প্রতি গার্মেন্টস সেক্টরে ছাঁটাই চাকরিচ্যুতি বন্ধ এবং বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। সম্প্রতি গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন এই বিষয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, দেশের বিভিন্ন শিল্প অঞ্চলে গার্মেন্টস সেক্টরে প্রতিনিয়ত শ্রমিকদের ছাঁটাই এবং চাকরিচ্যুতি চলছে। কোন কোন কারখানায় শ্রমিকদের নিয়মিত বেতন থেকে ঠকানোর অসৎ উদ্দেশ্যে লে-অফ এর নোটিশ দিয়ে কারখানা বন্ধ করা হচ্ছে। অথচ সরকার গার্মেন্টস মালিকদের জন্য বিরাট অঙ্কের আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। তিনি আরও বলেন, এই প্রণোদনার আওতায় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারীদের ৩ মাসের বেতন-ভাতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এরপরও দেশের মুনাফালোভী গার্মেন্ট মালিকেরা শ্রমিকদের বঞ্চিত করার অসৎ উদ্দেশ্যে চাকরিচ্যুতি, ছাঁটাই এবং কারখানা লে-অফ ঘোষণা করছে।

বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২০ , ৩ বৈশাখ ১৪২৭, ২১ শাবান ১৪৪১

রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে

বকেয়া বেতন দাবিতে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বিক্ষোভ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

মহাখালী যমুনা ফ্যাশনের শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ -সংবাদ

বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা। গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর উত্তরা, বিমানবন্দর, বাড্ডা, মিরপুর, দারুসসালামসহ অন্তত ১০টি স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। ফলে প্রতিটি স্থানেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার নির্দেশিত সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের বিষয়টি ছিল উপেক্ষিত। ঢাকার পাশাপাশি মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া এলাকায় ১৬-১৭টি গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন করছেন বলে জানান গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার।

শ্রমিকদের এই বিক্ষোভে সড়কগুলোতে দীর্ঘ সময় ধরে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্বাভাবিক সময়ের মতো সব ধরনের যানবাহন চলাচল না করলেও জরুরি পণ্য পরিবহন ও সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের যানবাহনগুলো দীর্ঘসময় ধরে আটকে থাকতে দেখা গেছে।

বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে রাজধানীর বিমানবন্দর গোলচত্বর ও জসীমউদ্দীন এলাকার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রেদওয়ানটেক্স অ্যান্ড অ্যাপারেলস গার্মেন্টের শ্রমিকরা। দক্ষিণখান থানার ওসি শিকদার মো. শামীম হোসেন জানান, মালিকপক্ষকে বিক্ষোভের বিষয়টি জানানো হলে তারা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। গার্মেন্টস মালিকপক্ষের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের আশ্বাসে শ্রমিকরা সড়ক ছেড়েছেন।

রাজধানীর বাড্ডায় সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শামসুর রিজিয়া ফ্যাশনস লিমিটেডের শ্রমিকরা। তবে বেশিক্ষণ এ বিক্ষোভ স্থায়ী হয়নি। স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার মাসুম গনির আশ্বাসে তারা আন্দোলন স্থগিত করে সড়ক ছেড়ে দেন।

ভাসানটেক থানাধীন কাফরুল এলাকার মিনি সুপার মার্কেটের পাশে চিটাগাং ফ্যাশন নামে একটি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা এক মাসের বেতন ও দুই মাসের ওভারটাইমের বকেয়া পরিশোধের দাবি জানান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা চালায় কাফরুল ও ভাষানটেক থানা পুলিশ। শ্রমিকরা জানান, পুলিশের আশ্বাসে এর আগেও রাস্তায় নেমে ফিরে গেছেন তারা। তবে এবার বেতন-ভাতার সমস্যা মিটিয়ে তারা ঘরে ফিরবেন। তাদের ভাষ্যমতে, করোনার কারণে গার্মেন্টস বন্ধ। কিন্তু তার আগের বেতন ও ওভারটাইমের বকেয়া মেটায়নি কর্তৃপক্ষ।

কাফরুল থানার ওসি সেলিমুজ্জামান জানান, চিটাগাং ফ্যাশন গার্মেন্টসটি ভাসানটেক থানায় পড়েছে। তবে শ্রমিকদের আন্দোলন বিক্ষোভ চলছে উভয় পাশের সড়কে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ভাসানটেক থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইসরাঈল হোসেন জানান, চিটাগং ফ্যাশনস গার্মেন্টের মালিকের পক্ষে একজন এসেছেন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। তাদেরকে সড়ক ছেড়ে দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। বিষয়টি বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

বেতন-ভাতার দাবিতে মিরপুর থানাধীন দারুসসালাম এলাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা বুধবার সকাল থেকেই সড়ক অবরোধ করে রাখেন। মিরপুর মডেল থানার ওসি মোস্তাজিরুর রহমান জানান, আকিফ গার্মেন্টস, আরএসএফ ফ্যাশন্স, এমইসি ফ্যাশন্স, লুমিয়া প্রিন্টার্সসহ বেশ কয়েকটি ছোট ছোট গার্মেন্টস শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে বেতন-ভাতার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। পুলিশের কোন কথাই তারা শুনছে না। আবার ছোট ছোট কয়েকটি গার্মেন্টস শ্রমিকরা একত্রিত হওয়ায় গার্মেন্টস মালিকদের খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেই শ্রমিকদের এমন বিক্ষোভ চলছে, যা খুবই বিপজ্জনক। এক্ষেত্রে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষকেই উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

দুপুর ১২টা থেকে মিরপুর-১২ নম্বর এলাকায় রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন শুরু করেছেন শ্রমিকরা। শ্রমিকরা জানায়, বকেয়া বেতন না দিয়েই গার্মেন্টস মালিকরা উধাও হয়ে গেছেন। তাই নিরুপায় হয়ে তারা রাস্তায় নেমেছেন। 

জলি তালুকদার বলেন, বকেয়া বেতন, ছাঁটাই ও লে-অফের কারণে শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। মালিকরা শ্রমিকদের ছাঁটাই ও বেতন না দিয়ে সড়কে নামানোর মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে আরও সুবিধা নিতে দর কষাকষির পাঁয়তারা করছে বলে মনে করেন এই শ্রমিক নেত্রী। তিনি অবিলম্বে শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ ও ছাঁটাই বন্ধের আহ্বান জানান।

এদিকে, সম্প্রতি গার্মেন্টস সেক্টরে ছাঁটাই চাকরিচ্যুতি বন্ধ এবং বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। সম্প্রতি গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন এই বিষয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, দেশের বিভিন্ন শিল্প অঞ্চলে গার্মেন্টস সেক্টরে প্রতিনিয়ত শ্রমিকদের ছাঁটাই এবং চাকরিচ্যুতি চলছে। কোন কোন কারখানায় শ্রমিকদের নিয়মিত বেতন থেকে ঠকানোর অসৎ উদ্দেশ্যে লে-অফ এর নোটিশ দিয়ে কারখানা বন্ধ করা হচ্ছে। অথচ সরকার গার্মেন্টস মালিকদের জন্য বিরাট অঙ্কের আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। তিনি আরও বলেন, এই প্রণোদনার আওতায় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারীদের ৩ মাসের বেতন-ভাতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এরপরও দেশের মুনাফালোভী গার্মেন্ট মালিকেরা শ্রমিকদের বঞ্চিত করার অসৎ উদ্দেশ্যে চাকরিচ্যুতি, ছাঁটাই এবং কারখানা লে-অফ ঘোষণা করছে।