দক্ষিণাঞ্চলে জমির বিকল্প ধাপে সবজি চাষে স্বাবলম্বী পাঁচ শতাধিক পরিবার

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এখন যেসব ব্যক্তিদের জমি নেই বা জমি থাকলেও তা বছরের উল্লেখযোগ্য সময় পানির নিচে থাকে সেসব কৃষকরা ধাপে সবজি চাষ করে সফলতার পাশাপাশি সংসারের খাবার যোগান দিতে পারছেন। পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলায় শুরু হয়েছিল ভাসমান (ধাপ) বেডে সবজি চাষ। ভাসমান বেডে সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন আগৈলঝাড়া উপজেলার ৫ শতাধিক পরিবার। জলাবদ্ধ এলাকায় বেড বা ধাপে সবজির চাষ করে এলাকায় সবজির চাহিদা মিটিয়ে স্বল্প সময়ে এই প্রকল্পে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ থাকায় এলাকার চাষিদের উৎসাহিত করে উপজেলায় এই চাষের সম্প্রসারণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ। নাজিরপুরের কৃষকদের দেখাদেখি বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া, উজিরপুর বানারিপাড়ায় এখন ধাপের সবজি চাষ ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে। আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বেশিরভাগ জমিতে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকায় বছরের ছয় মাস এই অঞ্চলের জমিতে পানি জমা থাকে। এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এই জলাবদ্ধতা একটা অভিশাপ। কারণ বছরে একবারই তারা জমিতে ফসল ফলাতে পারছেন। বাকি সময় জমিতে পানি জমে থাকার কারণে জমি থাকে অনাবাদি। বদ্ধ পানিতে আগাছা ও কচুরিপানায় ভরে যায় জমি। সরকার চাষিদের আত্মকর্মসংস্থান ও পরিবারের আয়ের সুযোগ করে দিতে ২০১৩ সাল থেকে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধিনে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে ‘বন্যা ও জলাবদ্ধ প্রবণ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তন অতিযোজন কৌশল হিসেবে ভাসমান সবজি ও মসলা উৎপাদন প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প‘ গ্রহণ করে।

ওই প্রকল্পের আওতায় প্রান্তিক কৃষকদের প্রশিক্ষণ, বিনা মূল্যে বীজ সরবরাহ রাজিহার ইউনিয়নের বাশাইল গ্রামে চাষি সমন্বয়ে একটি সমিতির মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান, বিনামূল্যে বীজ সরবরাহ বেড তৈরির খরচ ও বিভিন্ন কৃষি উপকরণ দিয়ে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। কয়েক বছর আগে থেকেই এসব এলাকার চাষিরা বেড বা ধাপে সবজি উৎপাদন করে আসছিলেন। সরকারি সহায়তা পাবার পরে তাদের সঙ্গে অন্য এলাকার চাষিদেরও বেডে সবজি ও মসলা চাষে আগ্রহ বেড়েছে। বাশাইল গ্রামে ৭০ হেক্টর বেডে সবজি ও মসলা চাষ হচ্ছে।

আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রায় ৬শ’ হেক্টর বেডে সবজি ও মসলা চাষের লক্ষ্যমাত্রায় নির্ধারণ করা হয়েছে। জমির বিকল্প হিসেবে মাঠের আগাছা ও খাল বিলের কচুরিপানা ব্যবহার করে বেড বা ধাপ বানিয়ে ফসল উৎপাদন করা হয়। প্রথম পর্যায়ে এই পদ্ধতি অনেকেই গ্রহণ করতে না চাইলেও স্বল্প সময়ে, স্বল্প ব্যয়ে অধিক মুনাফা অর্জনের কারণে এখন অনেকেই এখন ধাপের উপর সবজি চাষ করছেন। বাশাইল গ্রামের চাষি তোফাজ্জেল হোসেন ও খালেক সরদার জানান, তাদের বাবাও বেডে সবজি, সবজির চারা তৈরি করে তা বিক্রি করেছেন। এখন নিজে এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।

তারা বলেন, জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষের দিকে বিভিন্ন জাতের সবজির চারা চাষের কার্যক্রম শুরু করা হয়। চাষিরা এ সময় বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কচুরিপানার বড় বড় দলকে (ধাপকে) একত্রিত করে রাখেন। কয়েকদিনের মধ্যেই তাতে পচন ধরে। পচন ধরা কচুরিপানাই পানির উপর সংরক্ষণ করে ধাপ তৈরি করা হয়। প্রতিটি ধাপেই পর্যাপ্ত জৈবসার থাকার কারণে সবজির চারাগুলো অত্যন্ত উর্বর হয়। প্রত্যেকটি ভাসমান ধাপে চার বার চারা উৎপাদন করা যায়। প্রথমবার একমাস পরিচর্যার পর চারাগুলো বিক্রি করলেও পরবর্তীতে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই পুনরায় চারা বিক্রি করা যায়। সবজির চারাগুলো গ্রাম থেকে পাইকাররা এসে মাদারীপুর, ফরিদপুর, চাঁদপুর, স্বরূপকাঠি, মাগুরা, ফেনিসহ স্থানীয় হাটবাজারের বিক্রি করা হয়। চারা বিক্রি করার পর সেখানে সবজি চাষ করা হয়। এসব সবজি অজৈব সুর মুক্ত হওয়ায় এসব সবজির চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। আবার আনুপাতিক হারে দামও কম হয়ে থাকে।

