কলাপাড়ায় পলিথিন মৎস্য বর্জ্যে অস্তিত্ব সংকটে শিববাড়িয়া নদী

দুর্যোগকালীন উপকূলীয় ২০ সহস্রাধিক জেলের পোতাশ্রয় হিসেবে পরিচিত পটুয়াখালীর কলাপাড়ার শিববাড়িয়া নদী। কিন্তু পলিথিন ও মৎস্য বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীটি। এ কারণে নদীর গভীরতা ও প্রস্থ্য ক্রমশ কমে যাওয়ায় নৌযান চলাচলে যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমনি নদীর তলদেশে পলিথিন জমতে জমতে বিলুপ্ত হচ্ছে জলজ উদ্ভিদ ও মৎস্য সম্পদ। দীর্ঘ বছর ধরে কুয়াকাটাগামী শেখ রাসেল সেতু সংলগ্ন সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘেষে এভাবে পলিথিনের ডাম্পিং করার কারনে মাটিতে পলিথিনের স্তর জমতে জমতে ক্রমশ মারা যাচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। প্রশাসনের চোখের সামনে মহিপুর ও আলীপুরের ব্যবসায়ীরা নদীর দুই তীরে এভাবে পলিথিন, সোলা (মাছ পরিবহনের ডোল) ও মৎস্য বর্জ্য ফেলায় নদীর দুই তীর ভরাট হচ্ছে। এতে দূর্যোগের সময় নদীতে মাছ ধরা ট্রলার আশ্রয় নিতে দুর্ভোগে পড়ছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, নদীতে পলিথিনসহ বিভিন্ন বর্জ্য জমা হলে নদী ভরাট হয়ে নদীর তলদেশের উদ্ভিদ যেমন মারা যাবে, এতে মাছের খাদ্য সংকট দেখা দিবে এবং বংশবিস্তার কমে যাবে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানালেন, নদীর দুই তীরের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও নদীতে পলিথিন বর্জ্য ফেলা বন্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। স্থানীয় জেলে মো. মামুন, ইকবাল ও তোহা মিয়া বলেন, নদীতে পলিথিনসহ বিভিন্ন বর্জ্য ফেলার কারনে নদীর তলদেশ ক্রমশ ভরাট হয়ে গেছে। এছাড়া নদীর বিভিন্ন মোহনায় জাল ফেললে এখন মাছের পরিবর্তে জালে আটকা পড়ছে পলিথিন। জাল থেকে এ পলিথিন ছাড়াতে তাদের ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় হচ্ছে। এছাড়া নদীর তলদেশে পচন সৃষ্টি হওয়ায় পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মহিপুর ও আলীপুরের ব্যবসায়ীরা বলেন, বাজারে ময়লা আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট ডাষ্টবিন ও ডাম্পিং জোন না থাকায় বাজারের সকল বর্জ্য কুড়িয়ে নদীর তীরে ফেলছে। একই স্থানে দীর্ঘ বছর ধরে এভাবে ময়লা ফেলার কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে বলে স্বীকার করেন ব্যবসায়ীরা। মহিপুরের সমাজকর্মী মো. মিলটন জানান, দীর্ঘদিন ধরে শিববাড়িয়া নদীতে ও নদী তীরবর্তী বনাঞ্চলের মধ্যে পলিথিন ও বর্জ্য ফেলার কারণে নদী তীর ঘেষা প্রাকৃতিক বনাঞ্চলটির শতশত গাছ মরে গেছে। বনাঞ্চলের মধ্যে পলিথিনের স্তর জমা হওয়ায় নতুন কোন গাছ জন্ম নিচ্ছে না। এছাড়া নদীর তীরে বর্জ্য ফেলার কারনে নদীর জোয়ার ভাটায় এসব বর্জ্য নদীর পানিতে মিশে যাওয়ায় মৎস্য সম্পদেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ কারনে এখন সাগর ও নদীর বিভিন্ন মোহনায় প্রচুর মাছ ধরা পড়লেও শিববাড়িয়া নদীর শেখ রাসেল সেতুর কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে কোন মাছ ধরা পড়ছে না। এ ব্যাপারে মহিপুর বাজার কমিটির সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, বাজারে একটি নির্দিষ্ট ডাম্পিং জোন নির্মান করা হলে সকল বর্জ্য একই স্থানে ফেললে নদীর দূষণ যেমন কমমে, তেমনি পানির গতি প্রবাহ বাড়বে নদীতে। কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মনোজ কুমার সাহা বলেন, নদীতে যদি বর্জ্য ফেলা হলে নদীর পানির দূষণ হয়। এতে নদীর পানিতে অক্সিজেনের অভাব তলদেশের উদ্ভিদগুলো মরে যায় এবং মাছের খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এছাড়া নদী ভরাট হয়ে মাছের গতিপথ ও বংশবিস্তারে বাধাগ্রস্ত হয়।কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, নদী দূষন ও দখল বন্ধে অভিযান চালানো হবে এবং দখল ও নদী দূষণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শনিবার, ১৩ জুন ২০২০ , ৩০ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ২০ শাওয়াল ১৪৪১

