লকডাউনের শৈথিল্য জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক হুমকি তৈরি করেছে

দেশে কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ প্রতিদিনই বাড়ছে। অন্তত ৪৫ হাজার মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে, মারা গেছে ছয় শতাধিক। বিশেষজ্ঞরা আগেই সতর্ক করে বলেছিলেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের আগে লকডাউন শিথিল করা হলে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরো বিস্তৃত হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছতে বাংলাদেশকে আরো বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। তাদের আশংকা অনুযায়ী, আগামী দিনগুলোতে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং এতে মৃত্যুর হার বাড়বে।

বিশ্বের যেসব দেশে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে তারা সাধারণত সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছার একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশে ভাইরাস সংক্রমণের চূড়াটি এখনো অচিহ্নিতই রয়ে গেছে। দেশে সংক্রমণ কমার কোন লক্ষণই ছিল না। সংক্রমণের গ্রাফটি ঊর্ধ্বমুখী থাকা অবস্থায় বিভিন্ন সেক্টরে লকডাউন একে একে শিথিল করা হয়েছে। এখন কার্যত পুরো দেশই উন্মুক্ত। লকডাউন দিনে দিনে শিথিল হয়েছে, আর সংক্রমণ দিনে দিনে বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা যখন আরো কয়েক সপ্তাহ কঠোর লকডাউন বাড়ানোর কথা বলেছেন, সরকার তখন প্রায় সবকিছুই উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আর কয়েকটা দিন লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হলে দেশের অর্থনীতি বা মানুষের জীবিকা কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হতো আর স্বাস্থ্য সুরক্ষা কতটুকু নিশ্চিত হতো সেটা নিয়ে বিতর্ক আছে। এই বিতর্কে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যকে অগ্রগণ্য করা উচিত ছিল বলে আমরা মনে করি। তবে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির কোন মতকে নীতিনির্ধারকরা অগ্রগণ্য করেছেন বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় না। আমরা মনে করি, মানুষের প্রাণের চেয়ে তার জামার পকেটকেই সরকার বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছে। সরকারের পদক্ষেপে নাগরিকদের পকেটের স্বাস্থ্য ভালো হবে কিনা, সেটা আমরা জানি না; তবে দেশে প্রতিদিনই হাজারে হাজারে রোগী বাড়বে। মারা যাবে অনেক মানুষ।

লকডাউন যেমন শিথিল হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধিও বাস্তব ক্ষেত্রে শিথিল হয়ে পড়েছে। বিধি আছে কেবল কাগুজে কলমেই। বিধিগুলো কেউ মানছে কিনা সেটা দেখার কেউ নেই। কাগুজে নির্দেশনা আর মৌখিক সতর্কবার্তা দিয়ে সংশ্লিষ্টরা যেন দায় সারতে চাচ্ছে। দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি দেশে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা না হলে আগামীতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে। কলকারখানা, অফিস, দোকানপাট, গণপরিবহন প্রভৃতি ক্ষেত্রে কঠোর মনিটরিং চালু করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা স্বাস্থ্যবিধি না মানলে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন নিয়ম মেনে কোভিড রোগী ও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেয়, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি। নইলে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোই সংক্রমণ স্থলে পরিণত হবে। কঠোর লকডাউন ব্যবস্থায় ফিরে যেতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। অনেক দেশকেই সংক্রমণ বাড়ার পর পুনরায় লকডাউন আরোপ করতে দেখা গেছে। বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করে সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সোমবার, ০১ জুন ২০২০ , ১৮ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ৮ শাওয়াল ১৪৪১

লকডাউনের শৈথিল্য জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক হুমকি তৈরি করেছে

দেশে কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ প্রতিদিনই বাড়ছে। অন্তত ৪৫ হাজার মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে, মারা গেছে ছয় শতাধিক। বিশেষজ্ঞরা আগেই সতর্ক করে বলেছিলেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের আগে লকডাউন শিথিল করা হলে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরো বিস্তৃত হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছতে বাংলাদেশকে আরো বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। তাদের আশংকা অনুযায়ী, আগামী দিনগুলোতে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং এতে মৃত্যুর হার বাড়বে।

বিশ্বের যেসব দেশে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে তারা সাধারণত সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছার একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশে ভাইরাস সংক্রমণের চূড়াটি এখনো অচিহ্নিতই রয়ে গেছে। দেশে সংক্রমণ কমার কোন লক্ষণই ছিল না। সংক্রমণের গ্রাফটি ঊর্ধ্বমুখী থাকা অবস্থায় বিভিন্ন সেক্টরে লকডাউন একে একে শিথিল করা হয়েছে। এখন কার্যত পুরো দেশই উন্মুক্ত। লকডাউন দিনে দিনে শিথিল হয়েছে, আর সংক্রমণ দিনে দিনে বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা যখন আরো কয়েক সপ্তাহ কঠোর লকডাউন বাড়ানোর কথা বলেছেন, সরকার তখন প্রায় সবকিছুই উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আর কয়েকটা দিন লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হলে দেশের অর্থনীতি বা মানুষের জীবিকা কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হতো আর স্বাস্থ্য সুরক্ষা কতটুকু নিশ্চিত হতো সেটা নিয়ে বিতর্ক আছে। এই বিতর্কে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যকে অগ্রগণ্য করা উচিত ছিল বলে আমরা মনে করি। তবে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির কোন মতকে নীতিনির্ধারকরা অগ্রগণ্য করেছেন বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় না। আমরা মনে করি, মানুষের প্রাণের চেয়ে তার জামার পকেটকেই সরকার বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছে। সরকারের পদক্ষেপে নাগরিকদের পকেটের স্বাস্থ্য ভালো হবে কিনা, সেটা আমরা জানি না; তবে দেশে প্রতিদিনই হাজারে হাজারে রোগী বাড়বে। মারা যাবে অনেক মানুষ।

লকডাউন যেমন শিথিল হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধিও বাস্তব ক্ষেত্রে শিথিল হয়ে পড়েছে। বিধি আছে কেবল কাগুজে কলমেই। বিধিগুলো কেউ মানছে কিনা সেটা দেখার কেউ নেই। কাগুজে নির্দেশনা আর মৌখিক সতর্কবার্তা দিয়ে সংশ্লিষ্টরা যেন দায় সারতে চাচ্ছে। দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি দেশে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা না হলে আগামীতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে। কলকারখানা, অফিস, দোকানপাট, গণপরিবহন প্রভৃতি ক্ষেত্রে কঠোর মনিটরিং চালু করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা স্বাস্থ্যবিধি না মানলে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন নিয়ম মেনে কোভিড রোগী ও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেয়, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি। নইলে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোই সংক্রমণ স্থলে পরিণত হবে। কঠোর লকডাউন ব্যবস্থায় ফিরে যেতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। অনেক দেশকেই সংক্রমণ বাড়ার পর পুনরায় লকডাউন আরোপ করতে দেখা গেছে। বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করে সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।