চাষিদের তৈরি করা ধাপে সবজি বোনা হয় লালশাক, পুঁইশাক, ডাটা, মরিচ, করলা, ঢেঁড়শ, হলুদ, শশা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, আলু অন্যতম। প্রায় বার মাসই বিলাঞ্চলে এ ধরনের সবজির চাষ হয়ে থাকে। এছাড়াও ওই ধাপে করলা, বরবটি, সিম, পেঁপে, লাউ, কুমড়া, মরিচ, বেগুনসহ নানা জাতের সবজির চারাও উৎপাদন করা হয়।

এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন জানান, ধাপের উপর সবজি চাষিদের প্রশিক্ষণ দেবার পর তাদের বিনা মূল্যে বীজ, সারসহ বিভিন্ন উপকরণ দেয়া হয়। উপজেলার বাশাইলে ২৫ জন চাষিদের এই প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারা সবাই বেডে চারা উৎপাদন করে বর্তমানে ভালো আয় করছে।

image

আগৈলঝাড়ায় ধাপে ধাপে সবজি চাষ করে তা পরিচর্যা করছেন বাশাইল গ্রামের চাষি হালিম আকন -সংবাদ

আরও খবর
সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন
বিদ্যুৎখাতে মাঠের কর্মীদের আচরণ উন্নয়ন প্রয়োজন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী
সাংবাদিক ছাঁটাইয়ে ডিইউজে’র উদ্বেগ
রংপুরে দুদকের দৃশ্যমান কোন কর্মকাণ্ড নেই
৫১ জনের নিয়োগ নিয়ে রুল
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিআর দত্তের শেষকৃত্য
খালেদাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে ফখরুল
সাংবাদিক নামে প্রতারণা, গ্রেফতার ২
বিধিবহির্ভূতভাবে প্রকৌশলী নিয়োগ দিতে মরিয়া সিসিক
আ’লীগের সভাপতির কার্যালয়ে নেতাকর্মী নিয়ে নাজমা আক্তারের দিনব্যাপী অবস্থান
কিশোর মুন্না হত্যার নেপথ্যে গায়ে ধাক্কা লাগার প্রতিশোধ
চট্টগ্রাম নগর উন্নয়নে চউক-চসিক সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে সিটি প্রশাসক
বিএনপির দুলুর ব্যাংক হিসাব জব্দ

বুধবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১২ মহররম ১৪৪২, ১৬ ভাদ্র ১৪২৭

দক্ষিণাঞ্চলে জমির বিকল্প ধাপে সবজি চাষে স্বাবলম্বী পাঁচ শতাধিক পরিবার

মানবেন্দ্র বটব্যাল, বরিশাল

image

আগৈলঝাড়ায় ধাপে ধাপে সবজি চাষ করে তা পরিচর্যা করছেন বাশাইল গ্রামের চাষি হালিম আকন -সংবাদ

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এখন যেসব ব্যক্তিদের জমি নেই বা জমি থাকলেও তা বছরের উল্লেখযোগ্য সময় পানির নিচে থাকে সেসব কৃষকরা ধাপে সবজি চাষ করে সফলতার পাশাপাশি সংসারের খাবার যোগান দিতে পারছেন। পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলায় শুরু হয়েছিল ভাসমান (ধাপ) বেডে সবজি চাষ। ভাসমান বেডে সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন আগৈলঝাড়া উপজেলার ৫ শতাধিক পরিবার। জলাবদ্ধ এলাকায় বেড বা ধাপে সবজির চাষ করে এলাকায় সবজির চাহিদা মিটিয়ে স্বল্প সময়ে এই প্রকল্পে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ থাকায় এলাকার চাষিদের উৎসাহিত করে উপজেলায় এই চাষের সম্প্রসারণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ। নাজিরপুরের কৃষকদের দেখাদেখি বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া, উজিরপুর বানারিপাড়ায় এখন ধাপের সবজি চাষ ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে। আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বেশিরভাগ জমিতে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকায় বছরের ছয় মাস এই অঞ্চলের জমিতে পানি জমা থাকে। এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এই জলাবদ্ধতা একটা অভিশাপ। কারণ বছরে একবারই তারা জমিতে ফসল ফলাতে পারছেন। বাকি সময় জমিতে পানি জমে থাকার কারণে জমি থাকে অনাবাদি। বদ্ধ পানিতে আগাছা ও কচুরিপানায় ভরে যায় জমি। সরকার চাষিদের আত্মকর্মসংস্থান ও পরিবারের আয়ের সুযোগ করে দিতে ২০১৩ সাল থেকে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধিনে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে ‘বন্যা ও জলাবদ্ধ প্রবণ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তন অতিযোজন কৌশল হিসেবে ভাসমান সবজি ও মসলা উৎপাদন প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প‘ গ্রহণ করে।

