ভাতার টাকায় কর্তার ভাগ

ভাতার টাকার ভাগ দিতে হয় কর্তাকে এমন অভিযোগসহ সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নার্গিস আক্তারের বিরুদ্ধে। মহিলা সংস্থার সদস্যদের কাছ থেকে অর্থ আদায়, প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতা আত্মসাত, নিয়মিত অফিসে না আসা, প্রশিক্ষণে ভুয়া নাম দিয়ে অর্থ আত্মসাত, উৎকোচ ছাড়া সরকারি অনুদানের চেক না দেয়া, নতুন সমিতির নিবন্ধন করতে মোটা অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণ, আসবাবপত্র ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম, সরকারি বিভিন্ন দিবসের কর্মসূচি পালন না করে অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এসব অনিয়মের অভিযোগ উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। সরকারি বিধি অনুযায়ী এক অফিসে ৩ বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করার সুযোগ না থাকলেও এই কর্মকর্তা একই অফিসে সাতবছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এই বিষয়টিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দিচ্ছেন না। নার্গিস আক্তারের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির ফিরিস্তি উল্লেখ করে নরসিংদী জেলা প্রশাসক এবং বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ১২ জন ভুক্তভোগী।

শাহনাজ পারভিন মিতু নামে এক ভুক্তভোগী জানান, তিনমাস সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে ছয় হাজার ৩০০ টাকা ভাতা দেয়ার কথা। কিন্তু গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রায় অর্ধেক টাকা জোর করে রেখে দিয়েছেন নার্গিস আক্তার। টাকা কম দেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি সবাইকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং হয়রানির ভয় দেখান। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তাছাড়া একই প্রশিক্ষণে রুমা, নাছিমা এবং তাছলিমা নামে তিনজন মহিলার ভুয়া নাম বসিয়ে নিজেই এসব ভাতা উত্তোলন করেছেন এই কর্মকর্তা। প্রতি ব্যাচেই ৫-৭ জনের ভুয়া নাম বসিয়ে নিয়মিতই অর্থ আত্মসাত করেন বলে জানিয়েছেন এই ভুক্তভোগী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিলা সমিতির এক নেত্রী জানান, প্রতিবছর মহিলা সমিতির নামে সরকার অনুদান দিয়ে থাকে। এসব অনুদানের চেক উত্তোলন করতে গেলে ৪-৫ হাজার টাকা দিতে হয় কর্তকর্তা নার্গিস আক্তারকে। কিশোর কিশোরী ক্লাবের এক জেন্ডার প্রমোটার জানান, উপজেলায় ১৩টি কিশোর কিশোরী ক্লাব রয়েছে। এসব ক্লাবের আসবাবপত্র ক্রয়ের জন্য দুই লাখ ৭১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। সে হিসেবে ভাগ করলে প্রত্যেক ক্লাবে ২০ হাজার টাকার অধিক আসে। অথচ প্রতিটি কেন্দ্রে একটি ফাইল কেবনেট, একটি ওয়ালক্লথ এবং দুটি প্লাষ্টিকের চেয়ার দেয়া হয়েছে। যার আনুমানিক সর্বোচ্চ মূল্য হতে পাঁচ হাজার টাকা। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নার্গিস আক্তার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র।

নরসিংদী জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপ-পরিচালক সেলিনা আক্তার বলেন, মনোহরদী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাছাড়া ইতোমধ্যে ওই অফিসের একজন অফিস সহকারী এবং একজন অফিস সহায়ককে অন্যত্র বদলী করা হয়েছে।

শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২২ মহররম ১৪৪২, ২৪ ভাদ্র ১৪২৭

ভাতার টাকায় কর্তার ভাগ

প্রতিনিধি, মনোহরদী (নরসিংদী)

ভাতার টাকার ভাগ দিতে হয় কর্তাকে এমন অভিযোগসহ সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নার্গিস আক্তারের বিরুদ্ধে। মহিলা সংস্থার সদস্যদের কাছ থেকে অর্থ আদায়, প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতা আত্মসাত, নিয়মিত অফিসে না আসা, প্রশিক্ষণে ভুয়া নাম দিয়ে অর্থ আত্মসাত, উৎকোচ ছাড়া সরকারি অনুদানের চেক না দেয়া, নতুন সমিতির নিবন্ধন করতে মোটা অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণ, আসবাবপত্র ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম, সরকারি বিভিন্ন দিবসের কর্মসূচি পালন না করে অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এসব অনিয়মের অভিযোগ উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। সরকারি বিধি অনুযায়ী এক অফিসে ৩ বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করার সুযোগ না থাকলেও এই কর্মকর্তা একই অফিসে সাতবছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এই বিষয়টিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দিচ্ছেন না। নার্গিস আক্তারের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির ফিরিস্তি উল্লেখ করে নরসিংদী জেলা প্রশাসক এবং বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ১২ জন ভুক্তভোগী।

শাহনাজ পারভিন মিতু নামে এক ভুক্তভোগী জানান, তিনমাস সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে ছয় হাজার ৩০০ টাকা ভাতা দেয়ার কথা। কিন্তু গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রায় অর্ধেক টাকা জোর করে রেখে দিয়েছেন নার্গিস আক্তার। টাকা কম দেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি সবাইকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং হয়রানির ভয় দেখান। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তাছাড়া একই প্রশিক্ষণে রুমা, নাছিমা এবং তাছলিমা নামে তিনজন মহিলার ভুয়া নাম বসিয়ে নিজেই এসব ভাতা উত্তোলন করেছেন এই কর্মকর্তা। প্রতি ব্যাচেই ৫-৭ জনের ভুয়া নাম বসিয়ে নিয়মিতই অর্থ আত্মসাত করেন বলে জানিয়েছেন এই ভুক্তভোগী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিলা সমিতির এক নেত্রী জানান, প্রতিবছর মহিলা সমিতির নামে সরকার অনুদান দিয়ে থাকে। এসব অনুদানের চেক উত্তোলন করতে গেলে ৪-৫ হাজার টাকা দিতে হয় কর্তকর্তা নার্গিস আক্তারকে। কিশোর কিশোরী ক্লাবের এক জেন্ডার প্রমোটার জানান, উপজেলায় ১৩টি কিশোর কিশোরী ক্লাব রয়েছে। এসব ক্লাবের আসবাবপত্র ক্রয়ের জন্য দুই লাখ ৭১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। সে হিসেবে ভাগ করলে প্রত্যেক ক্লাবে ২০ হাজার টাকার অধিক আসে। অথচ প্রতিটি কেন্দ্রে একটি ফাইল কেবনেট, একটি ওয়ালক্লথ এবং দুটি প্লাষ্টিকের চেয়ার দেয়া হয়েছে। যার আনুমানিক সর্বোচ্চ মূল্য হতে পাঁচ হাজার টাকা। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নার্গিস আক্তার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র।

নরসিংদী জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপ-পরিচালক সেলিনা আক্তার বলেন, মনোহরদী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাছাড়া ইতোমধ্যে ওই অফিসের একজন অফিস সহকারী এবং একজন অফিস সহায়ককে অন্যত্র বদলী করা হয়েছে।