ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি করতে ক্ষুদ্র ঋণের শর্ত শিথিল

মহামারীকালে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে এ খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার শর্ত শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই খাতে তাদের জন্য মোট বরাদ্দের ৮০ শতাংশ ঋণ উৎপাদন ও সেবা উপখাতে দিতে পারবে। আগে এই দুই উপখাতের জন্য যথাক্রমে ৫০ ও ৩০ শতাংশ সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছিল। গত সোমবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা যায়, করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষতি সামলে উঠতে গত ১৩ এপ্রিল সিএমএসএমই খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই তহবিলের নীতিমালায় বলা হয়েছিল, এই ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সিএমএসএমই খাতের উৎপাদন ও সেবা উপখাতকে প্রাধান্য দেয়া হবে। তবে, ব্যবসা/ট্রেডভিত্তিক মাইক্রো ও ক্ষুদ্র শিল্প এ সুবিধার আওতাভুক্ত হবে। এই প্যাকেজের আওতায় উৎপাদন, সেবা ও ব্যবসা (ট্রেড) উপখাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বাৎসরিক মোট ঋণ/বিনিয়োগের আনুপাতিক হার হবে যথাক্রমে ৫০, ৩০ ও ২০ শতাংশ। সোমবারের প্রজ্ঞাপনে যেসব সংশোধনী আনা হয়েছে তা হলো, উৎপাদন ও সেবা উপখাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের বাৎসরিক মোট ঋণ/বিনিয়োগের আনুপাতিক হার যথাক্রমে ৫০ ও ৩০ শতাংশের পরিবর্তে ওই উপখাতদ্বয়ে বাৎসরিক মোট ঋণ/বিনিয়োগের আনুপাতিক হার সামগ্রিকভাবে ৮০ শতাংশে পুনর্বিন্যাস করা হলো। উৎপাদন ও সেবা শিল্পে বিদ্যমান ঋণ/বিনিয়োগ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানে প্রদেয় ঋণ/বিনিয়োগের পরিমাণ ওই প্রতিষ্ঠানের ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯ তারিখ ভিত্তিক চলতি মূলধন বাবদ মঞ্জুরিকৃত/প্রদত্ত সীমার ৫০ শতাংশের বেশি হবে না। নতুন ঋণ গ্রহীতার ক্ষেত্রেও বিদ্যমান নীতিমালার আওতায় চলতি মূলধন বাবদ ঋণের প্রাপ্যতা সীমা নির্ধারণপূর্বক তার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পরিমাণ প্রদেয় হবে। করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষতি সামলে উঠতে সরকার সবমিলিয়ে এক লাখ কোটি টাকার বেশি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ ছিল ৩৩ হাজার কোটি টাকা, বড় বড় উদ্যোক্তাদের জন্য। আর ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ছিল ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, ২৪ আগস্ট পর্যন্ত ৩৩ হাজার কোটি টাকার বড় ঋণের মধ্যে ২০ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা ইতোমধ্যে বিতরণ করে ফেলেছে ব্যাংকগুলো। অর্থাৎ বিতরণ হয়েছে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। অন্যদিকে ২০ হাজার কোটি টাকার ছোট ঋণের মধ্যে বিতরণ হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৭৩ কোটি টাকা বা সাত ভাগের এক ভাগ। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বার বার তাগাদা দেয়ার পরও সিএমএসএমই খাতের ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো আগ্রহ দেখাচ্ছিল না। এ নিয়ে হতাশাও প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ছোট ঋণ বিতরণে গতি আনতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে উৎপাদন ও সেবা উপখাতের ঋণের পরিমাণ আলাদা আলাদা না করে সামগ্রিকভাবে ৮০ শতাংশে পুনর্বিন্যাস করার আবেদন করা হয়েছিল। সেই আবেদনে সাড়া দিয়েই বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বুধবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১২ মহররম ১৪৪২, ১৬ ভাদ্র ১৪২৭

ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি করতে ক্ষুদ্র ঋণের শর্ত শিথিল

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

মহামারীকালে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে এ খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার শর্ত শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই খাতে তাদের জন্য মোট বরাদ্দের ৮০ শতাংশ ঋণ উৎপাদন ও সেবা উপখাতে দিতে পারবে। আগে এই দুই উপখাতের জন্য যথাক্রমে ৫০ ও ৩০ শতাংশ সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছিল। গত সোমবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা যায়, করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষতি সামলে উঠতে গত ১৩ এপ্রিল সিএমএসএমই খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই তহবিলের নীতিমালায় বলা হয়েছিল, এই ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সিএমএসএমই খাতের উৎপাদন ও সেবা উপখাতকে প্রাধান্য দেয়া হবে। তবে, ব্যবসা/ট্রেডভিত্তিক মাইক্রো ও ক্ষুদ্র শিল্প এ সুবিধার আওতাভুক্ত হবে। এই প্যাকেজের আওতায় উৎপাদন, সেবা ও ব্যবসা (ট্রেড) উপখাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বাৎসরিক মোট ঋণ/বিনিয়োগের আনুপাতিক হার হবে যথাক্রমে ৫০, ৩০ ও ২০ শতাংশ। সোমবারের প্রজ্ঞাপনে যেসব সংশোধনী আনা হয়েছে তা হলো, উৎপাদন ও সেবা উপখাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের বাৎসরিক মোট ঋণ/বিনিয়োগের আনুপাতিক হার যথাক্রমে ৫০ ও ৩০ শতাংশের পরিবর্তে ওই উপখাতদ্বয়ে বাৎসরিক মোট ঋণ/বিনিয়োগের আনুপাতিক হার সামগ্রিকভাবে ৮০ শতাংশে পুনর্বিন্যাস করা হলো। উৎপাদন ও সেবা শিল্পে বিদ্যমান ঋণ/বিনিয়োগ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানে প্রদেয় ঋণ/বিনিয়োগের পরিমাণ ওই প্রতিষ্ঠানের ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯ তারিখ ভিত্তিক চলতি মূলধন বাবদ মঞ্জুরিকৃত/প্রদত্ত সীমার ৫০ শতাংশের বেশি হবে না। নতুন ঋণ গ্রহীতার ক্ষেত্রেও বিদ্যমান নীতিমালার আওতায় চলতি মূলধন বাবদ ঋণের প্রাপ্যতা সীমা নির্ধারণপূর্বক তার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পরিমাণ প্রদেয় হবে। করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষতি সামলে উঠতে সরকার সবমিলিয়ে এক লাখ কোটি টাকার বেশি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ ছিল ৩৩ হাজার কোটি টাকা, বড় বড় উদ্যোক্তাদের জন্য। আর ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ছিল ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, ২৪ আগস্ট পর্যন্ত ৩৩ হাজার কোটি টাকার বড় ঋণের মধ্যে ২০ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা ইতোমধ্যে বিতরণ করে ফেলেছে ব্যাংকগুলো। অর্থাৎ বিতরণ হয়েছে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। অন্যদিকে ২০ হাজার কোটি টাকার ছোট ঋণের মধ্যে বিতরণ হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৭৩ কোটি টাকা বা সাত ভাগের এক ভাগ। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বার বার তাগাদা দেয়ার পরও সিএমএসএমই খাতের ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো আগ্রহ দেখাচ্ছিল না। এ নিয়ে হতাশাও প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ছোট ঋণ বিতরণে গতি আনতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে উৎপাদন ও সেবা উপখাতের ঋণের পরিমাণ আলাদা আলাদা না করে সামগ্রিকভাবে ৮০ শতাংশে পুনর্বিন্যাস করার আবেদন করা হয়েছিল। সেই আবেদনে সাড়া দিয়েই বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।