ওই প্রকল্পের আওতায় প্রান্তিক কৃষকদের প্রশিক্ষণ, বিনা মূল্যে বীজ সরবরাহ রাজিহার ইউনিয়নের বাশাইল গ্রামে চাষি সমন্বয়ে একটি সমিতির মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান, বিনামূল্যে বীজ সরবরাহ বেড তৈরির খরচ ও বিভিন্ন কৃষি উপকরণ দিয়ে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। কয়েক বছর আগে থেকেই এসব এলাকার চাষিরা বেড বা ধাপে সবজি উৎপাদন করে আসছিলেন। সরকারি সহায়তা পাবার পরে তাদের সঙ্গে অন্য এলাকার চাষিদেরও বেডে সবজি ও মসলা চাষে আগ্রহ বেড়েছে। বাশাইল গ্রামে ৭০ হেক্টর বেডে সবজি ও মসলা চাষ হচ্ছে।

আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রায় ৬শ’ হেক্টর বেডে সবজি ও মসলা চাষের লক্ষ্যমাত্রায় নির্ধারণ করা হয়েছে। জমির বিকল্প হিসেবে মাঠের আগাছা ও খাল বিলের কচুরিপানা ব্যবহার করে বেড বা ধাপ বানিয়ে ফসল উৎপাদন করা হয়। প্রথম পর্যায়ে এই পদ্ধতি অনেকেই গ্রহণ করতে না চাইলেও স্বল্প সময়ে, স্বল্প ব্যয়ে অধিক মুনাফা অর্জনের কারণে এখন অনেকেই এখন ধাপের উপর সবজি চাষ করছেন। বাশাইল গ্রামের চাষি তোফাজ্জেল হোসেন ও খালেক সরদার জানান, তাদের বাবাও বেডে সবজি, সবজির চারা তৈরি করে তা বিক্রি করেছেন। এখন নিজে এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।

তারা বলেন, জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষের দিকে বিভিন্ন জাতের সবজির চারা চাষের কার্যক্রম শুরু করা হয়। চাষিরা এ সময় বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কচুরিপানার বড় বড় দলকে (ধাপকে) একত্রিত করে রাখেন। কয়েকদিনের মধ্যেই তাতে পচন ধরে। পচন ধরা কচুরিপানাই পানির উপর সংরক্ষণ করে ধাপ তৈরি করা হয়। প্রতিটি ধাপেই পর্যাপ্ত জৈবসার থাকার কারণে সবজির চারাগুলো অত্যন্ত উর্বর হয়। প্রত্যেকটি ভাসমান ধাপে চার বার চারা উৎপাদন করা যায়। প্রথমবার একমাস পরিচর্যার পর চারাগুলো বিক্রি করলেও পরবর্তীতে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই পুনরায় চারা বিক্রি করা যায়। সবজির চারাগুলো গ্রাম থেকে পাইকাররা এসে মাদারীপুর, ফরিদপুর, চাঁদপুর, স্বরূপকাঠি, মাগুরা, ফেনিসহ স্থানীয় হাটবাজারের বিক্রি করা হয়। চারা বিক্রি করার পর সেখানে সবজি চাষ করা হয়। এসব সবজি অজৈব সুর মুক্ত হওয়ায় এসব সবজির চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। আবার আনুপাতিক হারে দামও কম হয়ে থাকে।

চাষিদের তৈরি করা ধাপে সবজি বোনা হয় লালশাক, পুঁইশাক, ডাটা, মরিচ, করলা, ঢেঁড়শ, হলুদ, শশা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, আলু অন্যতম। প্রায় বার মাসই বিলাঞ্চলে এ ধরনের সবজির চাষ হয়ে থাকে। এছাড়াও ওই ধাপে করলা, বরবটি, সিম, পেঁপে, লাউ, কুমড়া, মরিচ, বেগুনসহ নানা জাতের সবজির চারাও উৎপাদন করা হয়।

এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন জানান, ধাপের উপর সবজি চাষিদের প্রশিক্ষণ দেবার পর তাদের বিনা মূল্যে বীজ, সারসহ বিভিন্ন উপকরণ দেয়া হয়। উপজেলার বাশাইলে ২৫ জন চাষিদের এই প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারা সবাই বেডে চারা উৎপাদন করে বর্তমানে ভালো আয় করছে।