কলাপাড়ায় পলিথিন মৎস্য বর্জ্যে অস্তিত্ব সংকটে শিববাড়িয়া নদী

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)

image

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : পলিথিন ও মৎস্য বর্জ্যে ভরাট হচ্ছে শিববাড়িয়া নদী -সংবাদ

দুর্যোগকালীন উপকূলীয় ২০ সহস্রাধিক জেলের পোতাশ্রয় হিসেবে পরিচিত পটুয়াখালীর কলাপাড়ার শিববাড়িয়া নদী। কিন্তু পলিথিন ও মৎস্য বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীটি। এ কারণে নদীর গভীরতা ও প্রস্থ্য ক্রমশ কমে যাওয়ায় নৌযান চলাচলে যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমনি নদীর তলদেশে পলিথিন জমতে জমতে বিলুপ্ত হচ্ছে জলজ উদ্ভিদ ও মৎস্য সম্পদ। দীর্ঘ বছর ধরে কুয়াকাটাগামী শেখ রাসেল সেতু সংলগ্ন সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘেষে এভাবে পলিথিনের ডাম্পিং করার কারনে মাটিতে পলিথিনের স্তর জমতে জমতে ক্রমশ মারা যাচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। প্রশাসনের চোখের সামনে মহিপুর ও আলীপুরের ব্যবসায়ীরা নদীর দুই তীরে এভাবে পলিথিন, সোলা (মাছ পরিবহনের ডোল) ও মৎস্য বর্জ্য ফেলায় নদীর দুই তীর ভরাট হচ্ছে। এতে দূর্যোগের সময় নদীতে মাছ ধরা ট্রলার আশ্রয় নিতে দুর্ভোগে পড়ছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, নদীতে পলিথিনসহ বিভিন্ন বর্জ্য জমা হলে নদী ভরাট হয়ে নদীর তলদেশের উদ্ভিদ যেমন মারা যাবে, এতে মাছের খাদ্য সংকট দেখা দিবে এবং বংশবিস্তার কমে যাবে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানালেন, নদীর দুই তীরের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও নদীতে পলিথিন বর্জ্য ফেলা বন্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। স্থানীয় জেলে মো. মামুন, ইকবাল ও তোহা মিয়া বলেন, নদীতে পলিথিনসহ বিভিন্ন বর্জ্য ফেলার কারনে নদীর তলদেশ ক্রমশ ভরাট হয়ে গেছে। এছাড়া নদীর বিভিন্ন মোহনায় জাল ফেললে এখন মাছের পরিবর্তে জালে আটকা পড়ছে পলিথিন। জাল থেকে এ পলিথিন ছাড়াতে তাদের ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় হচ্ছে। এছাড়া নদীর তলদেশে পচন সৃষ্টি হওয়ায় পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মহিপুর ও আলীপুরের ব্যবসায়ীরা বলেন, বাজারে ময়লা আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট ডাষ্টবিন ও ডাম্পিং জোন না থাকায় বাজারের সকল বর্জ্য কুড়িয়ে নদীর তীরে ফেলছে। একই স্থানে দীর্ঘ বছর ধরে এভাবে ময়লা ফেলার কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে বলে স্বীকার করেন ব্যবসায়ীরা। মহিপুরের সমাজকর্মী মো. মিলটন জানান, দীর্ঘদিন ধরে শিববাড়িয়া নদীতে ও নদী তীরবর্তী বনাঞ্চলের মধ্যে পলিথিন ও বর্জ্য ফেলার কারণে নদী তীর ঘেষা প্রাকৃতিক বনাঞ্চলটির শতশত গাছ মরে গেছে। বনাঞ্চলের মধ্যে পলিথিনের স্তর জমা হওয়ায় নতুন কোন গাছ জন্ম নিচ্ছে না। এছাড়া নদীর তীরে বর্জ্য ফেলার কারনে নদীর জোয়ার ভাটায় এসব বর্জ্য নদীর পানিতে মিশে যাওয়ায় মৎস্য সম্পদেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ কারনে এখন সাগর ও নদীর বিভিন্ন মোহনায় প্রচুর মাছ ধরা পড়লেও শিববাড়িয়া নদীর শেখ রাসেল সেতুর কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে কোন মাছ ধরা পড়ছে না। এ ব্যাপারে মহিপুর বাজার কমিটির সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, বাজারে একটি নির্দিষ্ট ডাম্পিং জোন নির্মান করা হলে সকল বর্জ্য একই স্থানে ফেললে নদীর দূষণ যেমন কমমে, তেমনি পানির গতি প্রবাহ বাড়বে নদীতে। কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মনোজ কুমার সাহা বলেন, নদীতে যদি বর্জ্য ফেলা হলে নদীর পানির দূষণ হয়। এতে নদীর পানিতে অক্সিজেনের অভাব তলদেশের উদ্ভিদগুলো মরে যায় এবং মাছের খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এছাড়া নদী ভরাট হয়ে মাছের গতিপথ ও বংশবিস্তারে বাধাগ্রস্ত হয়।কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, নদী দূষন ও দখল বন্ধে অভিযান চালানো হবে এবং দখল ও নদী দূষণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।